ব্যক্তিগত গাড়ি ব্যবহার করে ১১টি বিপন্ন প্রজাতির মুখপোড়া হনুমান নেওয়া হচ্ছিল কুষ্টিয়ায়। গত ৬ ফেব্রুয়ারি রাতে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সেগুলো উদ্ধার করা হয়। পাচারকারীরা হনুমানগুলোকে চট্টগ্রাম থেকে বিক্রির জন্য কুষ্টিয়ায় নিয়ে যাচ্ছিলেন। এর আগেও ঢাকায় গত ৮ জানুয়ারি কুষ্টিয়ায় পাচারকালে আটটি মুখপোড়া হনুমান উদ্ধার করা হয়। সেগুলোও নেওয়া হচ্ছিল চট্টগ্রাম থেকে।

শুধু এ দুটি ঘটনা নয়, গত এক বছরে বিভিন্ন স্থানে আটক ও গ্রেপ্তার পাচারকারীরা পুলিশ বা প্রশাসনকে জানিয়েছেন, মূলত চট্টগ্রাম থেকে তাঁরা এসব বন্য প্রাণী সংগ্রহ করে বিক্রির জন্য নিয়ে যান। এর আগে বন কর্মকর্তাদের ধারণা ছিল, চট্টগ্রাম মূলত ট্রানজিট। তবে এখন তাঁরা বলছেন, ট্রানজিট হিসেবে ব্যবহারের পাশাপাশি পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থান থেকে এখন প্রাণীও পাচার হচ্ছে।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট, একসময় বাংলাদেশ ট্রানজিট দেশ হিসেবে ধরা হতো। তবে বর্তমানে বাংলাদেশকে ধরা হয় সোর্স, ট্রানজিট ও কনজ্যুমার দেশ হিসেবে। অর্থাৎ বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে পাচার হওয়ার পাশাপাশি অন্য দেশ থেকে পাচার হওয়া বন্য প্রাণীও আসে দেশে। মূলত তিন পার্বত্য জেলাসহ বিভিন্ন স্থান থেকে ধরা বন্য প্রাণী ছড়িয়ে পড়ছে সারা দেশে।

বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত সারা দেশে ১ হাজার ৭১৭টি অভিযান পরিচালনা করে ১৯ হাজারে বেশি বন্য প্রাণী উদ্ধার করা হয়েছে। এর মধ্যে বিভিন্ন প্রজাতির পাখির সংখ্যা ৯ হাজার এবং বিভিন্ন প্রজাতির কাছিম ও কচ্ছপের সংখ্যা ৩ হাজারের বেশি। এর মধ্যে সুন্ধি কাছিম এক হাজারের বেশি ও কড়ি কাইট্টা (কচ্ছপ) ৯৫৫টি।

বিশ্ব বন্য প্রাণী দিবস আজ ৩ মার্চ। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বন্য প্রাণী সংরক্ষণে অর্থায়ন, মানুষ ও ধরিত্রীর উন্নয়ন’।

পাহাড় থেকে যে পথে পাচার

পার্বত্য জেলা বান্দরবান থেকে কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলা হয়ে চট্টগ্রামে আসা যায়। যেটি মূলত বান্দরবানের লামা-আলীকদম এলাকা হয়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যোগ হয়। এর বাইরে আরেকটি লামা থেকে কোয়ান্টাম এলাকা হয়ে চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলায় উঠেছে। এ ছাড়া আরেকটি গ্রামীণ সড়ক কোয়ান্টাম এলাকা থেকে টংকাবতী সড়ক হয়ে বান্দরবানে যোগ হয়েছে।

চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে আসতে অন্তত তিনটি তল্লাশিচৌকি (চেকপোস্ট) পার হতে হয়। তবে বাকি দুই সড়কে তেমন কোনো তল্লাশিচৌকি নেই। স্থানীয় লোকজন বলছেন, মূলত এই দুটি সড়কই বন্য প্রাণী পাচারের রুট হিসেবে পরিচিত। এ ছাড়া বনের ভেতর দিয়ে দুর্গম পাহাড়ি পথ ধরেও প্রাণী আনা–নেওয়া করা হয়। প্রশাসন বিষয়টি জানলেও তেমন পদক্ষেপ নেয় না।

বন বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের জনবলসংকটের কারণে সব স্থানে নজর দেওয়া সম্ভব হয় না। তবে এর জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করা হয়। তিন পার্বত্য অঞ্চলের বন বিভাগের সঙ্গেও আলোচনা করা হয়েছে সহযোগিতার জন্য।

বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের (চট্টগ্রাম) বিভাগীয় বন কর্মকর্তা আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা পুলিশ, বিজিবির আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করছি। যাতে অপরাধ কমানো যায়। এ ক্ষেত্রে পার্বত্য অঞ্চলে যাঁরা সংশ্লিষ্ট কাজ করেন, তাঁদের সহযোগিতা প্রয়োজন।’

লামা সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার নুরুল আনোয়ার বলেন, ‘বন বিভাগ থেকে সেভাবে যোগাযোগ করা হয়নি। যেসব সড়কের কথা বলা হচ্ছে, সেখানে আমাদের নিয়মিত টহল কার্যক্রম আছে। সম্প্রতি এসব সড়কে এ ধরনের অভিযোগ আমরা পাইনি।’

দেশে বর্তমানে বন্য প্রাণী পাচার রোধে পুলিশ, গোয়েন্দা বিভাগ, বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগ, র‍্যাবসহ বিভিন্ন সংস্থা কাজ করছে। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থাও (ইন্টারপোল) নজরদারিতে রেখেছে বাংলাদেশের বনাঞ্চলগুলো।

