মার্কিন কথাসাহিত্যিক জয়েস ক্যারল ওটস ১৯৩৮ সালের ১৬ জুন নিউইয়র্কের লকপোর্টে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৬৩ সালে লেখালেখির শুরু, কলম আজও চলছে। নারীবাদ, সাম্যবাদ, যুদ্ধ ও সহিংসতাবিরোধী চিন্তার জন্য তিনি, বিশেষত পশ্চিমাবিশ্বে, সুবিদিত। ২০২৩ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জিরো-সাম’। নাইনটিন্থ নিউজের প্রতিবেদক জেনিফার গারসন, ২৪ আগস্ট ২০২৩ তাঁর একটি সাক্ষাৎকার গ্রহণ করেন। ওটস সেখানে বর্তমান আমেরিকায় নারীবিরোধী অবস্থান, শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান আধিপত্যবাদ প্রভৃতি নিয়ে খোলামেলা মন্তব্য করেছেন। অনুবাদ করেছেন হামিম কামাল

জেনিফার গারসন: আপনার সর্বশেষ গল্পগ্রন্থ ‘জিরো-সাম’। দেখিয়েছেন ভিন্ন ভিন্ন সংকটময় পরিস্থিতিতে নারী কেমন আচরণ করে ও পায়, লড়ে ও বেঁচে থাকে। আপনি দীর্ঘ জীবন পেয়েছেন। এই সময়ের ভেতর নারীর লড়াইয়ে কোনো বিবর্তন, পরিবর্তন কি আপনার চোখে পড়েছে? আপনার লেখক-জীবনের পরিপ্রেক্ষিতেও এ নিয়ে কী ভাবছেন জানতে চাই। 
জয়েস ক্যারল ওটস: যদিও আমি নিজেকে নারীবাদী বলছি, তবুও, ‘নারী’ শব্দটি কোনো বিশেষ ব্যক্তিত্বের ধরন চিহ্নিত করে দেয় বলে আমি বিশ্বাস করি না। 
কেবল ‘নারী’ বলেই তার কোনো পৃথক ধরন, ভাগ্য, ‘নারীসূচক’ দায়, ভবিতব্য আছে বলে আমার বিশ্বাস নেই। অন্য কারও কথা দ্বারা আমি সংজ্ঞায়িত হতে চাইনি, চাই না। তবে বিশ্বাস করি রাজনৈতিক আদর্শ হিসেবে নারীবাদ গুরুত্বপূর্ণ। এবং এ আদর্শের আওতায়, আইনের সমর্থন নিয়ে, নারীদের একীভূত হওয়ার প্রয়োজন, সমতার পক্ষে লড়াইয়ে পরস্পরের পাশে থাকা প্রয়োজন। বিশেষ করে, বর্তমান আমেরিকার সাপেক্ষে, গর্ভধারণ ও গর্ভপাত ইস্যুতে সচেতনতা প্রয়োজন। নারীর অধিকারের এই দিকটি বর্তমান আমেরিকায় আক্রমণের শিকার।  তবে আমি নিজেকে কারও প্রতিনিধি মনে করি না। প্রাকৃতিক ছক্কা-পাঞ্জা খেলায় যদি আরও একবার আমার জন্ম হয়, নিশ্চিত, আমি আজকের 


