বলগেটের ধাক্কায় নৌকা ডুবে পদ্মায় ভাসছিল ২ জেলে
Published: 5th, March 2025 GMT
অবৈধ বালুবাহী বলগেটের ধাক্কায় মাছ ধরার ট্রলার ডুবে দুই জেলে আহত হয়েছেন। নদীতে ভেসে থাকতে দেখে অন্য জেলেরা তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। গতকাল মঙ্গলবার ভোরে পদ্মা নদীর ফরিদপুর সদরের কবিরপুর চর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
আহত জেলেরা হলেন– মানিকগঞ্জের বারিক ফকিরের ছেলে ইউসুফ ফকির ও মাসুদ রানার ছেলে মজিদ। তারা ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
আহত জেলেদের স্বজনের ভাষ্য, ভোর ৪টার দিকে ইউসুফ ও মজিদ পদ্মা নদীর কবিরপুর এলাকায় মাছ ধরছিলেন। এ সময় বালুবাহী একটি বলগেট তাদের নৌকাকে সজোরে আঘাত করে। এতে নৌকাটি দুমড়েমুচড়ে নদীতে তলিয়ে যায়। তখন তারা নৌকা থেকে পানিতে ছিটকে পড়ে শোলার কার্টন ধরে ভাসতে থাকেন। অন্য নৌকার জেলেরা তাদের দেখতে পেয়ে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান।
কোতোয়ালি নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাসিম আহমেদ জানান, আঘাতকারী বলগেট শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পদ্মায় দীর্ঘদিন একাধিক ড্রেজারের মাধ্যমে কবিরপুরসহ আশপাশ এলাকায় অবৈধভাবে বালু তুলে তা বলগেটের মাধ্যমে নেওয়া হচ্ছে। চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ ভয়ে মুখ খোলে না। রাত নামলেই পদ্মা নদীর দুর্গম এলাকায় বাড়ে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন।
একটি সূত্র জানায়, সিরাজগঞ্জের যমুনা নদীর বালুবাহী বলগেটও এই রুট দিয়ে রাতে চলাচল করে। দূরের রুট হওয়ায় রাতে বলগেটগুলো নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ ছাড়াই বেপরোয়াভাবে নদীতে চলাচল করছে। এসব অবৈধ বলগেট চলাচল বন্ধের দাবি জেলে, নৌযান মালিকসহ সবার।
এ বিষয়ে ফরিদপুর নৌ পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, অপরাধীদের দমনে নৌ পুলিশ সর্বদাই তৎপর। কিন্তু দীর্ঘ জলসীমার অপরাধ নিয়ন্ত্রণে একটি স্পিডবোট ব্যবহার করতে হয়। এতে ফাঁকফোকর দিয়ে কখনও কখনও এসব অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কিছুটা ব্যত্যয় ঘটে। নদীতে টহল বাড়িয়ে সব ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণের আশ্বাস দেন তিনি।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
প্রস্থেটিক মেকআপ আর্টে সোনালী মিতুয়ার বাজিমাত
বাংলাদেশের মেকআপ আর্ট জগতে নীরবে নতুনত্ব যোগ করে যাচ্ছেন সোনালী মিতুয়া। তার শৈল্পিক ইলিউশন এবং বডি পেইন্টিংগুলো আন্তর্জাতিক মানের, যা দেখে চোখ ফেরানো দায়। বর্তমানে ফিনল্যান্ডে মেকআপের ওপর উচ্চশিক্ষা নিচ্ছেন এই শিল্পী, যার ক্যানভাসে শৈশবের প্রথম গন্ধ ছিল তেল রং আর থিনারের তীব্রতা। মেকআপ ব্যবহার করে তিনি যে ক্যানভাস তৈরি করেন-তা এক কথায় অনন্য, অসাধারণ।
সোনালী মিতুয়া কখনও তার মুখে ফুটে ওঠে ফাটল ধরা পৃথিবী, যেখান থেকে গজিয়ে ওঠে সবুজ লতা। কখনও দেখা যায় তার মুখটাই এক অর্ধেক যন্ত্র, অর্ধেক প্রকৃতি, যেন মানুষ আর মেশিনের মাঝের এক অদ্ভুত, কাব্যময় দ্বন্দ্ব।আর কখনও সেই মুখটাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়, শুধু দেখা যায় এক ভয়ঙ্কর কালো গহ্বর — যেন মানুষের শূন্য আত্মা। এগুলো কোনো সিনেমার দৃশ্য না।এগুলো এক তরুণী মেকআপ আর্টিস্টের সৃষ্ট জীবন্ত শিল্পকর্ম।
আরো পড়ুন:
একা বাস করতে পারে যে পাখি
কেউ কটূক্তি করলে কী করবেন?
