Samakal:
2025-11-03@09:11:24 GMT

মাসে আড়াই কোটি টাকার দুধ বিক্রি

Published: 10th, February 2025 GMT

মাসে আড়াই কোটি টাকার দুধ বিক্রি

নদীর দুই পাড় ঘেঁষে হাঁটা পথ। সেই পথে হেঁটে চলছেন সাড়ে তিনশ থেকে চারশ কিষান-কিষানি। প্রত্যেকের মাথায় দুধভর্তি সিলভারের কলস। তাদের গন্তব্য মানিকগঞ্জের সাটুরিয়ার গোপালপুর বাজার। 
প্রতিদিন এই বাজারে ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি হয়। প্রতি লিটার দুধের দাম ৬০ থেকে ৭০ টাকা। বাজারটিতে দিনে আট থেকে ৯ লাখ ও মাসে আড়াই থেকে তিন কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হয়। 
উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নে ধলেশ্বরী নদীর পূর্ব পাড়ে গোপালপুর বাজারটি অবস্থিত। নদীর পশ্চিম পাশে রাজৈর, কাকর্দাসহ আরও কয়েকটি গ্রাম। গ্রামগুলো থেকে কিষান-কিষানির পাশাপাশি তাদের সন্তানরাও গোপালপুর বাজারে নিয়ে দুধ বিক্রি করে। এসব দুধ কিনে ঢাকা, গাজীপুরসহ আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ করেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা। সাটুরিয়ার রাজৈর, বরাইদ, ধুনট, কাকরাইদ, গালা, তিল্লির চর, নাটুয়াবাড়ীসহ আশপাশের ১৫ গ্রামের প্রায় বাড়িতেই গরু লালনপালন করা হয়।
যেভাবে গড়ে ওঠে বাজার
আশির দশকের শুরুর দিকে গোপালপুর গ্রামের আশপাশে চার-পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে কোনো বাজার ছিল না। নিজেদের ফসল ও গরুর দুধ বিক্রি করতে গোপালপুরসহ আশপাশের গ্রামগুলোর কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হতো। নৌকায় করে তাদের উপজেলা সদরে ফসল ও দুধ বিক্রি করতে যেতে হতো। পরে গোপালপুর গ্রামে বাজার বসানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়। ১৯৮৫ সালে বরাইদ ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আব্দুল হাই গোপালপুর গ্রামে কিছু জমি কেনেন। পরে সে বছর ডিসেম্বর মাসের শুরুতে ওই জমিতে হাট বসানোর পরিকল্পনা করা হয়। গ্রামের লোকজন তাদের উৎপাদিত ফসল, দুধ ও কৃষিপণ্য এই বাজারে নিয়ে বিক্রি শুরু করেন। ধীরে ধীরে কয়েক গ্রামের মানুষও এই বাজারে বেচাকেনা শুরু করেন। শুরুতে গোপালপুর ও আশপাশের মানুষই এসব দুধের ক্রেতা ছিলেন। ফলে তারা আশানুরূপ দাম পেতেন না। নব্বই দশকের শুরু থেকেই এ বাজারে বিপুল পরিমাণ দুধ বেচাকেনা শুরু হয়। স্থানীয় পাইকাররা এসব দুধ কিনে মিষ্টির দোকানগুলোতে সরবারহ করেন।
ইউপি চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আবদুল হাই বলেন, তিনি জমি কিনে সেখানে বাজার বসিয়েছেন। পরে এসব জমি দান করে দেন। দুধের বাজার হিসেবে এখন গোপালপুর বাজারের পরিচিতি সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে। 
আয়ের অন্যতম উৎস গরু পালন
রাজৈর, কাকরাইদ, বরাইদ ও গোপালপুর গ্রামের বেশির ভাগ মানুষ দিনমজুর ও কৃষিজীবী। তারা ভুট্টা, ধান, পাট ও সর্ষের আবাদ করেন। তবে এখানকার মানুষের আয়ের অন্যতম উৎস গরু পালন। গ্রামগুলোর প্রায় প্রত্যেক কৃষকের বাড়িতে দুই থেকে ১০টি পর্যন্ত গরু লালনপালন করা হয়। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে সাড়ে ৮টার মধ্যে কয়েকশ কিষান-কিষানি দুধভর্তি কলস নিয়ে গোপালপুর খেয়াঘাটের পশ্চিম পাশে আসেন। খেয়া নৌকায় নদী পার হয়ে ১০-১৫ মিনিট হাঁটার পর গোপালপুর বাজারে পৌঁছান। বাজারে যাওয়ার পরপরই পাইকারি ব্যবসায়ীদের লোকজন দুধ পরিমাপ করে প্লাস্টিকের ড্রামে ভর্তি করেন। ঘণ্টাখানেকের মধ্যে শেষ হয়ে যায় দুধ বিক্রি। পরে পাইকারি ব্যবসায়ীরা পিকআপভ্যানে করে ড্রামভর্তি দুধ নিয়ে যান।
সম্প্রতি সকাল ৭টার দিকে কাকরাইদ গ্রামের কয়েকজন কৃষকের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, প্রত্যেকের বাড়িতেই রয়েছে গোয়ালঘর। গোয়ালঘরগুলোতে বাঁধা গাভিগুলোকে খাবার খাওয়াচ্ছেন বাড়ির কিষান-কিষানি। এরপর শুরু হয় দুধ দোহানোর কর্মযজ্ঞ। বাড়ির উঠানে গাভির খামার করেছেন কাকরাইদ গ্রামের কৃষক মো.

