যানজটে রাস্তায় আটকা টিম বাস, ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমল ১৪ ওভার
Published: 9th, February 2025 GMT
ক্রিকেট ম্যাচ শুরু হতে কত কারণেই তো দেরি হয়। সবচেয়ে বড় কারণ অবশ্যই বৃষ্টি। এ ছাড়া আলোকস্বল্পতা, কুয়াশার মতো প্রাকৃতিক কারণেও দেরি হয়। কিন্তু কাল ওমানের রাজধানী মাসকাটে যা হলো, তা বিরলই বলা চলে।
তীব্র যানজটের কারণে দুই দল সময়মতো মাঠে পৌঁছে না পারায় খেলা শুরু হয়েছে দেরিতে। এতটাই দেরিতে যে ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমাতে হয়েছে ৭-৭ করে মোট ১৪ ওভার। সেটাও যেনতেন টুর্নামেন্টে নয়—আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ লিগ ২-তে। নবম রাউন্ডের ম্যাচটি খেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও নামিবিয়া।
মাসকাট ডেইলি, ওমান অবজারভার, টাইমস অব ওমানসহ দেশটির কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় (বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা) ম্যাচ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও রাস্তা বন্ধ থাকায় আল আমেরাত স্টেডিয়ামে যাওয়ার পথে তীব্র যানজট লেগে যায়।
সাধারণত ম্যাচ শুরুর ন্যূনতম এক ঘণ্টা আগে মাঠে পৌঁছানোর চেষ্টা থাকে দলগুলোর। এর মধ্যে দুই দল মাঠে নামার আগে যে টস অনুষ্ঠিত হয়, সেটিও হয়ে যায় আধা ঘণ্টা আগে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও নামিবিয়া দল টসের নির্ধারিত সময়ের আগে তো বটেই, খেলা শুরুর নির্ধারিত সময়েও মাঠে নেই। নেই ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে থাকা কেউও।
টস হতে দেরি হওয়ার কারণ জানাতে গিয়ে ইউএসএ ক্রিকেট এক্সে লিখেছে, ‘অপ্রত্যাশিত লজিস্টিক পরিস্থিতির কারণে ম্যাচ শুরু করতে বিলম্ব হচ্ছে।’
সেই পোস্ট এক্সে শেয়ার দিয়ে আসল কারণ জানিয়েছেন ক্রীড়া সাংবাদিক পিটার ডেলা পেনা। তিনি লিখেছেন, ‘মাসকাটে ম্যারাথন/আয়রনম্যান রোড রেসের কারণে শহরের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়। যে রাস্তা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও নামিবিয়া টিম বাসের স্টেডিয়ামে যাওয়ার কথা ছিল, সেটিও এর একটি। এটা নিশ্চিত দুই দল (যথাসময়ে) মাঠে পৌঁছাতে পারেনি। ম্যাচের দৈর্ঘ্য কমিয়ে আনা হয়েছে। প্রত্যেক দল ৪৩ ওভার করে খেলবে।’
আয়রনম্যান রেসের কারণে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক বন্ধ থাকায় তীব্র যানজট তৈরি হয় মাসকাটে। আর সেই যানজট ঠেলে দুই দল মাঠে যাওয়ার মধ্যে পেরিয়ে যায় বেশ কিছুটা সময়। দিনের ম্যাচ হওয়ায় এ কারণে ওভার কমিয়ে দেওয়া হয়।
মিলনিদ কুমারের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে (৩৪ বলে ৫৪ রান ও ৯ ওভারে ৪৮ রানে ৪ উইকেট) ম্যাচটি ১১৪ রানে জিতেছে যুক্তরাষ্ট্র। টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৩ ওভারে ৮ উইকেটে ২৯৩ রান করেছিল মার্কিন ছেলেরা। নামিবিয়া ৪০.
বড় এই জয়ে আইসিসি ক্রিকেট বিশ্বকাপ লিগ ২-এর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে উঠে এসেছে যুক্তরাষ্ট্র। আট দলের এই টুর্নামেন্টের শীর্ষ চার দল সরাসরি ২০২৭ ওয়ানডে বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে খেলার সুযোগ পাবে।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’
আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে