আমাদের শৈশবের একটা বিশাল অংশ বিটিভির নাটক ও চলচ্চিত্র দেখে কেটেছে। বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ও নাটক আমাদের বেড়ে ওঠার অবিচ্ছেদ্য অংশ ছিল। মার্চ ও ডিসেম্বরজুড়ে প্রতি সপ্তাহে টেলিভিশনে নিয়মিত প্রচারিত হতো হাঙর নদী গ্রেনেড, আগুনের পরশমণি, ওরা ১১ জন। এসব চলচ্চিত্র দেখতে দেখতে একরকম মুখস্থই হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু সময় বদলেছে। সংক্ষিপ্ত রিলস দেখে আর স্ক্রল করতে করতে বড় হচ্ছে এখনকার প্রজন্ম। তাদের অনেকেরই ইতিহাস জানার আগ্রহ কমে যাচ্ছে। ব্যক্তিগতভাবে আমি নিজে মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কে সচেতন হয়েও দিন দিন নতুন করে আরও বিস্তৃতভাবে জানার আগ্রহ হারিয়ে ফেলছি। অবশ্য তার কারণও রয়েছে। গণ-অভ্যুত্থানের পর দেখা যাচ্ছে, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে এক শ্রেণির মানুষের মধ্যে উদাসীনতা বাড়ছে। নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সেইরূপ প্রপাগান্ডাও তারা ছড়াচ্ছে। ফলে, আমাদের অনেকের মধ্যেই প্রশ্ন জাগা অস্বাভাবিক নয় যে আমাদের ইতিহাস কি বিকৃত হয়েছে? নাকি এখনো হয়ে চলেছে? রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের সঙ্গে কি ইতিহাসও সুবিধাবাদীদের হাতে রূপ পাল্টায়?

আরও পড়ুনগণেশ্বরী পারের সাত শহীদ১৪ ডিসেম্বর ২০২৪

একটা বিষয় মনে রাখা জরুরি, চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভূমিকা অনস্বীকার্য। দেশভাগের পর থেকে একাত্তর পর্যন্ত এ দেশের জনগণ বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করেছে বারবার। অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরার ফলস্বরূপ আমরা এই স্বাধীন ভূখণ্ড পেয়েছি। ঠিক যেমন নব্বইয়ের স্বৈরাচার পতনের পর আমরা একাত্তরের চেতনাকে ভুলিনি, তেমনই চব্বিশের স্বৈরাচার পতনের পরও আমাদের সেই চেতনাকে ভুলে যাওয়া চলবে না।

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে মুক্তিযুদ্ধচর্চার প্রসার ঘটাতে আরও কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করা জরুরি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসিতে প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে ‘আমার ভাষা আমার চলচ্চিত্র’ অনুষ্ঠানে বিকল্পধারা ও মূলধারার রুচিসম্মত চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক চলচ্চিত্র অন্যতম। ক্যাম্পাসে এমন চলচ্চিত্র প্রদর্শনী আরও বাড়ানো দরকার। পাশাপাশি, সচেতন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোচনা সভা, পাঠচক্র, বিতর্ক প্রতিযোগিতার আয়োজন জরুরি। শুধু অফলাইনে নয়, বরং অনলাইনেও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ে প্রচারণা চালাতে হবে। যেন নতুন প্রজন্ম মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন হয়।

আরও পড়ুনকে ছিলেন মধুদা১২ ডিসেম্বর ২০২২

যদিও বিশ্ববিদ্যালয়ের সেমিনার ও লাইব্রেরিগুলোতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক অনেক বই ও গবেষণাপত্র রয়েছে, তবে সেগুলোর চর্চা সীমিত। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই শিক্ষার্থীরা বিসিএস কিংবা অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার এমসিকিউ ও লিখিত প্রস্তুতির প্রয়োজনে সাল, তারিখ, স্থান মুখস্থ করেন। কিন্তু মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে গভীর গবেষণার আগ্রহ তাঁদের মধ্যে সীমিত। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিভিন্ন বিভাগে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক গবেষণায় উৎসাহিত করা ও এ বিষয়ে প্রেজেন্টেশন, অ্যাসাইনমেন্টের পরিমাণ বাড়ানো প্রয়োজন।

লামিয়া ইসলাম.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: চলচ চ ত র ন র পর আম দ র

এছাড়াও পড়ুন:

তানোরে চুরি হওয়া ১১ লাখ টাকা মাটি খুঁড়ে উদ্ধার

রাজশাহীর তানোর উপজেলায় মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয়েছে চুরি হয়ে যাওয়া প্রায় ১১ লাখ টাকা। এসব টাকা চুরির অভিযোগে আরজেদ আলী ওরফে কুরহান (৩৫) নামের এক যুবককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি উপজেলার জোড়পাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুরে কুরহানের বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে টাকার ব্যাগ উদ্ধার করে পুলিশ। এর আগেই কুরহানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। টাকা উদ্ধারের পর বুধবার বিকেলে কুরহানকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে বলে জেলা পুলিশের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

পুলিশ জানায়, রাজশাহী নগরের শিরোইল মঠপুকুর এলাকার বাসিন্দা মাবিয়া খাতুন জমি বিক্রি করতে গত সোমবার তানোর উপজেলা সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে যান। সঙ্গে ছিল জমি বিক্রির ১১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। অফিসে বসে মোবাইল ফোনে কথা বলার সময় মাবিয়া খাতুন তার টাকার ব্যাগটি চেয়ারের পাশে রাখেন। এ সুযোগে কৌশলে ব্যাগটি নিয়ে সটকে পড়ে কুরহান।

মোবাইল ফোনে কথোপকথন শেষে ব্যাগটি না পেয়ে কান্নাকাটি শুরু করেন মাবিয়া খাতুন। এতে পুরো অফিসজুড়ে হইচই পড়ে যায়। পরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন ব্যক্তি ব্যাগ নিয়ে দ্রুত চলে যাচ্ছে। ঘটনার দিনই মাবিয়া খাতুন তানোর থানায় অভিযোগ করেন। এর ভিত্তিতে পুলিশ প্রযুক্তির ব্যবহার করে চোর শনাক্ত করে। মঙ্গলবার রাতেই কুরহানকে তার নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

পুলিশকে কুরহান জানিয়েছেন, ব্যাগটি চুরি করে কাউকে কিছু না বলে তিনি বাড়ির পেছনে মাটি খুঁড়ে তা পুঁতে রাখেন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে টাকা খরচের পরিকল্পনা ছিল তার। তবে, এত দ্রুত ধরা পড়বেন, সেটা ভাবেননি।

তানোর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আফজাল হোসেন জানিয়েছেন, কুরহান চুরির কথা স্বীকার করলে তার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বাড়ির পেছনের মাটি খুঁড়ে উদ্ধার করা হয় ব্যাগভর্তি টাকা। আদালতের অনুমতি নিয়ে এই টাকা মালিক মাবিয়া খাতুনের কাছে হস্তান্তর করা হবে।

ঢাকা/কেয়া/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