খুলনা নগরীর শান্তিধাম মোড়ে অবস্থিত সরকারি একটি ভবনের দখল এবং দখলদার উচ্ছেদ নিয়ে মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) রাতে সংঘাতে জড়িয়েছে খুলনার গণঅধিকার পরিষদ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। এ সময় উভয়পক্ষের বেশ কয়েকজন আহত হয়। এর মধ্যে গুরুতর আহত গণঅধিকার পরিষদের কয়েকজনকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয়রা জানান, সরকারি ওই ভবনে পঞ্চবিথী ক্রীড়া চক্র নামে একটি ক্লাব ছিল। সেখানে জুয়া, মাদক বিক্রিসহ নানা অসামাজিক কার্যক্রম পরিচালিত হয়- এমন অভিযোগে গত ২৭ জানুয়ারি পঞ্চবীথির সাইনবোর্ড ফেলে দিয়ে সেখানে গণঅধিকার পরিষদের ব্যানার টানান নেতাকর্মীরা। এর নেতৃত্বে ছিলেন গণঅধিকার পরিষদের খুলনা মহানগর সাধারণ সম্পাদক শেখ রাশিদুল ইসলাম রাশেদ। তিনি এস কে রাশেদ নামে পরিচিত। বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ হলে রাতেই এস কে রাশেদকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। কিন্তু অব্যাহতির পরও এস কে রাশেদ ওই ভবনে বসে দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করছিলেন।

মঙ্গলবার রাতে ওই ভবনের দখলমুক্ত করার ঘোষণা দিয়ে ফেসবুকে বার্তা ছড়ান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও জাতীয় নাগরিক কমিটির খুলনার নেতাকর্মীরা। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তারা ভবনে গেলে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বালুমহাল ইজারার দরপত্র দাখিল নিয়ে সংঘর্ষ

গোপালগঞ্জে দুই পক্ষের সংঘর্ষে আহত ১০

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন খুলনা জেলা কমিটির সদস্য সচিব সাজিদুল ইসলাম বাপ্পি  জানান, খুলনার ঐতিহ্যবাহী পঞ্চবিথী ক্লাব, যা ছিল এলাকার সংস্কৃতি ও সামাজিক উন্নয়নের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু গত কয়েক মাস ধরে গণঅধিকার পরিষদের নামে কিছু চাঁদাবাজ ও দখলদার গোষ্ঠী এটি অবৈধভাবে দখল করে রেখেছিল। তারা ক্লাবকে নিজেদের আস্তানায় পরিণত করে স্থানীয় দোকানদার ও ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নিয়মিত চাঁদা আদায় করছিল। এলাকাবাসী বারবার প্রতিবাদ জানালেও চাঁদাবাজ চক্রের দৌরাত্ম্য থামেনি। কিন্তু অবশেষে সাহসী ছাত্রজনতা দখলদারদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়। শান্তিপূর্ণভাবে ক্লাব দখলমুক্ত করতে গেলে তারা স্থান ত্যাগ করতে অস্বীকৃতি জানায়। এমনকি প্রশাসন সেখানে যাওয়ার পরও পুলিশ ও সাংবাদিকদের উপস্থিতিতে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা ছাত্রলীগের ভাড়াটে গুন্ডাদের ডেকে এনে ছাত্রজনতার ওপর কাপুরুষোচিত হামলা চালায়। এতে অন্তত ১০-১২ জন আহত হন।

ডাকসুর সাবেক ভিপি ও গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর ফেসবুক পেজে এক বার্তায় বলেন, ‘‘খুলনায় গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীদের ওপর দুর্বৃত্তদের সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমাদের পরিষ্কার কথা, প্রশাসন দুর্বৃত্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে গণঅধিকার পরিষদের নেতাকর্মীরা এর সমুচিত জবাব দিবে।’’

এ বিষয়ে খুলনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার সানোয়ার হুসাইন মাসুম বলেন, সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় অভিযোগ নিয়ে আসেনি। ফলে এ বিষয়ে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তবে পঞ্চবিথি ভবন নামে পরিচিত সরকারি বাড়িটি গণপূর্ত বিভাগ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। কোনো পক্ষই ওই ভবনে অবস্থান করতে পারবে না। ভবনটি পুলিশের হেফাজতে থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/বকুল 

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স ঘর ষ র ন ত কর ম র স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু

সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।

রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।

আরো পড়ুন:

ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি

ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু

প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।

কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।

যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।

প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।

কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা  সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দখলদারদের কাছে প্রশাসনের আত্মসমর্পণ
  • বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
  • ট্রাম্প কি সত্যি ইসরায়েলি দখলদারি বন্ধ করতে চান