কার্লো আনচেলত্তি কিছুটা ঠান্ডা মাথার কোচ। ডাগ আউটে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে টুকটাক যা নির্দেশনা দেওয়ার দেন। কিন্তু ডিয়াগো সিমিওনে? রীতিমতো ডাগ আউটের ভিলেন তিনি। দৌড়াদৌড়ি, চিৎকারে টতস্ত রাখেন ডাগ আউট। আবার পেপ গার্দিওলার চলতি মৌসুমের কথাই ভাবুন। রাগে, ক্ষোভে নিজের নাক-মুখ খামছে রক্তাত্ব করেছেন তিনি।

আইপিএল দিয়ে ক্রিকেটে যেন ফুটবল স্টাইলের এই কোচিংয়ের উত্থান হয়েছে। আম্পায়ার টাইমড আউট ঘোষণা করতেই কোচ ছুটে মাঠে ঢুকে পড়ছেন। সীমানায় দাঁড়িয়ে থাকা ফিল্ডারকে বুদ্ধি পরামর্শ দিচ্ছেন। বোলারকে ডেকে টেকনিক শেখাচ্ছেন। সুযোগ পেলেই বোলিং-ফিল্ডিং-ব্যাটিং কোচও যেন খেলোয়াড়দের সঙ্গে দু-চারটা কথা বলতে উদগ্রীব হয়ে উঠেন। আইপিএলের গত কয়েক বছরের কথা স্মরণ করলে এটা খুব স্বাভাবিক দৃশ্য হিসেবেই চোখে ভেসে উঠবে।

আইপিএলে পাঞ্জাব ও বেঙ্গালুরুয় কোচিং করানো মাইক হেসন বিষয়টি নিয়ে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, ‘অধিনায়কের সংখ্যা তো কম, ওই তুলনায় কোচের সংখ্যা বেশি। দল ভালো করলে অধিনায়ক ও খেলোয়াড়রা কৃতিত্ব পায়। খারাপ করলে দায় আসে কোচের কাঁধে। কোচরা এসব সম্পর্কে এখন বেশ অবগত। আইপিএলে প্রতি ম্যাচে ভক্তদের অনেক প্রত্যাশা থাকে। প্রতিটি কোচের ওপর শিরোপা জয়ের চাপ থাকে। প্রতি মুহূর্তে ম্যাচের চিত্রও বদলে যায়। এসব কারণে কোচরা তটস্ত থাকেন।’

হেসনের মতে, চেন্নাই সুপার কিংসে ধোনির মতো অধিনায়ক থাকার কারণে কোচ স্টিফেন ফ্লেমিং কিংবা মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের মাহেলা জয়বর্ধানে হয়তো কিছুটা আড়াতে থাকতে পছন্দ করেন বা থাকতে পারেন। কিন্তু আশিস নেহেরা, চন্দ্রকান্ত পন্ডিত, রিকি  পন্টিং ও জাস্টিন ল্যাঙ্গারদের নিয়মিতই বাউন্ডারি লাইন থেকে ইশারা করতে, পরামর্শ পাঠাতে এবং কঠিন মুখে করে বসে থাকতে দেখা স্বাভাবিক হয়ে গেছে।

তার মতে, মাঠের ক্রিকেট এক সময় ছিল অধিনায়কের নেতৃত্বে চলা খেলা। ফ্র্যাঞ্চাইজি লিগের মাধ্যমে এখন সেটা কোচের পরিচালনায় চলে যাচ্ছে। হেসন মনে করেন, ক্রিকেটে অধিনায়ক ও কোচের ভূমিকার মধ্যে ভারসাম্য থাকা উচিত। কোচরা সবসময় বেশি জানেন, বোঝেন ধারণা থেকে বের হয়ে মাঠের কাজটা অধিনায়ককে করতে দিয়ে ম্যাচ পূর্ববর্তী প্রস্তুতিতে কোচের ভূমিকা বাড়ানো উচিত। তাছাড়া অধিনায়ককে ছোট করা হয়ে যায়।

তবে ক্রিকেটে দলের কৌশল নিয়ে কাজ করা ড্যান ওয়েস্টন জানান, অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারের মতো কোচ চান ডাগআউট থেকে ম্যাচ নিয়ন্ত্রণ করতে। যে কারণে ফ্লাওয়ার অনভিজ্ঞ অধিনায়ক নিয়োগ করে কাজ করতে পছন্দ করেন বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি। আসন্ন আইপিএল মৌসুমে ফ্লাওয়ার রয়েল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুয় কাজ করবেন। নিলামের আগে তিনি দলের সিনিয়র ক্রিকেটারদের বাদ দিয়ে দেন। মাত্র তিনজনকে ধরে রাখেন এবং রজত পতিদারকে তিনি অধিনায়কের দায়িত্ব দিয়েছেন। কারণ অনভিজ্ঞ রজত কোচের থেকে জানতে, শিখতে মুখিয়ে থাকবে। নির্ভরশীলও থাকবে। যে কাজটা রোহিত, ধোনিদের সঙ্গে করা কঠিন।

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দহন থেকে  জংলি

‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।

গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা। 

সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’

মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।  

প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে। 

ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।

ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।

প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’ 
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই  দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