হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাটে ৬০ শতক পরিমাণ ক্ষেতে ব্রোকলি চাষ করে লাভবান ফারুক আহমেদ। এ ক্ষেতের আইলে রোপণ করা হয়েছে টমেটো গাছ। দেখতে চমৎকার। তেমনি ফলনও হয়েছে ভালো। 

চুনারুঘাট উপজেলার গোপালপুর গ্রামে ফারুক আহমেদের এক সাথে ব্রোকলি ও টমেটো চাষ মুগ্ধতা কুড়াচ্ছে মানুষের। 

তিনি নভেম্বর মাসের শেষে ব্রোকলি ও টমেটোর চারা রোপণ করেন। প্রায় ৬০ দিনের মধ্যে এতে পূর্ণ ব্রোকলি হয়। গাছে গাছে ধরেছে টমেটোও। প্রতি কেজি ব্রোকলি ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টমেটো প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। 

এসব চাষে তার খরচ হয়েছে প্রায় ৩০ হাজার টাকা। এখানে বিক্রি থেকে তিনি দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা পাওয়ার আশা করছেন। ক্রেতারা ক্ষেতে এসে ব্রোকলি ক্রয় করে নিয়ে যাচ্ছে। মাঝে মধ্যে বাজারে নিয়েও বিক্রি করেন। 

ব্রোকলির সাথে আইলে টমেটোর ভালো ফলন পেয়ে আনন্দিত ফারুক আহমেদ। তিনি চুনারুঘাট উপজেলা কৃষি অফিসের মুড়ারবন্দ ব্লকে উপ-সহকারী কৃষি অফিসার হিসেবে কর্মরত। অফিসের দায়িত্ব পালন শেষে তিনি নিজ বাড়ির আশপাশে জমিতে শ্রমিক নিয়ে চাষাবাদে মগ্ন থাকেন। ফসল চাষে কৃষকদের দেন নানা পরামর্শ। এভাবে বেশ ব্যস্ততায় তার জীবন কাটছে।  

ফারুক আহমেদ জানান, এই মৌসুমে তিন ধাপে তিনি ব্রোকলির চারা রোপণ করেন। এ পর্যন্ত তার উৎপাদিত ব্রোকলি বিক্রি থেকে প্রায় ১ লাখ টাকা এসেছে। আরো ১ থেকে দেড় লাখ টাকা আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্রোকলি ও টমেটো চাষে প্রায় ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। এছাড়া প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচে ৭২ শতক জমিতে উন্নত জাতের টমেটো, বাঁধাকপি, ফুলকপি, বেগুন, কাঁচা মরিচসহ অন্যান্য সবজি চাষ করেন। এসব সবজি বিক্রি থেকেও ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকা আসবে।

প্রায় ১৫ বছর যাবৎ তিনি গোপালপুরে হাইব্রিড জাতের ব্রোকলি চাষ করছেন। তার জমিতে এর চাষ দেখে স্থানীয় চাষিরা উৎসাহিত হয়েছেন। তারাও নিজেদের জমিতে এর চাষে এগিয়ে এসেছেন।

তার থেকে বুদ্ধি-পরামর্শ নিয়ে ব্রোকলি চাষ করেছেন গোপালপুরের কয়েকজন কৃষক। তারাও ব্রোকলি বিক্রি করে লাভবান। তারা (কৃষকরা) জানান, অচেনা থাকা এই সবজিটি এখন এখানের ক্রেতাদের কাছে খুবই প্রিয় হয়ে উঠেছে। দেখতে যেমন সুন্দন, তেমনি খেতেও স্বাদ।

ফারুক আহমেদ বলেন, “ফুলকপির মতো দেখতে গাঢ় সবুজ রংয়ের শীতকালীন এই ফসলটি হবিগঞ্জের কোথাও দেখতে পাওয়া যেত না। এখন এটি এখানে বেশ পরিচিত সবজি। পুষ্টিগুণে ভরপুর এ সবজি। এতে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন, খনিজ ও এন্টিঅক্সিডেন্ট রয়েছে। এতে রয়েছে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও।”

ক্রেতারা জানান, সড়কের পাশে ক্ষেত হওয়ায় গাড়ি নিয়ে এসে ব্রোকলি ও টমেটো ক্রয় করে নিয়ে যাওয়া সহজ। আর ফারুক আহমেদের এই ব্রোকলি ও টমেটো বিষমুক্ত।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো.

