Risingbd:
2025-11-03@08:02:05 GMT

নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয়

Published: 25th, February 2025 GMT

নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয়

ঢাকা-রাজশাহী রুটের একটি বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির পর থেকে নাইট কোচে উঠতে নারীদের ভয় করছে। বিশেষ করে রাজশাহী-ঢাকা রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর নারী যাত্রীদের মাঝে আতঙ্ক বিরাজ করছে। প্রয়োজনের তাগিদে তারা যাতায়াত করছেন ঠিকই, কিন্তু বাসে ওঠার আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবছেন অনেকে।

গত ১৭ ফেব্রুয়ারি রাতে ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী ইউনিক রোড রয়েলসের একটি বাসে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। টাঙ্গাইলের মির্জাপুর থেকে চলন্ত বাসে ডাকাতি শুরু হয়। প্রায় তিনঘণ্টা ধরে ডাকাতি শেষে একই জায়গায় বাসটি ঘুরিয়ে নিয়ে ভোর ৪টার দিকে ডাকাতরা নেমে যায়। তার আগে বাসের সব যাত্রীর সর্বস্ব লুটে নেওয়া হয়। বাসটিতে ৬৩ জন যাত্রীর মধ্যে ৮-১০ জন নারী ছিলেন। ডাকাতদলের তল্লাশির সময় তারা শ্লীলতাহানির শিকার হন।

আরো পড়ুন: চলন্ত বাসে ডাকাতি ও শ্লীলতাহানি, গ্রেপ্তার ৩

আরো পড়ুন:

পুনরায় চালু হচ্ছে ‘ঢাকা নগর পরিবহন’

গাজীপুরে বেতনের দাবিতে শ্রমিকদের সড়ক অবরোধ  

এই ঘটনার পর ঢাকা-রাজশাহী রুটের ইউনিক রোড রয়েলসের বাসে যাত্রীর সংখ্যা কমে গেছে। লোকাল এই বাসের রাজশাহী কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মো.

জুয়েল বলেন, “ধর্ষণের ঘটনা না ঘটলেও ফেসবুকে তা ছড়িয়ে পড়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমাদের বাসে যাত্রী একটু কমেছে।”

তিনি দাবি করেন, “যাত্রীর নিরাপত্তা তাদের কাছে আগে। রাত-বিরাতে পাশের সিটে যদি নারী না থাকেন, তাহলে একজন নারীকে বাসের টিকিট দেওয়া হয় না। ঢাকাগামী অন্য কোচের তুলনায় তাদের ভাড়া অর্ধেক।”

আরো পড়ুন: চলন্ত বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি, ২ থানা ঘুরে মামলা

ঢাকা-রাজশাহী রুটে যে কয়েকটি কম্পানির উন্নতমানের বাস চলে তার মধ্যে গ্রামীণ ট্রাভেলস অন্যতম। এই বাসের রাজশাহী কাউন্টারের মাস্টার আশিকুল ইসলাম বলেন, “বাসে ডাকাতির ঘটনার পর নারীরা একটু উদ্বিগ্ন বলে মনে হয়েছে। কেউ কেউ বাসে ওঠার আগে আমাদের নিরাপত্তাব্যবস্থা সম্পর্কে জানতে চাচ্ছেন। আমাদের নিরাপত্তা বলতে তো নারীর পাশে নারীর সিট দেওয়া, এইটুকুই আমরা করে যাচ্ছি। এটা আগে থেকেই করি।”

গাজীপুরের একটি পোশাক তৈরির কারখানায় কাজ করেন রাজশাহীর সেলিনা খাতুন। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে তিনি গাজীপুর যাওয়ার জন্য রাজশাহীর শিরোইলে একটি লোকাল বাসে বসেছিলেন। সম্প্রতি বাসে ডাকাতি ও নারীদের শ্লীলতাহানির খবর তিনিও পেয়েছেন। 

আরো পড়ুন: বাসে ডাকাতি-শ্লীলতাহানি: বড়াইগ্রামের ওসি প্রত্যাহার

কথা হলে সেলিনা খাতুন বলেন, “খবরটা দেখার পর থেকেই ভয় লাগছে। রাতে যাবই না ভেবেছিলাম। কিন্তু সুপারভাইজার কল দিচ্ছে। কালই কাজে যোগ দিতে হবে। বাধ্য হয়ে তাই রাতেই যাওয়া লাগছে।”

বাস স্ট্যান্ডে কথা হয় আরেক যাত্রী তানিশা আক্তারের সঙ্গে। তিনি বলেন, “যে অবস্থা এখন দেখলাম, জরুরি না হলে রাতে বাসে যেতামই না। ট্রেনের টিকিটের চেষ্টা করেছিলাম, হলো না। ফলে বাধ্য হয়ে বাসেই যেতে হবে। রাস্তাঘাটে কপালে কী অপেক্ষা করছে কে জানে?”

