দেশব্যাপী ‘বাড়ি বাড়ি গিয়ে’ ভোটার তালিকা হালনাগাদ কার্যক্রম শুরু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নিয়ম অনুযায়ী, ভোটার তালিকায় নাম তুলতে ডিজিটাল জন্ম সনদ আবশ্যক। ফলে, যাদের নেই তারা জন্ম সনদ সংগ্রহ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) আঞ্চলিক অফিসে যোগাযোগ করছেন। তবে, বকশিস ছাড়া মিলছে না জন্ম সনদ। এমনকি, মৃত্যু, নাগরিক ও ওয়ারিশ সনদ পেতেও দিতে হচ্ছে বকশিস। সব মিলিয়ে নাগরিক সেবা পেতে পদে পদে ভোগান্তিতে পড়ছেন নগরবাসী।
গত ২ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর নগর ভবনে কথা হয় পুরান ঢাকার চাঁন খাঁ মসজিদ এলাকার (৩৩ নম্বর ওয়ার্ড) বাসিন্দা রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘গত ২৫ জানুয়ারি অনলাইনে নাগরিক সনদের জন্য আবেদন করি। ভেরিফিকেশনে কাউন্সিলরের দায়িত্ব পালন করেন ডিএসসিসির আঞ্চলিক অফিসের এক কর্মকর্তা। অফিসের কর্মচারীরা বকশিস চায়। দিতে না চাইলে একেক সময় একেক কথা বলেন।’’
‘‘৩ ফেব্রুয়ারি ভোটার হওয়ার শেষ দিন ছিল। কী আর করা! ডিজিটাল জন্ম সনদ ছাড়া ভোটার হওয়া যাবে না। তাই বকশিস দেওয়ার দুই ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদ দিয়েছেন।’’
ডিএসসিসির নগর ভবনের জন্ম নিবন্ধন শাখার কম্পিউটার অপারেটর শফিক জানান, নির্বাচিত কাউন্সিলরের অধীনে তারা নাগরিক সনদ দিতে এক-দুই ঘণ্টা নিতেন। এখন ৯-১০ দিন লাগছে। একইভাবে, ওয়ারিশ সনদে একমাস ও জন্ম-মৃত্যু সনদে লাগছে ১০-১২ দিন । কয়েক মাস ধরে স্থানীয় সরকার শাখা থেকে সংশোধনী না ছাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
এ সময় ‘বকশিস নেওয়ার’ বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
নগর ভবনের ১১ তলায় সিটি করপোরেশনের সেবা নিতে প্রায় ২০ জন অপেক্ষা করছেন। তাদের বেশিরভাগই জন্ম নিবন্ধন, ওয়ারিশ সনদ-সংক্রান্ত কাজে এসেছেন। জানতে চাইলে সেবাপ্রার্থী জসিম উদ্দীন বলেন, ‘‘টাকা ছাড়া কোনো সেবা মিলছে না। জন্ম নিবন্ধন নতুন কিংবা সংশোধনের জন্য ৫০০ থেকে ২ হাজার করে টাকা নিচ্ছেন।’’
সেখানে উপস্থিত বংশালের বাসিন্দা রবিউল হক বলেন, ‘‘ছেলের জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করার জন্য আবেদন করেছি। তারা বলেছেন, সংশোধন করতে যেতে হবে ঢাকা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়। আমি না গেলে তাদের দুই হাজার টাকা দিতে হবে। আমি বেসরকারি চাকরিজীবী, ছুটি কম। ঝামেলা এড়াতে দেড় হাজার টাকা দিয়েছি।’’
একই এলাকার সরোয়ার হোসেন রকি বলেন, ‘‘ভাতিজির জন্ম নিবন্ধনের জন্য ১০ দিন ঘুরতে হয়েছে। আবেদন করার পর নগর ভবনে গেলে কয়েক দফায় বিভিন্ন কাগজপত্র চাওয়া হয়। তারপরও হয়রানির মাত্রা বেড়ে গেলে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। পরে প্রধান নির্বাহী সমস্যার সমাধান করে দেন।’’
ন্যাশনাল কলেজের শিক্ষার্থী সাবির মোস্তফা এসেছেন জন্ম নিবন্ধন সংশোধন করতে। রাইজিংবিডি ডটকমকে তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাকে বলল, বিদ্যুৎ ও গ্যাস বিলের ফটোকপি লাগবে। আমি এসব আনার পর বলছে হোল্ডিং ট্যাক্সেরও ফটোকপি লাগবে। সবকিছু জমার পর এখন বলছেন, হলফনামা লাগবে। মূলত টালবাহানা করছে বকশিসের জন্য।’’
নগর ভবনের রেজিস্ট্রার জেনারেল (জন্ম ও মৃত্যু নিবন্ধন) মো.
