খুশি করতে না পারলেই কপাল পোড়ে মিলারের
Published: 18th, February 2025 GMT
খাদ্য অধিদপ্তরে চাল, আটা ও ময়দা কলের মালিকদের তালিকাভুক্তি নিয়ে চলছে ব্যাপক অনিয়ম। খাদ্য মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের কিছু অসাধু কর্মকর্তা মিলেমিশে গড়ে তুলেছেন ঘুষ বাণিজ্যের সিন্ডিকেট। তাদের ‘খুশি’ করতে না পারলে আবেদন করলেও যোগ্য মিলারদের তালিকাভুক্ত করা হচ্ছে না। দিনের পর দিন ফেলে রাখা হয় আবেদন। এমন ঘটনাও ঘটেছে, মিলার হিসেবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পর চাহিদামাফিক ‘খুশি’ না করায় এক মিলারের অনুমোদনপত্র পরদিনই বাতিল করা হয়েছে।
আবার খাদ্য অধিদপ্তরের তালিকাভুক্তির জন্য জেলা খাদ্য কর্মকর্তার মাধ্যমে আবেদনের নিয়ম থাকলেও তা মানা হয়নি। অসাধু কর্মকর্তাদের হাত করে সরাসরি খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বা সচিব বরাবর আবেদন করে তালিকাভুক্তির ঘটনাও ঘটেছে। এতে তালিকাভুক্তির বাইরে থেকে যাচ্ছেন অনেক প্রকৃত মিলার। ফলে দেশে খাদ্য মজুতের সঠিক চিত্রও অনেক সময় আড়ালে থেকে যায়। এটি সরকার ও দেশের মানুষেরও ভয়াবহ সংকটে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করছে।
সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ধান-চাল সংগ্রহ ও দেশের মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ধান, চাল, আটা ও পুষ্টি চালের মিল তালিকাভুক্ত করে সরকার। পরে এসব মিলারের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করে থাকে। নিয়ম অনুযায়ী পুষ্টি চালের প্রয়োজনীয়তার যৌক্তিক কারণ উল্লেখ করে ডিসি ফুড বরাবর আবেদন করেন স্থানীয়রা। ওই কর্মকর্তা যৌক্তিকতা পর্যালোচনা করে আগ্রহী মিলারদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেন। তাদের আবেদন যাচাই-বাছাই করে বৈধ ও যোগ্য আবেদনগুলো অনুমোদনের জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর পাঠানো হয়। কিন্তু অনেক ক্ষেত্রেই দেখা গেছে এ নিয়ম অনুপস্থিত।
গত ২৭ অক্টোবর আবেদন ছাড়াই খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের পিএস আরিফুল ইসলাম নিজেই কুষ্টিয়ার কুমারখালীর শিলাইদহের আড়পাড়ায় অবস্থিত মেসার্স নামিরা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠানকে অনুমোদন দেওয়ার জন্য খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বরাবর আবেদন দেন। এ প্রতিষ্ঠানটির মালিক গাজী নাজমুল তারেক। নামিরা এন্টারপ্রাইজকে যোগ্য হিসেবে উল্লেখ করে খাদ্য মন্ত্রণালয়কে চূড়ান্ত অনুমোদন দেওয়ার জন্য মহাপরিচালক আবদুল খালেক তা মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেন। মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জয়নাল মোল্লা সেটি অনুমোদনের পক্ষে মত দেন। পরে গত ১৭ ডিসেম্বর নামিরা এন্টারপ্রাইজ অনুমোদন পেয়ে যায়।
অভিযোগ রয়েছে, অনিয়মতান্ত্রিকভাবে এই অনুমোদন দেওয়ার পেছনে মিলারের কাছ থেকে একটি বড় অঙ্কের আর্থিক সুবিধা নিয়ে এ কাজ করেছেন পিএস আরিফ। এর সুবিধাভোগী হয়েছেন খাদ্য অধিদপ্তরসহ মন্ত্রণালয়ের কয়েকজন অসাধু কর্মকর্তা।
