কথিত ‘অ্যান্টিক মেটাল কয়েন’ (প্রাচীন ধাতব মুদ্রা) নিয়ে অভিনব কৌশলে প্রতারণা করে বিপুল অর্থ হাতিয়ে নেওয়া একটি চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

আজ শুক্রবার রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানানো হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, রাজধানীর আদাবর থানায় দায়ের হওয়া একটি মামলায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত ১২টা থেকে আজ সকাল ৭টা পর্যন্ত রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে এই চার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ইফতেখার আহম্মেদ (৪৪), আবু নাঈম মো.

ফাইজানুল হক ওরফে ডক্টর নাঈম (৪৮), মো. আবদুল হালিম তালুকদার কুরাইশি (৪২) ও আবুল কালাম আজাদ (৪৬)।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে চারটি কথিত অ্যান্টিক মেটাল কয়েন, ৫০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক, নগদ ১৯ লাখ ৫০ হাজার টাকা ও প্রতারণায় ব্যবহৃত ১০টি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, প্রতারণার অভিযোগে মিজানুর রহমান নামের এক ব্যক্তি আদাবর থানায় মামলা করেন। এই মামলার আসামিদের ধরতে আদাবরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় থানা-পুলিশ। সাঁড়াশি অভিযান চালিয়ে তারা এজাহারভুক্ত চার আসামিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁদের কাছ থেকে বিভিন্ন সরঞ্জামসহ নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।

যেভাবে প্রতারণা

মামলা ও গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাতে পুলিশ কর্মকর্তা ইবনে মিজান বলেন, আট মাস আগে ইফতেখারের সঙ্গে পরিচয় হয় মিজানুরের। তাঁকে কথিত অ্যান্টিক মেটাল কয়েনের ব্যবসা সম্পর্কে ধারণা দেন ইফতেখার। তিনি মিজানুরকে প্রলোভন দেখান, কয়েন কিনতে বলেন। মিজানুরকে ইফতেখার বলেন, তিনি দীর্ঘদিন ধরে এই ব্যবসায় আছেন। জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এই কয়েন কেনে। তিনি অতি উচ্চ মূল্যে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে এই কয়েন বিক্রয় করে দিতে পারবেন।

ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপকমিশনার ইবনে মিজান বলেন, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর গুলশানের একটি হোটেলে মিজানুরকে ডেকে নেন ইফতেখার। তিনি মিজানুরের সঙ্গে দুই ব্যক্তির পরিচয় করিয়ে দেন। নাঈমের পরিচয়ে বলেন, তিনি বিদেশি কোম্পানির প্রতিনিধি। আর হালিমের পরিচয়ে বলেন, তিনি ধাতব মুদ্রার শুদ্ধতা নির্ণয় করেন। ইফতেখার ও তাঁর সহযোগীরা মিজানুরকে বলেন, বিদেশে প্রতিটি ধাতব মুদ্রার বাজারমূল্য আনুমানিক ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হবে। ধাতব মুদ্রাগুলো নিখাদ বলে মিজানুরকে প্রতিবেদন দেন হালিম। ধাতব মুদ্রা কেনার জন্য গত বছরের ৭ অক্টোবর চক্রের কাছে অগ্রিম ৪৫ লাখ টাকা দেন মিজানুর। পরে আরও নগদ ৭৫ লাখ টাকা ও ৫০ লাখ টাকার একটি ব্যাংক চেক দেন। একপর্যায়ে মিজানুর জানতে পারেন, ধাতব মুদ্রাগুলো ভুয়া। তিনি প্রতারণার শিকার হয়েছেন। এরপর তিনি মামলা করেন।

পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার চার ব্যক্তি

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইফত খ র

এছাড়াও পড়ুন:

সাবেক এডিসি ইশতিয়াকের নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ জমা দিলেন রাশেদ খান

পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইমের (সিটিটিসি) সাবেক অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) ইশতিয়াক আহমেদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ জমা দিয়েছেন গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান।

২০১৮ সালের ১ জুলাই ইশতিয়াক আহমেদ ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সাইবার ক্রাইম ইউনিটে তাঁর কক্ষে রাশেদ খানের ওপর নির্যাতন চালান বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।

অভিযোগে রাশেদ খান বলেন, ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ইশতিয়াক আহমেদের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি বুট জুতা পরা অবস্থায় তাঁর গোপন অঙ্গে লাথি মারেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে গালিগালাজ ও অনবরত চড়থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন।

আজ বুধবার দুপুরে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়ে এ অভিযোগ জমা দেন রাশেদ খান।

অভিযোগে রাশেদ খান বলেন, ২০১৮ সালে গ্রেপ্তার করার পর পুলিশ হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তাঁকে ইশতিয়াক আহমেদের কক্ষে নিয়ে যায়। সেখানে তিনি বুট জুতা পরা অবস্থায় তাঁর গোপন অঙ্গে লাথি মারেন। এতে তিনি গুরুতর আহত হন। পরে গালিগালাজ ও অনবরত চড়থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন।

ওই নির্যাতনের রেশ এখনো কাটিয়ে উঠতে পারেননি উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, ‘সেই নির্যাতনে আমার শরীরের মাংসপেশি শক্ত হয়ে যায়। অনেক জায়গা থেঁতলে যায়। এখন মাঝেমধ্যে প্রেশার কমে শরীর নিস্তেজ হয়ে পড়ে। ব্যথায় ঠিকমতো ঘুমাতে পারি না, ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠি।’

অত্যাচার করা হলেও পুলিশ তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করেনি অভিযোগ করে রাশেদ খান বলেন, ‘আমাকে মাত্র কয়েকটি ব্যথার ট্যাবলেট দিয়েছিল পুলিশ।’

ইশতিয়াক আহমেদকে গ্রেপ্তারে দেরি করা হয়েছে উল্লেখ করে রাশেদ খান বলেন, বিচার যত ধীরে শুরু হবে, অপরাধীরা তত দেশ ছেড়ে পালাবে। প্রশাসনের গাফিলতির সুযোগে অনেক অপরাধী দেশ ছেড়ে পালিয়েছে। অন্য অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হোক।

ইশতিয়াক আহমেদের নির্যাতনের শিকার অন্য ভুক্তভোগীদেরও মামলা করার আহ্বান জানিয়ে রাশেদ খান বলেন, ‘আমি জানতে পেরেছি, ইশতিয়াক আহমেদ জামিন পেয়ে যেতে পারেন। তাঁকে ছাড়া হলে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে অন্যায় করা হবে।’

এর আগে গত রোববার পুলিশ সিটিটিসির সাবেক এ অতিরিক্ত উপকমিশনারকে রাঙামাটি থেকে গ্রেপ্তার করে। জুলাই গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। গতকাল মঙ্গলবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হলে আদালত তাঁকে কারাগারে পাঠিয়ে দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাবেক এডিসি ইশতিয়াকের নির্যাতন নিয়ে অভিযোগ জমা দিলেন রাশেদ খান
  • দাবি প্রত্যাখান: রাবির ‘এ’ ইউনিটে ৭৫০ ওএমআর বাতিল