এক ‘অ্যান্টিক কয়েনের’ দাম ২০ বিলিয়ন ডলার, এই প্রলোভনে প্রতারণা
Published: 21st, March 2025 GMT
কথিত ‘অ্যান্টিক মেটাল কয়েন’ (প্রাচীন ধাতব মুদ্রা) নিয়ে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
আজ শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীর আদাবর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ সকাল ৭টা পর্যন্ত রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে এই চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ইফতেখার আহম্মেদ (৪৪), আবু নাঈম মো.
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে চারটি কথিত অ্যান্টিক মেটাল কয়েন, ৫০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক, নগদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও প্রতারণায় ব্যবহৃত ১০টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, প্রতারণার অভিযোগে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আদাবর থানায় মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের ধরতে আদাবরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় থানা-পুলিশ। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তারা এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামসহ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
যেভাবে প্রতারণামামলা ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা ইবনে মিজান বলেন, আট মাস আগে ইফতেখারের সঙ্গে পরিচয় হয় মিজানুরের। তাঁকে কথিত অ্যান্টিক মেটাল কয়েনের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা দেন ইফতেখার। তিনি মিজানুরকে প্রলোভন দেখান, কয়েন কিনতে বলেন। মিজানুরকে ইফতেখার বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় আছেন। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কয়েন কেনে। তিনি অতি উচ্চ মূল্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই কয়েন বিক্রয় করে দিতে পারবেন।
ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে মিজানুরকে ডেকে নেন ইফতেখার। তিনি মিজানুরের সঙ্গে দুই ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দেন। নাঈমের পরিচয়ে বলেন, তিনি বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধি। আর হালিমের পরিচয়ে বলেন, তিনি ধাতব মুদ্রার শুদ্ধতা নির্ণয় করেন। ইফতেখার ও তাঁর সহযোগীরা মিজানুরকে বলেন, বিদেশে প্রতিটি ধাতব মুদ্রার বাজারমূল্য আনুমানিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ধাতব মুদ্রাগুলো নিখাদ বলে মিজানুরকে প্রতিবেদন দেন হালিম। ধাতব মুদ্রা কেনার জন্য গত বছরের ৭ অক্টোবর চক্রের কাছে অগ্রিম ৪৫ লাখ টাকা দেন মিজানুর। পরে আরও নগদ ৭৫ লাখ টাকা ও ৫০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক দেন। একপর্যায়ে মিজানুর জানতে পারেন, ধাতব মুদ্রাগুলো ভুয়া। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর তিনি মামলা করেন।
পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তিউৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইফত খ র
এছাড়াও পড়ুন:
সাবেক উপাচার্য হাসিবুরসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আবেদন
জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের প্রথম শহীদ রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যায় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠনের আবেদন করা হয়েছে। আজ সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল-২–এর কাছে এই আবেদন করেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম।
আজ শুনানিতে আসামিদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ট্রাইব্যুনালে উপস্থাপন করেন চিফ প্রসিকিউটর। তিনি বলেন, তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে আসামিদের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আনা হয়েছে, তাতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা যায়।
এরপর এই মামলার আসামিপক্ষের বক্তব্য শোনার জন্য আগামীকাল মঙ্গলবার দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-২। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল-২ এই দিন ধার্য করেন। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারক মো. মঞ্জুরুল বাছিদ ও বিচারক নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।
এই মামলায় মোট ৩০ জন আসামি। এর মধ্যে ছয়জন গ্রেপ্তার আছেন। তাঁরা হলেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক প্রক্টর শরিফুল ইসলাম, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার রাফিউল হাসান রাসেল রেজিস্ট্রার কার্যালয়ের সাবেক চুক্তিভিত্তিক কর্মচারী মো. আনোয়ার পারভেজ, পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) আমির হোসেন, সাবেক কনস্টেবল সুজন চন্দ্র রায় ও নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা ইমরান চৌধুরী ওরফে আকাশ। তাঁদের আজ ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
বাকি ২৪ জন আসামি পলাতক। তাঁরা হলেন: রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য মো. হাসিবুর রশীদ, গণিত বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক মো. মশিউর রহমান, লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডল, চিকিৎসক মো. সরোয়ার হোসেন চন্দন, সাবেক সহকারী রেজিস্ট্রার মো. হাফিজুর রহমান, সাবেক সেকশন অফিসার মো. মনিরুজ্জামান পলাশ; রংপুর মহানগর পুলিশের (আরপিএমপি) সাবেক কমিশনার মো. মনিরুজ্জামান, সাবেক উপকমিশনার মো. আবু মারুফ হোসেন, সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার মো. শাহ নূর আলম পাটোয়ারী, সাবেক সহকারী কমিশনার মো. আরিফুজ্জামান, সাবেক পরিদর্শক (নিরস্ত্র) রবিউল ইসলাম, সাবেক এসআই (নিরস্ত্র) বিভূতিভূষণ রায়; বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি পোমেল বড়ুয়া, সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান, সহসভাপতি ফজলে রাব্বি ও আখতার হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক সেজান আহম্মেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ধনঞ্জয় কুমার, দপ্তর সম্পাদক বাবুল হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদুল হাসান; বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক এমএলএসএস মোহাম্মদ নুরুন্নবী মণ্ডল ও আমির হোসেন, নিরাপত্তা প্রহরী নুর আলম মিয়া ও অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর মো. মাহাবুবার রহমান।
পলাতক ২৪ আসামির পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত চারজন আইনজীবী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। তাঁরা হলেন আইনজীবী সুজাত মিয়া, ইসরাত জাহান, শহীদুল ইসলাম ও মামুন উর রশীদ।