ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যের নীতিগুলোকে ট্রাম্প প্রশাসনের চ্যালেঞ্জ থেকে রক্ষা করে প্রেসিডেন্টের ব্যাপক নির্বাসন পরিকল্পনার মুখে অভিবাসীদের সহায়তা করতে ৫০ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউজম। সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি আইনে স্বাক্ষরও করেছেন তিনি।

আইনের আওতায় ২৫ মিলিয়ন ডলার বরাদ্দ দিয়েছে ক্যালিফোর্নিয়া বিচার বিভাগে, যাতে তারা ফেডারেল সরকারের বিরুদ্ধে আইনি লড়াই চালিয়ে যেতে পারেন। বাকি ২৫ মিলিয়ন ডলার রাখা হয়েছে অভিবাসীদের সম্ভাব্য নির্বাসনের বিরুদ্ধে লড়াই করা আইনি গোষ্ঠীগুলোর সহায়তার জন্য।

ট্রাম্পের প্রথম প্রেসিডেন্সির সময় তিনি ক্যালিফোর্নিয়ার সঙ্গে জলবায়ু আইন, পানি নীতি, অভিবাসীদের অধিকার ও আরও অনেক বিষয়ে সংঘাতে জড়িয়েছিলেন। সেই সময় ক্যালিফোর্নিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে ১০০টিরও বেশি মামলা দায়ের করেছিলেন। এখন ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম দিকেই সেই লড়াইগুলো আবার ফিরে এসেছে।

ডেমোক্র্যাটিক অ্যাসেম্বলি স্পিকার রবার্ট রিভাস এক বিবৃতিতে বলেন, ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষ এখন এমন একটি প্রশাসনের মাধ্যমে হুমকির মুখে, যা সংবিধানের তোয়াক্কা করে না এবং মনে করে যে তার ক্ষমতার কোনো সীমা নেই। এই কারণেই আমরা এমন আইন আনছি, যা ক্যালিফোর্নিয়ার মানুষকে এই জরুরি হুমকি থেকে রক্ষা করতে সহায়তা করবে।

এই পদক্ষেপটি এমন এক সময়ে এসেছে, যখন গভর্নর নিউজম ওয়াশিংটন সফর থেকে ফিরেছেন। সেখানে তিনি ট্রাম্প ও কংগ্রেস সদস্যদের সঙ্গে জানুয়ারিতে লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলে ধ্বংসাত্মক দাবানলের জন্য ফেডারেল দুর্যোগ সহায়তা নিশ্চিত করা যায় এ ব্যাপারে বৈঠক করেছেন। ওই দাবানলে দুই ডজনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং বহু এলাকা পুড়ে গেছে।

গত মাসে নিউজম ২ দশমিক ৫ বিলিয়ন ডলারের একটি দাবানল ত্রাণ প্যাকেজ স্বাক্ষর করেছেন, যা রাজ্যের দুর্যোগ মোকাবিলা কার্যক্রমের জন্য অর্থায়ন করবে। এর মধ্যে উচ্ছেদ অভিযান, ক্ষতিগ্রস্তদের আশ্রয় প্রদান এবং বিপজ্জনক আবর্জনা অপসারণের জন্য তহবিল বরাদ্দ করা হয়েছে। নিউজম প্রশাসন আশা করছে, ফেডারেল সরকার এই ব্যয়ের জন্য রাজ্যকে ক্ষতিপূরণ দেবে।

ক্যালিফোর্নিয়া ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করার ক্ষেত্রে অভ্যস্ত। প্রথম মেয়াদে ক্যালিফোর্নিয়া ১২০টিরও বেশি ট্রাম্প প্রশাসনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বলে ক্যালিফোর্নিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় জানিয়েছে। এই আইনি লড়াইয়ে রাজ্য প্রায় ৪২ মিলিয়ন ডলার ব্যয় করেছে। যার পরিমাণ বছরে ২ মিলিয়ন থেকে ১৩ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত ছিল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন উইয র ক র জন য সহ য ত

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