আবার চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরের মরিয়ম অটো ফ্লাওয়ার মিলের মালিক মজিবুর রহমান নিয়ম মেনে অনুমোদনের জন্য আবেদন করলেও তাঁর আবেদনটি দীর্ঘদিন পড়ে থাকে। পরে তিনি সচিবের সেই পিএসের সঙ্গে দেখা করেন। আরিফ সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীর সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দেন। পরে ওই কর্মকর্তা অনুমোদন বাবদ আট লাখ টাকা খরচ আছে বলে জানান। তাঁর সঙ্গে আলোচনা করে রব্বানীকে পাঁচ লাখ টাকা দেন মজিবুর রহমান। টাকা দেওয়ার পরদিন গত ২৩ ডিসেম্বর মরিয়ম অটো ফ্লাওয়ার মিল অনুমোদন পেয়ে যায়। কিন্তু অনুমোদনের পর বাকি তিন লাখ টাকা দিতে গড়িমসি করেন মিলার। ফলে অনুমোদনের পরদিনই মিলের অনুমোদন বাতিলের আদেশ দেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জয়নাল মোল্লা।
এ ঘটনার পর মজিবুর রহমান চাঁপাইনবাবগঞ্জ-৩ আসনের জামায়াতে ইসলামীর সাবেক এমপি লুৎফর রহমানের শরণাপন্ন হন। তিনি সশরীরে খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সালামকে বিস্তারিত জানান। পিএস আরিফ ও পিও রব্বানীকে টাকা দেওয়ার কথাও অবহিত করেন। ওই মুহূর্তে উপসচিব জয়নাল মোল্লাও উপস্থিত ছিলেন। ধরা পড়ে যাওয়ায় পরদিনই রব্বানী মরিয়ম অটো ফ্লাওয়ার মিলের মালিককে তিন লাখ টাকা ফেরত দিয়ে দেন।
অবশ্য এ প্রসঙ্গে গোলাম রব্বানী বলেন, মিলার হিসেবে তালিকাভুক্তির জন্য কারিগরি কমিটির একটি প্রতিবেদন লাগে। কিন্তু তাঁর প্রতিবেদনটি ছিল বেশ আগের। কিন্তু যে কর্মকর্তা এটির মূল্যায়ন করেন, তিনি মতামত দিয়েছিলেন হালনাগাদ প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য। কিন্তু ই-নথি হওয়ার কারণে ভুলে ক্লিক করার ফলে অনুমোদন পেয়ে যায়। পরে ধরা পড়ার পর সেটি বাতিল করা হয়। এর সঙ্গে আর্থিক কোনো সম্পৃক্ততা নেই। পরে প্রতিবেদন দিলে সেটি অনুমোদন পায়।
এ প্রসঙ্গে উপসচিব জয়নাল মোল্লা বলেন, একটি মিল অনুমোদন পেয়েছিল। কেন সেটি বাতিল হলো সে ব্যাপারে সাবেক এমপি লুৎফর রহমান সচিব মহোদয়ের সঙ্গে দেখা করেছিলেন। কিন্তু কেন অনুমোদন পেল, আবার কেনই বা বাতিল হলো– সে প্রসঙ্গে তিনি কিছু বলতে চাননি।
এ প্রসঙ্গে সাবেক এমপি লুৎফর রহমান সমকালকে বলেন, কী আর বলব। যখন আমি গেলাম তখন বলল, কাগজপত্রের ঘাটতি আছে। কিন্তু যদি ঘাটতিই থাকে তাহলে তারা আগে কেন দেখল না? এখানে একটা রহস্য তো আছেই। সেটা আর বলতে চাই না। তবে যে কাগজের কথা বলেছিল, সেটা পূরণ করার পর তারা আবার মিলটিকে তালিকাভুক্ত করেছে।
এদিকে প্যাকেট আটা-ময়দা বিক্রির জন্য আটার মিলগুলোরও বিভিন্ন প্রক্রিয়া অনুসরণ করে অনুমোদনের নিয়ম রয়েছে। কিন্তু খাদ্য অধিদপ্তরের কোনো প্রকার সুপারিশ ছাড়াই বেশ কয়েকটা আটা-ময়দার মিলকে অনুমোদন দিয়েছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো পাবনা সদরের বলরামপুরের মোহাম্মদ আজাদ খানের মালিকানাধীন মেসার্স ইন্ট্রা ফুড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। গত ২৩ ডিসেম্বর এই মিলটি অনুমোদন পায়।
সংশ্লিষ্ট একাধিক ব্যক্তি জানান, খাদ্য অধিদপ্তর ও খাদ্য মন্ত্রণালয়ের মিলারদের তালিকাভুক্ত নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে এসব কারসাজি চলছে। এ ক্ষেত্রে ঘুরেফিরে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিবের পিএস, খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সালাম, অনুমোদন প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত খাদ্য মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জয়নাল মোল্লা, সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা গোলাম রব্বানীর নাম ঘুরেফিরে আসছে। নানা ধরনের বদলি বাণিজ্যও এই সিন্ডিকেটের মাধ্যমে হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
