সেবা পেতে ভোগান্তি কর্মকর্তারাও বিপাকে
Published: 10th, February 2025 GMT
নাগরিক সনদের জন্য বুধবার সকালে খুলনা সিটি করপোরেশনের (কেসিসি) ২৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের দপ্তরে যান ইলিয়াস হোসেন। গিয়ে শোনেন ওয়ারিশ কায়েম সনদ তদন্তের জন্য অন্য এলাকায় গেছেন ওয়ার্ড সচিব। দুপুর ১টায় ফের অফিসে গিয়ে দেখেন সচিব সনদ তৈরিতে ব্যস্ত। নাগরিক সনদের জন্য তাঁকে একটি ফরম দেওয়া হয়। সেখানে ভোটার আইডি কার্ডের সঙ্গে বাড়িওয়ালার কার্ড এবং লিখিত সুপারিশ চাওয়া হয়েছে। সব তথ্য পূরণ করে জমা দিলে পরদিন সনদ দেওয়া হবে বলে জানানো হয়।
ক্ষুব্ধ ইলিয়াস বলেন, আগে কাউন্সিলরকে ফোন করলেই সনদ তৈরি করে রাখতেন। ১০-১৫ মিনিটের মধ্যে এসে নিয়ে যেতাম। এখন এত কাগজ নিয়ে আসতেই এক দিন, সনদ নিতে আরও সময় লাগবে।
ওয়ার্ড সচিব আযম আলী বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের চেনেন না। নির্ভুল সনদের জন্য নানাভাবে তথ্য যাচাই-বাছাই করতে হয়। এ জন্য কাজে কিছুটা সময় লাগছে।
ইলিয়াস হোসেনের বিষয়টি একটি উদাহরণ। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি না থাকায় ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে সেবা পেতে নানা ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ। যে কোনো সনদ পেতে দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে হচ্ছে। উত্তরাধিকার সনদ, চারিত্রিক, অবিবাহিত সনদ নিতে সময় লাগছে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে কাউন্সিলরদের অবর্তমানে দায়িত্ব পাওয়া কেসিসির কর্মকর্তারাও পড়েছেন বিপাকে। নগর ভবনে একাধিক দায়িত্ব পালনের পর প্রতিদিন ওয়ার্ড কার্যালয়ে গিয়ে সেবা দেওয়া অনেকের পক্ষেই সম্ভব হচ্ছে না। তাদের স্বাক্ষর নিতে ওয়ার্ড সচিবরা ফাইল নিয়ে নগর ভবনে যাচ্ছেন। বাড়তি কাজের চাপে উভয়ই নাজেহাল।
গত বছরের ২৬ সেপ্টেম্বর কেসিসিসহ দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর অপসারণ করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। কাউন্সিলরদের অবর্তমানে সেবা কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে ২ অক্টোবর কেসিসির ৩১ কর্মকর্তাকে ৩১টি ওয়ার্ডে সেবা কার্যক্রম চলমান রাখার দায়িত্ব দেওয়া হয়। এর পর কয়েক দফা তালিকা পরিবর্তন হয়েছে। এখন কেসিসির বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তারা কাউন্সিলরের রুটিন দায়িত্ব পালন করছেন।
বিভিন্ন ওয়ার্ডে দেখা গেছে, নাগরিক সনদসহ প্রতিটি কাজেই এখন সময় লাগছে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি। যে কোনো সনদ নিতে একাধিকবার কাউন্সিলর কার্যালয়ে যেতে হচ্ছে নাগরিকদের।
২১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, নাগরিক সনদ, টিসিবির কার্ড, উত্তরাধিকার সনদ নিতে অনেক মানুষ ভিড় করছেন। টিসিবির কার্ডে ছাত্র প্রতিনিধিরা সহযোগিতা করলেও অন্য আবেদনগুলো নিষ্পত্তিতে সময় লাগছে। নথি তৈরি করে রেখে দিতে হচ্ছে কর্মকর্তার জন্য।
২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, মেয়ের জন্মনিবন্ধনে নামের বানান ও পদবি ভুল ছিল। সংশোধনের জন্য ৫ বার কাউন্সিলেরর কার্যালয়ে যেতে হয়েছে, অনেক কাগজ জমা দিয়েছি। ১৭ দিন পর সংশোধিত কাগজ পেয়েছি।
৩১ নম্বর ওয়ার্ডের সচিব হাফিজুর রহমান বলেন, আগে কাউন্সিলরকে বললেই তিনি সনদ দিয়ে দিতেন। এখন কর্মকর্তারা প্রমাণ ছাড়া কোনো সনদ দেন না। নাগরিক সনদের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র ও ফরম পূরণ করতে হয়। ভাড়াটিয়া হলে বাড়িওয়ালার লিখিত সুপারিশ লাগে। এ জন্য কিছুটা সময় লাগে। প্রথম দিকে নোটিশটি প্রস্তুত করতে হতো। বেশি সময় লাগায় সেটি বাতিল করা হয়েছে।
