একসময় বরেন্দ্র অঞ্চলের রুক্ষ ভূমিতে বছরে একবার ধান চাষ ছাড়া অন্য ফসল ফলানোর স্বপ্নও দেখতেন না কৃষকরা। এখন কিছু জায়গায় আমের বাগান হলেও অধিকাংশ জায়গায় ধান ছাড়া অন্যান্য ফসল তেমন হয় না। সেই ঊষর বরেন্দ্র ভূমিতে বিভিন্ন ধরনের ফুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন সাদিকুল ইসলাম টুটুল নামের এক উদ্যেক্তা। আগামীতে টিউলিপসহ বিভিন্ন ধরনের বিদেশি ফুল চাষ করার স্বপ্ন দেখছেন তিনি। এজন্য কৃষি অফিস থেকে বরাদ্দ পেয়েছেন সরকারি পলিনেট হাউজ। কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় আমের রাজধানীতে দেশি-বিদেশি ফুল চাষে বিপ্লব ঘটবে, এমনই প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের।

চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুর উপজেলার বংপুর গ্রামের বাসিন্দা সাদিকুল ইসলাম টুটুল। ভিন্ন কিছু করে চমক দেখানোর স্বপ্নে ২০১৭ সালে কয়েক বিঘা জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন তিনি। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৌশলগুলো রপ্ত করে ফুল চাষে সফলতা লাভ করেন তিনি। তখন থেকেই উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলায় ফুল সরবারহ শুরু করেন। সবকিছু ঠিক চলছিল, তবে ২০১৯-২০২০ সালে করোনাভাইরাস মহামারির সময় ফুল বিক্রি করতে না পেরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তিনি তখন ১৫ বিঘা জমির গোলাপ, গাদাসহ বিভিন্ন ধরনের ফুল বিক্রি করতে পারেননি।

তারপরও থেমে থাকেননি সাদিকুল ইসলাম টুটুল। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে আবারো ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ শুরু করেন তিনি। তারপর আর তাকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তার ফুলবাগানে কাজ করেন কয়েকজন যুবক। টুটুলের সাফল্য দেখে ফুল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন অনেকেই।

এবার ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন ও ২১ ফেব্রুয়ারিতে বিক্রির উদ্দেশ্যে কয়েক রকমের গোলাপ, গাদা, জারবেরা উৎপাদন করেছেন টুটুল। কয়েক লাখ টাকা আয়ের আশা করছেন তিনি।

শ্রমিকরা জানিয়েছেন, সাদিকুল ইসলাম টুটুলের ফুলবাগানে কাজ করে তাদের বেকারত্ব ঘুচেছে। এখন তারাও পরিবার নিয়ে ভালো আছেন। 

ফুল চাষে আগ্রহী আশিকুজ্জামান বলে, “বরেন্দ্র অঞ্চলে আগে বছরে শুধু একবার ধান চাষ হতো। তারপর শুরু হয় আম চাষ। এখন ফুল চাষ করে সাফল্য পাচ্ছেন সাদিকুল ইসলাম টুটুল। কৃষি অফিস থেকে সহযোগিতা পেলে আমের রাজ্যে দেশি-বিদেশি ফুল চাষে বিপ্লব ঘটবে।”

সাদিকুল ইসলাম টুটুল বলেন, “আমাদের জেলায় ফুল চাষ তেমন হয় না। নতুন কিছু করার উদ্দেশ্যে ৭ বছর আগে স্বল্প পরিসরে ফুল চাষ শুরু করি। মাঝে করোনার সময় ১৫ বিঘা জমির ফুল বিক্রি করতে না পেরে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। তারপরও থেমে থাকিনি। ক্ষতি কাটিয়ে উঠতেই আবারও ফুল চাষ করেছি। এখন ৫ বিঘা জমিতে গোলাপ, দেড় বিঘায় গাদা ফুলসহ সব মিলিয়ে ১০ বিঘা জমিতে ফুল চাষ করছি।” 

তিনি আরো বলেন, “ভালোবাসা দিবস, বসন্তবরণ, ২১ ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে বাগানে গোলাপ, গাদাসহ কয়েক ধরনের ফুল চাষ করেছি। এবার কয়েক লাখ টাকা লাভ করার আশা করছি।” 

গোমস্তাপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তানভীর আহমেদ সরকার বলেছেন, “চাঁপাইনবাবগঞ্জের একমাত্র ফুলচাষি সাদিকুল ইসলাম টুটুল। তিনি কয়েক বছর ধরেই ফুল চাষ করছেন। ভালোবাসা থেকেই তিনি ফুল চাষে আগ্রহী হয়েছেন। উন্নত মানের ফুল চাষের জন্য তাকে একটি পলিনেট হাউজ বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এখানে তিনি জারবেরা ও টিউলিপ চাষ করবেন। আমরা কৃষি অফিসের পক্ষ থেকে ওনার সঙ্গে যোগাযোগ রাখি এবং তাকে পরামর্শ দিয়ে থাকি।” 

