ছয় সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত জানাতে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। প্রতিটি সুপারিশের বিষয়ে ‘একমত’, ‘আংশিক একমত’ এবং ‘ভিন্নমত’– এই তিনটি প্রশ্ন রয়েছে। সংস্কার বাস্তবায়নে পাঁচ বিকল্প দিয়ে মতামত চাওয়া হয়েছে। বিকল্পগুলো হলো– নির্বাচনের আগে অধ্যাদেশের মাধ্যমে, নির্বাচনের আগে গণভোটের মাধ্যমে, নির্বাচনের সময়ে গণভোটের মাধ্যমে, গণপরিষদের মাধ্যমে এবং নির্বাচনের পর সাংবিধানিক সংস্কারের মাধ্যমে। ঐকমত্য কমিশন এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সূত্র সমকালকে এসব তথ্য জানিয়েছে। 

রাজনৈতিক দলগুলোকে গত কয়েক দিনে সংবিধান, নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রতিবেদন একীভূত করে দেওয়া হয়েছে। 

রাজনৈতিক দলগুলো সংস্কার কমিশনের যেসব সুপারিশে একমত হবে, সেগুলোর ভিত্তিতে হবে জুলাই চার্টার বা সনদ। দলগুলো একমত হলে পুলিশ, দুদক, জনপ্রশাসনসহ যেসব বিষয়ে সাংবিধানিক প্রশ্ন নেই, সেগুলো অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংস্কার করবে সরকার। সংবিধান, বিচার বিভাগ, নির্বাচন ব্যবস্থাসহ যেসব বিষয়ে সাংবিধানিক প্রশ্ন রয়েছে, সেগুলো গণভোটের মাধ্যমে সংস্কার করা যায় কিনা, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে। আগামী সংসদ নির্বাচনের সঙ্গেই গণভোট করা যায় কিনা, এ বিকল্পও রাখা হয়েছে রাজনৈতিক দলগুলোর সামনে। দলগুলো একমত হলে নির্বাচনের পর আগামী সংসদেও সংস্কার হতে পারে। 

ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের নেতারা গণভোট ও গণপরিষদের কথা বললেও বিএনপি এর ঘোর বিরোধী। একে নির্বাচন বিলম্বিত করার ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। তারা দ্রুত সংসদ নির্বাচন চায়। তবে জামায়াতে ইসলামীসহ কয়েকটি দলের নেতারা তাড়াহুড়া নয়, টেকসই সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছেন।  

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সমন্বয়কের দায়িত্বে থাকা প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার সমকালকে বলেন, বুধবার মতামত চেয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পাঁচটি বিকল্প দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে, কোন প্রক্রিয়ায় সংস্কার চায় তারা। আগামী ১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

যদিও কয়েকটি দলের অভিযোগ, তারা ছয়টি সংস্কার কমিশনের সুপারিশের পুরোটা পায়নি। কোনো কোনো দল আংশিক পেয়েছে। একাধিক রাজনৈতিক দলের নেতা সমকালকে জানিয়েছেন, ২৫৪টি প্রস্তাব রয়েছে প্রতিবেদনগুলোতে। প্রতি প্রস্তাবের সঙ্গে তিনটি করে প্রশ্ন করেছে। একমত এবং আংশিক একমত হলে ‘টিক’ দিতে বলা হয়েছে। ভিন্নমত থাকলে তা বিস্তারিত লিখে সরকারকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। 

প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে গত ১২ ফেব্রুয়ারি ছয় মাসমেয়াদি জাতীয় ঐকমত্য কমিশন গঠিত হয়। সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রধান অধ্যাপক আলী রীয়াজ কমিশনের সহসভাপতি।  নির্বাচন ব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, দুদক, জনপ্রশাসন এবং পুলিশ সংস্কারবিষয়ক কমিশনের প্রধানরা ঐকমত্য  কমিশনের সদস্য।

গত ১৫ ফেব্রুয়ারি এ কমিশন ২৭টি রাজনৈতিক দল এবং জোটের ১০০ প্রতিনিধির সঙ্গে প্রথম বৈঠক করে। 

