পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জে বৈধ কাগজ না থাকলেও বছরের পর বছর ধরে চলছে ইটভাটা। অনুমোদনহীন এসব ভাটার পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র কিংবা জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স নেই। কৃষিজমির মাটি কেটে চালানো হচ্ছে কার্যক্রম। মাটি সংগ্রহ থেকে ইট বিক্রি পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে যেন অনিয়মই নিয়ম হয়ে গেছে। প্রশাসনও এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না বলে অভিযোগ রয়েছে।
ইটভাটা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে আছেন বলে দাবি মালিক সমিতির সভাপতি মো.

সুফিউল্লাহ সুফির। তিনি বলেন, ‘সরকার ইটভাটা বন্ধও করছে না, আবার হুটহাট অভিযান চালিয়ে জরিমানা করছে। আমরা অনুমোদন নিয়েই চালাতে চাই। কিন্তু আইনের বেড়াজালে লাইসেন্স পাওয়া জটিল বিষয়।’
জানা গেছে, উপজেলায় ২৫টি ইটভাটার মধ্যে বন্ধ রয়েছে পাঁচটি। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ও জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স আছে মাত্র সাতটির। বাকি ১৩টির বৈধ কাগজ নেই। সরেজমিনে দেখা যায়, সব ইটভাটা লোকালয়ের কাছাকাছি। অল্প দূরত্বে রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। 
অবৈধ ইটভাটায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে বলে দাবি পঞ্চগড় পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক ইউসুফ আলীর। তিনি বলেন, কয়েকটি ভাটার মালিককে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হয়েছে। একটির বিরুদ্ধে হয়েছে নিয়মিত মামলা। 
কৃষিজমির উপরিভাগের তিন থেকে চার ফুট কিংবা এরও বেশি গভীর করে মাটি কেটে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইটভাটায়। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নাঈম মোর্শেদ বলেন, টপ সয়েল হলো মাটির ওপরের সেই অংশ, যেখানে গাছপালা জন্মে। টপ সয়েল কাটায় ফসল উৎপাদন হ্রাস পায়।
কৃষিজমির মাটি কেটে ট্রাক্টর কিংবা ডাম্প ট্রাকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ভাটায়। দুই শতাধিক ট্রাক্টর ও ২০টির বেশি ডাম্প ট্রাক দিয়ে ২০টি ইটভাটায় পরিবহন করা হচ্ছে। এসব যানবাহনের কারণে কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো দ্রুত ব্যবহারের অনুপযোগী হচ্ছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা প্রকৌশলী শাহরিয়ার ইসলাম শাকিল।
মাটি ও ইট পরিবহনে যুক্ত যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি ঘটছে। বৃহস্পতিবার ট্রাক্টরের সঙ্গে সংঘর্ষে একজনের মৃত্যু হয়। কৃষিকাজে ব্যবহৃত এ যানের সড়কে চলাচলের অনুমতি না থাকলেও অবাধে চলছে। দেবীগঞ্জ থানার ওসি সোহেল রানা বলেন, এগুলো নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।
আগের সরকারের আমলে এসব ইটভাটা চালু হয়েছে বলে জানান বাপার পঞ্চগড় আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক আজাহারুল ইসলাম জুয়েল। এমন কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়ার আহবান জানান তিনি।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ইটভাটা চালাতে হলে নিয়মনীতি মানতে হবে। অনিয়মকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইটভ ট উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