মৌলভীবাজারে হাওরপারে চুন-সুরকির ১৫০ বছরের মসজিদ
Published: 21st, March 2025 GMT
গ্রামের পশ্চিমে বিস্তৃত কাউয়াদিঘি হাওর। সেই হাওরের পাড় ঘেঁষে গড়ে উঠেছে গ্রামটি। বর্ষায় হাওরের পানিতে গ্রামের খাল-নালা, পথঘাট ডুবে যাওয়াই নিয়ম। এখন শুকনো মৌসুম, হাওরে পানি নেই। যত দূর চোখ যায় ধু ধু ফাঁকা দিগন্ত, বোরো ফসলের সবুজ। ফসলের দিকে তাকালে কারও মনে হতে পারে, কেউ হয়তো সবুজ চাদর বিছিয়ে রেখেছে মাঠে। নিভৃত এই গ্রামটির ভেতরে সবার চোখের আড়ালে ব্যক্তিগত উদ্যোগে নির্মাণ করা চুন-সুরকির একটি মসজিদ আছে, যার বয়স ১৫০ বছর পেরিয়ে গেছে।
এই মসজিদের অবস্থান মৌলভীবাজারের রাজনগর উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়নের রক্তা গ্রামে। মসজিদটিকে স্থানীয় মানুষ চেনে তিন গম্বুজ রক্তা জামে মসজিদ নামে। মসজিদটিতে স্থান সংকুলান না হওয়ায় কয়েক বছর আগে নতুন করে সম্প্রসারণ করা হয়েছে। কিন্তু পুরোনো মসজিদে হাত দেওয়া হয়নি, পুরোনো মসজিদটিকে অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে।
রক্তা গ্রামে একটি পুরোনো মসজিদ আছে, যার বয়স শত বছরের ওপরে—এমন তথ্য পেয়ে ১৮ মার্চ সেখানে যাওয়া। মৌলভীবাজারের রাজনগর-বালাগঞ্জ সড়ক থেকে পশ্চিমে কাউয়াদিঘি হাওরের দিকে একটি গ্রামীণ পাকা সড়ক গেছে, সেই সড়ক ধরেই রক্তা গ্রামে পৌঁছা গেল। সড়কের দুই পাশে ধানখেত, কাঁচাপাকা নতুন-পুরোনো বাড়ি। পাকা সড়ক যেখানে গিয়ে শেষ হয়েছে, সেখানে ভ্রাম্যমাণ হাটের মতো পসরা নিয়ে বসেছেন কয়েকজন ব্যবসায়ী। ধারণা করা যায়, ভ্রাম্যমাণের মতো মনে হলেও তাঁরা আসলে নিয়মিতই এখানে পণ্য সাজিয়ে বসেন। বিভিন্ন ধরনের মৌসুমি শাকসবজি, ফল সাজানো আছে। সেখান থেকে উত্তর দিকে মসজিদ পর্যন্ত কয়েক শ ফুট ইট বিছানো সড়ক, সেই সড়কটি এখন এবড়োখেবড়ো, গর্তে পূর্ণ।
এখানে একটি মসজিদ আছে, এটা যে কারও চোখে পড়বে। কিন্তু আগে থেকে না জানা থাকলে এই নতুন দালানের আড়ালে কালের যাত্রায় ১৫০ বছর পার করা একটি মসজিদ আছে, তা কেউ অনুমান করতে পারবেন না। নতুন ভবনটিই আগে চোখে পড়ে। পুরোনো মসজিদকে যুক্ত করেই পূর্ব দিকে নতুন দালান নির্মাণ করা হয়েছে। চুন-সুরকিতে তৈরি তিন গম্বুজ মসজিদটিকে আপাতত সাদামাটা মনে হলেও মসজিদ তৈরিতে প্রাচীন স্থাপত্যকলা অনুসরণ করা হয়েছে। প্রায় ২০ ফুট উঁচু দেয়ালে ঘেরা চারদিক। উত্তর ও দক্ষিণ দিকে দুটি জানালা আছে। মসজিদের ছাদে পূর্ব ও পশ্চিম দিকে তিনটি করে স্তম্ভ। আছে তিনটি গম্বুজ। এই গম্বুজ তিনটি মসজিদের পরিচিতি তৈরি করেছে। পরিচিতজন এটাকে ‘তিন গম্বুজ মসজিদ’ নামেই চিনে থাকেন। মসজিদের পূর্ব দিকে পাকা ঘাটওয়ালা একটি পুকুর আছে। মসজিদটির উত্তর পাশেই আছে রক্তা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
মসজিদ নির্মাতার পরিবার ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা গেছে, মসজিদটি যখন নির্মাণ করা হয়, তখন গ্রামে হাতে গোনা কয়েকটি পরিবার ছিল। মুসল্লির সংখ্যা বেশি ছিল না। কিন্তু ধীরে ধীরে গ্রামে জনসংখ্যা বেড়েছে, মুসল্লির সংখ্যাও বেড়েছে। জুমার নামাজ, ঈদের জামাতে গ্রামের মানুষের স্থান সংকুলান হয় না। তখন মসজিদ সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। প্রাথমিকভাবে চিন্তা ছিল পুরোনো মসজিদসহ সেই স্থানটিকে উন্মুক্ত রেখে নতুন করে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হবে। কিন্তু খালি জায়গা না থাকায় পুরোনো মসজিদকে সংযুক্ত রেখেই নতুন করে পূর্ব দিকে ভবন সম্প্রসারণ করা হয়েছে। নতুন ভবনের ভিত্তিটি পাঁচতলার করা হয়েছে। সম্প্রসারিত ভবনের স্থানে আগে টিনের একচালা ছিল। নতুন ভবন নির্মাণ করা হলেও ঈদের জামাত দুবারে পড়তে হয়।
ভবনটির কাছাকাছি গেলে পুরোনো মসজিদের অবস্থান পরিষ্কার বোঝা যায়। মসজিদের ভেতরের দিকেও পুরোনো মসজিদের আদল অবিকল রাখা হয়েছে। তিন ফুটের মতো চুন-সুরকির প্রশস্ত দেয়াল। গরমের সময় পুরোনো ভবনের ভেতরটা শীতল থাকছে। শীতের সময়েও বেশি ঠান্ডা হয় না। একটা প্রাকৃতিক আবহাওয়া বিরাজ করে। নতুন ভবনের ছাদ থেকে দেখলে পুরোনো ভবনের নির্মাণশৈলী ভালোভাবে চোখে পড়ে, গম্বুজগুলো স্পষ্ট দেখা যায়।
মসজিদ নির্মাতার উত্তরসূরি আবদুল হাকিম প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর দাদার বাবা হাজি সুজন মাহমুদ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন। সেই সময় কাউয়াদিঘি হাওরে তাঁর দাদার জলমহালের ব্যবসা ছিল। পুরোনো মসজিদ ভবন এখনো ঠিকঠাক আছে, তবে কত দিন থাকবে, এ নিয়ে চিন্তা বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘মসজিদের বয়স ১৫৩ বছর। রক্তা গ্রামের মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়েন। মেইন মসজিদ সংস্কার করা হয়নি। নতুন ভবন নির্মাণের সময় পুরোনো মসজিদকে অবিকল রেখে দেওয়া হয়েছে। ভবিষ্যতে সংস্কারের প্রয়োজন পড়লে যাতে পুরোনো ডিজাইন ঠিক থাকে, সেদিকে খেয়াল রাখা হবে। এই মসজিদ শুধু রক্তা গ্রামই নয়, এই এলাকার সবচেয়ে প্রাচীন একটি মসজিদ। এটি এখন ইতিহাস-ঐতিহ্যের অংশ।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ম ণ কর মসজ দ র মসজ দ ন গম ব জ ভবন র
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।