আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটে ফুটবল স্টাইলের কোচিংয়ের উত্থান
Published: 21st, March 2025 GMT
কার্লো আনচেলত্তি কিছুটা ঠান্ডা মাথার কোচ। ডাগ আউটে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে টুকটাক যা নির্দেশনা দেওয়ার দেন। কিন্তু ডিয়াগো সিমিওনে? রীতিমতো ডাগ আউটের ভিলেন তিনি। দৌড়াদৌড়ি, চিৎকারে টতস্ত রাখেন ডাগ আউট। আবার পেপ গার্দিওলার চলতি মৌসুমের কথাই ভাবুন। রাগে, ক্ষোভে নিজের নাক-মুখ খামছে রক্তাত্ব করেছেন তিনি।
আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটে যেন ফুটবল স্টাইলের এই কোচিংয়ের উত্থান হয়েছে। আম্পায়ার টাইমড আউট ঘোষণা করতেই কোচ ছুটে মাঠে ঢুকে পড়ছেন। সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন। বোলারকে ডেকে টেকনিক শেখাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই বোলিং-ফিল্ডিং-ব্যাটিং কোচও যেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে দু-চারটা কথা বলতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন। আইপিএলের গত কয়েক বছরের কথা স্মরণ করলে এটা খুব স্বাভাবিক দৃশ্য হিসেবেই চোখে ভেসে উঠবে।
আইপিএলে পাঞ্জাব ও বেঙ্গালুরুয় কোচিং করানো মাইক হেসন বিষয়টি নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘অধিনায়কের সংখ্যা তো কম, ওই তুলনায় কোচের সংখ্যা বেশি। দল ভালো করলে অধিনায়ক ও খেলোয়াড়রা কৃতিত্ব পায়। খারাপ করলে দায় আসে কোচের কাঁধে। কোচরা এসব সম্পর্কে এখন বেশ অবগত। আইপিএলে প্রতি ম্যাচে ভক্তদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। প্রতিটি কোচের ওপর শিরোপা জয়ের চাপ থাকে। প্রতি মুহূর্তে ম্যাচের চিত্রও বদলে যায়। এসব কারণে কোচরা তটস্ত থাকেন।’
হেসনের মতে, চেন্নাই সুপার কিংসে ধোনির মতো অধিনায়ক থাকার কারণে কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং কিংবা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মাহেলা জয়বর্ধানে হয়তো কিছুটা আড়াতে থাকতে পছন্দ করেন বা থাকতে পারেন। কিন্তু আশিস নেহেরা, চন্দ্রকান্ত পন্ডিত, রিকি পন্টিং ও জাস্টিন ল্যাঙ্গারদের নিয়মিতই বাউন্ডারি লাইন থেকে ইশারা করতে, পরামর্শ পাঠাতে এবং কঠিন মুখে করে বসে থাকতে দেখা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।
তার মতে, মাঠের ক্রিকেট এক সময় ছিল অধিনায়কের নেতৃত্বে চলা খেলা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মাধ্যমে এখন সেটা কোচের পরিচালনায় চলে যাচ্ছে। হেসন মনে করেন, ক্রিকেটে অধিনায়ক ও কোচের ভূমিকার মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত। কোচরা সবসময় বেশি জানেন, বোঝেন ধারণা থেকে বের হয়ে মাঠের কাজটা অধিনায়ককে করতে দিয়ে ম্যাচ পূর্ববর্তী প্রস্তুতিতে কোচের ভূমিকা বাড়ানো উচিত। তাছাড়া অধিনায়ককে ছোট করা হয়ে যায়।
তবে ক্রিকেটে দলের কৌশল নিয়ে কাজ করা ড্যান ওয়েস্টন জানান, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মতো কোচ চান ডাগআউট থেকে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে। যে কারণে ফ্লাওয়ার অনভিজ্ঞ অধিনায়ক নিয়োগ করে কাজ করতে পছন্দ করেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। আসন্ন আইপিএল মৌসুমে ফ্লাওয়ার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুয় কাজ করবেন। নিলামের আগে তিনি দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে দেন। মাত্র তিনজনকে ধরে রাখেন এবং রজত পতিদারকে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। কারণ অনভিজ্ঞ রজত কোচের থেকে জানতে, শিখতে মুখিয়ে থাকবে। নির্ভরশীলও থাকবে। যে কাজটা রোহিত, ধোনিদের সঙ্গে করা কঠিন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
ট্রাম্প কেন ভারতের ওপর এমন চাপ দিচ্ছেন, কী বলছেন রাজনৈতিক নেতারা
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করার পর বিরোধী দল কংগ্রেস বিজেপি সরকারকে তীব্রভাবে আক্রমণ করেছে। কংগ্রেস পার্টির এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি পোস্টে লেখা হয়েছে, এখন দেশকে মোদির ‘বন্ধুত্বের মূল্য’ দিতে হচ্ছে।
কংগ্রেস ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে টেক্সাসে অনুষ্ঠিত ‘হাউডি মোদি’ অনুষ্ঠানে ট্রাম্পের পক্ষে মোদির প্রচার চালানোকে আজকের পরিস্থিতির জন্য দায়ী করেছে।
কংগ্রেস বলেছে, ট্রাম্প ভারতের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক বসিয়েছেন। এর সঙ্গে দণ্ড জরিমানাও দিয়েছেন। এখন দেশ মোদির বন্ধুত্বের খেসারত দিচ্ছে। মোদি ট্রাম্পের প্রচারে অংশ নিয়েছিলেন, তাঁকে জড়িয়ে ধরেছিলেন ও ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প ভারতকে শাস্তি দিলেন। ভারতের পররাষ্ট্রনীতি সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হয়েছে।
২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের পাশাপাশি ট্রাম্প ঘোষণা দিয়েছেন, রাশিয়া থেকে জ্বালানি ও অস্ত্র কেনার কারণে ভারতকে অতিরিক্ত জরিমানাও দিতে হবে।
ট্রাম্প আরও বলেন, ভারত ও চীন রাশিয়ার যুদ্ধ খরচ বহন করছে। সেই যুদ্ধ এরই মধ্যে তিন বছর ধরে চলছে। ট্রাম্প দাবি করেছিলেন, আবার প্রেসিডেন্ট হলে শপথ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই তিনি যুদ্ধ শেষ করে দেবেন।
ট্রাম্প তাঁর মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, ভারত সব সময় রাশিয়া থেকে প্রচুর পরিমাণে অস্ত্র কিনেছে এবং রাশিয়ার জ্বালানির সবচেয়ে বড় ক্রেতা। এমন এক সময়ে তারা এই কাজ করেছে, যখন সবাই চাইছে, ইউক্রেনে রাশিয়ার হত্যাযজ্ঞ বন্ধ হোক। তাই আগামী ১ আগস্ট থেকে ভারতকে ২৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক ও অতিরিক্ত জরিমানা দিতে হবে।
কংগ্রেস–দলীয় সংসদ সদস্য মাল্লু রবি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্টের হুমকিতে আমরা উদ্বিগ্ন। শুনে মনে হচ্ছে, তিনি যেন ভারতকে হুমকি দিচ্ছেন। আমাদের উচিত উপযুক্ত জবাব দেওয়া।’
কংগ্রেসের আরেক নেতা রাজীব শুক্লা এই পদক্ষেপকে ‘একেবারে ভুল’ বলে অভিহিত করে বলেন, ‘সরকার যাঁকে বন্ধু মনে করত, সেই ট্রাম্প এখন আমাদের আঘাত করেছেন। এর ফলে ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। আমরা সংসদে এ বিষয়ে কথা বলব। এত বন্ধুত্বের পরও ট্রাম্প ভারতের সঙ্গে এমন করলেন কেন?’
আম আদমি পার্টির (এএপি) সংসদ সদস্য সঞ্জয় সিং বলেন, প্রধানমন্ত্রী মোদি প্রতিদিন ভারতের অপমান করছেন। ট্রাম্প তো প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান অ্যাপলকে পর্যন্ত ভারত থেকে আইফোন তৈরি না করতে হুমকি দিয়েছেন। এমনকি তিনি বলেছেন, তিনি পাকিস্তানকে ভালোবাসেন। এটি নিয়ে ভারতের ভাবা উচিত। মোদির উচিত, এ বিষয়ে কড়া প্রতিবাদ জানানো এবং তাঁর অবস্থান পরিষ্কার করা।
অন্যদিকে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতারা ট্রাম্পের এই পদক্ষেপকে ‘দুঃখজনক’ বলে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন, ট্রাম্প প্রায়ই তাঁর বক্তব্য থেকে পেছনে সরে আসেন। তাই ভারতের সরকার কী বলে, তা না জানা পর্যন্ত অপেক্ষা করার আহ্বান জানিয়েছেন।
বিজেপি–দলীয় আরেক সংসদ সদস্য প্রবীণ খান্ডেলওয়াল বলেন, ‘এটি দুঃখজনক। আমি নিশ্চিত, ভারত সরকার এর উপযুক্ত ব্যবস্থা নেবে। ব্যবসা ও শিল্প খাত সরকারের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভর করবে।’
বিজেপির হেমাং যোশি বলেন, ‘মার্কিন প্রেসিডেন্ট একতরফা বিবৃতি দিতে থাকেন। ভারতের পক্ষ থেকে সরকারিভাবে কিছু না বলা পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা উচিত। আগেও তিনি এক কথা বলেছিলেন, পরে আবার নিজেই তা বদলে ফেলেছিলেন।’
বিজেপির আরেক সংসদ সদস্য প্রতাপ সারাঙ্গি বলেন, ‘ভারত শক্তিশালী পাল্টা কৌশল তৈরি করবে। আমরা আত্মবিশ্বাসী, মোদির নেতৃত্বে আমেরিকার এই পদক্ষেপ সফল হতে দেওয়া হবে না। আমরা উপযুক্ত জবাব দেব।’
প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে গত ২০ জানুয়ারি শপথ নেওয়ার পর থেকে ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সব প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের ওপরই পাল্টা শুল্ক বসিয়েছেন। তাঁর দাবি, এসব দেশ আগে থেকেই মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ হারে শুল্ক বসিয়ে আসছিল।
আরও পড়ুনভারতের পণ্যে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা ট্রাম্পের, রাশিয়ার সঙ্গে বাণিজ্যের জন্য আলাদা ‘দণ্ড’১৯ ঘণ্টা আগেআরও পড়ুনজাতীয় স্বার্থ রক্ষায় সব পদক্ষেপ নেবে নয়াদিল্লি১৫ ঘণ্টা আগে