নামিবিয়ার স্বাধীনতা সংগ্রামের নেতা ও গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম প্রেসিডেন্ট স্যাম নুজোমা ৯৫ বছর বয়সে মারা গেছেন। দেশটির প্রেসিডেন্ট কার্যালয় রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) এক বিবৃতিতে তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে।

রয়টার্স জানিয়েছে, ১৯৯০ সালের ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী শাসন থেকে স্বাধীনতা লাভের পর নামিবিয়ার নেতৃত্ব গ্রহণ করেছিলেন নুজোমা। ২০০৫ সালে পার্লামেন্টের এক আইনের মাধ্যমে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘নামিবিয়ান জাতির প্রতিষ্ঠাতা পিতা’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।

তবে তার শাসনামল প্রশংসার পাশাপাশি সমালোচনারও মুখোমুখি হয়। গণমাধ্যমের প্রতি তার কঠোরতা, সমকামিতার বিরুদ্ধে অবস্থান এবং ১৯৯৮ সালে সংবিধান পরিবর্তন করে তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়ানোর বিষয়টিকে বিতর্কিত বলে অভিহিত করেন সমালোচকেরা।

নুজোমাকে ‘আফ্রিকার অন্যতম মহান বিপ্লবী নেতা’ বলে শ্রদ্ধা জানিয়েছেন আফ্রিকান ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মৌসা ফাকি মাহামাত।

স্যাম নুজোমা ১৯২৯ সালে উত্তর-পশ্চিম নামিবিয়ার একটি গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। দেশটি তখন দক্ষিণ আফ্রিকার অধীনে ছিল। তার শৈশব কাটে গবাদিপশু চরিয়ে। পরবর্তী জীবনে তিনি ওয়ালভিস বে ও রাজধানী উইন্ডহোকে কাজ শুরু করেন। দক্ষিণ আফ্রিকার রেলওয়েতে চাকরির সময় তিনি বর্ণবাদী শাসনের বিরুদ্ধে সক্রিয় হতে থাকেন।

১৯৫০-এর দশকের শেষ দিকে ওওয়াম্বো পিপলস অর্গানাইজেশনের নেতৃত্ব গ্রহণ করেন নুজোমা। এটি পরে একটি স্বাধীনতা সংগ্রামী সংগঠনে রূপ নেয়। ১৯৬০ সালে তিনি নির্বাসনে চলে যেতে বাধ্য হন এবং জাতিসংঘে নামিবিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে বক্তব্য রাখেন।

প্রবাস জীবন থেকেই নামিবিয়ার মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দেন নুজোমা। ১৯৬৬ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ শুরু করেন। দীর্ঘ সংগ্রামের পর ১৯৯০ সালে ২১ মার্চ দক্ষিণ আফ্রিকার কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে নামিবিয়া।

স্বাধীনতার পর ১৯৯০ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নামিবিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নুজোমা। তিনি গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি তৈরি করেছিলেন। তার নেতৃত্বে তার দল ‘এক নামিবিয়া, এক জাতি’ নীতির মাধ্যমে সমাজে সংহতি গড়ে তুলতে কাজ করে। তবে ১৯৯৯ সালের ক্যাপ্রিভি বিদ্রোহের কঠোরভাবে দমন ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর নিয়ন্ত্রণ তার ভাবমূর্তিতে কালিমা লাগায়।

নামিবিয়া ছাড়াও আফ্রিকার অন্যান্য নেতারা নুজোমার অবদান স্মরণ করেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসা বলেছেন, ‘‘ড.

স্যাম নুজোমা একজন অসাধারণ স্বাধীনতা সংগ্রামী ছিলেন, যিনি শুধু নামিবিয়ার মুক্তি নয়, দক্ষিণ আফ্রিকার মুক্তি আন্দোলনেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।’’

নুজোমা বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ ছিলেন এবং হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। প্রেসিডেন্ট কার্যালয়ের বিবৃতিতে বলা হয়, ‘‘দুঃখজনকভাবে, আমাদের এই মহামান্য নেতা এবার আর সুস্থ হয়ে ফিরতে পারলেন না।’’

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