মাহিদুল ইসলাম বলেন, “ব্রোকলির সঙ্গে আইলে টমেটো চাষে ফারুক আহমেদ সফল। তার চাষাবাদে উৎসাহিত হয়ে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় এর চাষাবাদ শুরু হয়েছে। তিনি প্রায় ২০ বছর যাবৎ ব্রোকলি চাষ করছেন। পাশাপাশি নানা ধরণের সবজিও চাষ করেন। এবারও ভাল ফলন হয়েছে।”

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. আকতারুজ্জামান জানান, ফারুক আহমেদের সফলতা দেখে উৎসাহিত হয়ে জেলার বিভিন্ন এলাকায় একই সঙ্গে ব্রোকলি ও টমেটো চাষাবাদ করার সদিচ্ছা জানিয়েছেন অনেক কৃষক। বিশেষ করে ব্রোকলিতে ভিটামিন সি রয়েছে। এ সবজিটি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়। এছাড়া ওজন নিয়ন্ত্রণ, বয়স ঠেকায় ও ত্বক সুন্দর রাখে।

ঢাকা/মামুন/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ফ র ক আহম দ চ ষ কর ব র কল উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

স্তম্ভিত হারমানপ্রীত, আবেগ-রোমাঞ্চ-গর্ব-ভালোবাসায় মিলেমিশে একাকার

২০০৫ ও ২০১৭, ভারতের নারী ক্রিকেট দল ওয়ানডে বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শিরোপা জিততে পারেননি। হারমানপ্রীত কৌররা লম্বা সেই অপেক্ষা দূর করলেন দুই হাজার পঁচিশে।

মুম্বাইয়ের নাভিতে প্রায় ষাট হাজার দর্শকের সামনে উচিুঁয়ে ধরলেন ওয়ানডে বিশ্বকাপের শিরোপা। ২০১৭ সালের ফাইনালেও খেলেছিলেন হারমানপ্রীত। রানার্সআপ হয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয় তাকে। এবার আর ভুল করলেন না। অধিনায়ক হয়ে জিতলেন শিরোপা। গড়লেন ইতিহাস। যে ইতিহাস কখনো মুছবে না। কখনো জং ধরবে না।

ঝলমলে হাসিতে হারমানপ্রীত ট্রফি হাতে নিয়ে প্রেস কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করেন। এবার তার আবেগের ধরণ ছিল ভিন্ন, যেন স্বপ্ন পূরণের মাখামাখি। লম্বা সংবাদ সম্মেলন জুড়ে বারবার তার কণ্ঠ ধরে আসে। আবেগ, রোমাঞ্চ, গর্ব, ভালোবাসা, শ্রদ্ধা মিলেমিশে একাকার হয়ে যায়। তবে একটি শব্দের ওপর বারবার ফিরে আসছিলেন তিনি, তা হলো আত্মবিশ্বাস,
‘‘আমি কেবল আমার অনুভূতি প্রকাশ করার চেষ্টা করছি। আমি স্তম্ভিত, আমি বুঝতে পারছি না। আসলে, এতে উত্থান-পতন ছিল, কিন্তু দলের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ছিল। আমি প্রথম দিন থেকেই এটা বলে আসছি। আমরা বাম বা ডানে তাকাচ্ছিলাম না। আমরা কেবল আমাদের মূল লক্ষ্যের দিকে তাকিয়েছিলাম।’’ - বলেছেন হারমানপ্রীত।