এক সচিব বলেন, একটি ওয়ারেশ কায়েম দিতে সবার ভোটার আইডি কার্ড যাচাই-বাছাইসহ এলাকায় দুই দফা তদন্তে যেতে হয়। ন্যূনতম ৩ জনের সাক্ষাৎকার নিতে হয়। সচিব এ কাজে ব্যস্ত থাকলে অন্য কাজগুলো বন্ধ থাকে।
বিষয়টি নিয়ে ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কেসিসির ভেটেরিনারি সার্জন ডা.
১৬ নম্বর ওয়ার্ডে সেবা দেওয়ার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে প্রধান পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবিরুল জব্বারকে। তিনি ‘জলাবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাব মোকাবিলায় খুলনা শহর এলাকার উন্নয়ন’ প্রকল্পের পরিচালক। সপ্তাহে মাত্র এক দিন তিনি ওয়ার্ড অফিসে যান। তিনি বলেন, মূল দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ওয়ার্ড অফিসে সময় দিতে পারি না। ছুটির দিন শনিবার ওয়ার্ড অফিসে কাটাই। অন্যদিন বিকেল ৪টার পরে সচিবরা নগর ভবনে এলে সই করে দিই।
কেসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা লস্কার তাজুল ইসলাম বলেন, নাগরিক সেবা সচল রাখতে কর্মকর্তাদের কার্যক্রম নিয়মিত তদারকি করা হয়। কোনো ওয়ার্ডে সেবামূলক কাজ জমে নেই। বরং অনেক জায়গায় আগের চেয়ে দ্রুত কাজ হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সনদ ন ত সময় ল গ সনদ দ
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কার্যক্রমে ‘অনিয়ম ও হয়রানি’ বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কার্যক্রমে ‘অনিয়ম ও হয়রানির’ বিরুদ্ধে আট দফা দাবি উত্থাপন করে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বুধবার বিকেলে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হকের কাছে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে সংস্কার কার্যক্রম চললেও রেজিস্ট্রার ভবন এখনো পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসনিক ধাঁচে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিমা, সনদ উত্তোলন, ডিজিটাল কার্যক্রম, কর্মচারীদের ব্যবহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হয়রানি, বিলম্ব ও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।
শিক্ষার্থীরা যে আট দফা দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো হলো স্বাস্থ্যবিমা–সংক্রান্ত হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং সময়মতো অর্থ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে; মধ্যাহ্নভোজ ও বৈঠকের অজুহাতে সেবা বন্ধ না করে কার্যক্রম চালু রাখতে হবে; রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি পরিশোধসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে; লালফিতার দৌরাত্ম৵ বন্ধ এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা চালু করতে হবে; অবৈধ নিয়োগ তদন্ত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে; ওয়েবসাইট হালনাগাদ এবং কেন্দ্রীয় অনলাইন সেবা পোর্টাল চালু করতে হবে; কর্মচারীদের আচরণ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে; সনদ ও মার্কশিট উত্তোলনের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং অতিরিক্ত ফি বাতিল করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্মারকলিপি দেন মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, আবদুর রহমান আল-ফাহাদ, আশিক খান, রিয়াদুল ইসলাম, শামসুদ্দোহা শাকিল, শাহেদ ইমনসহ ১০ জন। এ সময় সহ–উপাচার্য সায়মা হক শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শোনেন এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।