Prothomalo:
2025-06-16@17:16:27 GMT

লাইলি–মজনু ও নাগবল্লির কথা

Published: 19th, March 2025 GMT

ভাওয়ালের জমিদার নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯০৯ সালে ঢাকা শহরের ওয়ারী এলাকায় বলধা গার্ডেন প্রতিষ্ঠা করেন। ১৯২৬ সালে ঢাকায় দ্বিতীয় সফরকালে ভীষণ ব্যস্ততার মধ্যে এই বাগান দেখতে এসেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।

বলধা গার্ডেন দেখে কবিগুরুর মন্তব্য ছিল, ‘নরেন, কালি কলম দিয়ে আমি সারা জীবন যা করেছি, তুমি গাছপালা দিয়ে তাই করে চলেছ।’

পৃথিবীর যেখানে বিরল উদ্ভিদের সন্ধান পেয়েছেন, সেখান থেকে অকাতর অর্থ ব্যয় করে তা সংগ্রহ করেছেন নরেন্দ্র নারায়ণ চৌধুরী। গত বছরের ৩০ মে গিয়েছিলাম বলধা গার্ডেনে। বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশে অন্যান্য অনেক দুর্লভ উদ্ভিদের সঙ্গে দেখা পাই লাইলি–মজনু ও নাগবল্লির।

লাইলি–মজনু

ঢাকার ওয়ারীর বলধা গার্ডেনের সিবিলি অংশ সবার জন্য উন্মুক্ত। এর প্রধান ফটক দিয়ে ঢুকে সোজা এগিয়ে গিয়ে বাঁ দিকে চোখে পড়ল শঙ্খনদ পুকুর। এই পুকুরের সিঁড়িতে কংক্রিটের টবে রয়েছে লাইলি–মজনুগাছ। ছবিটি ওখান থেকেই তুলেছি। নুহাশপল্লীতেও একটা লাইলি–মজনুগাছ আমি দেখেছি এর আগে।

পরিচিত লোককাহিনির এক জুটির নামে এই উদ্ভিদের নামকরণ করা হয়েছে। এই গাছের পাতার ওপরের দিক গাঢ় সবুজ কিন্তু নিচের দিকটা রক্তলাল। মূলত ওপর থেকে দেখলে সহজে বোঝাই যায় না নিচের দিকটা অদ্ভুত রকম ভিন্ন রঙের। প্রকৃতিতে দুই রঙের এমন পাতা কখনো চোখে পড়ে না। পাতার কোন দিক মজনু আর কোন দিক লাইলি, তা নিয়ে স্থির সিদ্ধান্তে আসা যায়নি। এই গাছের পাতার ওপরের অংশ সবুজ এবং নিচের অংশ লাল। সবুজ ও লাল অংশ ঠিক যেন ছায়ার মতো। এটাকে বলা হয় বন্ধন। বন্ধন বা প্রেমের প্রতীক হিসেবে লাইলি–মজনুর কথা বলা হয়। সেই হিসেবে এই উদ্ভিদের নামকরণ হতে পারে। আগর আর এই উদ্ভিদ একই গণ আর একই পরিবারের।

গুল্মজাতীয় এই উদ্ভিদ এক থেকে দুই মিটার লম্বা হতে পারে। লাইলি–মজনুগাছের বৈজ্ঞানিক নাম Excoecaria cochinchinensis, এটি Euphorbiaceae পরিবারের উদ্ভিদ। ইংরেজিতে এই উদ্ভিদ চায়নিজ ক্রোটন, ব্লাইন্ডনেস ট্রি, জাঙ্গল ফায়ার প্ল্যান্ট ইত্যাদি নামে পরিচিত। প্রজাতিক পদ cochinchinensis বলতে কোচিন-চায়নাকে বোঝায়, যা বর্তমানের ভিয়েতনাম, লাওস, কম্বোডিয়া প্রভৃতি অঞ্চল। পাতার সৌন্দর্যের জন্য এই গাছ লাগানো হয়। এর পাতার ঊর্ধ্বত্বক এবং এর সংলগ্ন প্যালিসেড টিস্যুতে ক্লোরোফিল থাকায় ওপরের পৃষ্ঠ সবুজ দেখায়। এর পাতার নিম্নত্বক এবং এর সংলগ্ন স্পঞ্জি টিস্যুতে লালচে বর্ণের রঞ্জক থাকায় নিচের পৃষ্ঠ লালচে দেখায়।