এতে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে মতামত চাওয়া হবে। এরপর  দলগুলোর সঙ্গে আলাদা বৈঠকে বসবে কমিশন। পরে আবার সব দলের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার উপস্থিতিতে বৈঠক হবে। ১৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে সরকারপ্রধান বলেছিলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মতামত ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। কোনো দল যদি একটি সংস্কার প্রস্তাবেও একমত না হয়, তাতেও অসুবিধা নেই। কোন দল কতটি প্রস্তাবে একমত হয়েছে, তা জানিয়ে দেওয়া হবে। ভিন্নমত থাকলে তা জানাতে পারবে কমিশনকে। কমিশন তা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে প্রকাশ করবে। 

১৫ ফেব্রুয়ারির বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন জাতীয় নাগরিক কমিটি (জানাক) এবং  বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। শেখ হাসিনার পতন ঘটানো অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেওয়া দুই সংগঠনের নেতারা জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) নামে দল গঠন করেছেন গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। 

এ দলও সংস্কারের সুপারিশমালায় মতামত জানাতে চিঠি পেয়েছে। দলটি সংসদের আগে গণপরিষদ নির্বাচনের দাবি তুলেছে। গণপরিষদে নতুন সংবিধান প্রণয়নের কথা বলছে। এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শামরিন সমকালকে বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের চেতনা বাস্তবায়নে গণপরিষদের মাধ্যমে নতুন সংবিধানের প্রস্তাব করা হবে। 

কোন দল কী মতামত জানাবে– এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে বিএনপিসহ কয়েকটি রাজনৈতিক দল জানিয়েছে, নির্বাচন ব্যাহত বা  বিলম্বিত হতে পারে– এমন সংস্কার প্রস্তাবকে সমর্থন করা হবে না। আগামী ডিসেম্বরেই নির্বাচন হতে হবে। এ সময়ের মধ্যে নির্বাচনের জন্য অত্যাবশকীয় সংস্কারে গুরুত্ব দিচ্ছেন তারা। যেসব সুপারিশ নির্বাচনের পরে বাস্তবায়ন সম্ভব, সেগুলো আলাদা করা হবে। রাজনৈতিক নেতারা জানিয়েছেন, সংস্কারের সুপারিশ পর্যালোচনা করে মতামত তৈরি করা হবে। দলীয় নেতার বাইরে বিশেষজ্ঞদেরও পরামর্শ নেওয়া হচ্ছে। বিএনপি নেতারা জানান, অন্তর্বর্তী সরকারের রাষ্ট্র সংস্কারে ছয় সংস্কার কমিশন গঠনের আদলে দলীয়ভাবে ছয়টি কমিটি গঠন করে। এই কমিটিগুলো অংশীজনের সঙ্গে আলোচনার পর কমিশনের সুপারিশের বিষয়ে মতামত তৈরি করা হচ্ছে। বিএনপি রাষ্ট্র সংস্কারে ৩১ দফা প্রস্তাবকে গুরুত্ব দিচ্ছে। 

দলটির নেতারা জানান, বিএনপি আগেই সংস্কার কমিশনগুলোতে দলীয় মতামত এবং প্রস্তাব লিখিত আকারে দিয়েছে। ঐকমত্য  সুপারিশমালা যে সংকলন তৈরি করেছে, তা পর্যালোচনা চলছে। সেখানে বিএনপির প্রস্তাব কমিশনগুলো কতটা আমলে নিয়েছে, কোন কোন সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক তা জানার চেষ্টা চলছে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনের আগে যেসব সুপারিশ বাস্তবায়নযোগ্য, তা আমলে নেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানান। 

বিএনপির দলীয় সংস্কার কমিটির এক নেতা সমকালকে জানান, ভিন্ন ভিন্ন সংস্কার কমিশন একই বিষয়ে আলাদা সুপারিশ করেছে। কমিশনগুলোর মধ্যে সমন্বয়হীনতার কারণে তা হয়েছে। আবার কিছু সুপারিশে অস্পষ্টতা, অসংগতি ও বাস্তবায়নে দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন রয়েছে, যা বাস্তবায়নে জটিলতার সৃষ্টি করতে পারে। রাজনৈতিক দল বা শক্তিগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য সৃষ্টিতে বাধার সৃষ্টি পারে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও প্রশাসন সংস্কার কমিটির প্রধান সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, সংস্কার কমিশনের সুপারিশ পর্যালোচনা করা হচ্ছে। খুব বেশি সময় লাগবে না। হয়তো দু-একদিনের মধ্যেই হয়ে যাবে। পরে তা লিখিত আকারে জানানো হবে।