‘আমি’ হব না। কোনো মহান নকশা অনুযায়ী আমি নির্মিত নই। বরং দৈবচয়নে নির্মিত। 
জেনিফার গারসন: গল্পগুলোয় অকপটে একটি সত্য উঠে এসেছে। কোন ‘অপরাধ’ ঠিক ‘গুরুতর নয়’ তা অনেক সময়ই লিঙ্গভেদে নির্ধারিত হয়। ছয় বছর আগে ‘মি ‍টু’ ঝড় বয়ে গেল। নারীর প্রতি পুরুষের আচরণ ও অপরাধের প্রতি এই যে একটা গা-ছাড়া ভাব, একটা নস্যাৎমুখী ভাবনা, এই যুগেও, একে আপনি কীভাবে দেখেন। এই ইস্যুতে কার দায়দায়িত্ব কেমন আপনি মনে করেন?
জয়েস ক্যারল ওটস : আবারও বলে নিই, লেখক-শিল্পী হিসেবে আমি কোনো বিমূর্ত মন্তব্য করার বিপক্ষে। আমার কাছে যেটা স্পষ্ট তা হলো, প্রতিটি ঘটনার প্রেক্ষাপট ভিন্ন ভিন্ন। প্রতিটি ‘মি-টু’ স্বীকারোক্তিমূলক আবেদন-নিবেদন-প্রতিবাদ আলাদা আলাদা প্রেক্ষাপটের সঙ্গে বাঁধা, স্বতন্ত্র। এটাও স্বীকার করতে হবে যে বহু পুরুষ অন্যায়ভাবে চিহ্নিত ও নিন্দিত হয়েছেন। আমাদের সামনে এমেট টিলের* মর্মান্তিক উদাহরণ রয়েছে। এ উদাহরণ বহুযুগ আগের এক বর্ণবাদী নিকৃষ্ট অতীতের কথা আমাদের মনে করিয়ে দেয়। কিন্তু সার্বিক বিচার ‘মি-টু’ আন্দোলন অনিবার্য ছিল। যুগ যুগ ধরে, শতাব্দী জুড়ে নারীর সঙ্গে ঘটে যাওয়া অন্যায়-অবিচার-সহিংসতার আড়াল হয়ে থাকা সত্যগুলো, না-বলা কথাগুলো, সামনে নিয়ে আসার সুযোগ করে দিয়েছিল ‘মি-টু’।
একই ঘটনা, একই অপরাধ নতুন যুগে নতুন মাত্রা পেয়ে এখন আরও জটিল, নির্ণায়কগুলো এখন আরও ধোঁয়াটে। এখন নতুন পথে সৃষ্ট হতে পারে ধূম্রজাল। এই পথ এমনকি একেক রাজ্যে একেক রকম হতে পারে। রেড স্টেটে* একরকম, ব্লু স্টেটে* আরেকরকম। টেক্সাসের লাল রাজ্যে নারীর প্রতি আচরণ, এর বিচার যেভাবে গৃহীত, চিহ্নিত, বাস্তবায়িত হবে, ক্যালিফোর্নিয়া-নিউ ইয়র্ক-নিউ জার্সির মতো নীল রাজ্যে তা হবে না। নারীর প্রতি সহিংসতার বিচারে, তার ভাগ্য নির্ধারণে, তার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গিতে, রাজ্যে-রাজ্যে এমন পার্থক্য দেখে কখনও সখনও মনে হয় দুঃস্বপ্ন দেখছি।
জেনিফার গারসন: সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরব স্বনামধন্যদের একজন আপনি। যে বিষয়ে আমরা আলাপ করছি, বর্তমান সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এর উপস্থিতি, সংশ্লেষণ-বিশ্লেষণ কেমন দেখতে পান। সামাজিক মাধ্যমে আপনার নিজের ব্যবহার অভিজ্ঞতা থেকেও যদি কিছু বলতেন।
জয়েস ক্যারল ওটস: আমার মনে হয় বিশেষ কিছু বলয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের একটা মস্ত ভূমিকা রয়েছে, বিশেষ করে তুলনামূলক কমবয়স্কদের বলয়ে। দীর্ঘদিন ধরে যারা এই মাধ্যম ব্যবহার করে আসছে, তাদের ভাবনাচিন্তায় মননে এর খুব একটা প্রভাব কিন্তু নেই। এই যে একেকটা ইস্যু একেকবার জ্বলে ‍ওঠে, কদিন উত্তাপ ছড়িয়ে নিভে যায়, এরপর নতুন কিছু এসে তার জায়গা নেয়, এসবে আমরা অভ্যস্ত অনেকটাই। তবে কিছু পরিবর্তন তো অনিবার্য। টুইটারের কথাই ধরা যাক। শুরুর দিকে টুইটার কিন্তু অনেক সরল সাধারণ ছিল। আজকের মতো জটাজটিল রাজনৈতিক ইস্যুমুখর ছিল না। কেউ হয়তো তার কোনো অভিমত রাখত, যে বইটা পড়ে ভালো লেগেছে– যে সিনেমাটা মন কেড়েছে সেগুলোর পাঠ, কথা, অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়া হতো। যতটা দেখেছি, ২০১৬ সাল থেকে এই বাস্তবতা বিশেষ করে বদলাতে শুরু করে। এখনও সেই দশাই চলছে। বর্তমানে আমেরিকান জীবন বাড়াবাড়িরকম রাজনীতি-ঘেঁষা। মনে হয় না সহসাই এ দশা বদলাবে। আগামী অনেক দিনের ভেতরও এ অবস্থা বদলাবে বলে মনে হয় না। 
টুইটারে ত্রিশটির মতো অ্যাকাউন্ট অনুসরণ করি আমি। আমার বলয়ে আমরা নিজেদের কথা শুনতেই বেশি উন্মুখ। কিন্তু এটা টুইটারের সার্বিক চিত্র নয়। ধর্মান্ধতা আর বর্ণবাদের চারণভূমি এখন টুইটার। ওসব নিয়ে যারা শতমুখী, তাদের অ্যাকাউন্ট এড়িয়ে চলি।
জেনিফার গারসন: সামনে আরও একটি রাষ্ট্রপতি-নির্বাচন। এবং এক বছর হয়ে গেছে যে উচ্চ আদালত রো ভার্সেস ওয়েইড রদ করেছে। এসব বিবেচনায় বর্তমান রাজনীতি সম্বন্ধে আপনার অভিমত কী। চলমান লিঙ্গবৈষম্য, সহিংসতা আমাদের কী বার্তা দিচ্ছে।  
জয়েস ক্যারল ওটস: বলতেই হচ্ছে, ভালো-মন্দের চিরায়ত লড়াই চলছে আমাদের ভেতর। ঠিক গল্পের মতোই, কোনো অংশই হার মানছে না, তেমন লক্ষণও নেই। 
ডানপন্থি, গণতন্ত্রবিরোধী সংখ্যালঘু একট সম্প্রদায় যুদ্ধ চাইছে। এরা শ্বেতাঙ্গ খ্রিষ্টান আধিপত্যবাদী। যতদূর দেখতে পাই সেই যুদ্ধ গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে, শিক্ষার বিরুদ্ধে, নাগরিকদের অনুকূল অস্ত্র-আইনের বিরুদ্ধে। ইহজাগতিক মানববাদ তাদের প্রতিপক্ষ। সেই নেতিবাচক শক্তি আরও জোরালো হচ্ছে কিছু অর্থায়নের কারণে। মাত্রাহীন ধনবান কিছু ব্যক্তি, সংগঠন তাদের টাকা দিচ্ছে। যেন ওই ব্যক্তি ও সংগঠনের জন্য কর ও আইন শিথিল হয় এবং পরিবেশবিরোধী ব্যবসা আরও ফুলেফেঁপে ওঠে। 
গণভোটের ফল বলছে দুই পক্ষের শক্তিই সমান প্রায়। সুতরাং নির্বাচনে লড়াই হবে সেয়ানে সেয়ানে। প্রতিদিনই তো নতুন বিস্ময় আসছে। নিত্যই আসছে নতুন প্রসঙ্গ অভিযোগ, পক্ষ-বিপক্ষ সাক্ষ্য, আত্মপক্ষ .

