দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ যানবাহন যানজটে নগরবাসীর ভোগান্তি
Published: 21st, March 2025 GMT
ঈদুল ফিতর সামনে রেখে কুমিল্লা নগরীর রাস্তা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ ব্যাটারিচালিত রিকশা, ইজিবাইক ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা। যত্রতত্র গাড়ির পার্কিং এবং সড়কের পাশে অ্যাম্বুলেন্স ও মোড়ে মোড়ে অঘোষিত স্ট্যান্ডের কারণে যানজট লেগে থাকছে।
যানজট নিরসনে দীর্ঘদিন ধরে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক), জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা থাকলেও বিষয়টি ঝুলে আছে। সিটি করপোরেশনের তথ্য অনুসারে নগরীতে চলাচলকারী এসব অবৈধ যানবাহনের লাইসেন্স দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হলেও পরে তা আর আলোর মুখ দেখেনি।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যানজট নিরসন ও সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে ২০২২ সালের ৩০ জানুয়ারি কুমিল্লা সার্কিট হাউসে সভা করা হয়। এই সভায় নগর কর্তৃপক্ষ, জেলা ও পুলিশ প্রশাসন সমন্বয়ে ৭ সদস্যের কমিটি গঠন করে ৮টি কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হলেও কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। যানজটে জনভোগান্তির বিষয়ে সিটি করপোরেশন ও ট্রাফিক পুলিশের নির্লিপ্ততাকে দুষছেন নগরবাসী।
নগরীর সড়কগুলো ঘুরে দেখা গেছে, কুমিল্লা নগরীর কেন্দ্রস্থল কান্দিরপাড় থেকে দক্ষিণে টমছমব্রিজ হয়ে পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড যেতে হয়। এক লেনের এই সড়কে বিভিন্ন পরিবহনের বাস ছাড়াও স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-স্টাফ ও শিক্ষার্থীদের বহনকারী বাস, মিনিবাস, সারি সারি অ্যাম্বুলেন্স, অটোরিকশা, ইজিবাইক, লেগুনা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা চলাচল করে। রমজানেও কমেনি অবৈধ যানবাহনের দাপট।
অপরদিকে নগরীর নজরুল অ্যাভিনিউ, বাদুরতলা, ঝাউতলা, রানীর বাজার, শাসনগাছা, কান্দিরপাড়, রামঘাট, মনোহরপুর, টমছমব্রিজ চৌরাস্তার মোড়, রাজগঞ্জ ও চকবাজার এলাকায় যানজটের ভোগান্তির চিত্র দেখা গেছে। ঈদ ঘিরে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা কান্দিরপাড় মনোহরপুর এলাকার সড়কগুলোর দুই পাশের ফুটপাত দখল করায় যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে। এসব এলাকায় সড়কের যত্রতত্র অটোরিকশা, ইজিবাইক, রিকশা থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা করার কারণে যানজটের
সৃষ্টি হয়।
নগরীর সাত্তার খান কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী রমিজ উদ্দিন বলেন, ‘অবৈধ অটোরিকশা, ইজিবাইকগুলো বেআইনিভাবে শহরে চলাচল করলেও এসবের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। শহরে অবৈধ যানবাহনের দাপট বৃদ্ধি পেয়েছে। এ ব্যাপারে নগর কর্তৃপক্ষেরও কোনো তদারকি চোখে পড়ে না। টমছমব্রিজ থেকে কান্দিরপাড় সড়কে ১০ মিনিটের পরিবর্তে কখনও ৩০ মিনিট লাগে।’
কুমিল্লা নাগরিক ফোরামের সভাপতি কামরুল আহসান বাবুল জানান, বৈধ-অবৈধ যানবাহনের চাপে শহরে যানজট অনেকটা স্থায়ী রূপ নিয়েছে। এতে জনগণকে সীমাহীন দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। তাই সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
তবে কুমিল্লা ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক সারোয়ার মো.
করার কথা।’
কুসিকের লাইসেন্স পরিদর্শক কাজী আতিকুর রহমান সমকালকে জানান, ২০২৩ সালে প্রয়াত মেয়র আরফানুল হক রিফাত পায়ে চালিত রিকশা ও মিশুক নিবন্ধন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু সেই উদ্যোগ আর বাস্তবায়ন হয়নি। যানবাহনের সব ধরনের লাইসেন্সই এখন বন্ধ। কখন চালু হবে তাও জানা নেই।
কুসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ছামছুল আলমের ভাষ্য, নগরীর সড়ক যানজটমুক্ত করতে সর্বোচ্চ চেষ্টা চলছে। কিন্তু হঠাৎ করেই এক দিনে অবৈধ রিকশা-ইজিবাইক চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। জেলা ও পুলিশ প্রশাসনসহ
সম্মিলিত উপায়ে এ বিষয়ে শিগগিরই একটি সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
পাবনা-ঢাকা রুটে আবারও বাস চলাচল বন্ধ, দুর্ভোগে যাত্রীরা
রাবেয়া বেগম আজ রোববার সকাল নয়টার দিকে ঢাকা থেকে পাবনার বেড়াগামী আলহামরা পরিবহনের বাসে উঠেছিলেন। গন্তব্যের ২০ কিলোমিটার আগে পৌঁছার পর জানতে পারেন, সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর হয়ে পাবনার বাস যেতে পারবে না। শাহজাদপুর বাসস্ট্যান্ডের অনেক আগে তালগাছি এলাকায় সব যাত্রীকে নামিয়ে দেওয়া হয়। শেষ পর্যন্ত সিএনজিচালিত অটোরিকশায় তাঁকে বেড়ায় পৌঁছাতে হয়।
পাবনা ও শাহজাদপুরের অনেক যাত্রীকে আজ রোববার দিনভর এমন দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে। এই দুর্ভোগের কারণ, পাবনা ও শাহজাদপুর বাসমালিকদের পুরোনো দ্বন্দ্ব। আজ সকাল থেকে দুই এলাকার বাস চলাচল আবারও অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ হয়ে গেছে। পাবনা থেকে শাহজাদপুর হয়ে ঢাকা, বগুড়া, টাঙ্গাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুরসহ উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন গন্তব্যে কোনো বাস চলাচল করছে না। একইভাবে শাহজাদপুর থেকেও পাবনার দিকে কোনো বাস ছেড়ে যাচ্ছে না।
বাসমালিক ও যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুই পক্ষের দ্বন্দ্বের কারণে চলতি বছরেই অন্তত চারবার বাস চলাচল বন্ধ ছিল। আর গত সাত-আট বছরে বাস চলাচল বন্ধ ছিল অন্তত ৩০ বার। একবার বাস চলাচল বন্ধ হলে তা চালু হতে সময় লেগেছে পাঁচ দিন থেকে তিন সপ্তাহ পর্যন্ত।
বাসমালিক ও শ্রমিকদের সূত্রে জানা যায়, শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি ও পাবনার নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে রুট ও সময়সূচি নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে। পাঁচ-ছয় দিন আগে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির লোকজন শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির মালিকানাধীন নবীনবরণ পরিবহন নামের একটি বাস আটকায়। এর প্রতিবাদে শাহজাদপুরের বাসমালিকেরা নগরবাড়ী সমিতির মালিকানাধীন বাসগুলো চলাচলে বাধা দেন। ঘটনার জেরে গতকাল শনিবার পাবনার দাশুড়িয়ায় নবীনবরণ পরিবহনের একটি বাস আটকে রাখে পাবনা বাসমালিক সমিতি। পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় আজ সকালে শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতি শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দেয়। একই সঙ্গে পাবনার সড়ক দিয়েও শাহজাদপুরের বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পাবনা ও শাহজাদপুর উভয় সমিতির দুই শতাধিক বাস আজ সকাল থেকে বন্ধ রয়েছে। এতে বিপাকে পড়েছেন যাত্রীদের পাশাপাশি পরিবহনশ্রমিকেরাও।
এদিকে পাবনা থেকে বেড়া হয়ে ঢাকাগামী বেশির ভাগ পরিবহনের কাউন্টার বন্ধ থাকতে দেখা গেছে। দু–একটি বাসের কাউন্টার খোলা থাকলেও সেসব বাস বেড়া থেকে যাত্রী নিয়ে কাজীরহাট ফেরিঘাট হয়ে অথবা নাটোরের বনপাড়া হয়ে প্রায় ১০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।
পাবনা এক্সপ্রেস পরিবহনের বেড়া কাউন্টারের ব্যবস্থাপক মঞ্জুরুল হাসান বলেন, ‘শাহজাদপুর হয়ে পাবনার কোনো বাস যেতে না পারায় আমাদের বাসগুলো হয় ফেরি হয়ে, না হয় নাটোরের বনপাড়া ঘুরে ঢাকা যাচ্ছে।’
শাহজাদপুর মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘পাবনা ও নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতি আমাদের বাস চলাচলে বাধা দেওয়ায় এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে যাত্রীদের যেমন দুর্ভোগ হচ্ছে, তেমনি উভয় মালিক সমিতিরই ক্ষতি হচ্ছে। দুই পক্ষ আলোচনায় বসলে আশা করি সমাধানের পথ পাওয়া যাবে।’
পাবনা বাসমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোমিন মোল্লা বলেন, ‘শাহজাদপুর বাসমালিক সমিতির লোকজন প্রায় এক মাস ধরে নগরবাড়ী বাসমালিক সমিতির বাসগুলো শাহজাদপুরের ওপর দিয়ে যেতে দিচ্ছিল না। আজ থেকে তারা পাবনার সব বাসের চলাচল বন্ধ করে দিল। শাহজাদপুর মালিক সমিতি ছোটখাট যেকোনো ব্যাপার হলেই তাদের এলাকার ওপর দিয়ে পাবনার বাস চলাচল বন্ধ করে দিচ্ছে। আমরা এর স্থায়ী সমাধান চাই।’