৩১ দফার বিষয়ে তিনি বলেন, এটি বিএনপির নিজস্ব সংস্কার প্রস্তাব, যা দলীয় প্রতিশ্রুতি। এর সঙ্গে হয়তো সরকারের সংস্কার কমিশনের বেশি মিল থাকতে পারে, আবার বাইরে থেকেও কিছু অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। যেসব অমিল থাকবে, তা আলোচনার মাধ্যমেই সমাধান সম্ভব বলে আশাবাদী সালাহউদ্দিন আহমেদ।

জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ সমকালকে জানিয়েছেন, তারা কমিশনের সুপারিশ পেয়েছেন। মতামত দিতে কাজ চলছে।

১৩ মার্চের মধ্যে মতামত জানানোর অনুরোধের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এত তাড়াহুড়োর তো প্রয়োজন নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সংস্কারের অভূতপূর্ব সুযোগ এসেছে জাতির সামনে। তা কাজে লাগাতে হবে। সংস্কার হতে হবে টেকসই। আবার অন্ততকাল সময়ও নেওয়া হবে না। যৌক্তিক সময়ের মধ্যে বিচার-বিশ্লেষণ পর্যালোচনা করে মতামত চূড়ান্ত করা উচিত। দেশের জন্য দলীয় স্বার্থে ঊর্ধ্বে উঠে সংস্কারে রাজি হতে হবে।’

চরমোনাই পীরের নেতৃত্বাধীন ইসলামী আন্দোলনের মহাসচিব ইউনূস আহমাদ সমকালকে বলেন, ছয়টি কমিশনের সুপারিশের প্রশ্ন আকারে পেয়েছি। দলীয়ভাবে এগুলো ভাগ করে দেওয়া হয়েছে ছয়টি বিশেষজ্ঞ দলকে।

সংস্কারের সুপারিশমালা পেয়েছেন বলে জানিয়েছেন এবি পার্টির চেয়ারম্যান মজিবুর রহমান মঞ্জু। তিনি সমকালকে বলেন, প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে রাজনৈতিক দল একমত, নাকি আংশিক একমত– তা জানতে চাওয়া হয়েছে। ভিন্নমত থাকলে তা জানাতে বলা হয়েছে।

নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না সমকালকে বলেন, সংবিধান সংস্কারের সুপারিশমালার পাঁচ খণ্ডের মাত্র একটি পেয়েছি। প্রতিটি সংস্কারে প্রস্তাব যদি ২৫০ পৃষ্ঠারও হয়, তাহলে পড়তে ও বুঝতেও সময় দিতে হবে। একই অভিযোগ করে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, মাত্র একটি সংস্কারের সুপারিশমালার হার্ডকপি পেয়েছি। 

ভাসানী অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক শেখ রফিকুল আলম বাবলু বলেন, সব সুপারিশ পেয়েছি। দলীয় নেতা ও বিশেষজ্ঞদের মতামত নিয়ে কমিশনকে জানানো হবে।

বাংলাদেশ এলডিপির সভাপতি শাহাদাত হোসেন সেলিম জানান, সব সুপারিশ পেয়েছেন। মতামত জানাতে প্রস্তুতি শুরু করবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এনপ জ ম য় ত ইসল ম মত মত জ ন ত সব স প র শ মত মত চ ব এনপ র ব কল প গণভ ট সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়াই মিয়ানমারের রাখাইনে মানবিক করিডোর দেওয়ার মতো স্পর্শকাতর বিষয়ের দিকে সরকার অগ্রসর হওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিএনপি। দলটির নেতারা মনে করেন, দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিষয়ে জনগণের ম্যান্ডেটহীন একটি অনির্বাচিত সরকারের এমন সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিলে ভবিষ্যতে সেটি বাংলাদেশের জন্য বিপদের কারণ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর বিষয়ে রাজনৈতিক মতৈক্যে সিদ্ধান্ত নিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে বিএনপি। 
গত সোমবার রাতে বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম জাতীয় স্থায়ী কমিটির সভায় এমন আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত এ বৈঠকে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে সভাপতিত্ব করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

এদিকে, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের রাখাইনের মধ্যে মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। গতকাল মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা বাসসকে মানবিক করিডোর নিয়ে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করেন তিনি। 

এর আগে গত রোববার বিকেলে মানবিক করিডোর নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো, তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, এ বিষয়ে আমরা নীতিগতভাবে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।  

বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মানবিক করিডোরের ব্যাপারে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে। বিএনপি মনে করছে, সরকার এককভাবে স্পর্শকাতর এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে। দায়িত্বশীল ও দেশপ্রেমিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি এই ইস্যুতে মিত্র দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা করবে। একই সঙ্গে রাখাইনের বাস্তব পরিস্থিতি এবং এটা নিয়ে সরকার কী করছে, সেগুলোর তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করবে। এর পর সংবাদ সম্মেলন করে এর যৌক্তিকতা জাতির সামনে তুলে ধরবে। 
বৈঠকে বিএনপির একাধিক নেতা বলেন, যেখানে মিয়ানমারে একটি যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করছে; দেশটির সামরিক জান্তার সঙ্গে আরাকান আর্মির সংঘাত চলছে; আরাকান আর্মিকে কোণঠাসা করতে জান্তা সরকার সব ধরনের সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে– এমন প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মানবিক করিডোর দেওয়া কতটুকু যুক্তিযুক্ত হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। 

নেতারা আরও বলেন, শেখ হাসিনার আমলে রাখাইন রাজ্য থেকে ১০ লাখের মতো রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে। তারা বাংলাদেশের জন্য বিরাট বোঝা। এ অবস্থায় জাতিসংঘ রাখাইনে যে মানবিক বিপর্যয়, দুর্ভিক্ষের কথা বলছে, সেটি নিয়ে বিএনপিও উদ্বিগ্ন। করিডোর দেওয়ার আগে রাখাইন রাজ্য নিয়ে প্রতিবেশী দুটি দেশ চীন ও ভারতের অবস্থান কী, সেটা নিয়েও আমাদের ভাবার প্রয়োজন রয়েছে। সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা এবং রাজনৈতিক মতৈক্য ছাড়া এটা করলে তা ভবিষ্যতে বাংলাদেশের জন্য বিপদ হতে পারে। তাই এমন স্পর্শকাতর একটি ইস্যুতে সরকারের রাজনৈতিক মতৈক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত। 

জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা এখনও বিষয়টি (রাখাইনে মানবিক করিডোর) পুরোপুরি জানি না। পত্রপত্রিকায় দেখেছি, সরকার একতরফাভাবে দেশের জনগণ তথা রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলাপ-আলোচনা না করে এ ধরনের গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা শুনেছি, মানবিক কারণে তারা এই করিডোর দেবে। কিন্তু সেটা কীভাবে দেবে, তা জানি না। এটাও শুনেছি– কিছু শর্ত আছে। শর্তগুলো কী, জানি না। সরকারের উচিত বিষয়গুলো জাতিকে সুস্পষ্টভাবে জানানো। আমরাও এ বিষয়ে নানা তথ্য-উপাত্ত নিয়ে জানার চেষ্টা করছি। এর পর আমরা দলের তরফ থেকে এ বিষয়ে অবস্থান জানাব।

গত সোমবার ঠাকুরগাঁওয়ে এক অনুষ্ঠানে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মানবিক করিডোর দেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সরকারের কথা বলে নেওয়া উচিত ছিল। তারা (সরকার) একক সিদ্ধান্তে মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ করে দিচ্ছে। মানুষকে সাহায্য করার ব্যাপারে আমাদের আপত্তি নেই। জাতিসংঘ যে উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে আমাদের আপত্তি নেই। তবে এটা হতে হবে সব মানুষের সমর্থনে। 
স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সালাহউদ্দিন আহমেদ, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, বেগম সেলিমা রহমান, মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহমদ ও ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।

লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত, এটাই বাংলাদেশের অবস্থান: প্রেস সচিব
প্রেস সচিব শফিকুল আলম দাবি করেন, জাতিসংঘের নেতৃত্বে রাখাইনে মানবিক সহায়তা পাঠানোর উদ্যোগ নেওয়া হলে বাংলাদেশ লজিস্টিক সহায়তা দিতে প্রস্তুত– এটাই বাংলাদেশের অবস্থান। তিনি বলেন, সংকটকালে অন্য দেশকে সাহায্য করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের বরাবরই ভূমিকা রয়েছে। যার সাম্প্রতিক উদাহরণ হলো মিয়ানমারে ভূমিকম্পের পর আমাদের সহায়তা। আমাদের আশঙ্কা, রাখাইন থেকে আরও মানুষের অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে, যা আমারা সামাল দিতে পারব না। বাংলাদেশ বিশ্বাস করে, জাতিসংঘের নেতৃত্বে মানবিক সহায়তা রাখাইনকে স্থিতিশীল রাখতে এবং শরণার্থীদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসনে সহায়ক পরিবেশ তৈরিতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ হয়ে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে লজিস্টিক সহায়তা দেওয়ার ব্যাপারে নীতিগতভাবে সম্মতি সরকার। যদিও রাখাইনে ত্রাণ পাঠানোর বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে আমরা যোগাযোগ অব্যাহত রেখেছি। যথাসময়ে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে পরামর্শ করা হবে।

হেফাজতে ইসলামের প্রতিবাদ
করিডোর দেওয়ার খবরে প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। সরকারের এ সিদ্ধান্তকে দেশের সার্বভৌমত্বের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলছেন সংগঠনটির নেতারা। গতকাল রাজধানীর খিলগাঁওয়ে জামিয়া ইসলামিয়া মাখজানুল উলুম মাদ্রাসায়  সংবাদ সম্মেলনে এ অবস্থান জানিয়েছেন হেফাজতের যুগ্ম মহাসচিব মামুনুল হক। মামুনুল হক বলেন, বাংলাদেশকে ব্যবহার করে সাম্রাজ্যবাদী শক্তি তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে– দেশপ্রেমিক শক্তি হিসেবে হেফাজতে ইসলাম কোনোভাবেই এটি সমর্থন করে না। 

জাতীয় ঐকমত্য তৈরির পরামর্শ চরমোনাইয়ের
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম কুমিল্লা মহানগরের শূরা সম্মেলনে বলেছেন, বিস্তর বোঝাপড়া এবং রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রতিষ্ঠা ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না।

স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে: সিপিবি
মানবিক করিডোরের খবরে তীব্র ক্ষোভ ও উদ্বেগ জানিয়েছে সিপিবি। সিপিবির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ ধরনের নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার অন্তর্বর্তী সরকারের নেই। সরকার দেশের বিদ্যমান সংবিধান লঙ্ঘন করে এই ভয়ংকর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে, যা বাংলাদেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্বকে সংকটে ফেলবে।

এটি জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল: বাসদ
বাসদের সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বিবৃতিতে বলেন, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা না করে একতরফাভাবে সরকারের এমন সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আলোচনা ও সম্মতি ছাড়া অনির্বাচিত সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়া জাতিকে নিয়ে পাশা খেলার শামিল।

জাতীয় ঐকমত্য অত্যন্ত জরুরি: গণসংহতি আন্দোলন
মানবিক করিডোর বিষয়ে অবিলম্বে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে গণসংহতি আন্দোলন। দলটি বলেছে, আলোচনার ভিত্তিতে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি ও নির্বাহী সমন্বয়কারী আবুল হাসান রুবেলের বরাত দিয়ে দলটি বিবৃতিতে জানায়, রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোর দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এ বিষয়ে বিশদ আলাপ আলোচনা ও ঐকমত্য প্রয়োজন। 
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সংখ্যানুপাতিক নির্বাচনসহ ১১ বিষয়ে ইসলামী আন্দোলন ও এবি পার্টির ঐকমত্য
  • চলছে বৈঠকের রাজনীতি
  • দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে মানবিক করিডরের সিদ্ধান্ত নিতে হতো: নাহিদ ইসলাম
  • বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার ও মৌলিক সংস্কার প্রশ্নে একমত এনসিপি ও গণসংহতি আন্দোলন
  • কানাডার প্রধানমন্ত্রী কার্নিকে অভিনন্দন জানালেন ট্রাম্প
  • অনির্বাচিত সরকারের করিডোর দেওয়ার এখতিয়ার নেই: বিএনপি
  • জাতীয় স্বার্থে আমরা কি একমত হতে পারি না
  • গণভোটে সংস্কার চায় নুরের গণঅধিকার
  • স্পেন ও পর্তুগালে ভয়াবহ বিদ্যুৎবিভ্রাট, সব ধরনের গণপরিবহনে বিপর্যয়
  • সংসদ নির্বাচনে প্রার্থীর বয়স ন্যূনতম ২৩ করার প্রস্তাব গণ অধিকার পরিষদের