স্বপ্ন পূরণের রাতে হারমানপ্রীত কাছে পেয়েছিলেন সাবেক তিন ক্রিকেটার মিতালি রাজ, ঝুলন গোস্বামী এবং অঞ্জুম চোপড়াকে। প্রত‌্যেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন ভারতকে বিশ্বকাপ জেতানোর। তাদের অধরা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন জেমিমা, দীপ্তি, শেফালি, স্মৃতিরা।

শিরোপা উৎসবে যোগ দেন মিতালি, ঝুলন, আঞ্জুমরা। তাদের হাতেও ট্রফি তুলে দেওয়া হয়। প্রাক্তন খেলোয়াড়দের সাথে সেই মুহূর্তটি ভাগ করে নেওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে হারমানপ্রীত বলেন, ‘‘ঝুলন দি আমার সবচেয়ে বড় আইডল ছিলেন। যখন আমি দলে যোগ দিই, তখন তিনি নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। আমি যখন খুব কাঁচা ছিলাম এবং ক্রিকেট সম্পর্কে তেমন কিছু জানতাম না, তখনও তিনি সবসময় আমাকে সমর্থন করতেন। অঞ্জুম দি-ও তাই। এই দুজন আমার জন্য দারুণ সমর্থন ছিলেন। আমি কৃতজ্ঞ যে আমি তাদের সাথে এই বিশেষ মুহূর্তটি ভাগ করে নিতে পেরেছি। এটি খুব আবেগপূর্ণ মুহূর্ত ছিল। আমার মনে হয় আমরা সবাই এটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। অবশেষে, আমরা এই ট্রফি স্পর্শ করতে পেরেছি।’’

তার জন‌্য বিশ্বকাপের পুরো অভিযানটিই ছিল গভীরভাবে আবেগপূর্ণ। রাউন্ড রবিন লিগে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ম‌্যাচ হার। চোট, অফ ফর্ম, জড়তা। সব সামলে সেরা হয়েছেন। তাইতো নিজেদের নিয়ে গর্বটাও বেশি হারমানপ্রীতদের, ‘‘আমরা প্রথম বল থেকেই অনুভব করেছিলাম যে আমরা জিততে পারি, কারণ শেষ তিন ম্যাচে আমাদের দল যেভাবে খেলছিল, তাতে আমাদের জন্য অনেক কিছুর পরিবর্তন এসেছিল, বিশেষ করে আমাদের আত্মবিশ্বাস। আমরা অনেকদিন ধরেই ভালো ক্রিকেট খেলছি। আমরা জানতাম দল হিসেবে আমরা কী করতে পারি।”

"গত এক মাস খুব আকর্ষণীয় ছিল। সেই দিনটির (ইংল্যান্ডের কাছে হারের) পর আমাদের মধ্যে অনেক পরিবর্তন আসে। সেই রাত আমাদের জন্য অনেক কিছু বদলে দিয়েছিল। এটি প্রত্যেকের উপর প্রভাব ফেলেছিল। আমরা বিশ্বকাপের জন্য আরও প্রস্তুত হলাম। আমরা ভিজ্যুয়ালাইজেশন এবং মেডিটেশন শুরু করেছিলাম। আমরা বারবার বলছিলাম, যে জন‌্য আমরা এখানে এসেছি এবং এবার আমাদের এটা করতেই হবে।" - যোগ করেন হারমানপ্রীত।

প্রথম যে কোনো কিছুই আনন্দের। রোমাঞ্চের। এই অভিজ্ঞতা শব্দে বয়ান করা যায় না। বয়ান করা সম্ভব হয় না। হারমানপ্রীতও পারেন না নিজের সবটা উজার করে বলতে। তবে এই শিরোপায় তাদের নাম লিখা হবে সেই আত্মবিশ্বাস তারও ছিল, ‘‘আমরা বহু বছর ধরে এটি নিয়ে কথা বলছি—আমরা ভালো ক্রিকেট খেলছি, কিন্তু আমাদের একটি বড় শিরোপা জিততেই হতো।"

ঢাকা/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