২০ কোটি টাকার বাস টার্মিনাল এখন ভূতুড়ে
Published: 10th, February 2025 GMT
ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে চলাচলকারী বাসগুলোকে একই ছাতার নিচে আনার লক্ষ্যে ভোলার চরফ্যাসন পৌরসভা ২০ কোটি টাকা খরচ করে নির্মাণ করেছিল টার্মিনাল। ২০১৮ সালের আগস্টে উৎসবমুখর পরিবেশে সেটি উদ্বোধন করা হয়। সাত বছর ধরে সেখান থেকেই বাস চলাচল করছিল। রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর গত নভেম্বরে সেখান থেকে আগের স্ট্যান্ডে ফিরে
গেছেন বাসমালিকরা। এতে পরিত্যক্ত হয়ে গেছে টার্মিনালটি। শহর থেকে বাস আসা-যাওয়া করায় যানজট বেড়ে জনগণকে ব্যাপক দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এলাকাবাসী জানিয়েছে, মুখারবান্ধার বাস টার্মিনালটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর থেকে সেখানে সন্ধ্যার পর বসছে মাদকের আসর।
এসব কারণে আশপাশের এলাকায় ছিনতাইসহ নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড বেড়েছে।
পাশাপাশি ওই টার্মিনালকেন্দ্রিক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে।
চরফ্যাসন পৌরসভা সূত্র জানায়, পৌর এলাকার যানজট নিরসনের লক্ষ্যে সদর থেকে দুই কিলোমিটার দূরে অবস্থিত মুখারবান্ধায় বাস টার্মিনাল নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়।
পৌরসভার অর্থায়নে তিন একর জমির ওপর প্রায় ২০ কোটি টাকা খরচে নির্মাণ করা হয় অত্যাধুনিক টার্মিনালটি। ২০১৭ সালের জুলাই মাসে নির্মাণকাজ শুরুর পর উদ্বোধন করা হয় ২০১৮ সালের ২ আগস্ট। সাত বছর ধরে চরফ্যাসন
থেকে ভোলা, বরিশাল, ঢাকা, চট্টগ্রাম ও উপজেলার দক্ষিণ আইচা, দুলারহাট, চেয়ারম্যান বাজারসহ বিভিন্ন রুটে বাস চলে আসছিল। দিনে দুই শতাধিক বাস এখান থেকে চলাচল করত। বর্তমানে পৌরসভার সদর বাজারের দুটি স্ট্যান্ড থেকে এসব বাস চলাচল করছে।
টার্মিনালটিতে রয়েছে সাড়ে ৭ হাজার স্কয়ার ফুট আয়তনের উন্নত মানের কাচে মোড়ানো তিনতলা ভবন। এখানে সাধারণ যাত্রীদের বিশ্রামাগার ছাড়াও অত্যাধুনিক সুবিধার ভিআইপি বিশ্রামাগার
রয়েছে। পাশাপাশি আছে রেস্তোরাঁ, মসজিদ, হলরুম, মিটিং রুম, ১০টি চায়ের স্টল, পর্যাপ্ত শৌচাগার। প্রতিটি রুটের জন্য পৃথক টিকিট কাউন্টারও রয়েছে এখানে।
রোববার সরেজমিন দেখা যায়, বাস টার্মিনাল ভবনের কোটি টাকার আসবাব নষ্ট হতে
বসেছে। চারপাশসহ মূল ভবনের অনেক জায়গায় ময়লা-আবর্জনার স্তূপ। পশ্চিম পাশে এলাকার লোকজনের ফেলা ময়লার কারণে টেকাই মুশকিল। টিকিট কাউন্টারগুলোতে জমেছে ধুলাবালি।
মুখারবান্ধার বাসিন্দা আরিফ হাওলাদারের ভাষ্য, বাস টার্মিনালটি দুই মাস ধরে বন্ধ থাকায় পুরো এলাকায় ভূতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে।
সন্ধ্যা হলেই বহিরাগত তরুণ-যুবকদের আনাগোনা বাড়ে। তারা মোটরসাইকেল নিয়ে এসে মাদকের আসর বসায়। স্থানীয় শিশু-কিশোররা উঁকিঝুঁকি দিয়ে তাদের হাতে পিটুনি খেয়েছে।
সোহেল নামে আরেকজন বলেন, রাত হলেই পরিত্যক্ত রুমে মিটিমিটি আলো জ্বলে। গাঁজার গন্ধে ভারী হয়ে উঠে বাতাস। গভীর রাতে জুয়ার আসরও বসে। পুলিশের উপস্থিতি টের পেলে পালিয়ে যায় তারা। এদের কারণে আশপাশের সড়কে ছিনতাই বেড়েছে।
এমনকি বসতবাড়িতেও ইদানীং চোরের উপদ্রব দেখা যাচ্ছে।
বাস টার্মিনাল চালু হওয়ার পর সেখানে দোকান দিয়েছিলেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী কামরুল ইসলাম। তিনি বলেন, যাত্রীদের আনাগোনা থাকায় তাঁর ব্যবসা ভালো হতো। পাঁচ সদস্যের সংসার এই ব্যবসার ওপরই নির্ভরশীল। টার্মিনাল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁর মতো অন্য ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন।
