হজমের সুবিধার্থে রাতে খাওয়ার পর এই ১০ অভ্যাস করুন
Published: 11th, March 2025 GMT
কিছুক্ষণ হাঁটুন
রাতের খাওয়ার পর ১০-১৫ মিনিট হাঁটলে হজমের সুবিধা হয়। এতে পেটফাঁপা দূর হয়, রক্তে শর্করার পরিমাণ স্থিতিশীল থাকে। হাঁটাচলা করলে পরিপাকতন্ত্র আরও বেশি সক্রিয় হয় ও বিপাকক্রিয়ার উন্নতি ঘটে।
হালকা গরম পানি খানরাতে খাওয়ার পর এক গ্লাস হালকা গরম পানি খেলে হজমে সুবিধা হয়, দূর হয় শরীরের চর্বি, শরীরের বিষাক্ত পদার্থ বের হয়ে যায়, পেটফাঁপা ও কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে না। সব মিলিয়ে আপনার পরিপাকতন্ত্র ভালোভাবে কাজ করে।
আরও পড়ুনরাতের যেসব অভ্যাসে দূর হবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা০৬ জানুয়ারি ২০২৫সঙ্গে সঙ্গে শুয়ে পড়বেন নাখাওয়া শেষ করেই শুয়ে পড়লে অ্যাসিড রিফ্লাক্স (পাকস্থলীর অ্যাসিড খাদ্যনালিতে প্রবাহিত হলে এমনটা হয়। এতে গলায় জ্বালাপোড়া হয়, কখনো কখনো গলায় অম্ল স্বাদের তরলও তৈরি হয়) ও বদহজম হয়। খাওয়ার পর আধা ঘণ্টা সোজা হয়ে বসে থাকলে পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে খাবার সহজে চলাচল করতে পারে। এতে পেটফাঁপা, পেটে অস্বস্তিবোধ ও বদহজম দূর হয়।
গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের চর্চা করুনখাওয়ার পর ডিপ ব্রিদিং বা গভীর শ্বাসপ্রশ্বাসের চর্চা করলে অবসাদ দূর হয়। শরীরে অক্সিজেনে চলাচলের সুবিধা হয়। ডিপ ব্রিদিং পরিপাকতন্ত্রকে শিথিল রাখে।
মৌরি অথবা জোয়ান চাবানমৌরি ও জোয়ান হজমে সহায়ক, পেটের গ্যাস কমায়, পেটফাঁপা এবং অ্যাসিডিটি দূর করে, হজমে সহায়তাকারী পাচক রসের নিঃসরণকে ত্বরান্বিত করে।
হালকা স্ট্রেচিং করুনহালকে স্ট্রেচিং করলে পেটফাঁপা দূর হয়, রক্ত সঞ্চালন বাড়ে ও পাকস্থলীতে অতিরিক্ত কোনো চাপ পড়ে না। এতে খাবার আরও ভালোভাবে হজম হয়।
আরও পড়ুনরাতের খাবার ঠিক কোন সময় খাওয়া সবচেয়ে স্বাস্থ্যকর০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫প্রোবায়োটিক খাবার খানটকদই, বাটারমিল্ক ও বিভিন্ন ফার্মেন্টেড খাবার খেলে পেটে উপকারী ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করে। এসব খাবার হজমপ্রক্রিয়ার উন্নতি ঘটায়, পুষ্টি উপাদানগুলোর শোষণে সহায়তা করে, পরিপাকতন্ত্রকে সুস্থ রাখে, কোষ্ঠকাঠিন্য ও পেটফাঁপা দূর করে।
ভেষজ চা খানবিভিন্ন ধরনের ভেষজ চা, যেমন জিনজার টি, পিপারমিন্ট টি, ক্যামোমাইল টি ইত্যাদি পেট ঠান্ডা করে, পেটফাঁপা ও পেটের গন্ডগোল দূর করে। এতে হজম সহজ হয়, কর্মক্ষমতা বাড়ে।
সোজা হয়ে বসুনসোজা হয়ে বসে খাবার খেলে ও খাওয়ার পরও আধা ঘণ্টা সোজা হয়ে বসে থাকলে অ্যাসিড রিফ্লাক্স হবে না, পরিপাকতন্ত্রের মধ্য দিয়ে সহজেই খাদ্য চলাচল করতে পারবে, পেটফাঁপা ও পেটের অস্বস্তি দূর হবে।
স্ন্যাকস খাবেন নারাতে মিষ্টি ও চর্বি–জাতীয় স্ন্যাকস খেলে পরিপাকতন্ত্রের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ে, বিপাকক্রিয়া ধীর হয়ে যায়, বদহজম ও পেট ফাঁপার আশঙ্কা থাকে। এ বদভ্যাস বেশি দিন ধরে থাকলে ওজনও বেড়ে যাবে।
আরও পড়ুনসফল ব্যক্তিরা রাতে যে ৫ কাজের চর্চা করেন০৯ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ র হয়
এছাড়াও পড়ুন:
চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া
চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।
ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।
চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।
সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।
এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালচিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’
চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।
নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।
সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’
চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।