পাঁচ জেলার ৪০% এলাকায় পানির তীব্র সংকট
Published: 22nd, March 2025 GMT
‘পানির মতো সহজ’ কথাটি বাংলাদেশে সুপেয় পানির ক্ষেত্রে খাটছে না। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলসহ অর্ধেক এলাকায় গত কয়েক বছর মিলছে না নিরাপদ পানি। বছর পাঁচেক আগেও যেসব এলাকায় পানি ছিল সহজলভ্য, এখন সেখানেই তীব্র সংকট। শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলেরই এক-তৃতীয়াংশের বেশি এলাকায় সুপেয় পানির তীব্র সংকট। বরিশাল, পিরোজপুর, বরগুনার মতো অসংখ্য নদনদীবেষ্টিত এলাকায়ও পানির সংকট তীব্র। রাজবাড়ীর মতো পদ্মা তীরের জেলায় শুষ্ক মৌসুমে শুকিয়ে যাচ্ছে পুকুর-খাল; পানি উঠছে না নলকূপে। হাওরেও একই সংকট।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কৃষিতে ব্যাপকভাবে ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার বেড়েছে। অপরিকল্পিতভাবে উত্তোলনের কারণে ক্রমাগত নামছে স্তর। আবার জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টি কমে গেছে। ফলে গ্রামের মানুষকেও এখন তৃষ্ণা মেটাতে টাকা খরচ করতে হচ্ছে। লাগামহীন ভূগর্ভস্থ পানি তোলা বন্ধ না হলে সামনে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা দেবে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের।
এ অবস্থায় আজ শনিবার দেশে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান পালন করবে বিশ্ব পানি দিবস। এবারের প্রতিপাদ্য– ‘মাটির নিচের পানি অশেষ নয়, আপনার সন্তানের স্বার্থে পানি ব্যবহারে যত্নশীল হোন’। দিবসটি উপলক্ষে বেলা ১১টায় রাজধানীর পানি ভবনে আলোচনা সভায় বক্তৃতা করবেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।
অবৈধ সেচ পাম্পে সর্বনাশ
নোয়াখালীর উপকূলীয় সুবর্ণচর রবিশস্যের অন্যতম ভান্ডার। গত কয়েক বছরে রবিশস্য ছেড়ে বোরো ধান চাষ করছেন কৃষকরা। শুষ্ক মৌসুমে ধান আবাদই এখন সুবর্ণচরের জন্য অভিশাপ হয়ে দেখা দিয়েছে। খাল-বিল-ডোবায় ভরপুর মিঠাপানির রাজ্যে এখন হাহাকার। ধান চাষে ভূগর্ভের পানির অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহারের কারণে বসতঘরের গভীর নলকূপে উঠছে না পানি। পরিকল্পনা ও অনুমোদন ছাড়াই চাষিরা ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ ফুট গভীর নলকূপ বসিয়ে সেচকাজে ব্যবহার করছেন। এর প্রভাবে উপজেলাজুড়ে পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, সারাদেশে ১০ লাখের বেশি অবৈধ সেচ পাম্প রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) তথ্য বলছে, সুবর্ণচরে চাষাবাদের জন্য ২৪৫টি গভীর নলকূপের (সেচ পাম্প) অনুমোদন রয়েছে। চাষিরা ব্যক্তিগত উদ্যোগে তিন হাজারের বেশি সেচ পাম্প বসিয়েছেন। একটি গভীর নলকূপে ভূগর্ভ থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১ হাজার ৮০০ কিউসেক পানি তোলা হয়।
নাটোরে সেচকাজে সচল প্রায় ৪০ হাজার গভীর-অগভীর নলকূপ, যার ৩৩ হাজারই অবৈধ। নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে পানি তোলায় নামছে স্তর।
জরিপ ছাড়াই বাণিজ্যিকভাবে গভীর-অগভীর নলকূপ স্থাপনের প্রতিযোগিতা চলছে নওগাঁর বরেন্দ্র মাঠগুলোতে। ভূগর্ভ থেকে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনে দ্রুত নামছে স্তর। বরেন্দ্র জনপদে গত এক দশকে অন্তত ১৫ ফুট নেমেছে পানির স্তর।
নওগাঁয় প্রায় দুই লাখ হেক্টর জমি চাষাবাদে বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের ৪০ হাজার ৫০টি গভীর নলকূপ এবং পল্লী বিদ্যুতের প্রায় ৬৫ হাজার অগভীর নলকূপ ব্যবহৃত হচ্ছে।
পানিসম্পদ পরিকল্পনা সংস্থা ওয়ারপোর জরিপে দেখা যায়, উত্তরের পাঁচ জেলার বিভিন্ন অংশ নিয়ে গঠিত বরেন্দ্রের ৪০ শতাংশ এলাকায় পানির তীব্র সংকট দেখা দিয়েছে। বরেন্দ্রর ২১৪ ইউনিয়নের ৮৭টিতেই রয়েছে উচ্চ পানি সংকট। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের গবেষণায়ও বরেন্দ্র এলাকায় পানির গড় নিম্নস্তর নামতে দেখা গেছে। গবেষণা অনুযায়ী, বরেন্দ্র এলাকায় ১৯৯৪ সালে মাটির নিচে পানির গড় নিম্নস্তর ছিল ৩৫ ফুট। ২০০৪ সালে ৫১, ২০১৩ সালে ৬০ এবং ২০২১ সালে তা ৭০ ফুটে পৌঁছেছে। অবশ্য গত বছর কোনো কোনো এলাকায় প্রায় ২০০ ফুট নিচেও পানির স্তর পাওয়া যায়। ফলে অনেক স্থানেই সরকারের গভীর নলকূপ পানির নাগাল না পেয়ে হয়ে গেছে বিকল।
কৃষি গবেষক ড.
তিনি প্রচুর গাছপালা লাগানো, নদীনালা, খালবিলের গভীরতার পাশাপাশি সংখ্যা বাড়ানোর পরামর্শ দেন। যেন বৃষ্টির পানি দীর্ঘদিন জমা থাকে ও কৃষিকাজে ব্যবহার করা যায়।
কৃষি সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান বলেন, ‘আমরা ধাপে ধাপে ভূগর্ভস্থ পানির নির্ভরতা কমানোর চেষ্টা করছি। সুষম ফসল চাষ নিয়ে পরিকল্পনা করছি। ধান অধ্যুষিত এলাকায় ধান চাষ এবং রবি অধ্যুষিত এলাকায় হবে রবি ফসল।’
পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সচিব নজরুল ইসলাম বলেন, ‘সব পানি সুপেয় নয়। আর্সেনিক, লবণাক্ততার পাশাপাশি অনেক এলাকায় সরবরাহ করা পানি বিশুদ্ধ করতে হচ্ছে। সমস্যাগুলো কীভাবে দ্রুত নিরসন করা যায়, সে বিষয়ে সরকার সচেষ্ট। আশা করছি, ধাপে ধাপে পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: এল ক য় প ন বর ন দ র ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা সেতুতে ঈদের ছুটির শেষ ৪৮ ঘণ্টায় ৭ কোটি টাকার টোল আদায়
ঈদের ছুটি শেষে গত দুই দিনে সড়কে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। বেড়ে যায় যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন পারাপারও। বেড়েছে টোল আদায়ও। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ৭৭৭টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫০ টাকা।
যমুনা সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ হাজার ৫৯৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৮ হাজার ২৬৬টি যানবাহন রয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ৩৩ হাজার ৩২৯টি যানবাহন পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার ৫০ টাকা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের দিকে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন পার হয়। এতে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী যানবাহন ছিল ৩০ হাজার ৮১৭টি। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির জানান, স্বাভাবিক সময়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন পারাপার হয়। এবার ঈদের ছুটির শুরুতে এবং শেষে যানবাহন পারাপার কয়েক গুণ বেড়ে যায়।