এর মধ্যে সচিবের পিএস আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ হলো, সরকার থেকে ৩০ লাখ টাকা সুদমুক্ত ঋণ নিয়ে গাড়ি কেনার পরও তিনি খাদ্য অধিদপ্তরের একটি গাড়ি (পাজেরো ঢাকা মেট্রো ১৪১৮৬২) সার্বক্ষণিক পরিবারের কাজে ব্যবহার করেন। ওই গাড়ির চালক দীন ইসলাম খাদ্য অধিদপ্তরেরই কর্মী।
অবশ্য এসব প্রসঙ্গে পিএস আরিফুল ইসলাম বলেন, নিয়ম অনুযায়ী ডিসি ফুডের মাধ্যমেই আগ্রহী মিলারদের আবেদন করতে হয়। অনেকে সরাসরি সচিব বরাবর করে। তবে এখানে তাঁর কিছু করার নেই। খাদ্য অধিদপ্তর থেকেই অনুমোদনের সব প্রক্রিয়া হয়। মন্ত্রণালয় সেটা চূড়ান্ত করে। এ ছাড়া খাদ্য অধিদপ্তরের কোনো গাড়ি ব্যবহার করেন না বলেও দাবি করেন তিনি।
এ প্রসঙ্গে বক্তব্য জানাতে রাজি হননি মেসার্স নামিরা এন্টারপ্রাইজের মালিক গাজী নাজমুল তারেক ও মরিয়ম অটো ফ্লাওয়ার মিলের মালিক মজিবুর রহমান।
অপর অভিযুক্ত খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক আবদুস সালামও সমকালের কাছে এসব অনিয়মের কথা অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটেনি। এ বিষয়ে একটি কারিগরি কমিটি আছে। তাদের মাধ্যমে যাচাই-বাছাই করে অনুমোদন দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে মহাপরিচালক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এ প রসঙ গ র জন য র পর চ ন র পর ইসল ম বর বর পরদ ন
এছাড়াও পড়ুন:
সার্চ দুনিয়ার নতুন দিগন্ত জিইও: দেশের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো কী প্
ইন্টারনেট সার্চ দুনিয়ায় চলছে নীরব এক বিপ্লব। তথ্য খোঁজার ধরন বদলে যাচ্ছে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে দ্রুত। আগে যেখানে গুগলে উচ্চ র্যাংকিং মানেই ছিল সাফল্য, এখন সেই জায়গা নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-নির্ভর সার্চ টুল।
সার্চ জগতের নতুন চ্যালেঞ্জ
চ্যাটজিপিটি, গুগল জেমিনি, মাইক্রোসফট কপিলট কিংবা পারপ্লেক্সিটি এআই-এগুলো আর শুধু সার্চ ইঞ্জিন নয়, বরং উত্তর তৈরিকারক ইঞ্জিন। ব্যবহারকারী এখন শুধু ‘লিংক’ নয়, বরং সরাসরি উত্তর পেতে চায়। আর এই পরিবর্তনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার জন্যই এসেছে নতুন এক কৌশল- জিইও বা জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন।
জিইও কী?
জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যেখানে আপনার ওয়েবসাইট ও কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো হয় যাতে এআই-চালিত সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার তথ্য চিনতে, বুঝতে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে সেটি অন্তর্ভুক্ত করতে পারে।
আগে ব্র্যান্ডগুলোর ফোকাস ছিল গুগলের প্রথম পাতায় জায়গা করে নেওয়া। কিন্তু এখন গুরুত্ব পাচ্ছে- চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-এর উত্তরে আপনার ব্র্যান্ডের নাম আসছে কি না!