.. এই তুমুল অস্থিরতায় মনে হচ্ছে, যে নরককাল আমরা অতিক্রম করছি, তাতে বাস্তববাদী কথাসাহিত্য যেন অবান্তর।

*১৯৫৫ সালে একজন শ্বেতাঙ্গ নারীকে অপমান করার অভিযোগ এনে ১৪ বছরের কিশোর এমেট টিলকে হত্যা করা হয়। 
* রিপাবলিকান আধিপত্যের রাজ্যগুলো রেড স্টেট ও ডেমোক্রেটিক আধিপত্যের রাজ্যগুলো ব্লু স্টেট হিসেব চিহ্নিত

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: জ ন ফ র গ রসন র জন ত ট ইট র আম দ র আম র ক আপন র

এছাড়াও পড়ুন:

করের চাপ কমানোর দাবি ব্যবসায়ীদের

আগামী ২০২৫–২৬ অর্থবছরের বাজেটে করের চাপ কমানোর দাবি জানিয়েছেন দেশের ব্যবসায়ী নেতারা। তাঁরা বলছেন, করজাল বৃদ্ধি না পাওয়ায় যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপরই করের চাপ দেওয়া হচ্ছে। এমনকি করহারের চেয়েও প্রকৃতপক্ষে অনেক বেশি কর দিতে হয় তাঁদের। এ ছাড়া পণ্য আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে রাজস্ব কর্মকর্তারা ব্যবসায়ীদের যে হয়রানি করেন, তা বন্ধ করতে হবে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) পরামর্শক কমিটির ৪৫তম সভায় এ দাবিগুলো জানান বিভিন্ন খাতের ব্যবসায়ী নেতারা। এনবিআর এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতিদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে গতকাল বুধবার এই সভার আয়োজন করে। এতে প্রধান অতিথি অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।

