রাজশাহীতে টানা দুই দিন ধরে রোদের দেখা নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল দিনভর ঠান্ডা বাতাস। দুপুরের পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি থাকলেও তার স্থায়িত্ব কম ছিল। তবে আজ শুক্রবার সকাল ৬টার পর থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। বেশির ভাগ সময় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি ঝরছে। তবে মাঝেমধ্যে বৃষ্টির তীব্রতা বাড়ছে।

এদিকে বৃষ্টি হওয়ায় দিনের তাপমাত্রাও কমে গেছে। আজ দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটারের মতো বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে রাজশাহী আবহাওয়া অফিস। আবহাওয়া পর্যবেক্ষকেরা বলছেন, আবহাওয়ার এই অবস্থা আরও এক দিন স্থায়ী থাকতে পারে।

আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে, রাজশাহীতে গত বুধবার দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৬ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়। এ হিসাবে এটি মৃদু তাপপ্রবাহের ইঙ্গিত দিচ্ছিল। ২৪ ঘণ্টার ব্যবধানেই গতকাল একেবারে আবহাওয়া বদলে যায়। দিনের তাপমাত্রা ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের বেশি কমে যায়। গতকাল বেলা ২টার পর থেকে বৃষ্টি শুরু হয়। তবে এর স্থায়িত্ব ছিল অল্প। গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত ১ মিলিমিটার বৃষ্টির রেকর্ড করা হয়। আজ সকাল ৬টার পর থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়। দুপুর ১২টা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে ৪ মিলিমিটার।

এর আগে ১৭ মার্চ রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছিল। তবে সেই বৃষ্টি রেকর্ড করা যায়নি। সেদিন বৃষ্টির সময়ও তাপমাত্রা কমে গিয়েছিল। তবে পরে রোদ উঠে তাপমাত্রা বেড়ে যায়।

রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের সহকারী পর্যবেক্ষক লতিফা হেলেন বলেন, বৃষ্টি অব্যাহত থাকতে পারে আগামীকাল শনিবারও। বৃষ্টি হওয়ায় এই সময়ের স্বাভাবিক তাপমাত্রা কমে গেছে। আজ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ২১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বেলা ৩টায় রেকর্ড করা হবে।

এদিকে দুই দিন ধরে রোদ না থাকায় শ্রমজীবী মানুষেরা একটু বিপাকেই পড়েছেন। নগরের বিনোদপুর এলাকায় মাথায় পলিথিন বেঁধে রাজমিস্ত্রির কাজ করছিলেন শাহ আলম নামের এক শ্রমিক। তিনি বলেন, বৃষ্টির মধ্যে বাইরে কাজ করা যাচ্ছে না। আজ এক দুপুর পর্যন্ত কাজ করা যাবে। বৃষ্টি থাকলে কাজ বন্ধ থাকবে।

শহরের রিকশাচালকেরা পলিথিন মুড়িয়ে রিকশা চালাচ্ছেন। অনেকের গায়ে রেইনকোট। আবু হাশেম নামের এক রিকশাচালকের সঙ্গে কথা হয় নগরের চৌদ্দপায় এলাকায়। তিনি বলেন, এমনিতেই আজ শুক্রবার, তার ওপর আবার বৃষ্টি। সব মিলে ভাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। বৃষ্টিতে মানুষ বাইরে বের হচ্ছেন কম।

এদিকে বৃষ্টিতে মাঠপর্যায়ের ফসলেও প্রভাব পড়েছে। রাজশাহীর মাঠে এখন পেঁয়াজ, রসুন, ধান, আলু, আম রয়েছে। দুর্গাপুর উপজেলার কৃষক আলী হোসেন বলেন, তিনি তিন বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছেন। সব আলু এখনো তুলতে পারেননি। বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে আলু ক্ষতিগ্রস্ত হবে।

পুঠিয়ার মাহবুব ইসলামের ১০ বিঘার মতো আমবাগান রয়েছে। তিনি বলেন, এই সময়ে খরা হয়। তাই তিনি আমখেতে সেচের প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে এই বৃষ্টি সেচের খরচ বাঁচিয়ে দিল। এই সময়ে বৃষ্টি হয়ে আমের জন্য ভালো হলো।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক উম্মে ছালমা বলেন, এই সময়ে বৃষ্টি আমের জন্য ভালোই হচ্ছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টি না থাকাতে আমখেতে সেচের প্রয়োজন ছিল। অনেক কৃষক সেচের প্রস্তুতিও নিচ্ছিলেন। এই বৃষ্টি সেটি অনেকটাই পূরণ করছে। এই বৃষ্টির কারণে আমের গুটির বোঁটা আরও মজবুত হবে। তবে এই বৃষ্টি যদি কয়েক দিন ধরে থাকে, তবে রোদ উঠলে আমচাষিদের ছত্রাকনাশক ও কীটনাশক ছিটাতে হবে।

অন্য ফসলের বিষয়ে উম্মে ছালমা বলেন, এই বৃষ্টিতে ধান ও পেঁয়াজের জন্য ক্ষতি হবে না। মাঠে যে পেঁয়াজ আছে, তা এপ্রিলে উঠবে। আর মাঠের আলু বেশির ভাগ ওঠানো হয়ে গেছে। কিছু আলু হয়তো মাঠে আছে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে টানা দুই দিন মৃদু তাপপ্রবাহের পর গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি, জনজীবনে স্বস্তি১৭ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র কর ড কর এই ব ষ ট এই সময় গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