এসইও বনাম জিইও: সার্চ দুনিয়ার নতুন যুগের পালাবদল
অনেকেই এসইও (সার্চ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এবং জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) এক মনে করেন, কিন্তু এদের মধ্যে মূলত লক্ষ্য ও কৌশল ভিন্ন। এসইও হচ্ছে পুরোনো পদ্ধতি, অন্যদিকে জিইও হচ্ছে নতুন পদ্ধতি।
* মূল লক্ষ্য
এসইও: সার্চ ইঞ্জিনে র্যাংক বাড়ানো
জিইও: এআই সার্চের উত্তরে দৃশ্যমান হওয়া
* কাজের ধরন
এসইও: কিওয়ার্ড ও ব্যাকলিংক ভিত্তিক
জিইও: কনটেক্সট, প্রাসঙ্গিকতা ও ব্র্যান্ড অথরিটি নির্ভর
* ফলাফল
এসইও: ক্লিক ও ট্রাফিক বৃদ্ধি
জিইও: ব্র্যান্ড উল্লেখ ও আস্থা বৃদ্ধি
* প্ল্যাটফর্ম
এসইও: গুগল, বিং ইত্যাদি সার্চ ইঞ্জিন
জিইও: চ্যাটজিপিটি, জেমিনি, পারপ্লেক্সিটি, এসজিই ইত্যাদি এআই সার্চ
এসইও এখনও গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু ভবিষ্যতের সার্চ ইকোসিস্টেমে জিইও সমান অপরিহার্য হয়ে উঠছে।
বাংলাদেশি ব্যবসার জন্য জিইও-এর গুরুত্ব
বাংলাদেশে ডিজিটাল মার্কেটের ক্রমবর্ধমান প্রবৃদ্ধি স্পষ্টভাবে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শিক্ষা, ট্রাভেল, স্বাস্থ্যসেবা, ই-কমার্স, রিয়েল এস্টেট- প্রায় প্রতিটি খাতেই ব্যবসা অনলাইনে আরো দৃশ্যমান হতে চাচ্ছে। কিন্তু বদলেছে মানুষের সার্চ করার ধরন। এখন তারা শুধু গুগলে সার্চ করেই সন্তুষ্ট থাকছে না, তারা এআই-চালিত সার্চ টুলগুলো যেমন চ্যাটজিপিটি, জেমিনি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মাধ্যমে সরাসরি উত্তর খুঁজছে।
গার্টনারের এক গবেষণা অনুযায়ী, ২০২৬ সালের মধ্যে প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনে সার্চ ভলিউম প্রায় ২৫ শতাংশ কমে যাবে- কারণ ব্যবহারকারীরা দ্রুতই এআই-চালিত সার্চ ও চ্যাটবটের দিকে ঝুঁকছে। (তথ্যসূত্র: Gartner, “Search Engine Volume Will Drop 25% by 2026, Due to AI Chatbots and Other Virtual Agents)
তবে এই পরিবর্তনের প্রভাব ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ। ধরুন, কেউ চ্যাটজিপিটি-তে লিখল, ‘ঢাকায় সেরা অ্যাকাউন্টিং ফার্ম কোনটি?’ যদি আপনার কোম্পানির নাম বা কনটেন্ট এআই-এর তৈরি উত্তরে না আসে, তাহলে সম্ভাব্য ক্লায়েন্ট ও ব্যবসার সুযোগ হাতছাড়া হচ্ছে।
মূলত এখানেই জিইও-এর গুরুত্ব উঠে আসে। জিইও ব্যবহার করে কনটেন্ট এমনভাবে সাজানো যায় যাতে এআই সার্চ সিস্টেম আপনার ব্র্যান্ডকে সহজেই চিনতে পারে, বুঝতে পারে এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তরে উল্লেখ করে। অর্থাৎ, বাংলাদেশের প্রতিটি ব্যবসা যদি এআই-এর দুনিয়ায় দৃশ্যমান থাকতে চায়, জিইও’র সঙ্গে খাপ খাওয়ানো এখন আর বিকল্প নয়- এটি একান্ত প্রয়োজন।
জিইও’র জন্য কীভাবে প্রস্তুতি নেবেন?
