রাবির গবেষণা: মাটি ছাড়াই উৎপাদন হবে সবুজ পশুখাদ্য
Published: 16th, March 2025 GMT
মাটি ছাড়াই পুষ্টিকর সবুজ পশুখাদ্য উৎপাদনের নতুন এক পদ্ধতি উদ্ভাবন করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) একদল গবেষক। হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এ পদ্ধতিতে খুব অল্প পানিতেই পশুখাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব। এ পদ্ধতিটি দেশের পশুপালন খাতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে।
এ পদ্ধতিতে উৎপাদিত সবুজ পশুখাদ্য বছর জুড়ে প্রাণীদের উচ্চপুষ্টি সরবরাহ করতে পারে। যা পশুখাদ্য সংকট মোকাবেলা, দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধি এবং জমির ওপর নির্ভরতা কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান পশুখাদ্যের চাহিদা মেটাতে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি টেকসই ও কার্যকর সমাধান হতে পারে। তবে বৃহৎ পরিসরে বাস্তবায়ন ও প্রাথমিক সেটআপ খরচ এখনো বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে রয়ে গেছে। তা সত্ত্বেও পরিবেশবান্ধব ও খরচসাশ্রয়ী এ প্রযুক্তি কৃষি ও পশুপালন খাতকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে পারে।
আরো পড়ুন:
রাবির ক্রীড়াঙ্গনে যুক্ত হচ্ছে আর্চারি
রাবিতে এক ছাদের নিচে ছাত্রদল-শিবির-বাম
সম্প্রতি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক ড.
গবেষণায় সহযোগী হিসেবে ছিলেন ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিভাগের অধ্যাপক ড. আকতারুল ইসলাম, পিএইচডি গবেষক মো. বাহারুল ইসলাম এবং এমএস থিসিস শিক্ষার্থী মো. শাকিল খান।
গবেষণা প্রবন্ধসমূহ ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব বায়োসায়েন্স ও ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব অ্যাগ্রোনোমি অ্যান্ড এগ্রিকালচারাল রিসার্চ-এ প্রকাশিত হয়েছে। এ গবেষণাটি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অর্থায়নে করা হয়েছিল।
গবেষণায় ভুট্টা, গম এবং সুদান ঘাস (ফডার)-এ তিনটি পশুখাদ্যের হাইড্রোপনিক পদ্ধতির মূল্যায়ন করা হয়েছে। এতে দেখা যায়, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে চাষ করা ভুট্টার প্রতি কেজি বীজ মাত্র ১২-১৪ দিনের মধ্যে ৬-১০ কেজি তাজা পশুখাদ্য উৎপাদন করেছে, যা মাটিভিত্তিক চাষের তুলনায় কয়েক গুণ বেশি। গমের প্রতি কেজি বীজে ৫ দশমিক ৫ থেকে ৭ কেজি পর্যন্ত ফলন হয়েছে। এতে ২০ লিটার পানি এবং ১৫০ থেকে ২০০ গ্রাম রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে।
পুষ্টি বিশ্লেষণে দেখা গেছে, হাইড্রোপনিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ভুট্টার পশুখাদ্যে প্রচলিত পশুখাদ্যের তুলনায় ১৬-১৮ শতাংশ বেশি অপরিশোধিত প্রোটিন এবং ৬০-৬৫ শতাংশ বেশি হজমযোগ্য পুষ্টি রয়েছে। এছাড়া এতে উচ্চ ভিটামিনের উপস্থিতি থাকায় পশুর ফাইবার হজম ক্ষমতা উন্নত হয়েছে, যা দুধের উৎপাদন ও পশুর বৃদ্ধিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে।
গবেষণায় আরো দেখা গেছে, ট্রে-ভিত্তিক এ ব্যবস্থায় ন্যূনতম বিনিয়োগ ও রক্ষণাবেক্ষণের প্রয়োজন হয় এবং প্রতি কেজি বীজে গড়ে ৭ কেজি পশুখাদ্য উৎপাদিত হয়, যা এটিকে ছোট কৃষকদের জন্য একটি সাশ্রয়ী বিকল্প করে তোলে। উল্লম্ব স্ট্যাকিং সিস্টেমে একাধিক স্তরে পশুখাদ্য উৎপাদন করা যায়, যা কম জায়গায় ১৫-২০ শতাংশ বেশি ফলন নিশ্চিত করে। তবে এজন্য উচ্চতর প্রাথমিক বিনিয়োগের প্রয়োজন হয়।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মো. গিয়াস উদ্দিন আহমেদ বলেন, “সীমিত আবাদযোগ্য জমি, জলবায়ু পরিবর্তন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে দেশের ঐতিহ্যবাহী পশুখাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে হিমশিম খাচ্ছে। এছাড়া দেশে এমন অনেক অনাবাদি জমি (নন-এরাবল ল্যান্ড) রয়েছে, যেখানে ফসল উৎপাদন সম্ভব নয়।”
তিনি বলেন, “গবেষণায় প্রমাণ হয়েছে, হাইড্রোপনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে সবুজ পশুখাদ্য উৎপাদন একটি টেকসই বিকল্প হতে পারে। এ পদ্ধতিটি শুধু পশুখাদ্য উৎপাদনেই নয়, অন্যান্য সবজি উৎপাদনের ক্ষেত্রেও জনপ্রিয় হয়ে উঠছে।”
তিনি আরো বলেন, “এ প্রযুক্তি সাশ্রয়ীভাবে পানি ব্যবহারের সুযোগ তৈরি করে, যা কৃষির ভার্টিক্যাল সম্প্রসারণে সহায়ক হয় এবং রাসায়নিক সারের ব্যবহার হ্রাস করে। এটি সম্পূর্ণ দেশীয় সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি। ফলে খরচ তুলনামূলক কম এবং পশুপালনের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করে। তবে পশুর স্বাস্থ্যের ওপর এর প্রভাব কতটুকু দীর্ঘমেয়াদে কার্যকর, তা নির্ধারণে আরো অধিক গবেষণা প্রয়োজন।”
পিএইচডি গবেষক মো. বাহারুল ইসলাম বলেন, “হাইড্রোপনিক পশুখাদ্য দুধ ও মাংস উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমাতে পারে এবং খাদ্যের মান উন্নত করতে সক্ষম। বিশেষ করে ক্ষুদ্র ও মাঝারি দুগ্ধ খামারিরা এ প্রযুক্তির মাধ্যমে বাণিজ্যিক খাদ্যের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে আরো লাভবান হতে পারেন।”
বাজারজাতকরণের বিষয়ে ড. গিয়াস উদ্দিন বলেন, “আমাদের মূল লক্ষ্য ছিল অল্প সময়ে, বছরব্যাপী টেকসই পদ্ধতিতে গো-খাদ্যের সংকট নিরসন করা। সে লক্ষ্যে ২০২০ সাল থেকে আমরা এ গবেষণা শুরু করেছি। এ চাষ পদ্ধতিতে শিকড়সহ গো-খাদ্য ব্যবহার সম্ভব, পর্যায়ক্রমে এটি উন্নত করেছি। যদি কেউ আগ্রহী হন, আমরা কারিগরি সহায়তা ও প্রশিক্ষণ দিতে পারি। তবে আমাদের প্রধান লক্ষ্য টেকসই ও কৃষকবান্ধব সমাধান তৈরি করা।”
ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র ট কসই
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলের অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, পরিচয় প্রকাশ করে মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান বলেছেন জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন করেছেন।
ঢাকা/ফিরোজ