ঢাকা-রাজশাহী রুটে চলাচলকারী বাসগুলোর কাউন্টারে থাকা কর্মকর্তা-কর্মচারীরা জানান, ডাকাতির ওই ঘটনার পর যাত্রীর সংখ্যা কমেনি। প্রয়োজনের তাগিদে তাদের যেতেই হচ্ছে। তবে, নারীরা দিনে যাওয়ার চেষ্টা করছেন বেশি। যদিও বিভিন্ন স্থানে ভর্তি পরীক্ষার কারণে পার্থক্যটা তেমন বোঝা যাচ্ছে না।

ঢাকা-রাজশাহী রুটের লোকাল বাস শিশির-এর সুপারভাইজার মো. লিটন। শিরোইল এলাকায় বাসের জন্য যাত্রী ডাকতে দেখা যায় তাকে। ডাকাতির ঘটনার পর কী প্রভাব পড়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘পার্থক্য তেমন নেই। মানুষকে প্রয়োজনের তাগিদে যেতেই হচ্ছে। করোনার সময় তো গোটা বাংলাদেশ বন্ধ ছিল, তাও মানুষ গন্তব্যে গেছে। এই যে এত এত দুর্ঘটনা রাস্তায় হচ্ছে, তাও কি মানুষ যাতায়াত বন্ধ করে দিয়েছে? করেনি। কিন্তু ভয় তো একটা থাকছেই।”

তিনি আরো বলেন, “আগেও এমন ডাকাতির ঘটনা অহরহ ঘটেছে। তারপর কমে গিয়েছিল। এখন প্রশাসনে একটু ঘাটতি রয়েছে, তাই এ ধরনের একটা ঘটনা ঘটে গেছে। ফেসবুকের যুগে এই একটা ঘটনা ভাইরালও হয়ে গেছে। ফলে যাত্রীদের মধ্যে একটু বেশি আতঙ্ক আছে। তারা (যাত্রী) লোকাল বাসে না গিয়ে, অন্তত ভালো বাসে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। কয়েকদিন ধরে এটাই মনে হচ্ছে।”

রাজকীয় পরিবহনের কাউন্টারে বসেছিলেন যাত্রী কুরবান আলী। তিনি বলেন, “আমরা তো ভালো বাসে ১০০০-১২০০ টাকা ভাড়া দিয়ে যাতায়াত করতে পারি না। ২৫-৩০০ টাকায় লোকাল বাসে যাতায়াত করি। এই বাসেই ডাকাতি হয়েছে। এ রকম ঘটনা যাতে আর না হয়, সেজন্য রাস্তায় পুলিশের নজরদারি বৃদ্ধি করা উচিত।”

জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, “লোকাল বাসে এইগুলো (চুরি-ডাকাতি) বেশি হচ্ছে। টাঙ্গাইলের ঘটনার পর যাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য আমরা কিছু উদ্যোগ নিয়েছি। আগে বাস ছাড়ার আগে যাত্রীদের ভিডিও করে নেওয়া হতো। সেটা মাঝে বন্ধ হয়ে যায়। এখন সেটা আবার চালু করা হচ্ছে। আমরা নিজেরাই বাস ছাড়ার আগে এবং পথের বিভিন্ন স্থানে এটা শুরু করেছি।” 

তিনি আরো বলেন, “পাশাপাশি বাসে সিসি ক্যামেরা চালু রাখা যায় কি না, যেটা কাউন্টার থেকেই সরাসরি দেখা যাবে- এই বিষয়টি নিয়েও আমরা কাজ করছি। এক্ষেত্রে বাস মালিকদেরও সহযোগিতা দরকার।”

ডিআইজি বলেন, “মহাসড়কে আমাদের পেট্রোলিং বৃদ্ধি পেয়েছে। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট থানা-পুলিশের সঙ্গেও সমন্বয় করা হচ্ছে। আমরা আশা করছি. দ্রুতই পরিস্থিতির উন্নতি করে ফেলতে পারব।”