পরামর্শক সভায় বিভিন্ন খাতের প্রায় ৪০ জন ব্যবসায়ী নেতা বাজেটে বাস্তবায়নের জন্য নানা দাবি তুলে ধরেন। শুরুতে এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান সাধারণ করদাতাদের জন্য করমুক্ত আয়ের সীমা ৪ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও ৬৫ বছরের বেশি বয়সের করদাতাদের জন্য এই সীমা পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দেন। তিনি বলেন, মূল্যস্ফীতি ও ক্রমবর্ধমান জীবনযাত্রার ব্যয় বিবেচনায় করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়ানো জরুরি। বর্তমান অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে নিম্ন আয়ের মানুষদের নিত্যপণ্য কিনতে আয়ের বড় অংশ ব্যয় করতে হচ্ছে। এই বাস্তবতায় বিদ্যমান করকাঠামো তাঁদের ওপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করছে।

এ ছাড়া পণ্য রপ্তানিতে পাঁচ বছরের জন্য উৎসে কর দশমিক ৫০ শতাংশ করা, আমদানি পর্যায়ে অগ্রিম আয়কর ধাপে ধাপে কমিয়ে আনা, স্থানীয় পর্যায়ে সব পণ্য সরবরাহে মূসক ২ শতাংশ নির্ধারণ, যন্ত্রপাতি ও কাঁচামাল আমদানিতে এইচএস কোডে ভুলের জন্য জরিমানার যে বিধান আছে, সেটি বাতিলের সুপারিশ করেছে এফবিসিসিআই।

অন্যদিকে বাজেটে করহার না কমানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান। তিনি বলেন, করহার আর কমানো সম্ভব নয়। তবে ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি কমানোর চেষ্টা থাকবে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের সব কথা হয়তো শুনতে পারব না। কারণ, সরকারের রাজস্ব আয় কমানো যাবে না। সরকার চালাতে রাজস্বের প্রয়োজন।’

করজাল বাড়ানোর ওপর জোর

করজাল বাড়ানোর ওপর জোর দিয়ে মেট্রোপলিটন চেম্বারের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি হাবিবুল্লাহ এন করিম বলেন, করজাল বাড়ানোর বিষয়ে আলোচনা হলেও কোনো অগ্রগতি নেই। দেশে ১ কোটি ১৪ লাখ করদাতা রয়েছেন। এর মধ্যে ৪৫ লাখ রিটার্ন দেন, যাঁদের দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য রিটার্ন জমা দেন। ফলে এখানে গুণগত পরিবর্তন দরকার। করজাল না বাড়িয়ে বর্তমান করদাতার ওপর বিভিন্নভাবে চাপ দেওয়া হচ্ছে। এতে রাজস্ব বোর্ডের সঙ্গে করদাতাদের মধ্যকার সম্পর্ক নষ্ট হয়।

সরকারের মোট রাজস্ব আহরণের ৮৪ শতাংশ ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে আসে—এমন তথ্য দিয়ে ঢাকা চেম্বারের সহসভাপতি রাজীব চৌধুরী বলেন, অনানুষ্ঠানিক খাত থেকে কর আহরণ বাড়ানোর কোনো উদ্যোগ নেই। অথচ দেশের অর্থনীতিতে ৬০-৭০ শতাংশ অবদানই এই খাতের।

তিন পার্বত্য জেলায় তিনটি কর অঞ্চল প্রতিষ্ঠার দাবি জানান রাঙামাটি চেম্বারের প্রতিনিধি বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া। তিনি বলেন, মানুষের মন থেকে করভীতি দূর করতে হবে। তাহলে স্বচ্ছন্দে কর দেওয়ার প্রবণতা বাড়বে।

গ্যাস-বিদ্যুৎ চান ব্যবসায়ীরা

কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিপুল পরিমাণ বিনিয়োগ করেও গ্যাস–বিদ্যুৎ পাওয়া যাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন অন্যতম শীর্ষস্থানীয় শিল্পগোষ্ঠী মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরাসহ অনেকেই কুমিল্লা অর্থনৈতিক অঞ্চলে (ইজেড) বিনিয়োগ করেছেন। আমরা ৬০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছি। তবে দুই বছরেও গ্যাস ও বিদ্যুৎ পাচ্ছি না। আমরা বিদেশিদের বিনিয়োগের জন্য ডাকছি। অথচ নিজের দেশের উদ্যোক্তারা জ্বালানিসংকটে ভুগছেন। এটা অবশ্যই গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে।’

মোস্তফা কামাল আরও বলেন, সবাই করজাল বাড়ানোর কথা বলেছেন। বাস্তবতা হলো, যাঁরা কর দেন, তাঁদের ওপর আরও বেশি করের চাপ আসে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর অনেকের ব্যাংক হিসাব ও করনথি তল্লাশি করা হচ্ছে। এ ছাড়া তিনি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া ঢালাওভাবে তল্লাশি করে ব্যবসায়ীদের যেন হয়রানি করা না হয়, সে জন্য এনবিআরকে অনুরোধ জানান।

সিরামিকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিসিএমইএর সভাপতি মইনুল ইসলাম বলেন, ‘গ্যাসের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে সিরামিক খাতের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা শঙ্কিত। সিরামিক পণ্যের মূল কাঁচামাল হিসেবে যে মাটি আমদানি করা হয়, তার মধ্যে ২০-৩০ শতাংশ পানি থাকে। এটি বাদ দিয়ে শুল্কায়ন করা হলে ব্যবসায়ীরা কিছুটা স্বস্তি পাবেন।’

ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমানোর দাবি

ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি কমিয়ে ৯ শতাংশ করার দাবি জানান আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিহ্যাবের পরিচালক আইয়ুব আলী। তিনি বলেন, বর্তমানে ফ্ল্যাটের নিবন্ধন ফি সর্বমোট ১৮ শতাংশে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এটি কমানো গেলে গ্রাহকেরা ফ্ল্যাট নিবন্ধনে আগ্রহী হবেন।

এ বিষয়ে এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান বলেন, ‘নিবন্ধন ফি কমানোর ক্ষেত্রে জমি বা ফ্ল্যাটের প্রকৃত মূল্যায়ন হচ্ছে বড় সমস্যা। এটা ঠিক করা গেলে নিবন্ধন ফি ৯ শতাংশ করা হলেও সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়বে। এটার জন্য আমরা চেষ্টা করছি। হয়তো একদিন সফল হব।’

নির্মাণ খাতের অন্যতম প্রয়োজনীয় উপাদান ইস্পাতশিল্পে সরকারের বিশেষ নজর দাবি করেন বাংলাদেশ স্টিল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক চেয়ারম্যান শেখ মাসাদুল আলম। তিনি বলেন, ‘কাস্টমসের অব্যবস্থাপনা দূর করতে হবে। এক টন স্ক্র্যাপ আনতে ১ হাজার ২০০ টাকা কর দিই। কিন্তু চালানে কোনো স্ক্র্যাপ ৫-৭ ফুট দীর্ঘ হলেও হয়রানি করা হয়। এতে সময় ও অর্থ অপচয় হয়। এখান থেকে বের হতে হবে।’

শুল্ক কমান, রপ্তানি বাড়বে

প্লাস্টিকের খেলনা তৈরিতে ব্যবহৃত উপাদান আমদানিতে শুল্ক কমানো হলে রপ্তানি বাড়বে বলে মন্তব্য করেন বাংলাদেশ প্লাস্টিক পণ্য উৎপাদক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিপিজিএমইএ) সভাপতি শামীম আহমেদ। তিনি বলেন, খেলনাশিল্প খুবই সম্ভাবনাময়। দেশে কারখানা গড়ে ওঠায় খেলনা আমদানি কমে গেছে। রপ্তানিও হচ্ছে অনেক দেশে।

সিলেট চেম্বারের প্রতিনিধি হিসকিল গুলজার বলেন, সিলেটের ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর দিয়ে পণ্য পরিবহন শুরু হয়েছে। সেখান থেকে দিনে ১২-১৪টি আন্তর্জাতিক ফ্লাইট যাচ্ছে। হ্যান্ডলিং চার্জসহ অন্যান্য মাশুল কমানো গেলে পণ্য রপ্তানি বাড়বে। নতুন নতুন উদ্যোক্তা তৈরি হবে।

ব্যবসা-বাণিজ্যে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন বস্ত্রকলমালিকদের সংগঠন বিটিএমএর সভাপতি শওকত আজিজ। তিনি বলেন, ‘একসময় যন্ত্রাংশ আমদানির ক্ষেত্রে বিটিএমএ ছাড়পত্র দিত। কোনো বিতর্ক হয়নি। এনবিআর পুরো বিষয়টি নিজের হাতে নেওয়ার পর জটিলতা বেড়েছে। দেখা যায়, ৩০ হাজার টাকা শুল্ক–কর জমা দিতে ৫০ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়।’

ভারত থেকে বেনাপোল দিয়ে সুতা আমদানির ওপর নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার প্রস্তাব দেন তৈরি পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর প্রশাসক মো. আনোয়ার হোসেন।

নিট পোশাকশিল্পমালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বর্তমান প্রশাসন বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়ায় চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সেবা মসৃণ হয়েছে। তবে বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ের নিচের দিকে কিছু সমস্যা রয়ে গেছে। সেখানে নজর দিতে হবে।

অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু।

সম্পর্কিত নিবন্ধ