মাঠভরা সবুজের হাসি, মাঘের বৃষ্টিতে বেড়েছে ঝিলিক
Published: 2nd, February 2025 GMT
মৌলভীবাজার সদর ও রাজনগর উপজেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে কাউয়াদীঘি হাওরের অবস্থান। চলতি মৌসুমে এই হাওরে বোরো ধানের আবাদ করেছেন চাষিরা। তবে তাদের চাষ করা ধান লালচে হতে বসেছিল। মাঘ মাসে হঠাৎ একদিনের বৃষ্টিতে হওরের জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে ফসলের ক্ষতি করে এমন সব পোকামাকড়ও চলে গেছে। ফলে বোরো ফসলে সবুজের ঝিলিক লেগেছে। দিগন্ত জুড়ে সবুজ ধানের মাঠ নতুন সজীবতা নিয়ে জেগে উঠেছে।
কৃষি বিভাগের তথ্য, কাউয়াদীঘি হাওরের ৪৩৯৮ হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রা পুরোটাই অর্জিত হয়েছে। আশীর্বাদের বৃষ্টিতে ধানের ফলন ভালো হবে এমনটাই আশা তাদের।
রবিবার (২ ফেব্রুয়ারি) হাওর পাড়ের কৃষকদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, সদ্য লাগানো কচি ধান লালচে হয়ে যাচ্ছিল। তারা হতাশ হয়ে পড়ছিলেন। দুইদিন আগের বৃষ্টি মহোষধের মতো কাজ করছে। মাঘের বৃষ্টি তাদের আবাদ করা ফসলের জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে। এক দিনের সেই বৃষ্টিতে বদলে গেছে হওরের রূপ। হাওরের দিগন্ত জোড়া মাঠে এখন সবুজের সজীবতা নিয়ে জেগে উঠেছে।
আরো পড়ুন:
হাওরের উড়ালসড়ক নির্মাণ বেগবান করার দাবিতে সর্বদলীয় মানববন্ধন
হাওর নিয়ে মাস্টারপ্ল্যান আছে: উপদেষ্টা রিজওয়ানা
হাওর পাড়ের রক্তা গ্রামের বোরো চাষি তাজিম আলী বলেন, “এবার আমি ৮ বিঘা জমিতে বোরো চাষ করি। আমরা অনেক কষ্ট করে ধান আবাদ করি। রোগ বালাই দেখা দিলে নিরাশ হয়ে যাই। মাঘের এই বৃষ্টি ধানের জন্য খুবই উপকারী।”
হাওরের মাঝেরবান্দ নামক স্থানে কথা হয় আমিরপুর গ্রামের বর্গাচাষি বাচ্চু মিয়ার সঙ্গে। তিনি বলেন, “আমি ৭ বিঘা জমিতে বোরো আবাদ করেছি। কচি ধানের ডগা লালচে হতে যাচ্ছিল। দুইদিন আগের বৃষ্টি মহোষধের মতো কাজ করছে। মাঘের এই বৃষ্টিতে ক্ষতিকর সব পোকামাকড় চলে গেছে।”
ইসলামপুর গ্রামের শাহবুদ্দিন মিয়া বলেন, “১০ বিঘা জমিতে ৯২, ২৯, ২৮, ইরি জাতের ধান রোপণ করেছি। বৃষ্টির কারণে এখন হাওরে সবুজের ঝিলিক লেগেছে।”
রাজনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের অতিরিক্ত কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ এনামুল হক বলেন, “বৃষ্টি এ অঞ্চলের জন্য খুবই উপকারী। কৃষকরা ধানে যে সার প্রয়োগ করেন তা লুপ্ত থাকে। বৃষ্টির পরশে জমির অতিরিক্ত উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি পেয়ে ধানের রং বদলে গেছে। চলতি মৌসুমে হাওর কাউয়াদীঘিতে ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪৩৯৮ হেক্টর। এর পুরোটাই আবাদ হয়েছে।”
ঢাকা/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফসল সব জ র
এছাড়াও পড়ুন:
হাওরে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা
হাওরের বুক চিরে চলে গেছে পিচঢালা আঁকাবাঁকা রাস্তা। দুই ধারে থৈ থৈ স্বচ্ছ পানি। তাতে মুগ্ধতা ছড়াচ্ছে সবুজ গোল পাতার ওপর নয়নাভিরাম সাদা শাপলা।
প্রকৃতিতে শরৎ এসেছে। তবে, হাওরে এখনো বর্ষার আমেজ। অব্যাহত বৃষ্টিপাতের কারণে এখনো পানিতে টইটুম্বুর হাওর। পথে যেতে যেতে দেখা মেলে শিল্পীর আঁকা ছবির মতো দৃশ্য।
মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়কের পাশে কাউয়াদিঘি হাওরে পানির কমতি নেই। পানির ওপরে সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে সাদা শাপলা। স্বচ্ছ জলে ভাসছে হংস-মিথুন। এ যেন অপরূপ ছবির ক্যানভাস, রূপসী বাংলার শাশ্বত চিত্র।
এমন দৃশ্য দেখে হয়ত কেউ মনের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গাইছেন, ‘যখন তোর ঐ গায়ের ধারে/ঘুঘু ডাকা নিঝুম কোনো দুপুরে/ হংস-মিথুন ভেসে বেড়ায়/শাপলা ফোটা টলটলে ঐ পুকুরে’।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কাউয়াদিঘি হাওরের সৌন্দর্য সবাইকে মুগ্ধ করে। বিশেষ করে, সাদা শাপলা সবার মন কাড়ে। দূর-দূরান্ত মানুষ ছুটে আসেন প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
সম্প্রতি হাওরপাড়ে দেখা হয় বেড়াতে আসা ফাহিম ও সুমন নামের দুই কিশোরের সঙ্গে। তারা বলে, অবসর পেলে একটু প্রশান্তির জন্য কাউয়াদিঘি হাওরপাড়ে আসি। প্রকৃতির রূপ দেখে মন ভরে যায়।
হাওর পাড়ের বাসিন্দা বেতাহুঞ্জা মৌজার গেদন মিয়া বলেন, এবার দেরিতে বৃষ্টি হওয়ায় শরৎকালেও বর্ষার ভাব আছে। হাওরের পেট ভরে আছে বর্ষার জলে। এখনো সাদা শাপলা (স্থানীয় নাম ভেট বা হালুক ) ভালোভাবে ফোটেনি। ভালোভাবে ফুটলে আরো সুন্দর লাগবে।
হাওরের ভুরভুরি বিলের ধারে গেলে দেখা হয় প্রকৃতিপ্রেমী আবু বকরের সঙ্গে। তিনি বলেন, সাদা শাপলা হাওরের শোভা বাড়িয়েছে। স্বচ্ছ জলের মাঝে হংস-মিথুন ভেসে বেড়াচ্ছে। এ যেন কোনো শিল্পীর রঙ-তুলির আঁচড়। সাদা শাপলার জৌলুস প্রকৃতিকে আরো মনোহর করে তোলে।
কৃষি সম্প্রসারণ অভিদপ্তরের রাজনগর উপজেলা কার্যালয়ের কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ আব্দুল্লা আল আমিন বলেন, শাপলা সপুষ্পক পরিবারের জলজ উদ্ভিদ। সাদা শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় ফুল। এই ফুল আমাদের দেশের হাওর, বিল ও দিঘিতে বেশি ফোটে।
ঢাকা/রফিক