খাঁচায় করে পাচার করা হচ্ছিল ১১টি মুখপোড়া হনুমান। ছবিটি ৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকা থেকে উদ্ধার করার পরের.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বন য প র ণ র জন য হন ম ন অপর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে, দুই বন্ধু নিহত

রাজধানীতে অটোরিকশার ধাক্কায় ছিটকে বাসের নিচে পড়ে দুই মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার বনশ্রীর এফ ব্লক সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এদিন মতিঝিলের ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেট কারের চাপায় আব্দুল মতিন (৩৬) নামে এক রিকশাচালক নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া পাঁচ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় ছয়জন প্রাণ হারিয়েছেন।

বনশ্রীতে নিহত দু’জন হলেন– আব্দুল্লাহ আল নোমান (২১) ও পাভেল মিয়া (২০)। নোমানের মামা আব্দুল হামিদ জানান, নিহতরা পরস্পর বন্ধু। নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থেকে ঢাকায় ঘুরতে যাওয়ার সময় দু’জন দুর্ঘটনায় প্রাণ হারিয়েছেন। তারা রূপগঞ্জের নামারমুসুরি এলাকায় থাকতেন। নোমান মুড়াপাড়া ডিগ্রি কলেজের এইচএসসি প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। পাভেল তেমন কিছুই করতেন না। এ ঘটনায় নোমানের পরিবারের পক্ষ থেকে সড়ক নিরাপত্তা আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী মোটরসাইকেল চালক টিপু সুলতান বলেন, সড়কটি যানবাহনে ঠাসা ছিল। এ কারণে গাড়ি চলছিল ধীরগতিতে। হঠাৎ একটি ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা পাশ থেকে এসে নোমানের মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে দু’জন সড়কের ওপর ছিটকে পড়েন। পরে মিয়ামি পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দেয়। নোমান ঘটনাস্থলেই মারা যান। মোটরসাইকেল আরোহী পাভেলকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফরাজী হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

খিলগাঁও থানার ওসি দাউদ হোসেন জানান, বাসটি জব্দ করা হয়েছে। চালক ও তার সহকারী পালিয়ে গেছে। অটোরিকশা চালককেও আটক করা যায়নি। মরদেহ দুটি উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) মর্গে পাঠানো হয়েছে।

গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ফকিরাপুল মোড়ে প্রাইভেটকারের চাপায় প্রাণ হারান রিকশাচালক আব্দুল মতিন। তাঁর বাড়ি রংপুরে। তিনি মুগদার মাণ্ডা এলাকায় একটি রিকশার গ্যারেজে থাকতেন। মতিঝিল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোহাইমিনুল ইসলাম জানান, প্রাইভেটকারের চালক আল আমিনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাইভেটকার জব্দ করা হয়েছে। ময়নাতন্ত শেষে পরিবারের কাছে মতিনের মরদেহ হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে মঙ্গলবার রাতে বিমানবন্দর থানার সিভিল এভিয়েশন কোয়ার্টার গেটের (সি-টাইপ) সামনের ফুটপাত থেকে অজ্ঞাতপরিচয় এক যুবকের মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার বয়স আনুমানিক ২৫ বছর। বিমানবন্দর থানার এসআই আমিনুল ইসলাম বলেন, ওই যুবকের পরিচয় শনাক্তের চেষ্টা চলছে। মরদেহ ঢামেক মর্গে রাখা হয়েছে।

সড়কে ঝরল আরও ছয় প্রাণ
খুলনার ডুমুরিয়ায় তেলবাহী লরির চাপায় দুই নারী নিহত হয়েছেন। গতকাল বিকেলে উপজেলার আটলিয়া ইউনিয়নের নরনিয়া মহিলা মাদ্রাসার কাছে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহতরা হলেন– রোকেয়া বেগম (৫৫) ও রশিদা বেগম (৪৫)।

গতকাল সাভারে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কাছে সেলফি পরিবহনের বাসের ধাক্কায় শামসুল হক নামে এক বৃদ্ধ নিহত হয়েছেন। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুরে গণস্বাস্থ্য উপকেন্দ্রের নিরাপত্তাকর্মী ছিলেন। সাভার থেকে অবসরের পাওনাদি নিয়ে ফেরার পথে তিনি প্রাণ হারান। শামসুলের বাড়ি চাঁদপুরে। ঘটনার পর গণস্বাস্থ্য মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারীরা সেলফি পরিবহনের পাঁচটি বাস আটক করেন।

এদিকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে অটোরিকশা ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নয়ন মিয়া (৩৭) নামে এক যুবক নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১০ জন। গতকাল বিকেলে নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ের মোগড়াপাড়া ইউনিয়নের রতনদী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে দুই মোটরসাইকেলের মুখোমুখি সংঘর্ষে শান্ত ইসলাম (১৮) নামে এক তরুণ নিহত হয়েছেন। গতকাল উপজেলার কুষ্টিয়া-প্রাগপুর সড়কে এ দুর্ঘটনা ঘটে। শান্ত মথুরাপুর পশ্চিমপাড়া গ্রামের রিপন মণ্ডলের ছেলে। 

রাজবাড়ীর কালুখালী উপজেলার মৃগী বাজারে মোটরসাইকেল নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কে ছিটকে পড়ে স্বপন শীল নামে এক স্যালুন ব্যবসায়ী নিহত হয়েছেন। গতকাল ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠানের নিমন্ত্রণপত্র বিলি করতে বেরিয়ে দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