অটোরিকশাচালক মহসিনের ভাষ্য, পৌর সদর থেকে বাস টার্মিনালটি কিছুটা দূরে থাকায় ভোলা-বরিশালগামী বাসযাত্রীদের আনা-নেওয়া করে বাড়তি আয় হতো। পৌর শহরেও যানজট ছিল না। বাসমালিকদের খামখেয়ালিতে টার্মিনালটি এখন বাসশূন্য। এতে বিপাকে পড়েছেন অটোরিকশা চালকরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন বাসচালক দাবি করেন, চরফ্যাসন বাজারে একটি সিএনজি স্টেশন হয়েছে। যে কারণে ভোলাগামী বাসে যাত্রী কমেছে। বাসমালিকরা তাই বাস টার্মিনাল ছেড়ে আগের মতো সদর বাজারে বাসস্ট্যান্ড করেছেন। তাদের এসব বক্তব্য মানতে রাজি নন স্থানীয় ব্যবসায়ী ও সচেতন ব্যক্তিরা। তাদের ভাষ্য, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বলি হয়েছে আধুনিক এই টার্মিনাল। বাজারের ভেতর যাত্রী ওঠানামা করায় শহরে যানজট বেড়েছে। এতে নাকাল হয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন ব্যবসায়ী-পথচারীরা।
পৌর বাজারের ব্যবসায়ী শাহারিয়ার বলেন, এত দিন ধরে বাজারের বাইরের টার্মিনালে বাস থাকত। এতে বাজার ছিল যানজটমুক্ত। বাস মালিক সমিতির খামখেয়ালিতে আবার বাজারে বাসস্ট্যান্ড করা হয়েছে। দুটি জায়গায় বাস রাখা ও যাত্রী ওঠানামা করায় যানজট বেড়েছে। প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। তাঁর মতো ব্যবসায়ীরা চান, বাসগুলো যেন টার্মিনালে ফিরিয়ে নেওয়া হয়।
এসব বিষয়ে ভিন্ন ব্যাখ্যা দেন ভোলা জেলা বাস মালিক সমিতির চরফ্যাসন আঞ্চলিক শাখার সাধারণ সম্পাদক মো.
পৌর প্রশাসকের দায়িত্বে থাকা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রাসনা শারমিন মিথি বলেন, গত বছরই টার্মিনালটি ইজারা দিয়েছে পৌরসভা। ইজারার মেয়াদ এখনও চলছে। বাসমালিকরা নিজস্ব স্ট্যান্ডে বাস রেখে পরিচালনা করছেন। সব বাস টার্মিনালে স্থানান্তর বিষয়ে পৌরসভা থেকে তাদের সঙ্গে আলোচনা চলছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র ব যবস য় প রসভ য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা সেতুতে ঈদের ছুটির শেষ ৪৮ ঘণ্টায় ৭ কোটি টাকার টোল আদায়
ঈদের ছুটি শেষে গত দুই দিনে সড়কে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। বেড়ে যায় যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন পারাপারও। বেড়েছে টোল আদায়ও। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ৭৭৭টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫০ টাকা।
যমুনা সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ হাজার ৫৯৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৮ হাজার ২৬৬টি যানবাহন রয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ৩৩ হাজার ৩২৯টি যানবাহন পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার ৫০ টাকা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের দিকে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন পার হয়। এতে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী যানবাহন ছিল ৩০ হাজার ৮১৭টি। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির জানান, স্বাভাবিক সময়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন পারাপার হয়। এবার ঈদের ছুটির শুরুতে এবং শেষে যানবাহন পারাপার কয়েক গুণ বেড়ে যায়।