মাটি ছাড়াই পুষ্টিকর সবুজ পশুখাদ্য উৎপাদনের নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক। হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে খুব অল্প পানিতেই পশুখাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব। এ পদ্ধতিটি দেশের পশুপালন খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।

এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবুজ পশুখাদ্য বছর জুড়ে প্রাণীদের উচ্চপুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। যা পশুখাদ্য সংকট মোকাবেলা, দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ওপর নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাতে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি টেকসই ও কার্যকর সমাধান হতে পারে। তবে বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক সেটআপ খরচ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও পরিবেশবান্ধব ও খরচসাশ্রয়ী এ প্রযুক্তি কৃষি ও পশুপালন খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।

আরো পড়ুন:

রাবির ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত হচ্ছে আর্চারি

রাবিতে এক ছাদের নিচে ছাত্রদল-শিবির-বাম

সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড.

মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদের তত্ত্বাবধানে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি (মৃত্তিকাবিহীন জলচাষবিদ্যা) নিয়ে এ গবেষণা পরিচালিত হয়েছে।

গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতারুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক মো. বাহারুল ইসলাম এবং এমএস থিসিস শিক্ষার্থী মো. শাকিল খান।

গবেষণা প্রবন্ধসমূহ ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বায়োসায়েন্স ও ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে করা হয়েছিল।

গবেষণায় ভুট্টা, গম এবং সুদান ঘাস (ফডার)-এ তিনটি পশুখাদ্যের হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা ভুট্টার প্রতি কেজি বীজ মাত্র ১২-১৪ দিনের মধ্যে ৬-১০ কেজি তাজা পশুখাদ্য উৎপাদন করেছে, যা মাটিভিত্তিক চাষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। গমের প্রতি কেজি বীজে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত ফলন হয়েছে। এতে ২০ লিটার পানি এবং ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে।

পুষ্টি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ভুট্টার পশুখাদ্যে প্রচলিত পশুখাদ্যের তুলনায় ১৬-১৮ শতাংশ বেশি অপরিশোধিত প্রোটিন এবং ৬০-৬৫ শতাংশ বেশি হজমযোগ্য পুষ্টি রয়েছে। এছাড়া এতে উচ্চ ভিটামিনের উপস্থিতি থাকায় পশুর ফাইবার হজম ক্ষমতা উন্নত হয়েছে, যা দুধের উৎপাদন ও পশুর বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।

গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ট্রে-ভিত্তিক এ ব্যবস্থায় ন্যূনতম বিনিয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় এবং প্রতি কেজি বীজে গড়ে ৭ কেজি পশুখাদ্য উৎপাদিত হয়, যা এটিকে ছোট কৃষকদের জন্য একটি সাশ্রয়ী বিকল্প করে তোলে। উল্লম্ব স্ট্যাকিং সিস্টেমে একাধিক স্তরে পশুখাদ্য উৎপাদন করা যায়, যা কম জায়গায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি ফলন নিশ্চিত করে। তবে এজন্য উচ্চতর প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।

এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সীমিত আবাদযোগ্য জমি, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের ঐতিহ্যবাহী পশুখাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া দেশে এমন অনেক অনাবাদি জমি (নন-এরাবল ল্যান্ড) রয়েছে, যেখানে ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়।”

তিনি বলেন, “গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবুজ পশুখাদ্য উৎপাদন একটি টেকসই বিকল্প হতে পারে। এ পদ্ধতিটি শুধু পশুখাদ্য উৎপাদনেই নয়, অন্যান্য সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।”

তিনি আরো বলেন, “এ প্রযুক্তি সাশ্রয়ীভাবে পানি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে, যা কৃষির ভার্টিক্যাল সম্প্রসারণে সহায়ক হয় এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করে। এটি সম্পূর্ণ দেশীয় সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি। ফলে খরচ তুলনামূলক কম এবং পশুপালনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। তবে পশুর স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব কতটুকু দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর, তা নির্ধারণে আরো অধিক গবেষণা প্রয়োজন।”

পিএইচডি গবেষক মো. বাহারুল ইসলাম বলেন, “হাইড্রোপনিক পশুখাদ্য দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে এবং খাদ্যের মান উন্নত করতে সক্ষম। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুগ্ধ খামারিরা এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক খাদ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আরো লাভবান হতে পারেন।”

বাজারজাতকরণের বিষয়ে ড. গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল অল্প সময়ে, বছরব্যাপী টেকসই পদ্ধতিতে গো-খাদ্যের সংকট নিরসন করা। সে লক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে আমরা এ গবেষণা শুরু করেছি। এ চাষ পদ্ধতিতে শিকড়সহ গো-খাদ্য ব্যবহার সম্ভব, পর্যায়ক্রমে এটি উন্নত করেছি। যদি কেউ আগ্রহী হন, আমরা কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য টেকসই ও কৃষকবান্ধব সমাধান তৈরি করা।”

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র ট কসই

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ শুরু 

কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ। মহান মে দিবস উপলক্ষে ঢাকার নয়াপল্টনে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল আয়োজিত এ সমাবেশে হাজার হাজার নেতকর্মী উপস্থিত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার (১ মে) দুপুর ২টা ১৫ মিনিটে ওলামা দলের সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক কারী গোলাম মোস্তফার কোরআন তেলাওয়াত শুরু করেন।

এর আগে দুপুর ১২টা থেকে সমাবেশ মঞ্চে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শুরু হয়। এতে বিএনপির সাংস্কৃতিক সংগঠন জাসাসের শিল্পীরা গান পরিবেশন করেন। 

দুপুর আড়াইটায় আনুষ্ঠানিকভাবে সমাবেশ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও সকাল থেকেই মিছিল নিয়ে ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের জেলা থেকে দলে দলে নেতাকর্মীরা যোগ দেন সমাবেশে।

নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে আয়োজিত এ সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে লন্ডন থেকে ভার্চুয়াল মাধ্যমে যুক্ত হয়ে বক্তব্য দেবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে সমাবেশ মঞ্চে উপস্থিত আছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, ভাইস চেয়ারম্যান আহমেদ আজম খান, সহ দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুসহ বিএনপির সিনিয়র নেতারা। সমাবেশে শ্রমিক দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরা হবে ১২ দফা দাবি। 

সমাবেশ স্থলে দেখা যায়, নেতাকর্মীরা ব্যানার, মাথায় নানা রঙের ক্যাপ, দলীয় টি-শার্ট পরে নয়পল্টনে আসছেন। জায়গায় জায়গায় চলছে স্লোগান, দলীয় সংগীত আর ঢাক-ঢোলের বাদ্য।

সমাবেশস্থলে দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের পাশাপাশি উপস্থিত রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, জাতীয়তাবাদী সাংস্কৃতিক সংস্থা (জাসাস) আহ্বায়ক হেলাল খান, সদস্যসচিব জাকির হোসেন রোকন প্রমুখ।

এদিকে, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সমাবেশস্থলে পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। জিরো পয়েন্ট থেকে পল্টনমুখী সড়ক সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা রাখা হয়েছে।

টানা চার মেয়াদে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের সরকার পতনের পর নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে প্রথম এতো বড় সমাবেশ করছে জাতীয়তাবাদী শ্রমিক দল।

এর আগে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত বছরের ৮ আগস্ট প্রথম বাধাহীন সমাবেশ করে বিএনপি। এতে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী অংশ নেন। পুরো এলাকায় ছিল উচ্ছ্বল নেতাকর্মীদের ভিড়।

ঢাকা/এএএম/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