গত মৌসুমে ১২ শতাংশ জমি থেকে ৬৬ মণ টমেটোর ফলন পেয়েছিলেন নবদ্বীপ মল্লিক। তাঁর উৎপাদন খরচ হয়েছিল ৭ হাজার টাকা। গড়ে ১৫ টাকা পর্যন্ত দর পেয়েছিলেন সেবার। পরিবহন ও শ্রমিক খরচ বাদ দিয়ে তাঁর মুনাফা হয়েছিল ৩৩ হাজার টাকা। একই পরিমাণ জমিতে চলতি মৌসুমে তাঁর খরচ হয়েছে সাড়ে ৭ হাজার টাকা। টমেটো উৎপাদন হয়েছে প্রায় ৭০ মণ। গতকাল বৃহস্পতিবার পর্যন্ত মাত্র ৭ হাজার টাকার টমেটো বিক্রি করেছেন নবদ্বীপ।
এই চাষির বাড়ি খুলনার ডুমুরিয়া উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের বরাতিয়া গ্রামে। কৃষিতে অবদানের জন্য অতীতে জাতীয় পুরস্কারও পেয়েছেন নবদ্বীপ। তিনি বলেন, চলতি মৌসুমে খরচ ওঠানোই কঠিন হয়ে পড়েছে। একই অবস্থা উপজেলার প্রায় সব চাষির।
ডুমুরিয়ায় এক কেজি টমেটো বিক্রি করে মাত্র তিন টাকা পাচ্ছেন চাষিরা। অথচ একজন শ্রমিকের মজুরি দিতে হয় দিনে ৮০০ টাকারও বেশি। ছয় মণ টমেটো বিক্রি করেও সেই মজুরি পরিশোধ করতে পারছেন না তারা। এর সঙ্গে পরিবহন খরচ তো আছেই। এমন পরিস্থিতিতে অধিকাংশ ক্ষেতেই টমেটো নষ্ট হচ্ছে। বাজারেও ক্রেতা নেই। ফলে টমেটোর স্তূপ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। উপজেলার বেশির ভাগ কৃষকের মাথায় এখন লোকসানের বোঝা।
কৃষি অফিস সূত্র জানায়, ডুমুরিয়া উপজেলায় ১৪টি ইউনিয়নের ১২৬টি গ্রামে টমেটো চাষ হয়েছে। চিংড়ি ঘেরের বেড়িবাঁধের অবশিষ্ট জায়গায়ই টমেটোর চাষ হয় ব্যাপকভাবে। অল্প খরচে বেশি লাভ হতো বলে চাষিরা কয়েক মৌসুম ধরে আগ্রহী হয়ে উঠছিলেন। উপজেলাজুড়ে চলতি মৌসুমে ৪০০ হেক্টর জমিতে টমেটোর আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টর জমিতে ২৩ টন টমেটো উৎপাদনের আশা করেছেন কর্মকর্তারা।
অথচ গত মৌসুমে একই জমিতে ২১ টন টমেটো উৎপাদন হয়েছিল। এবার উৎপাদন বেড়েছে প্রায় ২ টন। কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গত বছর বাজারে বাইরে থেকে বিপুল পরিমাণ পাইকারি ব্যবসায়ী এসেছিলেন। ফলে কৃষকরা টমেটোর দাম ভালোই পান। এ মৌসুমে উৎপাদন ভালো হওয়ায় আশায় বুক বেঁধেছিলেন চাষিরা। বাজারে এবার পাইকার অনেক কম। যে কারণে অন্যান্য বছরের তুলনায় দাম মিলছে না।
খর্নিয়া গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, বাজারে এখন টমেটোর কেজি তিন থেকে সাড়ে তিন টাকা। একজন শ্রমিকের জন্য দিনে মজুরি গুনতে হয় ৮০০ টাকা।
এ ছাড়া পরিবহন খরচ তো আছেই। বাজারে ফড়িয়া বা ক্রেতা নেই। সব মিলিয়ে তাঁর মতো চাষিদের টমোটো এখন ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে।
ডুমুরিয়া পাইকারি বাজারের ‘আল্লার দান সবজি বিক্রয় কেন্দ্রে’র মালিক আব্দুল কাদের শেখ বলেন, বাজারে ফড়িয়া বা ক্রেতা নেই। টমেটো স্তূপ করে রাখা হয়েছে। বিক্রি না হওয়ায় পচন ধরেছে। বাধ্য হয়ে তাদের এসব টমেটো ফেলে দিতে হবে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ ইনছাদ ইবনে-আমিন বলেন, টমেটো পাকা শুরু হওয়ার পর দুই-তিন দিন সংরক্ষণ করা সম্ভব। এর পর পচন শুরু হয়।
ডুমুরিয়ায় টমেটো সংরক্ষণের মতো কোনো হিমাগার
নেই। ফলে উৎপাদিত টমেটো নিয়ে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে চাষিদের।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা
ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার
দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি।
দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’
জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।
এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।
কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।
অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।
ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।
এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।
ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।
ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’
ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।
শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।