ঢাকা/মাসুদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন ড ক ত র ঘটন ঘটন র পর আম দ র ন র পর র একট

এছাড়াও পড়ুন:

গজারিয়ায় পরিবারকে জিম্মি করে অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট

মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি বাড়িতে প্রবেশ করে অস্ত্রের মুখে পরিবারের সদস্যদের জিম্মি করে স্বর্ণালংকারসহ অর্ধলক্ষাধিক টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা।

রবিবার (২ নভেম্বর) মধ্যরাত ৩টার দিকে উপজেলার বালুয়াকান্দি ইউনিয়নের বালুয়াকান্দি দক্ষিণপাড়া এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হকের বাড়িতে ঘটনাটি ঘটে।

আরো পড়ুন:

ভাড়া নেওয়ার কথা বলে বাসায় ঢুকে গৃহবধূকে বেঁধে ডাকাতি

বগুড়ায় বৃদ্ধাকে খুন করে ডাকাতি: গ্রেপ্তার ৪, টাকা উদ্ধার

ভুক্তভোগী সাথী বেগম বলেন, “রাত ১টার দিকে একটি শব্দ পেয়ে আমার ঘুম ভাঙে। সে সময় বিষয়টি সেভাবে আমলে নেইনি। রাত ৩টার দিকে উঠে তাহাজ্জুতের নামাজ পড়তে বসলে জানালার গ্রিল কেটে বাসার ভেতরে প্রবেশ করে দুই যুবক। তারা প্রথমে আমাকে, পরে আমার ছেলে সাবিদকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে। পরে তারা আমাদের বিল্ডিংয়ের চারটি ফ্ল্যাটের প্রত্যেকটিতে একের পর এক লুট করতে থাকে। প্রায় ৪৫ মিনিট ধরে চলে এই ডাকাতি।” 

তিনি বলেন, “ডাকতরা নগদ ৩ লাখ টাকা, ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার ও ৯টি মোবাইল ফোন নিয়ে যায়। যাওয়ার সময় তারা আমাদের সবাইকে একটি রুমে আটকে রেখে বাহির থেকে তালা লাগিয়ে যায়।”

প্রত্যক্ষদর্শী সাবিদ বলেন, “জানালার গ্রিল কেটে রুমের ভেতরে প্রবেশ করে দুইজন। পরে ডাকাত দলের আরো ২২-২৩ জন সদস্য বাসার ভেতরে প্রবেশ করে। বাইরে আরো কয়েকজন পাহারায় ছিল। ডাকাত দলের অধিকাংশ সদস্যের মুখে মাস্ক ও গামছা ছিল। তারা অস্ত্রের মুখে আমাকে জিম্মি করে আমাকে দিয়েই অন্যান্য ফ্ল্যাটের দরজা খোলান। আমার চোখের সামনে একের পর এক রুমে ডাকাতি হয়।”

অবসরপ্রাপ্ত সেনা সদস্য ফজলুল হক বলেন, “আমার তিন ছেলে দেশের বাহিরে থাকে। তাদের পাঠানো প্রায় ৩২ ভরি স্বর্ণালংকার, কয়েকদিন আগে ব্যাংক থেকে তোলা নগদ ৩ লাখ টাকা ও ৯টি মোবাইল সেট লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাতরা। তারা আমাদের পরিবার সম্পর্কে অনেক কিছু জানত। কোন রুমে কী আছে, আমরা কবে ব্যাংক থেকে টাকা তুলেছি এমনকি বাসায় ওয়াইফাই বন্ধ সবই জানত। আমার ধারণা, স্থানীয় লোক এর সঙ্গে জড়িত। আমি থানায় লিখিত অভিযোগ দেব।”

ভুক্তভোগীর প্রতিবেশী লাক মিয়া বলেন, “আমরা ভোর ৫টার দিকে বিষয়টি প্রথমে বুঝতে পারি। পরবর্তীতে বাইরে থেকে লক করা রুম খুলে আমরা আটকে থাকা পরিবারের সদস্যদের উদ্ধার করি। তারপর বিষয়টি জানাজানি হয়।”

রবিবার (৩ নভেম্বর) গজারিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, “সকাল ৬টার দিকে দিকে আমি ৯৯৯ থেকে একটি কল পেয়ে এ বিষয়ে জানতে পারি। ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে। আমরা ঘটনাটি খতিয়ে দেখছি।”

ঢাকা/রতন/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