ন্যায়বিচারই এই নিষ্ঠুরতার একমাত্র জবাব
Published: 14th, March 2025 GMT
চিকিৎসকদের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা, দেশবাসীর প্রার্থনা—সবকিছুকে ব্যর্থ করে দিয়ে মাগুরার আট বছরের কন্যাশিশুটি মৃত্যুর কাছে হেরে গেল। ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে বৃহস্পতিবার বেলা একটায় শিশুটির মৃত্যু হয়। জীবন ও জগৎকে দেখার আগেই ছোট্ট নিষ্পাপ শিশুটিকে যে অবর্ণনীয় নির্মমতার মুখোমুখি হতে হয়েছে, সেটা এককথায় নারী ও শিশুর নিরাপত্তা ও সুরক্ষা দিতে আমাদের সমাজ ও রাষ্ট্র যে চূড়ান্ত রকম ব্যর্থ, তারই রূঢ় প্রতিচ্ছবি।
শিশুটির মৃত্যুতে খুব স্বাভাবিকভাবেই আমরা শোকাহত ও বিক্ষুব্ধ। কিন্তু এই শোক ও ক্ষোভকে আমরা যদি যৌক্তিক শক্তিতে পরিণত করে নারী ও শিশুর প্রতি, বিদ্বেষমূলক সামাজিক ও সাংস্কৃতিক আচরণ বদলাতে না পারি এবং ভুক্তভোগীদের আইনি সুরক্ষা দিতে না পারি, তাহলে ভবিষ্যতে এমন মর্মান্তিক ট্র্যাজেডি প্রতিরোধ করা সম্ভব হবে না।
সাম্প্রতিক মাসগুলোতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তা ও শিথিলতার সুযোগে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ডাকাতির মতো অপরাধের সঙ্গে নারী ও শিশু ধর্ষণ ও নির্যাতনের মতো ঘটনাগুলো উদ্বেগজনকভাবে বাড়ছিল। জনপরিসরে, গণপরিবহনে নারীরা নানাভাবে হেনস্তা ও যৌন নিপীড়নের শিকার হচ্ছিলেন। ডিজিটাল পরিসরেও নারীবিদ্বেষী বক্তব্য হামেশাই আসছিল। এমনকি মব তৈরি করে থানা থেকে নারী হেনস্তাকারীকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টাও আমরা দেখেছি।
এ রকম অনেক ঘটনায় সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা ও দায়িত্বশীল কেউ কেউ যথেষ্ট দায়িত্বশীলতা ও সংবেদনশীলতার পরিচয় দেখাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যখন নাজুক, সে রকম একটি বাস্তবতায় দায়িত্বশীলদের এমন ভূমিকা অপরাধীদের কি আশকারা দেয় না?
নারী ও শিশুর প্রতি একের পর এক সহিংসতার ঘটনায় খুব সংগত কারণেই নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ বাড়ছিল। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রতিবাদ, বিক্ষোভও চলছিল। এর মধ্যে মাগুরার শিশুটির ওপর ঘটে যাওয়া নিষ্ঠুরতার খবর গণমাধ্যমে প্রচারিত হলে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীসহ সারা দেশের মানুষ। প্রতিবাদের পরেই আমরা সরকারের টনক নড়তে দেখলাম। প্রকাশ্যে নারী হেনস্তার সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হলো, ধর্ষণ মামলার বিচার ৯০ দিনে শেষ করতে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশের খসড়া তৈরি করা হলো।
মাগুরার শিশুটির মৃত্যুতে শোক জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি এই মামলার আসামিদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছেন। শিশুটির জন্য সারা দেশের মানুষ যেভাবে প্রতিবাদে শামিল হয়েছেন, সেটা নিঃসন্দেহে আশাজাগানিয়া। শিশুটির মৃত্যুর পর মানুষ যেভাবে শোক জানিয়েছেন, সেটাও বৃহত্তর সংহতিবোধের পরিচয়ের সাক্ষ্যবাহী। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, একটা গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব নেওয়া অন্তর্বর্তী সরকার কেন প্রথম থেকেই নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে তাদের দৃঢ় অবস্থান জানাতে ব্যর্থ হলো?
