চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়া অংশে বটতলী স্টেশন একটি গুরুত্বপূর্ণ স্টেশন। লোহাগাড়া উপজেলার এই প্রধান বাণিজ্যিক কেন্দ্রে রয়েছে ২৫টি ব্যাংক, শতাধিক মার্কেট, ৭টি বড় ক্লিনিকসহ  ছোট-বড় প্রায় ৫ হাজার দোকান। স্টেশনের আশপাশে রয়েছে কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
বাস টার্মিনাল না থাকায় মহাসড়কের বটতলী স্টেশন এখন চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও অভ্যন্তরীণ বিভিন্ন রুটের গাড়ির স্ট্যান্ডে পরিণত হয়েছে। এতে ব্যস্ততম এই স্টেশনে সারাদিন যানজট লেগে থাকে। যাত্রী ও উপ-শহরবাসীর ভোগান্তির শেষ নেই। যানজট নিরসনের জন্য প্রতি মাসের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক সভায় কঠোরভাবে নির্দেশনা হয়। কিন্তু শহর যানজটমুক্ত হয় না।
সরেজমিন দেখা যায়, বটতলী স্টেশনে যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করা হয়। সড়কের পাশেই রয়েছে সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাহিন্দ্রা ও চাঁদের গাড়িসহ বিভিন্ন যানবাহনের অবৈধ স্ট্যান্ড। অবৈধভাবে মহাসড়কের দু’পাশের ফুটপাত দখল করে নির্মাণ করা হয়েছে অস্থায়ী দোকান। এতে বটতলী মোটর স্টেশনে যানজট সমস্যা দিন দিন প্রকট হচ্ছে।
ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে পর্যটননগরী কক্সবাজার রুটে দূরপালার গাড়িগুলো বটতলী মোটর স্টেশনে যাত্রা বিরতি দেয়। প্রতিটি গাড়ি ২০-৩০ মিনিট এ স্টেশনে অবস্থান করে। লোকাল বাসগুলো যাত্রী ওঠানামা করে সড়কের ওপর। সওজের জায়গা দখল করে স্থাপিত হয়েছে দোকান ও মার্কেট, ফুটপাতের সিংহভাগ জায়গা দখল করে হয়েছে আস্থায়ী দোকান, বাইক পার্কিংসহ সিএনজি অটোরিকশা ও লেগুনা স্ট্যান্ড। তার ওপর রয়েছে দূরপাল্লার বাসের যাত্রা বিরতি। এসব কারণে সারাদিনই বটতলী স্টেশনে যানজট লেগে থাকে। অথচ এখানে নেই কোনো বাস টার্মিনাল।
লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির সদস্য ও চমক শাড়িজের স্বত্বাধিকারী মোস্তফা কামাল বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের অন্যতম প্রধান বাণিজ্যিক এলাকা লোহাগাড়া সদরের বটতলী মোটর স্টেশন। এই স্টেশনে যানজট কমাতে বাস টার্মিনাল খুবই প্রয়োজন।’
লোহাগাড়া শহর পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও উপজেলা বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব রুবেল বলেন, ‘বাজার-সদাইসহ নানা প্রয়োজনে বিভিন্ন এলাকার লোকজন এ উপশহরে আসেন। শহরে বাণিজ্যের প্রসার ঘটছে দিন দিন। কিন্তু একটি বাস টার্মিনালের অভাবে পুরো এলাকার সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি যানজট সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। এতে জীবনযাত্রার গতি থমকে যাচ্ছে।’
এদিকে, যানজট নিরসনে ২০০৩ সালে শহরের উপকণ্ঠে পুরোনো বিওসি এলাকায় সড়ক ও জনপথ বিভাগের বিশাল পরিত্যক্ত জমিতে বাস টার্মিনাল 
নির্মাণের দাবি জানিয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রীর কাছে চিঠি দেয় লোহাগাড়া শহর উন্নয়ন কমিটি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অভিযোগ রয়েছে চিঠিটি দেওয়ার পরপর সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা তড়িঘড়ি করে ভূমিদস্যুদের নামে মৎস্য চাষের জন্য জমিটি ইজারা দেন। এরপর ভূমিদস্যুরা মৎস্য প্রকল্প নাম দিয়ে এ জায়গায় আবাসিক ভবন, দোকানপাট, দালান নির্মাণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন।
লোহাগাড়া শহর উন্নয়ন কমিটির কো-অর্ডিনেটর অধ্যাপক জালাল আহমদ বলেন, ‘লোহাগাড়া সদরে যানজট সমস্যা দীর্ঘদিনের। সড়কের দুই পাশে যানবাহন যততত্রভাবে পার্কিং করে। পরিকল্পিত কোন গাড়িরই স্ট্যান্ড নেই। বাসটার্মিনালও নেই। যার কারণে যানজট সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করেছে। আমরা এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.