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) কোনো একদিনে শেখার মতো বিষয় না- এটি একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া, যেখানে ব্যবসাগুলোকে নিজেদের কনটেন্ট, উপস্থিতি ও বিশ্বাসযোগ্যতা এআই-বান্ধব করে গড়ে তুলতে হয়। নিচে ধাপে ধাপে দেখা যাক, কীভাবে আপনি জিইও’র পথে প্রস্তুত হতে পারবেন।
১. অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করুন
জিইও’র প্রথম ধাপ হলো আপনার ব্যবসা বা ব্র্যান্ডের বর্তমান অনলাইন উপস্থিতি যাচাই করা। চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটি-এর মতো এআই-চালিত সার্চ টুলে সার্চ দিন ‘বাংলাদেশে সেরা (আপনার ইন্ডাস্ট্রি)-এর কোম্পানিগুলো কোনগুলো?’
যদি সার্চের উত্তরে আপনার নাম না আসে, বোঝা যাবে যে আপনার এআই-দৃশ্যমানতা এখনও সীমিত। এই ক্ষেত্রে আপনাকে জিইও অনুযায়ী কনটেন্ট ও অনলাইন উপস্থিতি বাড়াতে কাজ শুরু করতে হবে।
২. বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি করুন
জেনারেটিভ এআই সার্চ সিস্টেম সেই উৎসকেই অগ্রাধিকার দেয়, যা নির্ভরযোগ্য ও যাচাইযোগ্য। তাই আপনার ওয়েবসাইটে ব্র্যান্ড, টিম, যোগাযোগ ও রিভিউসহ সব তথ্য সম্পূর্ণ ও স্বচ্ছ রাখুন।
গুগল বিজনেস প্রোফাইল নিয়মিত আপডেট করুন- ঠিকানা, সময়, পোস্ট ও রিভিউসহ।
বিশ্বস্ত সংবাদমাধ্যম ও ব্লগে ব্র্যান্ডের উল্লেখ বাড়ান।
E-E-A-T (Experience, Expertise, Authoritativeness, Trustworthiness) বজায় রাখুন।
এভাবেই এআই ও ব্যবহারকারীর কাছে আপনার ব্র্যান্ড একটি বিশ্বাসযোগ্য সোর্স হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে- যা জিইও সাফল্যের মূল চাবিকাঠি।
৩. কনভারসেশনাল কনটেন্ট লিখুন
এআই সার্চ এখন ব্যবহারকারীর প্রশ্নভিত্তিক অনুসন্ধানকে গুরুত্ব দেয়। তাই আপনার কনটেন্ট তৈরি করুন এমনভাবে যেন এটি প্রাকৃতিক প্রশ্ন ও কথোপকথনের মতো শোনায়। উদাহরণ: ‘Where can I find a trusted IELTS coaching center in Dhaka?’ ‘Where can I apply for a blue-collar job?’ এ ধরনের কনটেন্ট এআই-এর চোখে আরো সহজে বোঝার মতো হয় এবং ব্যবহারকারীর প্রশ্নের উত্তর হিসেবে উল্লেখযোগ্য।
৪. বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে সক্রিয় থাকুন
এআই শুধু ওয়েবসাইট থেকে তথ্য সংগ্রহ করে না। এটি ফেসবুক, ইউটিউব, লিংকডইন, কোরা এবং অন্যান্য সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম থেকেও তথ্য সংগ্রহ করে। তাই বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আপনার উপস্থিতি নিশ্চিত করা জিইও-এর জন্য গুরুত্বপূর্ণ।
৫. এসইও এবং জিইও একসাথে ব্যবহার করুন
