সন্তানের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার নিয়ে অধিকাংশ অভিভাবক আজ চিন্তিত। সেখান কুরুচিপূর্ণ রিলস প্রদর্শিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। শিশু থেকে বৃদ্ধ সবাই এগুলো দেখছে। গত ১১ মার্চ সমকালে প্রকাশিত প্রতিবেদন বলছে, ‘বিষণ্নতা ও মাদকের গ্রাস, পর্নোতে ঝুঁকছে কিশোর-কিশোরী’। সেখানে এমন ভয়াবহ তথ্যই উঠে এসেছে।
‘রিলস’ বা সংক্ষিপ্ত সময়ের ভিডিও, যার ব্যাপ্তি থাকে ১৫ থেকে ২০ সেকেন্ড। এতে ধারণ করা যায় ইচ্ছামতো অনেক কিছু। এই রিলস এমন সব মনোরঞ্জনের কেচ্ছা, যার মূল শর্তই হলো তাকে সস্তা ও চটুল হতে হবে। দৈনন্দিন জীবনের রান্না, খাওয়া, হাসি-ঠাট্টা, ওঠাবসা সবকিছুই যেন রিলসে অনায়াসে মেলে। এই রিলসগুলো যেন মানুষকে বলে যায়, আপনার নাচ-গান, অভিনয়ের প্রতিভা নেই তো কী হয়েছে? তাতে কিছুই আসে যায় না। কেননা, গোটা ইউটিউব, ফেসবুক অপেক্ষা করছে আপনার জন্য। সুতরাং মনের মতো যা ইচ্ছা তা নিয়ে এসব সংক্ষিপ্ত ভিডিও বানান এবং সেখানে ছেড়ে দিন। মুহূর্তে কত লাইক, শেয়ারে ভেসে যাবেন, কল্পনাও করতে পারবেন না। এসব রিলসের মূল বিষয় হলো, এখানে ব্যক্তিগত বলে কিছু চলবে না। রিলস তাই নেহাত টাইম পাস, সস্তা, রুচিহীন উদ্ভট প্রদর্শনী, দিন দিন যার প্রতি আসক্ত হয়ে উঠছে অনেকেই।
স্নানঘর কিংবা শয্যাকক্ষ থেকে বেরিয়ে আসছে ব্যক্তিগত মুহূর্তের ছবি। অশ্লীল রিলস তৈরি করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার এক রমরমা ব্যবসা, যা সারা পৃথিবীতে চলছে। কেননা, ধর্ষকামী এক প্রকারের চোখ প্রতিনিয়ত তৈরি হচ্ছে সমাজে সোশ্যাল মিডিয়ারই কল্যাণে। সমাজে ধর্ষণ, যৌন হয়রানি মহামারির মতো ছড়িয়ে যাওয়ার পেছনে এসবের মদদ রয়েছে। কেননা, তা মানুষকে ক্রমশ মানসিকভাবে অসুস্থ ও বিকৃত মনের করে তুলছে। এসব রিলসে নারী শরীরকে করে তোলা হয় সর্বাপেক্ষা সুলভ পণ্য, যা ব্যবহার করে সহজে অনেক মুনাফা করা যায়।
সামাজিক মাধ্যমের এসব সস্তা, রুচিহীন কদর্য রিলসের প্রচার বন্ধে অবিলম্বে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত, যা কিনা মানুষকে দিন দিন বিকারগ্রস্ত ও নির্লজ্জ করে তুলছে। কোমলমতী শিশু-কিশোর এসব রিলসে আসক্ত হয়ে উঠছে। ভালো-মন্দ বিবেচনার নৈতিক মূল্যবোধ এ বয়সে তেমন গড়ে ওঠে না। ফলে তারা সহজেই বিপথে আকৃষ্ট হচ্ছে। তাদের লেখাপড়ায় মনোসংযোগ ঘটছে না। মেজাজ খিটখিটে এবং আচরণ দিন দিন উগ্র হয়ে উঠছে।
তাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অশ্লীলতা প্রদর্শনী রোধ এবং তথ্যপ্রযুক্তির যথেষ্ট অপব্যবহার রোধে আইন প্রয়োগে সরকারকে কঠোর হওয়া দরকার। কেননা, অশ্লীলতা আজ সেখানে রন্ধ্রে রন্ধ্রে ভাইরাসের মতো ছড়িয়ে পড়ছে। সমাজকে ক্রমশ অন্ধকারের দিকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। তাই সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে এসব অশ্লীল নোংরা রিলস নামে ভিডিও প্রদর্শন বন্ধ হওয়া জরুরি। অভিভাবকদেরও সতর্ক থাকা দরকার তাদের সন্তানরা যেন পর্নোগ্রাফি ও অশ্লীল রিলসে আসক্ত না হয়ে ওঠে।
যুগের প্রয়োজনে সন্তানকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করতে দিলেও সন্তান সেখানে কী দেখছে বা কী শিখছে, তার ওপর অভিভাবকদের কিছুটা নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার। কেননা, কিশোর বয়স জীবনের সর্বাপেক্ষা সংবেদনশীল সময়। সন্তানের নৈতিক ও মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধে তার বন্ধু হয়ে অভিভাবককেই পাশে দাঁড়াতে হবে।
মনে রাখতে হবে, একটি সমৃদ্ধ জাতি গঠনে মানসিক সুস্থতা সর্বাপেক্ষা জরুরি, যেটা আজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রযুক্তির অপব্যবহারে মানুষ হারাতে বসেছে। সামাজিক বিকৃতি এমন পর্যায়ে গেছে যে, সুস্থ রুচি ও চিন্তাভাবনার বড় অভাব আজ। প্রযুক্তির সঙ্গে চলব আমরা ঠিকই, তবে অবশ্যই বাছবিচার ও ভাবনচিন্তা করে। তাই অশ্লীল, কুরুচিপূর্ণ রিলস শর্টস আমাদের প্রত্যাখ্যান করা জরুরি। তার থেকেও বড় কথা, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অপব্যবহার প্রসঙ্গে মানুষকে সচেতন করা দরকার। কেননা, আমরা কী গ্রহণ আর কী বর্জন করব, সেটাই নির্ধারণ করে দেবে আমাদের রুচির পরিচয়।
মাহজাবিন আলমগীর: শিক্ষিকা
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প রদর শ ব যবহ র এসব র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
নায়িকা হতে আসিনি, তবে...
গুটি, সুড়ঙ্গ, মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন থেকে ওমর—সব সিনেমা-সিরিজেই প্রশংসিত হয়েছে আইমন শিমলার অভিনয়। অল্প সময়ের উপস্থিতিতেও নিজের ছাপ রাখতে পেরেছেন এই তরুণ অভিনেত্রী। ধূসর চরিত্রেও তিনি সাবলীল, অন্য তরুণ অভিনেত্রীদের থেকে এখানেই আলাদা শিমলা। তবে একটা কিন্তু আছে। এখন পর্যন্ত তাঁর অভিনীত আলোচিত চরিত্রগুলোর সবই চাটগাঁইয়া। শিমলা নিজে চট্টগ্রামের মেয়ে, একটা সময় পর্যন্ত বন্দরনগরীর বাইরে চেনাজানা ছিল সীমিত। এক সিরিজে তাঁর চাটগাঁইয়া ভাষা আলোচিত হওয়ায় পরপর আরও কাজে তাঁকে চাটগাঁইয়া চরিত্রের জন্য ভেবেছেন নির্মাতা।
এ প্রসঙ্গ দিয়েই অভিনেত্রীর সঙ্গে আলাপের শুরু করা গেল। শিমলা জানালেন, এ নিয়ে তাঁর নিজেরও অস্বস্তি আছে। চেষ্টা করছেন ‘চাটগাঁইয়া দুনিয়া’র বাইরে যেতে। সঙ্গে এ–ও জানিয়ে রাখলেন, ক্যারিয়ারের শুরুর দিকে তাঁর নিজের চরিত্র পছন্দ করে নেওয়ার সুযোগ কমই ছিল।
‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই শুটিংয়ের ঠিক আগে জেনেছি চরিত্রটি সম্পর্কে। তখন তো কিছু করার থাকে না। তবে যেসব কাজ করেছি, সবই আলোচিত পরিচালক আর অভিনয়শিল্পীদের সঙ্গে; এ অভিজ্ঞতার মূল্যও কম নয়। শিহাব (শিহাব শাহীন) ভাইয়ের সঙ্গে মাইশেলফ অ্যালেন স্বপন, কাছের মানুষ দূরে থুইয়া, রবিউল আলম রবি ভাইয়ের সঙ্গে ফরগেট মি নট আমাকে সমৃদ্ধ করেছে। এ ছাড়া (শহীদুজ্জামান) সেলিম ভাইয়ের কথা বিশেষভাবে বলব। সুড়ঙ্গ ও ওমর—দুই সিনেমায় তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন,’ বলছিলেন তিনি।
ঈদে মুক্তি পাওয়া এম রাহিমের সিনেমা জংলিতেও আছেন শিমলা। এ ছবিতে অবশ্য তাঁর চরিত্রটি চাটগাঁইয়া ভাষায় কথা বলে না। সে জন্য সিনেমাটি নিয়ে তিনি বেশি উচ্ছ্বসিত। ‘মুক্তির পর থেকে সিনেমা তো বটেই, আমার অভিনীত চরিত্রটি নিয়ে প্রশংসা পাচ্ছি কিন্তু দুঃখের কথা, আমি নিজেই এখনো দেখতে পারিনি। ব্যক্তিগত ঝামেলা, শুটিংয়ে ব্যস্ততার কারণে সম্ভব হয়নি। শিগগিরই আমার টিমের সঙ্গে দেখতে চাই,’ বলছিলেন তিনি।
আইমন শিমলা