বোনের বাড়িতে বেড়াতে যাওয়া আট বছরের শিশুটিকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন তার মা। এ মামলায় শিশুটির ভগ্নিপতি, বোনের শ্বশুর, শাশুড়ি ও ভাশুরকে গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। একমাত্র ন্যায়বিচারই এই নিষ্ঠুরতার জবাব হতে পারে।
পুলিশের ওয়েবসাইটের তথ্য বলছে, সারা দেশে যে ফৌজদারি অপরাধের ঘটনায় মামলা হয়, তার ১০ শতাংশ নারী ও শিশু নির্যাতনের মামলা। যৌন নির্যাতন, শ্লীলতাহানি, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর খুনের শিকার হওয়ার অভিযোগে এসব মামলা হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রে অপরাধীদের শাস্তি হচ্ছে না। ২০২০ সালের গবেষণা বলছে, নারী ও শিশু নির্যাতনের অভিযোগে হওয়া মামলায় বিচারের হার শূন্য দশমিক ৪২ শতাংশ। এর পেছনে একটি বড় কারণ হলো রাষ্ট্রপক্ষের ব্যর্থতা। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বিচারহীনতার এ ধারার অবসান না হলে ধর্ষণ, নির্যাতন প্রতিরোধ কতটা সম্ভব? মাগুরার শিশুটি আমাদের পুরুষতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও বিচার বিভাগকে জেগে ওঠার সতর্ক ঘণ্টা শুনিয়েছে। আমরা কি সেটা শুনতে পাচ্ছি?
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অপর ধ
এছাড়াও পড়ুন:
পূজাকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলায় বাহিনী তৎপর : ডিসি
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, আইনসৃঙ্খলা স্বাভাবিক রয়েছে, বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রধান ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজাকে ঘিরে সকল ধর্মমত, সকল সম্প্রদায় তারা একত্রিত হয়েছে।
সকলেই সার্বিক সহয়তা করছে যাতে করে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা উৎসব সুন্দর ভাবে পজলন করতে পারে। পূজাকে ঘিরে একটি গোষ্ঠি চাইবে পূজা উৎসব নষ্ট করে দেয়ার জন্য।
সে জন্য আমাদের তৎপরতা রয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা কাজ করছে। তার পাশাপাশি র্যাব, বিজিবি, সেনাবাহিনী ও বাংলাদেশ পুলিশবাহিহনী সবাই কাজ করছে যাতে করে সুন্দর ভাবে পূজা উৎসব শেষ করতে পারি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) শীতলক্ষ্যা নদীর তীরে ৫নং ঘাটে দূর্গা পূজার প্রতিমা বিসর্জনের স্থান পরিদর্শনকালে তিনি এ নির্দেশনা দেন।
দূর্গা পূজা বিজয়া দশমী শেষে প্রতিমা বিসর্জনের সময় যেকোনো অপ্রীতিকর দূর্ঘটনা এড়াতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সুন্দর ভাবে প্রতিমা বিসর্জনের স্থান নিরাপদ রাখতে সকলের সহযোগিতা কামনা করেন জেলা প্রশাসক।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, নারায়ণগঞ্জের ২২৩টি পূজা মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে পূজা উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। শান্তি ও সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে এবং সম্প্রীতি বজায় রেখে বর্তমানে পূজা উদযাপনের প্রস্তুতি চলছে।
এসময় তিনি প্রতিটি মণ্ডপে সুষ্ঠুভাবে ও নির্বিঘ্নে পূজা অনুষ্ঠান সম্পন্ন করতে প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট সবাইকে যথাযথ সহযোগিতার নির্দেশনা দেন।
তিনি বলেন, সকলে মিলে সব উৎসব উদযাপন করাই বাংলার ঐতিহ্য ও গৌরব।
এসময় জেলা প্রশাসন, সেনাবাহিনী, পুলিশ, বিআইডব্লিউটিএ, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।