ডিজিটাল দুনিয়ায় এখন শুধু সার্চ র্যাংকই যথেষ্ট নয়। এসইও যেমন গুগল সার্চে আপনার কনটেন্টকে শীর্ষে নিয়ে আসে, তেমনি নতুন যুগের জিইও (জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন) আপনার ব্র্যান্ডকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক সার্চে আরো দৃশ্যমান করে তোলে।
এসইও মূলত গুগল ও অন্যান্য সার্চ ইঞ্জিনে ওয়েবসাইটের অবস্থান উন্নত করে, আর জিইও শেখায়- কীভাবে এআই মডেলগুলো আপনার ব্র্যান্ডকে চিনবে, উল্লেখ করবে এবং বিশ্বাস করবে।
দুটি কৌশল একসাথে প্রয়োগ করলে অনলাইন উপস্থিতি অনেক বেশি শক্তিশালী হয়। একদিকে সার্চে দৃশ্যমানতা বাড়ে, অন্যদিকে এআই-নির্ভর প্ল্যাটফর্মগুলোতেও আপনার ব্র্যান্ডের নাম উঠে আসে স্বতঃস্ফূর্তভাবে।
ভবিষ্যতের সার্চ জগতে টিকে থাকতে হলে এখনই সময়- এসইও এবং জিইও-কে একসাথে কাজে লাগানোর।
বাংলাদেশের ব্যবসার জন্য জিইও’র নতুন সম্ভাবনা
জিইও বাংলাদেশের ব্যবসাগুলোর জন্য হতে পারে এক গেম চেঞ্জার। আগে যেখানে অনলাইন দৃশ্যমানতা মানেই ছিল গুগলে র্যাংক করা, এখন সেটি ধীরে ধীরে স্থান ছেড়ে দিচ্ছে এআই সার্চ ভিজিবিলিটি–কে।
আজ যদি কোনো ব্যবহারকারী চ্যাটজিপিটি বা জেমিনি-তে জিজ্ঞেস করে-
‘বাংলাদেশে নির্ভরযোগ্য অনলাইন বই বিক্রির সাইট কোনটা?’
অথবা, ‘ঢাকায় সেরা ডিজিটাল মার্কেটিং এজেন্সি কারা?’
যদি আপনার ব্র্যান্ডের নাম সেই উত্তরে উঠে আসে, সেটিই হবে প্রকৃত দৃশ্যমানতা- শুধু ক্লিক নয়, বরং আস্থা, প্রভাব ও ব্র্যান্ড অথরিটি–এর প্রতিফলন।
বাংলাদেশে এখন প্রতিদিন শত শত নতুন অনলাইন ব্যবসা শুরু হচ্ছে- ই–কমার্স, এডুকেশন, হেলথটেক, রিয়েল এস্টেট, ফাইন্যান্স, এমনকি ছোট স্টার্টআপরাও দ্রুত ডিজিটাল হচ্ছে। কিন্তু একইসঙ্গে প্রতিযোগিতাও বেড়ে যাচ্ছে বহুগুণে।
এই প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে শুধু এসইও নয়, জিইও–কেন্দ্রিক কৌশলও অপরিহার্য।
জিইও’র ভবিষ্যৎ
খুব শিগগিরই এআই সার্চ টেক্সটের বাইরে গিয়ে ভয়েস, ভিডিও ও ইমেজ কনটেন্ট থেকেও উত্তর তৈরি করবে। তখন জিইও কেবল ওয়েবসাইট নয়, বরং ভিডিও, পডকাস্ট, সোশ্যাল প্রোফাইল, নিউজ রিপোর্ট- সবকিছুর মধ্যেই প্রভাব ফেলবে।
তাই এখন থেকেই যারা জিইও-কেন্দ্রিক কৌশল গ্রহণ করবে, ভবিষ্যতের সার্চ রেভোলিউশনে নেতৃত্ব দেবে তারাই।
উপসংহার
জেনারেটিভ ইঞ্জিন অপটিমাইজেশন (জিইও) শুধু নতুন ট্রেন্ড নয়- এটি ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের পরবর্তী অধ্যায়।
এসইও যেমন আপনাকে সার্চ রেজাল্টে নিয়ে যায়, জিইও তেমনি আপনাকে নিয়ে যাবে এআই–এর উত্তরে।
‘ভবিষ্যতের সার্চে র্যাংক নয়, ব্র্যান্ডের বিশ্বাসযোগ্যতাই হবে সাফল্যের আসল মাপকাঠি।’
লেখক: হেড অব ওয়েব অ্যানালাইসিস অ্যান্ড এসইও ডিরেক্টর, ইন্টেলেক আইটি এলএলসি (ইউএসএ অ্যান্ড বাংলাদেশ)
ঢাকা/ফিরোজ