এ বিষয়ে জানতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি)-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ বশিরুল হক ভূঁঞার সঙ্গে যোগাযোগ করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া বলেন, ‘‘জন্ম নিবন্ধনসহ অন্যান্য কার্যক্রম সুন্দরভাবে পরিচালনা করতে বলা হয়েছে। কোনো কার্যক্রমে জড়িত অসাধু চক্রের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’
ঢাকা/এনএইচ/এসবি
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর নগর ভবন ড এসস স র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
জরুরি পরিস্থিতিতে প্রাথমিক চিকিৎসা
প্রতিনিয়ত জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয় আমাদের। অনেক সময় ভ্রান্ত ধারণায় পড়ে এ পরিস্থিতিতে আরও বড় ধরনের ভুল করে ফেলি আমরা। সে ক্ষেত্রে জরুরি পরিস্থিতিতে কী করবেন আর কী করবেন না, তা জেনে রাখা ভালো।
যেমন–
পুড়ে গেলে : গরম তেল পড়ে হোক বা আগুনে পুড়ে, আমরা সঙ্গে সঙ্গে পোড়া স্থানে পেস্টের আস্তরণ দিই। অনেকে ডিম ভেঙে দেন, কেউ বা লাগান চুন। এগুলো ক্ষতিকর। পুড়ে গেলে ঠান্ডা পানির ধারা রাখতে পারেন ১০ মিনিট; অন্য কোনো কিছু নয়।
ব্যথা পেলে : হাড় ভাঙলে নড়াচড়া না করে ভাঙা স্থানের দু’পাশে কাঠ দিয়ে বেঁধে হাসপাতালে আনতে হবে।
রক্ত ধুয়ে ফেলা নয় : রক্তপাত হতে থাকলে পরিষ্কার কাপড় বা গজ-ব্যান্ডেজ দিয়ে বেঁধে দিন। বেশি কেটে গেলে বা রক্তপাত ১০ মিনিটের মধ্যে বন্ধ না হলে হাসপাতালে নিতে ভুলবেন না।
নাক দিয়ে রক্ত পড়লে : আক্রান্ত ব্যক্তিকে সামনের দিকে সামান্য ঝুঁকে বসাতে হবে। বাঁ হাতের বুড়ো আঙুল ও অনামিকা দিয়ে নাসারন্ধ্র টানা ১০ মিনিট বন্ধ রাখতে হবে। এ সময় মুখ দিয়ে শ্বাস নিতে হবে। বরফ নাকের ওপরে দেওয়া যেতে পারে। যদি একটানা ১০ মিনিট নাসারন্ধ্র চেপে ধরে রাখার পরও রক্ত বন্ধ না হয়, দ্রুত হাসপাতালে নিতে হবে।
সাপে কাটলে : সাপে কাটার স্থানের কিছু ওপরে আমরা শক্ত বাঁধন দিই। এতে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে হাত-পা পচে যেতে পারে। বাঁধন দিতে হবে, তবে রশি দিয়ে নয়; গামছা, কাপড় দিয়ে ঢিলে করে বাঁধলেই চলবে।
বিষপানে নয় গোবরপানি : বিষ পান করলে অনেকে গোবরমিশ্রিত পানি পান করিয়ে বমি করার চেষ্টা করেন। এটি ভ্রান্ত ধারণা। যদি বিষপান করা ব্যক্তি অচেতন বা অবচেতন থাকে, তাহলে বমি ফুসফুসে চলে যেতে পারে; যা গুরুতর। বিষপানের এক ঘণ্টার মধ্যে তাকে হাসপাতালে নিয়ে যান।
লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারভেনশনাল নিউরোলজি, নিনস