ইনামুল হাসান বলেন, ‘সদর স্টেশনকে আধুনিক উপশহর হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে প্রধান বাধা যানজট। যানজট কমাতে পাশের কোনো স্থানে বাস টার্মিনাল তৈরি করা জরুরি হয়ে পড়েছে। এ ব্যাপারে শিগগিরই কার্যকর পদক্ষেপ নেয়া হবে।’

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দখল সড়ক র

এছাড়াও পড়ুন:

পটুয়াখালীতে নিজ উপজেলায় অবরুদ্ধ নুরুল হক, উদ্ধারে সেনাবাহিনী–পুলিশ

পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায় পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নূরকে অবরুদ্ধ করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নুরুল হক ফেসবুকে দেওয়া পোস্টে অভিযোগ করেন, বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা তাঁকে অবরুদ্ধ করে রেখেছেন।

জানা গেছে, রাতে বকুলবাড়ীয়া ইউনিয়নের পাতাবুনিয়া এলাকায় আয়োজিত এক স্মরণসভায় অংশ নিয়ে ফেরার পথে অবরুদ্ধ হন নুরুল হক। এর ঘণ্টা তিনেকের মাথায় সেনাবাহিনীর দুটি গাড়ী ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।

তবে রাত দেড়টার দিকে নুরুল হক ফেসবুকে দেওয়া আরেকটি পোস্টে তখনো অবরুদ্ধ থাকার কথা জানান। নুরুল হক লিখেন, পুলিশ ও সেনাবাহিনী এসে ‘সন্ত্রাসীদের’ রাস্তা থেকে হটাতে পারেনি।

শুরুতে দেওয়া পোস্টে নুরুল হক লিখেছেন, ‘গলাচিপা উপজেলার পাতাবুনিয়া বটতলা বাজারে বিএনপি নেতা হাসান মামুনের অনুসারীরা রাস্তায় গাছ ফেলে গুলতি, রড, রামদা নিয়ে আমাদের পথরোধ করেছে। ইতোমধ্যে স্থানীয় কয়েকজনকে মারধর করে দুটি মোটরসাইকেলও ভাঙচুর করেছে।’

পরে সেখান থেকে ফেসবুকে এক ভিডিও বার্তায় নুরুল হক জানান, বৃহস্পতিবার রাতে গলাচিপায় গণসংযোগ কর্মসূচি হিসেবে কালারাজা বাজারে একটি দলীয় কার্যালয় উদ্বোধন এবং কুমারখালী বাজারে একটি পথসভায় অংশ নেন তিনি। রাত ১০টার দিকে তাঁর দলীয় কর্মী প্রয়াত বাদল মেম্বারের স্মরণসভায় অংশ নিয়ে গলাচিপার উদ্দেশ্যে রওনা হন।

এ সময় পটুয়াখালী-৩ (গলাচিপা-দশমিনা) আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী ও বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য হাসান মামুনের অনুসারীরা অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তাঁর পথরোধ করে, দুটি মোটরসাইকেল ভাংচুর করে। তখনই তিনি জেলা পুলিশ সুপার ও গলাচিপা থানার ওসিকে বিষয়টি অবহিত করেন বলেও জানান নুরুল হক।

এ বিষয়ে বিএনপি নেতা হাসান মামুন প্রথম আলোকে বলেন, নুরুল হক নূর এলাকায় উসকানিমূলক বক্তব্য দিচ্ছেন। তিনি গত বুধবার প্রকাশ্যে একটি ঠিকাদারি কাজ নিয়ে জেলা বিএনপির একজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে জড়িয়ে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বক্তব্য দিয়েছেন। বৃহস্পতিবার চরবিশ্বাস বাজারে তাঁর লোকজন বিএনপির নেতা–কর্মীদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব উসকানিমূলক বক্তব্যের কারণে এলাকার লোকজন নুরুল হকের ওপর ক্ষিপ্ত হতে পারেন।

হাসান মামুন আরও বলেন, ‘আমি এখন ঢাকায় আছি। এসব ঘটনা ফেসবুকে দেখেছি। ভিপি নূরের অবরুদ্ধ হওয়ার বিষয়টি জেনে তাঁকে উদ্ধারের জন্য আমি সেনাবহিনী ও পুলিশ-প্রশাসনকে আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে পোষ্ট করেছি। আমি চাই, গলাচিপা উপজেলার পরিবেশ শান্ত ও সুশৃঙ্খল থাকুক।’

পরবর্তীতে নুরুল হকের সঙ্গে থাকা গণ অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় আর্ন্তজাতিকবিষয়ক সম্পাদক খায়রুল আমীন মুঠোফোনে জানান, সেনাবাহিনী আর পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা দিতে অপারগতা জানিয়ে নুরুল হকসহ তাঁদের গলাচিপা ছেড়ে পটুয়াখালী জেলা শহরে চলে যেতে অনুরোধ জানানো হয়। তবে তাঁরা গলাচিপা ডাকবাংলোয় রাতে থাকার জন্য রওনা হয়েছেন।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে একাধিকবার চেষ্টা করেও গলাচিপা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশাদুর রহমানের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • পটুয়াখালীতে নিজ উপজেলায় অবরুদ্ধ নুরুল হক, উদ্ধারে সেনাবাহিনী–পুলিশ