এই গাছের এক নাম হচ্ছে blindness tree বা অন্ধত্বগাছ। অন্ধত্বগাছ শব্দটি এসেছে লাতিন শব্দ Excoecaria থেকে, যার অর্থ অন্ধ করা। গাছটির কষ বা ল্যাটেক্স চোখে লাগলে মানুষ অন্ধ হয়ে যেতে পারে। তাই এমন নামকরণ।

লাইলি-মজনুগাছ ভারত উপমহাদেশ ও চীনের দেশীয় গাছ। তবে আফ্রিকা, মাদাগাস্কার, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও অস্ট্রেলিয়াতে এটি বিস্তার লাভ করেছে।

ইনডোর প্ল্যান্ট হিসেবে ও বেড়া তৈরিতে লাইলি–মজনু উদ্ভিদের ব্যবহার রয়েছে। এই উদ্ভিদের বিষাক্ত কষ সফলভাবে চুলকানি ও অ্যাকজিমায় বহুকাল আগে থেকেই ব্যবহৃত হয়ে আসছে। ক্ষতিকর জীবাণুর বিরুদ্ধে পরজীবী বিধ্বংসী হিসেবে এবং রক্ত জমাট বাঁধার বিরুদ্ধে একে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা যায়।

বলধা গার্ডেনের নাগবল্লি.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মজন গ ছ এই গ ছ

এছাড়াও পড়ুন:

ভৈরব পৌর স্টেডিয়াম থেকে সরানো হলো আইভি রহমানের নাম

কিশোরগঞ্জের ভৈরব পৌর স্টেডিয়াম থেকে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় নিহত আইভি রহমানের নাম সরানো হয়েছে। নতুন নাম করা হয়েছে ‘উপজেলা স্টেডিয়াম’।

আইভী রহমান ঢাকায় আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলায় নিহত হন। তিনি তখন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ছিলেন।

নাম বদলকে কেন্দ্র করে ভৈরবে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। স্থানীয় একজন সাংস্কৃতিক কর্মী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নামকরণ বা পরিবর্তনের পেছনে কোনো সার্বজনীন চিন্তা কাজ করেনি; বরং এতে ক্ষমতার প্রভাবই স্পষ্ট।’

স্বাধীনতার পর তিন একর জায়গায় ভৈরব-ময়মনসিংহ আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে ভৈরবপুর উত্তরপাড়ায় এই স্টেডিয়াম নির্মিত হয়। তখন এর নাম ছিল ‘ভৈরব পৌর স্টেডিয়াম’। শুরু থেকেই এর ব্যবস্থাপনায় ছিল পৌর প্রশাসন।

আইভি রহমানের স্বামী সাবেক রাষ্ট্রপতি মো. জিল্লুর রহমান ও তাঁর বাবার বাড়ি ভৈরবে। তাঁর ছেলে নাজমুল হাসান পাপন কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর মায়ের নামে স্টেডিয়ামটির নামকরণের উদ্যোগ নেন। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের অর্থায়নে প্রায় ১২ কোটি টাকা ব্যয়ে পুনর্নির্মাণের পর ২০২০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘শহীদ আইভি রহমান পৌর স্টেডিয়াম’ হিসেবে এটি উদ্বোধন করা হয়।

গত ৫ আগস্ট ক্ষমতার পালাবদলের পর স্টেডিয়ামসহ আইভি রহমানের নামে করা বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে এক চিঠিতে স্টেডিয়ামের নতুন নাম ‘উপজেলা স্টেডিয়াম’ নির্ধারণ করে উপজেলা ও পৌর প্রশাসনকে জানানো হয়। পরে পুরোনো নামফলক সরিয়ে নতুন নামফলক স্থাপন করা হয়েছে।

ভৈরব উপজেলা আওয়ামী লীগের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘পরিস্থিতির কারণে আইভি রহমানের নাম সরিয়ে দিল। আবার সুযোগ বুঝে আমরাও টানিয়ে নিব।’

ভৈরব উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক শবনম শারমিন প্রথম আলোকে বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে নাম পরিবর্তনের চিঠি পাওয়ার পর স্টেডিয়ামের নামফলক পরিবর্তন করা হয়েছে। এখন থেকে এটি অফিশিয়ালি ‘উপজেলা স্টেডিয়াম’ নামে পরিচিত হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভৈরব পৌর স্টেডিয়াম থেকে সরানো হলো আইভি রহমানের নাম