মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বালিয়াখোড়া পুরানগ্রামে আধুনিক সুযোগ সুবিধা নিয়ে গড়ে উঠেছে ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার। বিনোদনের সব ধরনের ব্যবস্থা থাকায় রিসোর্টটিতে প্রতিদিন দেশ বিদেশের নানা শ্রেণি পেশার মানুষ ভিড় করেন, খরচ করেন লাখ লাখ টাকা। 

জাঁকজমকপূর্ণ বিনোদনের সকল উপকরণ থাকলেও রিসোর্টটিতে নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের নবায়নকৃত ছাড়পত্র। রিসোর্টটি সরকারি নিয়ম কানুন না মেনেই পরিচালিত হচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের নির্দেশনা থাকলেও ডেরা রিসোর্টে নির্মান করা হয়নি সুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (এসটিপি)। পরিবেশ অধিদপ্তর কারণ দর্শানোর নোটিস করলেও টনক নড়েনি ডেরা রিসোর্ট কর্তৃপক্ষের। ক্ষমতার দাপটে ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা (এশিউর ট্যুরিজম লি.

) প্রতিষ্ঠানকে শর্তসাপেক্ষে ছাড়পত্র প্রদান করে পরিবেশ অধিদপ্তর। তবে ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর ছাড়পত্রের মেয়াদ শেষ হয়ে গেলেও নবায়ন না করেই কার্যক্রম চলমান রাখে ডেরা রিসোর্ট। ছাড়পত্রের তিন নম্বর শর্ত ভঙ্গ করায় ২০২৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি কারণ দর্শানোর নোটিস দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর।

চলতি বছরের ১৪ জানুয়ারি অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ডেরা রিসোর্টের তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে তথ্য পেতে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন রাইজিংবিডির মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি জাহিদুল হক চন্দন। ওই আবেদনের প্রেক্ষিতে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব জেবুন নাহার স্বাক্ষরিত এক পত্রে জানান, ডেরা রিসোর্টের বিষয়ে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসন তদন্ত করছে। তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেলে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

পরে মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, প্রকাশিত প্রতিবেদনের অভিযোগের ভিত্তিতে সুস্পস্ট মতামতসহ একটি স্বয়ংসম্পূর্ন প্রতিবেদন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের হোটেল ও রেস্তোরাঁ সেলে প্রেরণের জন্য চলতি বছরের মার্চ মাসের তিন তারিখে সাত সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটিতে মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটকে আহ্বায়ক, পুলিশ সুপার-এর প্রতিনিধি, পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক/সহকারী পরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তরের উপপরিচালক/সহকারী পরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের উপমহাপরিদর্শকসহ ছয়জনকে সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে।

জানা গেছে, প্রভাবশালীদের সহযোগিতায় বালিয়াখোড়া পুরান গ্রামে অত্যাধুনিক এগ্রো ফার্ম করতে কৃষি জমি দখলে নেওয়া শুরু করে প্রতিষ্ঠানটি। ওই সকল জমি দখলে নিয়ে মাটি ভরাট করে ডেইরি ফার্ম নির্মাণ করা হয়। পরে ২০২২ সালে ওই ডেইরি ফার্ম এলাকায় এশিউর গ্রুপের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার নামে পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট নির্মাণ করা হয়। 

ডেইরি ফার্মের সাইনবোর্ড থাকা অবস্থায় চারিদিকে নিরাপত্তা বেষ্টনি দিয়ে শুরু হয় রিসোর্ট নির্মাণের কাজ। সেসময় বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর সমালোচনার মুখে পড়ে কাজ বন্ধ রাখে কর্তৃপক্ষ। এলাকাবাসীদের দমাতে তাদেরকে মামলায় ফাঁসানো হয়। পরে প্রভাবশালীদের আশকারায় রিসোর্টের কাজ পুরোদমে চালু হয়। 

দুই বছর কাজ শেষে ২০২২ সালের জুলাই মাসের ৫ তারিখে আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন হয় পাঁচ তারকা মানের এই অবকাশযাপন কেন্দ্রটি।

ডেরা রিসোর্ট ও স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “আমাদের ২০২৫ সাল পর্যন্ত ছাড়পত্র আপডেট করা আছে। আপনাকে হোয়াটসএ্যাপে পাঠাচ্ছি।” তার পাঠানো ছাড়পত্রটি অনলাইন স্ক্যান করে দেখা যায় ছাড়পত্রটির মেয়াদ ২০২৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত। 

পরে তিনি বলেন, “বিষয়টি নিয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলব।” তদন্ত সংক্রান্ত বিষয়ে তিনি বলেন, “এর আগেও প্রশাসন থেকে তদন্ত হয়েছে। সম্প্রতি তদন্ত কমিটি সম্পর্কে আমি অবগত নই।”

মানিকগঞ্জ জেলা কৃষি উন্নয়ন কমিটির সমন্বয়কারী মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “রিসোর্ট শুরু থেকেই কৃষকদের ফাঁদে ফেলে জমি নিয়েছে। তারা ওই এলাকায় কৃষি জমি ধ্বংস করে রিসোর্ট নির্মাণ করেছে। রিসোর্টটির পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ না থাকায় আশেপাশের কৃষির উপর বিরুপ প্রভাব পড়ছে।”

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) এর সিনিয়র সহসভাপতি ইকবাল হোসেন কচি বলেন, “ছাড়পত্রের শর্ত ভঙ্গ করার দায়ে ডেরা রিসোর্টটিকে আইনানুগভাবে শাস্তি দেওয়া উচিত। আর ছাড়পত্র ছাড়া এখন কীভাবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে সেটি দেখার বিষয়। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলে আশা করি।”

মানিকগঞ্জ পরিবেশ অধিদপ্তরের সিনিয়র কেমিস্ট এ কে এম ছামিউল আলম কুরসি বলেন, “ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পাকে পরিবেশ অধিদপ্তর শর্ত সাপেক্ষে ছাড়পত্র প্রদান করেছিল। কিন্তু ছাড়পত্রের শর্ত ভঙ্গ করে রিসোর্ট পরিচালনা করায় তাদের ছাড়পত্র নবায়ন দেওয়া হয়নি। প্রতিষ্ঠানটিকে নোটিস করা হয়েছে। প্রয়োজনে পুনরায় নোটিস প্রদান করে আইনানুগ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “ডেরা রিসোর্টের অনিয়মের অভিযোগে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদনে অনিয়ম পাওয়া গেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”

ঢাকা/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ড়পত র র ম ন কগঞ জ ব যবস থ আইন ন গ পর চ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