তিনি আরো বলেন, “যেহেতু, সাদিকুল ইসলাম ফুল চাষ করে সাফল্য পেয়েছেন, তাহলে বলা যায়, বরেন্দ্র অঞ্চলের মাটি ফুল চাষের জন্য উপযুক্ত। ফুল চাষ করে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হন না। সাদিকুল ইসলাম উদ্যোক্তাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।”

ঢাকা/রফিক

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স দ ক ল ইসল ম ট ট ল ফ ল চ ষ কর বর ন দ র স ফল য ধরন র

এছাড়াও পড়ুন:

গণভোট নিয়ে মতভেদে উপদেষ্টা পরিষদের উদ্বেগ

জুলাই জাতীয় সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়নের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে, তাতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ। এ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজ উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করে সম্ভাব্য দ্রুতত সময়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা দেওয়ার জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।

সোমবার (৩ নভেম্বর) দুপুরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়। যদিও এর আগেই এক সংবাদ সম্মেলনে এমন কথায় জানান আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল।

প্রেস উইং জানায়, জাতীয় ঐক্যমত কমিশন থেকে প্রণীত জুলাই সনদ এবং এর বাস্তবায়ন সংক্রান্ত বিষয়ে উপদেষ্টা পরিষদের একটি জরুরি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সংস্কার বিষয়ে ঐকমত্য স্থাপনের প্রচেষ্টার জন্য এবং বহু বিষয়ে ঐকমত্য প্রতিষ্ঠার জন্য ঐকমত্য কমিশন ও রাজনৈতিক দলগুলির প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।  

এতে বলা হয়, উপদেষ্টা পরিষদের সভায় জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবিত জুলাই জাতীয় সনদ (সংবিধান সংস্কার) আদেশ চূড়ান্তকরণ এবং এতে উল্লেখিত গণভোট আয়োজন ও গণভোটের বিষয়বস্তু নিয়ে আলোচনা করা হয়। এতে লক্ষ্য করা হয় যে, ঐকমত্য কমিশনে দীর্ঘদিন আলোচনার পরও কয়েকটি সংস্কারের সুপারিশ বিষয়ে ভিন্ন মত রয়েছে। এছাড়া, গণভোট কবে অনুষ্ঠিত হবে ও এর বিষয়বস্তু কী হবে এসব প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলোর  মধ্যে যে মতভেদ দেখা দিয়েছে সে জন্য সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। এই পরিপ্রেক্ষিতে গণভোটের সময় কখন হবে, গণভোটের বিষয়বস্তু কী হবে, জুলাই সনদে বর্ণিত ভিন্নমতগুলো প্রসঙ্গে কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নিয়ে ঐক্যমত কমিশনের প্রস্তাবগুলোর আলোকে জরুরী ভিত্তিতে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন বলে সভা অভিমত ব্যক্ত করে।

এসব ক্ষেত্রে ফ্যসিবাদবিরোধী আন্দোলনের দীর্ঘদিনের মিত্র রাজনৈতিক দলগুলোকে স্বীয় উদ্যোগে নিজেদের মধ্যে আলাপ আলোচনা করে দ্রুততম সময়ে ( সম্ভব  হলে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে) সরকারকে ঐক্যবদ্ধ দিকনির্দেশনা প্রদান করার আহ্বান জানানো হয়। এমন নির্দেশনা পেলে সরকারের পক্ষে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অনেক সহজ হবে। বলেও উল্লেখ করা হয়। পরিস্থিতিতে কালক্ষেপণের যেকোনো সুযোগ নাই সেটাও সবার বিবেচনায় রাখার জন্য বলা হয়।

সভায় ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির প্রথমার্থে আগামী সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে সরকারের সংকল্প পুনর্ব্যক্ত করা হয়।

রাজনৈতিক দলগুলোর কাছ থেকে ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা না পেলে কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে আইন উপদেষ্টা বলেন, “রাজনৈতিক দলগুলো নিজেরা আলাপ-আলোচনা করে এই বিষয়েও আমাদের একটি ঐক্যবদ্ধ নির্দেশনা দেবে—এ প্রত্যাশা করছি। ওনারা যদি আলাপ-আলোচনা করেন, আমাদের জন্য কাজটি অত্যন্ত সহজ হয়। ওনারা যদি ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্ত দিতে না পারে, অবশ্যই সরকার সরকারের মতো সিদ্ধান্ত নেবে।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