রমজানের শুরু থেকেই দাম বৃদ্ধির কারণে আলোচনায় লেবু। কিন্তু কেন বেড়েছে লেবুর দাম? ঢাকা ও এর আশপাশের বড় বাজারগুলোতে লেবু সরবরাহ করা ঢাকার ধামরাইয়ের লেবু বাগান ও পাইকার সমিতির কাছে এমন প্রশ্ন করতেই তারা জানালেন লেবুর দাম বৃদ্ধির কারণ।

পাইকাররা বলছেন, মূলত লেবুর ফলন কমে আসায় চাহিদার তুলনায় যোগান কমেছে। আর কম ফলনের কারণ হিসেবে অনাবৃষ্টিকে দায়ী করছেন চাষিরা। তবে অচিরেই দাম কমে আসবে বলে জানাচ্ছে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন।

ঢাকাসহ আশপাশের বাজারগুলোতে রমজানের শুরু থেকেই বেড়েছে লেবুর দাম। এক সময় একেকটি লেবু যেখানে ২ টাকা, ৫ টাকা, ১০ টাকার মধ্যে বিক্রি হতো। সেই লেবুই এক লাফে ২০, ৩০, ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে স্থানীয় বাজারগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ছোট লেবু ৬০ থেকে ৮০ টাকা প্রতি হালি ও বড় লেবু ১০০-১২০ টাকা প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে।

চড়া দামের কারণে অসন্তোষ প্রকাশ করেন ক্রেতারা। তাদের প্রশ্ন কেন বাড়লো লেবুর দাম?

রাজধানীসহ আশপাশের বাজারের সিংহভাগ লেবুর সরবরাহ করা হয় ঢাকার ধামরাই উপজেলা থেকে। এ উপজেলার অন্তত ৫-৬টি ইউনিয়নের অর্ধ শতাধিক গ্রামে প্রায় ৭০০ হেক্টরের বেশি জমিতে লেবু চাষ করা হয়। বছরজুড়ে বাগান থেকে লেবু তুলে পাঠানো হয় বড় বাজারগুলোতে। 

এমনই এক পাইকার বাজার রয়েছে ধামরাইয়ের বালিয়া এলাকায়। সেখানকার কৃষক ও স্থানীয় পাইকাররা জানান, একবার লেবু বাগান করলে সেখান থেকে ১০-১২ বছর লেবু উত্তোলন করা যায়। তবে লেবু তোলা হয় সমিতির মাধ্যমে। পাইকাররা বছর চুক্তিতে বাগান কিনে নেন। এরপর পাইকারদের সমিতির মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবে লেবু উত্তোলন করেন। বছরের শীতের শেষ সময়টিতে এসে লেবুর ফলন কিছুটা কমে যায়। ফলে গ্রিষ্মে বা বৃষ্টির সময়ে যেখানে ১০০ শতাংশ জমিতে ৫-৬ ফুট লম্বা ও বড় একেক টুকরি লেবু তোলা যায়, সেখানে শীতের সময় একটি টুকরি লেবু তুলতে অন্তত ৪০০-৫০০ শতাংশ জমির লেবু তুলতে হয়।

আবুল কাশেম নামে স্থানীয় এক লেবুচাষি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘বর্তমানে বাজার পরিস্থিতি আমাদের জন্য স্বাভাবিক। কারণ হলো এখন চৈত্র মাস, খরার সময়। জমির মাটি এখন খড়খড়ে, উর্বরতা কম। যে কারণে উৎপাদন কম। যখন ফসল উৎপাদন কম হয়, স্বাভাবিক ভাবে দাম বেড়ে যায়। এক মাস পর আসলে দেখবেন, বৃষ্টি হবে, উৎপাদন বেড়ে যাবে। তখন চাহিদা কমে যাবে, আমরা দাম কম পাব। বর্তমানে ৩০০ শতাংশ ঘুরে এক খাচি (টুকরি) লেবু তুলি। একটি খাচি পূর্ণ করতে ৫০ গামলা লেবু লাগে। আর কিছু দিন গেলে, ১০০ শতাংশ জমিতে ৩ খাচি লেবু তুলতে পারবো। তখন চাহিদা থাকবে না। দেখা যাবে তখন যে শ্রমিক খরচ, সেটাও ভর্তুকি দিতে হবে। এখন সেচ পাম্প দিয়ে জমিতে পানি দিতে হচ্ছে, ডিজেল দিয়ে, এটাও বাড়তি খরচ। ফলে এখন যে বেশি দাম পাচ্ছি, বছর শেষে দেখা যাবে, কয়েক মাসের লোকসানসহ আমরা কিছুটা লাভ পাব।’’