সোনালী মিতুয়ার মেকআপে একটা গল্প, একটা দর্শন, একটা গভীর বার্তা লুকিয়ে থাকে। যেখানে অধিকাংশ মানুষ মেকআপকে শুধু প্রসাধনের জগতে দেখে, সে সেখানে মেকআপকে তুলেছে এক উচ্চমাত্রার শিল্প হিসেবে। তার হাতে রঙ মানে—চামড়ার ওপরে নয়, বরং আত্মার ভাষা প্রকাশের এক মাধ্যম।
তার কাজে দেখা যায় প্রস্থেটিক মেকআপের প্রভাব— যেখানে মুখ বদলে যায়, গড়ে ওঠে নতুন রূপ, নতুন চরিত্র। এমন কৌশল একদিন তাকে সিনেমার পর্দায় প্রস্থেটিক আর্টিস্ট হিসেবে বড় জায়গায় নিয়ে যাবে—
এ কথা বলার জন্য বিশেষজ্ঞও হতে হয় না।
এই মেয়েটির সবচেয়ে বড় শক্তি তার কল্পনাশক্তি। সে মুখের ভেতরেই ফুটিয়ে তোলে গল্প—একদিকে প্রকৃতি, ফুল, প্রজাপতি; অন্যদিকে প্রযুক্তি, ধ্বংস আর শূন্যতা। দেখলে মনে হয়, এই দুইয়ের টানাপোড়েনেই গড়ে উঠেছে তার শিল্পজগৎ।
বাংলাদেশের তরুণ প্রজন্মের জন্য এই মেয়েটি এক অনুপ্রেরণা। সে প্রমাণ করছে—শিল্পের ভাষা যদি শক্ত হয়, তাহলে দেশের সীমা পেরিয়ে বিশ্বেও পৌঁছানো যায়। যেখানে মেকআপকে এখনো অনেকেই কেবল সাজের কাজ মনে করেন, এই মেয়েটি সেখানে দেখিয়েছে — মেকআপও হতে পারে দর্শন, প্রতিবাদ আর সৃষ্টির ক্যানভাস।
তিনি জানেন, প্রস্থেটিক আর্টে (বিশেষত কৃত্রিম অঙ্গ, ক্ষত বা ফ্যান্টাসি চরিত্র তৈরি) করা যায় দক্ষতার সাথে। বর্তমানে বাংলাদেশের সিনেমায় যেখানে প্রস্থেটিকের ব্যবহার খুবই সীমিত, সেখানে সোনালী মিতুয়ার মতো একজন আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিল্পী আছেন, তার হাতেই তৈরি হতে পারে বাংলাদেশের ইতিহাসের চরিত্রদের নিখুঁত রূপ, অথবা আমাদের ফ্যান্টাসি সিনেমার ভিনগ্রহের প্রাণী।
সোনালী মিতুয়ার কাজগুলো দেখলেই বোঝা যায়, তিনি মেকআপকে স্রেফ সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যম হিসেবে দেখেন না, বরং এটিকে একটি শক্তিশালী গল্প বলার হাতিয়ার মনে করেন।
একটা ছবিতে দেখা যাচ্ছে একজন মানুষ প্রকৃতির মাঝে ফাটল ধরা পাথরের মতো এক রূপ ধারণ করেছেন। সবুজ, হলুদ ও লালের মিশ্রণে চোখের অংশটি গভীর এবং রহস্যময়, আর ফাটলের ভেতর দিয়ে বেরিয়ে আসা লতা-পাতা জীবনের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এটি তার পরিবেশ-সচেতনতা এবং ফ্যান্টাসি আর্টের দক্ষতা প্রমাণ করে।
সাদাকালো স্কেচের মতো দেখতে এই মেকআপটি অত্যন্ত কঠিন এবং চোখে পড়ার মতো। মুখের প্রতিটি অংশে পেন্সিল বা চারকোল দিয়ে আঁকা হ্যাচিংয়ের মতো স্ট্রোকগুলো ত্রিমাত্রিক চেহারাটিকে দ্বিমাত্রিক কমিক-বুক বা নয়ার চলচ্চিত্রের চরিত্র হিসেবে ফুটিয়ে তুলেছে।
চোখ ও মুখের চারপাশে মাকড়সার জাল এবং ফুলা, রক্তবর্ণ চোখের পাপড়ি ভীতি ও কষ্টের এক শক্তিশালী অনুভূতি জাগায়। এটি বিশেষ করে হ্যালোইন বা হরর থিমের জন্য পারফেক্ট।
গভীর অন্ধকারে তোলা এই ছবিটি ‘অন্ধকার গহ্বর’ বা ‘কৃষ্ঞগহ্বর’ থিমের একটি চমকপ্রদ ইলিউশন মেকআপ। নিখুঁত কনট্যুরিং এবং রঙের ব্যবহারে মুখের এক অংশে যেন সত্যিই একটি ফাঁকা, গর্তের সৃষ্টি হয়েছে।
ঢাকা/লিপি