লুৎফর রহমান। খামারে তিনি চারটি দেশি ক্রস জাতের গাভি লালনপালন করছেন। গাভি চারটি দোহানো শেষ হলে পাতিল থেকে দুধ ঢেলে কলসে ভরেন। পরে কলসের দুধ নিয়ে বাজারের দিকে ছোটেন লুৎফর ও তাঁর বড় ছেলে ওয়াসিম। 
লুৎফর রহমান বলেন, ২৫ বছর ধরে তিনি বাড়িতে গাভি লালনপালন করছেন। বর্তমানে তাঁর খামারে ছয়টি গরু রয়েছে। এর মধ্যে চারটি গাভি ও দুটি ষাঁড়। চারটি গাভি প্রতিদিন ৩২ থেকে ৩৫ লিটার দুধ দেয়। প্রতি লিটার দুধ বাজারে ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হয়। 
রাজৈর গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমানও বাড়ির সামনে উঠানে ছোট খামারে চারটি গাভি পালন করছেন। তিনি বলেন, চারটি গাভি প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩২ লিটার দুধ দেয়। দুধ বিক্রি করেই তাঁর সংসার চলে।
আছে কিছু সমস্যাও
গোপালপুর এলাকায় ধলেশ্বরী নদীতে দীর্ঘদিন সেতু নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছেন এলাকার লোকজন। সেতু না থাকায় কিষান-কিষানিদের দুধ নিয়ে বাজারে আসতে খেয়া নৌকার ওপর ভরসা করতে হয়। এতে বাজারে দুধ আনতে বেশি সময় লেগে যায়। এ ছাড়া ফসল ও কৃষিপণ্য নিতেও কৃষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। রাজৈর গ্রামের কৃষক সাইদুর রহমান বলেন, তারা দীর্ঘদিন ধরে একটি সেতুর দাবি জানিয়ে আসছেন। সেতুটি হলে দুধ নিয়ে বাজারে যেতে কষ্ট করতে হতো না। 
গোপালপুর বাজারের বণিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, প্রতিদিন ২৫০ থেকে ৩০০ মণ দুধ বিক্রি হয়। যার মূল্য ৮ লাখ টাকার বেশি। এ হিসাবে প্রতি মাসে বাজারটিতে প্রায় আড়াই কোটি টাকার দুধ বেচাকেনা হয়। পাইকারি ব্যবসায়ীরা দুধ কিনে ঢাকাসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন। 
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র রহম ন ব যবস য় আশপ শ র

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