Prothomalo:
2025-11-02@00:29:58 GMT

এই দেশ কি ধর্ষকের অভয়ারণ্য

Published: 9th, March 2025 GMT

নারী ও কন্যাশিশুর আর্তনাদ, হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাসে ক্রমেই ভারী হয়ে উঠছে বাংলাদেশের আকাশ–বাতাস। আমরা নারীরা ভালো নেই, শান্তিতে নেই, স্বস্তিতে নেই। শুধু নারী হওয়ার অপরাধে প্রতিমুহূর্তে নিরাপত্তার ঝুঁকিতে বসবাস করা কোনো সভ্য দেশের দৃষ্টান্ত হতে পারে না।

এ কি আদৌ সভ্য সমাজ, যেখানে দুধের শিশু থেকে বৃ্দ্ধা পর্যন্ত নারীরা ধর্ষণের শিকার হতে পারেন যেকোনো মুহূর্তে? যে কেউ যেকোনো সময়ে আমাদের পথ আগলে দাঁড়াতে পারে। আমাদের পরিধেয় বস্ত্র ধরে টানাহেঁচড়া করতে পারে। আমাদের অশ্রাব্য গালি দিতে পারে, ধর্ষণ করতে পারে। অথচ এই কাজগুলো যারা করে, সেই পুরুষগুলোই আমাদের সমাজে নারীদের বিচারের মানদণ্ড নিয়ে বসে থাকে।

মাগুরায় বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশু ধর্ষণের ঘটনায় পুরো দেশ স্তম্ভিত। ধর্ষণের যেকোনো ঘটনায় মনের ওপর এতটাই চাপ সৃষ্টি হয় যে লিখতে বসলে মানসিকভাবে অসুস্থ বোধ করি। তখন হাত অসাড় ও মস্তিষ্ক ভোঁতা হয়ে আসে। আমরা দেখেছি, কিছু কিছু ধর্ষণের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। সেই ঝড় একসময় আবার থেমেও যায়। কিন্তু থামে না ধর্ষণের ঘটনা।

ক্ষমতা বদলায়, সময় বদলায়, আইন বদলায়, কিন্তু কিছুতেই থামে না ধর্ষণ। অধিকাংশ ধর্ষণের ঘটনা প্রকাশিতই হয় না। মাগুরায় ধর্ষণের শিকার হওয়া আট বছরের শিশুটি যদি জীবনমৃত্যুর সন্ধিক্ষণে এসে না পৌঁছাত, তাহলে এ ঘটনাও হয়তো চাপা পড়ে যেত।

আরও পড়ুনমাগুরার মেয়েটা হেরে যেতে পারে না২ ঘণ্টা আগে

বিগত দুই মাসে ধর্ষণের ঘটনা এমন জ্যামিতিক হারে বেড়ে চলেছে যে এ ধরনের খবরের ভার নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ছে। বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের প্রথম দুই মাসেই সারা দেশে ৩৯৫ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১১৫ জন।

বিভিন্ন পরিস্থিতিতে নারী ও কন্যাশিশু ধর্ষণের খবর আসছে। আছে বাসে কিংবা চলন্ত পরিবহনে ধর্ষণের ঘটনা, অটোরিকশা থেকে নামিয়ে ধর্ষণ, ট্রলারে দলবদ্ধ ধর্ষণ, অবকাশযাপন কেন্দ্রে বেড়াতে গিয়ে কিশোরী ধর্ষণ, শহীদ দিবসে ফুল কুড়াতে যাওয়া শিশুকে ধর্ষণ।

অন্যদিকে দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীল পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে ধর্ষণের সাজাপ্রাপ্ত অনেক আসামি এরই মধ্যে জামিনে ছাড়া পেয়ে জেলের বাইরে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তারা হুমকি দিচ্ছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে। এ তালিকায় আছে ২০১৬ সালে দিনাজপুরে ৫ বছরের শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি, যে কিনা শিশুটির যৌনাঙ্গ ব্লেড দিয়ে কেটে ও সারা শরীরে সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে শিশুটিকে ধর্ষণ করেছিল। ৫৬ হাজার বর্গমাইলের এই দেশ যেন ধর্ষণের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে!