আলী হোসেন নামে অপর কৃষক রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘আমরা কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যাম বাজারে লেবু পাঠাই। সেখান থেকে অন্যান্য জায়গায় নিয়ে বিক্রি করে। আমাদের এখানে যে লেবু চাষ হয়, বাগানে বছরজুড়ে শ্রমিক কাজ করে, খরচ আছে। তারপর দেখা যায়, খুব অল্প পরিমাণ লাভ পাওয়া যায়। এই চৈত্রের সময় বৃষ্টি না হওয়ায় সেচ পাম্প দিয়ে পানি দিতে হয় নিয়মিত। তারপরও ফলন কম। এখন ৪০-৬০ হাজার টাকা খাচি পাওয়া গেলেও, এক মাস পর দেখা যাবে এক খাচি লেবু বিক্রি হবে ১০ হাজার বা তারও কম টাকায়। তখন লোকসান হবে, এমনকি খরচও উঠবে না। এখনকার বাজারদরকে আমাদের প্রচুর লাভ হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।’’

আজাহারুল ইসলাম নামে এক পাইকার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘বছরে একবার লেবুর দাম থাকে। প্রতি শতাংশ জমির বাগান ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায় এক বছরের জন্য কেনা হয়। বর্তমানে ফলন কম, এজন্য লেবুর দাম বেশি। দামটা থাকে দুই মাস। গৃহস্থ সারা বছর এগুলা খরচের টাকাও আসে না। এখন ৪০০-৫০০ শতাংশ জমি ঘুরে এক খাচি লেবু তোলা যায়। ৫০০-৬০০ শতাংশ জমিতে বছরে খরচ আছে ৬ লাখ টাকা। এরমধ্যে এই পরিমাণ বাগানের দামই আছে ৪ লাখ টাকা। এতে বছরে সবমিলিয়ে ৬-৭ লাখ টাকা খরচ হয়ে যায়। ফাল্গুন, চৈত্র দুই মাসই এই দামটা পাওয়া যায়। তারপর আবার ভর্তুকি। গৃহস্থ ও পাইকার দাম পাবে না। আর এক দেড় মাসের মধ্যে দাম কমে যাবে। খরচও উঠবে না।’’ 

মো.

রাসেল নামে অপর পাইকার রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘৩০০-৪০০ শতাংশ জমি ঘুরে এক খাচি লেবু তোলা যায় না। বর্তমানে যে ব্যয়, অনেকের খরচের অর্ধেকও উঠে আসেনি। এখন লেবু নাই। ফলন অত্যন্ত কম। বৃষ্টি নাই। খরা। এজন্য দাম বেশি। জ্যেষ্ঠ, আষাঢ় মাসে দাম একদম পড়ে যাবে।’’

ধামরাই উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি অফিসার মো. আরিফুর রহমান রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘‘কৃষির জন্য একটা সম্ভাবনাময় একটি উপজেলা ধামরাই। ধামরাইয়ের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী একটি ফসল লেবু। বড় একটি এলাকাজুড়ে লেবু চাষ হয়। বর্তমানে প্রায় ৭০০ হেক্টর জমি রয়েছে, যেখানে লেবু বাগান রয়েছে। আমাদের প্রায় এক হাজারের ওপরে লেবুচাষি রয়েছেন। তারা লেবু থেকে ভালো লাভ পাচ্ছেন। কারণ এক বছর বাগান করলে প্রায় ১০ থেকে ১২ বছর লেবুর উৎপাদন পাওয়া যায়। এখন বাজারে লেবুর প্রচুর চাহিদা রয়েছে, চাহিদা থাকায় দামটা একটু বেশি। হয়তো কিছুদিন পরে বৃষ্টিপাত হলে ও অফ সিজন শেষ হলে লেবুর উৎপাদন বেড়ে যাবে আর দামটাও কমে যাবে।’’

ঢাকা/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব জ রগ ল ত এক খ চ আম দ র ফলন ক উপজ ল র সময়

এছাড়াও পড়ুন:

বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

মামলার আসামিসহ ২২ জন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে জানা গেছে। বরখাস্ত করা কর্মকর্তাদের মধ্যে ১৪ জন মামলার আসামি। তবে বিএসইসি এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো আদেশ জারি করেনি। বুধবার (৩০ এপ্রিল) অফিস আদেশ জারি করা হতে পারে বলে জানা গেছে।

মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) কমিশন সভায় কর্মকর্তাদের এ বরখাস্তের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বিএসইসির একাধিক কর্মকর্তা এ বিষয়টি রাইজিংবিডি ডটকমকে জানিয়েছেন।

তবে এ বিষয়ে জানতে বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ ও মুখপাত্র আবুল কালামের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন ধরেননি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএসইসির একজন কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “শুনেছি ২২ বা ২৩ জনকে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে মামলার আসামিরাও রয়েছেন। তবে এ বিষয়ে আগে থেকে কোনো এজেন্ডা ঠিক করা হয়নি।”

বিএসইসির আরেক কর্মকর্তা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আজকের কমিশন সভায় কর্মকর্তাদের বরখাস্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে বলে শুনেছি। তবে এখন পর্যন্ত কোনো আফিস আদেশ জারি করা হয়নি। বুধবার এ সংক্রান্ত আদেশ জারি করা হতে পারে।”

গত ৪ মার্চ বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমানকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠায় খন্দকার রাশেদ মাকসুদের কমিশন। এতে বিএসইসির কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ তৈরি হয়। ওই ঘটনার জেরে ৫ মার্চ বিএসইসির চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের অবরুদ্ধ করে দাবি আদায়ের চেষ্টা করেন সেখানকার কর্মকর্তা–কর্মচারীরা। একপর্যায়ে তারা কমিশনের মূল ফটকে তালা দেন; সিসি ক্যামেরা, ওয়াই-ফাই, লিফট বন্ধ করে দেন এবং বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করে মারাত্মক অরাজকতা ও ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করে গুরুতর জখমের প্রচেষ্টা করেন। পরে সেনাবাহিনীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তাদের উদ্ধার করেন।

তবে পরের দিন ৬ মার্চ সেনা ও কোস্টগার্ড সদস্যদের নিরাপত্তায় মধ্যে দিয়ে কার্যালয়ে প্রবেশ করেন বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের নেতৃত্বাধীন কমিশন। ওই দিন বিকেল ৫টায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় বিএসইসির ১৬ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলা করেন সংস্থাটির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদের গানম্যান (পুলিশ সদস্য) মো. আশিকুর রহমান।

মামলার আসামিরা হলেন-বিএসইসির সাবেক নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান, নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম ও রেজাউল করিম, পরিচালক আবু রায়হান মো. মোহতাছিন বিল্লা, অতিরিক্ত পরিচালক নজরুল ইসলাম, যুগ্ম পরিচালক রাশেদুল ইসলাম, উপ-পরিচালক বনী ইয়ামিন, আল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম ও তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী পরিচালক জনি হোসেন, রায়হান কবীর, সাজ্জাদ হোসেন ও আব্দুল বাতেন, লাইব্রেরিয়ান মো. সেলিম রেজা বাপ্পী এবং ব্যক্তিগত কর্মকর্তা আবু ইউসুফ।

তবে এর মধ্যে সাইফুর রহমানকে আগেই অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরেক নির্বাহী পরিচালক মাহবুবুল আলম পদত্যাগ করেছেন। বাকি ১৪ জন কর্মকর্তা জামিন নিয়ে কাজে ফিরেছিলেন। গত ২১ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায় সেই মামলায় কর্মকর্তাদের জামিনও হয়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে ১৪ জনসহ আরো ৮ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছেন রাশেদ মাকসুদের কমিশন।

ঢাকা/এনটি/এসবি

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত