Prothomalo:
2025-05-01@09:50:42 GMT

লাইলি–মজনু ও নাগবল্লির কথা

Published: 19th, March 2025 GMT

ভাওয়ালের জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯০৯ সালে ঢাকা শহরের ওয়ারী এলাকায় বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় সফরকালে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে এই বাগান দেখতে এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বলধা গার্ডেন দেখে কবিগুরুর মন্তব্য ছিল, ‘নরেন, কালি কলম দিয়ে আমি সারা জীবন যা করেছি, তুমি গাছপালা দিয়ে তাই করে চলেছ।’

পৃথিবীর যেখানে বিরল উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন, সেখান থেকে অকাতর অর্থ ব্যয় করে তা সংগ্রহ করেছেন নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। গত বছরের ৩০ মে গিয়েছিলাম বলধা গার্ডেনে। বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে অন্যান্য অনেক দুর্লভ উদ্ভিদের সঙ্গে দেখা পাই লাইলি–মজনু ও নাগবল্লির।

লাইলি–মজনু

ঢাকার ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত। এর প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে সোজা এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকে চোখে পড়ল শঙ্খনদ পুকুর। এই পুকুরের সিঁড়িতে কংক্রিটের টবে রয়েছে লাইলি–মজনুগাছ। ছবিটি ওখান থেকেই তুলেছি। নুহাশপল্লীতেও একটা লাইলি–মজনুগাছ আমি দেখেছি এর আগে।

পরিচিত লোককাহিনির এক জুটির নামে এই উদ্ভিদের নামকরণ করা হয়েছে। এই গাছের পাতার ওপরের দিক গাঢ় সবুজ কিন্তু নিচের দিকটা রক্তলাল। মূলত ওপর থেকে দেখলে সহজে বোঝাই যায় না নিচের দিকটা অদ্ভুত রকম ভিন্ন রঙের। প্রকৃতিতে দুই রঙের এমন পাতা কখনো চোখে পড়ে না। পাতার কোন দিক মজনু আর কোন দিক লাইলি, তা নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এই গাছের পাতার ওপরের অংশ সবুজ এবং নিচের অংশ লাল। সবুজ ও লাল অংশ ঠিক যেন ছায়ার মতো। এটাকে বলা হয় বন্ধন। বন্ধন বা প্রেমের প্রতীক হিসেবে লাইলি–মজনুর কথা বলা হয়। সেই হিসেবে এই উদ্ভিদের নামকরণ হতে পারে। আগর আর এই উদ্ভিদ একই গণ আর একই পরিবারের।

গুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদ এক থেকে দুই মিটার লম্বা হতে পারে। লাইলি–মজনুগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Excoecaria cochinchinensis, এটি Euphorbiaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ চায়নিজ ক্রোটন, ব্লাইন্ডনেস ট্রি, জাঙ্গল ফায়ার প্ল্যান্ট ইত্যাদি নামে পরিচিত। প্রজাতিক পদ cochinchinensis বলতে কোচিন-চায়নাকে বোঝায়, যা বর্তমানের ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া প্রভৃতি অঞ্চল। পাতার সৌন্দর্যের জন্য এই গাছ লাগানো হয়। এর পাতার ঊর্ধ্বত্বক এবং এর সংলগ্ন প্যালিসেড টিস্যুতে ক্লোরোফিল থাকায় ওপরের পৃষ্ঠ সবুজ দেখায়। এর পাতার নিম্নত্বক এবং এর সংলগ্ন স্পঞ্জি টিস্যুতে লালচে বর্ণের রঞ্জক থাকায় নিচের পৃষ্ঠ লালচে দেখায়।

এই গাছের এক নাম হচ্ছে blindness tree বা অন্ধত্বগাছ। অন্ধত্বগাছ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ Excoecaria থেকে, যার অর্থ অন্ধ করা। গাছটির কষ বা ল্যাটেক্স চোখে লাগলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এমন নামকরণ।

লাইলি-মজনুগাছ ভারত উপমহাদেশ ও চীনের দেশীয় গাছ। তবে আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে এটি বিস্তার লাভ করেছে।

ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে ও বেড়া তৈরিতে লাইলি–মজনু উদ্ভিদের ব্যবহার রয়েছে। এই উদ্ভিদের বিষাক্ত কষ সফলভাবে চুলকানি ও অ্যাকজিমায় বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে পরজীবী বিধ্বংসী হিসেবে এবং রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে একে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

বলধা গার্ডেনের নাগবল্লি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মজন গ ছ এই গ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