সুদানের সেনাবাহিনী দুই বছর পর রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ পুনরায় নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে। দুই বছর আগে দেশটিতে সংঘাতের শুরুর দিকে আধা সামরিক র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ) প্রাসাদটি দখল করেছিল।

সেনাবাহিনীর সদস্যরা সম্প্রতি প্রাসাদের কাছাকাছি চলে আসে। এ অবস্থায় সেনাসমর্থিত সরকার গত শুক্রবার প্রেসিডেন্ট প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার ঘোষণা দিল।

সুদানের তথ্যমন্ত্রী খালেদ আল-আইসার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে লিখেছেন, ‘আজ (শুক্রবার) আমরা পতাকা উত্তোলন করেছি, প্রাসাদ এখন আমাদের হাতে। বিজয় সম্পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত আমাদের লড়াই চলবে।’

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে সেনাসদস্যদের প্রাসাদ কমপ্লেক্সে উল্লাস করতে দেখা গেছে।

২০২৩ সালের এপ্রিলে সুদানে সংঘাতের শুরুর দিকে আরএসএফ প্রাসাদ কমপ্লেক্স এবং রাজধানী খার্তুমের বড় অঞ্চল দখল করে নেয়।

আরএসএফ প্রাসাদ কমপ্লেক্স দখলে নেওয়ার পর সেনাপ্রধান আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহানের নেতৃত্বাধীন সরকার রাজধানী ছেড়ে লোহিত সাগরের উপকূলীয় শহর পোর্ট সুদানে সরে যেতে বাধ্য হয়।

প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ কমপ্লেক্সে দুটি ভবন রয়েছে। মূলটি ওসমানী-মিসরীয় প্রজাতন্ত্রের প্রাসাদ, যা তৈরি করা হয়েছিল ১৮২৫ সালে। পরে ২০১৫ সালে সেখানে সবচেয়ে বড় প্রাসাদটি তৈরি করেন দেশটির ক্ষমতাচ্যুত প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশির।

আদি ভবনটি ছোট হলেও সেটি প্রতীকীভাবে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, এটাকে তখন প্রজাতন্ত্রের প্রাসাদ বলা হতো। নিজেকে ইমাম মাহদি এবং মিসরের শাসনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণাকারী মুহাম্মদ আহমদ বিন আবদুল্লাহর অনুসারীরা ১৮৮৫ সালে বিখ্যাত ব্রিটিশ মেজর জেনারেল চার্লস জর্জ গর্ডনকে রিপাবলিকান প্রাসাদের সিঁড়িতে হত্যা করেছিল।

চার্লস জর্জ গর্ডন ইতিহাসে ‘গর্ডন পাশা’ হিসেবে পরিচিত। তাঁর হত্যাকাণ্ডের মধ্য দিয়ে উত্তর আফ্রিকার দেশটিতে ওসমানি-মিসরীয় শাসনের অবসান ঘটে।

দুই বছর আগে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর নতুন ও পুরোনো দুটি ভবনই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

ড্রোন হামলা

নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার কয়েক ঘণ্টা পর প্রেসিডেন্ট প্রাসাদে একটি ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছে আরএসএফ। এতে তিনজন সাংবাদিক নিহত হন। তাঁরা সুদানের রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের জন্য সেখানে কাজ করছিলেন।

আরএসএফ জানিয়েছে, তারা প্রাসাদের আশপাশেই রয়েছেন। লড়াই এখনো ‘শেষ হয়নি’।

গত কয়েক মাসে সুদানের মধ্যাঞ্চলে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্থান নিয়ন্ত্রণে নেয় সেনাবাহিনী। এতে সেখানে আরএসএফ ক্রমে কোণঠাসা হয়ে পড়ে।

তবে পশ্চিম দিকের অঞ্চল দারফুরে নিজেদের অবস্থান আরও মজবুত করেছে আরএসএফ। আধা সামরিক বাহিনীটি সেখানে গণহত্যা চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

প্রেসিডেন্টের প্রাসাদ নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার পর সুদানের সেনাবাহিনীর সদস্যদের উল্লাস। রাজধানী খার্তুমে প্রেসিডেন্টের প্রাসাদে, ২১ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প র স দ কমপ ল ক স দ ই বছর

এছাড়াও পড়ুন:

সুদানের এল-ফাশারে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত ৪১ বেসামরিক

সুদানের উত্তর দারফুর রাজ্যের রাজধানী এল ফাশারে আধাসামরিক বাহিনী র‍্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেস (আরএসএফ)-এর কামানের গোলাবর্ষণে কমপক্ষে ৪১ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত এবং অনেক মানুষ আহত হয়েছেন।

আজ মঙ্গলবার সুদানের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানিয়েছে। খবর তুরস্কের বার্তা সংস্থা আনাদোলুর।

সামরিক বাহিনীর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, সোমবার রাতে শহরের আবাসিক এলাকা লক্ষ্য করে চালানো এই হামলায় হতাহতদের মধ্যে নারী ও শিশুও রয়েছে।

সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তাদের বাহিনী শহরে আরএসএফের আক্রমণ প্রতিহত করতে সক্ষম হয়েছে, ৬০০ আরএসএফ যোদ্ধাকে করেছে এবং ২৫টি সামরিক যানবাহন ধ্বংস করেছে।

সেনাবাহিনীর এই বিবৃতির বিষয়ে বিদ্রোহী আধা সামরিক সামরিক বাহিনী আরএসএফর পক্ষ থেকে কোনো মন্তব্য করা হয়নি।

সোমবার থেকে এল-ফাশেরে সেনাবাহিনী এবং আরএসএফের মধ্যে তীব্র লড়াই চলছে, যার ফলে শহরের মানবিক সংস্থাগুলো বেসামরিক নাগরিকদের খাবার বিতরণ বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে।

এই মাসের শুরুতে, সেনাবাহিনীর সাথে সংঘর্ষের পর আরএসএফ শহরের জমজম শরণার্থী শিবিরের নিয়ন্ত্রণ দখল করার দাবি করে। জাতিসংঘের পরিসংখ্যান অনুসারে, এই লড়াইয়ের ফলে কমপক্ষে ৪০০ বেসামরিক মানুষ নিহত এবং প্রায় ৪ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।

২০১৪ সালের ১০ মে থেকে, সুদানের সেনাবাহিনী (এসএএফ) এবং আধাসামরিক বাহিনী আরএসএফের মধ্যে এল ফাশারে ভয়াবহ লড়াই চলছে। আরএসএফের দারফুরের প্রায় পুরো বিশাল পশ্চিমাঞ্চল দখল করে নিয়েছে। তারা দারফুরের রাজ্যের রাজধানী এল-ফাশার অবরোধ করে রেখেছে। কিন্তু শহরটি দখল করতে পারেনি। সেখানে সেনাবাহিনী-সমর্থিত মিলিশিয়ারা বারবার তাদের পিছনে ঠেলে দিয়েছে।

ক্ষমতার দখল ঘিরে সুদানের সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনী মধ্যে ২০২৩ সালের এপ্রিল থেকে লড়াই চলছে। জাতিসংঘ এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মতে, সুদানে সেনাবাহিনী এবং আধাসামরিক বাহিনীর মধ্যে চলমান সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত ২০ হাজারেও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন এবং দেড় কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। তবে মার্কিন বিশেষজ্ঞদের গবেষণায় মোট নিহতের সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩০ হাজার বলে অনুমান করা হয়েছে।

 

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুদানের এল-ফাশারে আধাসামরিক বাহিনীর হামলায় নিহত ৪১ বেসামরিক