ধিক সেই দেশের পুরুষকে, যারা মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে নারীকেই ধর্ষণ করে। যে দেশে ভাষা দিবসের ফুল কুড়াতে গিয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, সে দেশ কি অভিশপ্ত এক দেশ নয়! নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর দীর্ঘশ্বাসে একদিন হয়তো সেই দেশ রিক্ত হবে, নিঃস্ব হবে।

বিষয়টি নিয়ে কথা উঠলেই কেউ কেউ বলেন, ‘ধর্ষণের ঘটনা তো বাংলাদেশে নতুন নয়। আগেও তো ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। গত ১৫ বছর আপনারা কোথায় ছিলেন?’ গত ১৫ বছর কী হয়েছে, সেই যুক্তিতে তো আর বর্তমানে সংঘটিত অপরাধ বৈধতা পেতে পারে না। ধর্ষণের ঘটনা যেকোনো পরিস্থিতিতেই অগ্রহণযোগ্য। কেউ আবার এ পরিস্থিতির জন্য মেয়েদের, তাঁদের পোশাক কিংবা চালচলনকে দায়ী করেন।

কেউ আবার বলেন, ‘পরিস্থিতি যত ভয়াবহ বলা হচ্ছে, আসলে পরিস্থিতি কিন্তু ততটা ভয়াবহ নয়।’ তাঁদের উদ্দেশে বলতে হয়, নারীরা নিরাপদে আছেন নাকি নেই, সে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর অধিকার একমাত্র নারীদেরই। কেউ নিরাপদ বোধ করলে তাঁকে বলে দেওয়ার প্রয়োজন হয় না যে ‘আপনি নিরাপদে আছেন’। ঠিক একইভাবে কেউ যদি তাঁর নিরাপত্তা নিয়ে উৎকণ্ঠিত থাকেন, তবে তাঁকে যতই আশ্বস্ত করা হোক না কেন তিনি অনিরাপদই বোধ করবেনই।

রাস্তায় হাঁটতে, গণপরিবহনে উঠতে, বাসের জন্য অপেক্ষা করতে, গণপরিবহনের ভেতরে, উবার, পাঠাও, এমনকি নিজের গাড়িতে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে, অফিসে–আদালতে, কলকারখানায়, বাড়ির ভেতরে, পার্কে, বিনোদনকেন্দ্রে, মিছিলের মাঝখানে, গণ–আন্দোলনে, লাইব্রেরিতে, খেলার মাঠে, হাসপাতালে, শহীদ মিনার কিংবা দর্শনীয় স্থানে, এটিএম বুথে, এমনকি গণশৌচাগারেও নিরাপদ নন নারী। পরিস্থিতে এমন দাঁড়িয়েছে যে আজকাল পাঁচ মিনিটও একা হেঁটে যাওয়ার সাহস করতে পারি না। অল্প বয়সী মেয়েগুলোর একা পথ চলার কথা তো ভাবতেই পারি না। দিনে–রাতে নিরাপত্তাহীনতার এই চক্র যেন নারীকে বিষণ্নতা আর হতাশার বলয়ে আটকে ফেলছে।

অনেকে ধর্ষণের ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করেন। না, এ ঘটনাগুলো বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নয়। এ ঘটনাগুলোকে বিচ্ছিন্ন হিসেবে মেনে নিলে জঘন্য এই অপরাধের ভয়াবহতা গুরুত্ব হারায়। যিনি ধর্ষণের শিকার হয়েছেন, একমাত্র তিনিই জানেন, জীবনব্যাপী এই দুঃসহ স্মৃতি বয়ে বেড়ানো কী যন্ত্রণার!

জীবনে ঘটে যাওয়া এই ভয়ংকর বাস্তবতা থেকে বেরিয়ে আসা প্রায় অসম্ভব। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে যতই সন্তোষজনক বলুন না কেন, বাস্তবতা এই যে আমরা নারীরা এখন বাড়ির বাইরে বের হতে ভয় পাই। এমনকি বাড়ির মধ্যেও নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে ভীত আমরা।

আমরা মুক্তি চাই এই অভিশপ্ত পরিস্থিতি থেকে। ধর্ষণের শাস্তি যতই ভয়াবহ হোক না কেন, আইনের প্রয়োগ নিশ্চিত করা না গেলে এর সুফল কখনোই পাওয়া যাবে না। যে দেশে ধর্ষণের শিকার ক্রন্দনরত নারীর আর্তচিৎকারের ভাষা মানুষের বিবেকের দুয়ারে নাড়া দেয় না, ধিক সেই দেশের দায়িত্বে থাকা মানুষগুলোকে।

ধিক সেই দেশের পুরুষকে, যারা মাতৃগর্ভ থেকে জন্ম নিয়ে নারীকেই ধর্ষণ করে। যে দেশে ভাষা দিবসের ফুল কুড়াতে গিয়ে শিশু ধর্ষণের শিকার হয়, সে দেশ কি অভিশপ্ত এক দেশ নয়! নির্যাতনের শিকার নারী ও শিশুর দীর্ঘশ্বাসে একদিন হয়তো সেই দেশ রিক্ত হবে, নিঃস্ব হবে।

নিশাত সুলতানা লেখক ও উন্নয়নকর্মী
[email protected]

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর স থ ত আম দ র ন র পদ বছর র

এছাড়াও পড়ুন:

অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ

দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।

কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।

এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।

কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।

শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।

সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।

হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