লোহিত সাগরে পণ্যবাহী জাহাজে হুতিদের হামলায় নিহত ৪, নিখোঁজ ১৫
Published: 10th, July 2025 GMT
লোহিত সাগরে লাইবেরিয়ার পতাকাবাহী একটি পণ্যবাহী জাহাজে হামলার ঘটনা ঘটেছে। হামলার পর জাহাজটি থেকে ছয়জন ক্রুকে উদ্ধার করার কথা জানিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নৌবাহিনী। এই হামলার দায় স্বীকার করেছে ইরান–সমর্থিত ইয়েমেনের হুতিরা।
উদ্ধার অভিযানে সম্পৃক্ত নিরাপত্তাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সূত্রের বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স গতকাল বুধবার জানিয়েছে, পণ্যবাহী জাহাজটিতে মোট ২৫ জন ছিলেন। হামলায় অন্তত চারজন নাবিক নিহত হয়েছেন। আর ছয়জনকে জীবিত উদ্ধার করার পর এখনো ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
হুতিদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রিসের মালিকানাধীন ‘এটারনিটি সি’ নামের পণ্যবাহী জাহাজটিতে একটি নৌযান ব্যবহার করে এবং ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে হামলা করেছেন হুতি যোদ্ধারা। গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে হামলা চালানো হয়েছে।
এ বিষয়ে হুতিদের সামরিক মুখপাত্র ইয়াহিয়া সারি জানান, ‘এটারনিটি সি’ নামের পণ্যবাহী জাহাজটি ইসরায়েলের দিকে যাচ্ছিল। গত সোমবার হামলা চালানো হয়। হামলার পর হুতি যোদ্ধারাই জাহাজটি থেকে বেশ কয়েকজন ক্রুকে উদ্ধার করে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। তাঁদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সমুদ্রে পণ্যবাহী জাহাজের নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিত ইউরোপীয় ইউনিয়নের অপারেশন অ্যাসপাইডসের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, হামলার শিকার জাহাজটিতে ২২ জন ক্রু ছিলেন। নিরাপত্তা দলে ছিলেন আরও তিনজন। যে ছয়জনকে উদ্ধার করা হয়েছে তাঁদের মধ্যে পাঁচজন ফিলিপাইনের নাগরিক। একজন ভারতীয়।
আরও পড়ুনইসরায়েলের দুর্ভেদ্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ভেঙে পড়ার জন্য তাহলে কি অনুপ্রবেশ দায়ী১২ ঘণ্টা আগেব্রিটিশ সামরিক বাহিনী পরিচালিত যুক্তরাজ্যের মেরিটাইম ট্রেড অপারেশনস সেন্টার (ইউকেএমটিও) গত মঙ্গলবার জানায়, হামলায় জাহাজটির ‘উল্লেখযোগ্য ক্ষয়ক্ষতি’ হয়েছে।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক নিরাপত্তাপ্রতিষ্ঠান অ্যামব্রে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানিয়েছে, মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত জাহাজটি ইয়েমেনের বন্দরনগরী হোদেইদাহের কাছে ডুবে গেছে। ওই এলাকাটি হুতিদের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।
ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর নির্বিচার হামলার পরিপ্রেক্ষিতে গাজাবাসীর পাশে দাঁড়িয়েছে হুতিরা। তারা বলছে, গাজাবাসীর প্রতি সংহতি জানিয়ে ইসরায়েলের সঙ্গে জড়িত জাহাজে হামলা চালানো হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে গাজায় হামলা বন্ধে ইসরায়েলি বাহিনীর ওপর চাপ তৈরি করতে চায় হুতিরা। এর মধ্যেই ইয়েমেনে হুতিদের স্থাপনায় একাধিক হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল।
আরও পড়ুনইয়েমেনের তিনটি বন্দর ও একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালাল ইসরায়েল০৭ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুন২৪ ঘণ্টায় দুবার দেখা করলেন ট্রাম্প-নেতানিয়াহু, গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা২১ ঘণ্টা আগে.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রেনের ছাদে ভ্রমণকালে বৈদ্যুতিক লাইনের নেটের আঘাতে নিহত ১, আহত ৫
টাঙ্গাইলে ট্রেনের ছাদে অবৈধভাবে ভ্রমণের সময় বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে একজন নিহত ও পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত ব্যক্তির নাম রিপন আলী (৩৭)। তিনি রাজশাহীর পবা উপজেলার কালিয়ানপাড়া গ্রামের বাসিন্দা। আহতদের মধ্যে অজ্ঞাতপরিচয়ের এক ব্যক্তি টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
রেলওয়ে পুলিশের টাঙ্গাইল ফাঁড়ির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হারুন অর রশীদ জানান, ঢাকা থেকে রাজশাহীগামী আন্তনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস ট্রেনটি বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর পর ছাদে রক্তাক্ত অবস্থায় ছয়জনকে পাওয়া যায়। আহত যাত্রীরা পুলিশকে জানান, তাঁরা ঢাকা থেকে ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন। টাঙ্গাইল স্টেশনে পৌঁছানোর ১৫–২০ মিনিট আগে রেলপথের ওপর দিয়ে অতিক্রম করা একটি বৈদ্যুতিক সঞ্চালন লাইনের নিচের নেটের সঙ্গে ধাক্কা লেগে তাঁরা আহত হন।
আহত ছয়জনকে পুলিশ উদ্ধার করে টাঙ্গাইল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত ১০টার দিকে রিপন আলীর মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে আশরাফুলকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। আহত আমিরুল ইসলাম (২৫), আলিম (২৫) ও ফয়সাল (২৭) চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। অজ্ঞাতপরিচয়ের এক কিশোর (১৫–১৬) এখনো টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের ৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন। দুপুরে গিয়ে দেখা যায়, তার হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় শুয়ে আছে। কর্তব্যরত নার্স জানান, ছেলেটি কথা বলতে পারছে না।
এদিকে নিহত রিপন আলীর রাজশাহীর বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। আজ শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে কালিয়ানপাড়া গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির ভেতরে স্বজন ও প্রতিবেশীরা আহাজারি করছেন। বাইরে রিপনের দাফনের জন্য কবর খোঁড়া হচ্ছে, কেউ বাঁশ কাটছেন।
রিপনের বাবা ইসরাফিল হোসেন জানান, রিপন ঢাকার একটি ইলেকট্রনিকস কোম্পানিতে চাকরি করত। কয়েক মাস আগে চাকরি ছেড়ে দিয়ে নতুন কাজ খুঁজছিল। গত বুধবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে কাউকে কিছু না বলে বাড়ি থেকে বের হয়। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল হাসপাতাল থেকে রিপনের মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে তার ছোট ছেলের ফোনে যোগাযোগ করা হয়। তখনই তাঁরা জানতে পারেন, রিপন ট্রেন দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন।