ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে প্রায় ৩০ বছর ধরে বাস চালান আবুল হোসেন। তবে সরাইল বিশ্বরোড মোড়ে আসলেই তার আর গাড়ি চালাতে ইচ্ছে হয় না। এই চালক বলেন, “খানাখন্দ আর গর্তের কারণে এমন কোনো দিন নেই এখানে আসলে ৩০ মিনিটের আগে বাস নিয়ে যেতে পেরেছি।” 

আবুল হোসেন এই মহাসড়কে চলাচলকারী ‘রিয়েল কোচ’ বাসের মালিকও। তিনি আরও বলেন, “সামনে ঈদ আসছে, তখন আরও বেশি জ্যাম থাকবে, সময়ও বেশি লাগবে। তাই ঈদের আগেই এ অংশের সংস্কার জরুরি।”

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় পর্যন্ত ১২ দশমিক ২১ কিলোমিটার- এ অংশ জুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। যে কারণে এখানে গাড়ির সর্ব্বোচ্চ গতিবেগ নেমে আসে ১০ কিলোমিটারে। আশুগঞ্জ থেকে সরাইল বিশ্বরোড মোড় সড়ক জুড়ে আছে খানাখন্দ ও ছোট-বড় গর্ত। ফলে গাড়ি চলতে হয় ধীরগতিতে। এর ফলে এবারের ঈদযাত্রায় যানজটের ভোগান্তি সৃষ্টি হবে বলে নিজেই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট হাইওয়ে থানার ওসি।

সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো.

মামুন রহমান বলেন, “১০ কিলোমিটার বেগে গাড়ি আধা কিলোমিটার চলাচল করলে পিছনে থাকা গাড়িও ধীরে চলাচল করতে হয়। ফলে জ্যামের সৃষ্টি হয়।”

এ পথে চলাচল করা চালক-যাত্রীরা বলছেন, প্রতি বছর ঈদযাত্রায় দেশের অন্য মহাসড়কের তুলনায় ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা অংশে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এর মধ্যে আশুগঞ্জ থেকে আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত ৩৭ কিলোমিটার ফোরলেন এবং বিশ্বরোড থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া অংশে মাধবপুর পর্যন্ত ২২ কিলোমিটার অংশে ছয় লেনের নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। তার পাশাপাশি মহাসড়কের ওপর অবৈধ হাট-দোকানপাট, যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং, অবৈধ থ্রি-হুইলার অনিয়ন্ত্রিত চলাচলের কারণে যানজটে পড়তে হয়।

ট্রাক চালক আলমগীর হোসেন বলেন, “সরাইল বিশ্বরোড মোড় গোল চত্বরে ঢাকা-সিলেট-কুমিল্লার সব যানবাহন একত্রিত হয়ে পার হতে হয়। তিন দিকের গাড়ি এক জায়গায় একত্রিত হওয়ার ফলে এমনিতেই জ্যামের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও আছে ভাঙাচোরা ও বড় বড় গর্ত।” 

তিনি আরও বলেন, “আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ফোরলেন ও সরাইল বিশ্বরোড থেকে সিলেট পর্যন্ত ছয় লেনের কাজ চলমান। নির্মাণ কাজের জন্য এসব সড়কে একটু পরপর বালুর গাড়িসহ বিভিন্ন মালামাল এনে রাখার ফলে জ্যামের সৃষ্টি হয়।” 

এ ট্রাক চালক আরও অভিযোগ করেন, বিশ্বরোড থেকে সিলেটের পথে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অংশের খাঁটিহাতা মোড়, বাড়িউড়া, শাহাবাজপুর, চান্দুরা, বুধন্তী, আলিনগর, মাধবপুর ব্রিজের অংশ পর্যন্ত সড়কের পাশে অবৈধভাবে গাড়ি রাখার জন্য আরও বেশি জ্যামে পড়তে হয়।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর থেকে প্রত্যেকদিন সরাইল বাজারে ব্যবসা করতে আসা নূরুল হুদা বলেন, “বিশ্বরোড মোড়ের যানজটের ফলে প্রতিদিন ১ ঘণ্টা সময় বেশি নিয়ে বাসা থেকে বের হতে হয়।”

ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের বেলতলা এলাকার মুন্নি স্টোর দোকানের সত্ত্বাধিকারী মমিন মিয়া বলেন, “সড়কের বেহাল অবস্থার ফলে আশুগঞ্জ থেকে দোকানের জন্য মালামাল কিনে আনতে আসা-যাওয়া খরচ তিনগুণ বেড়েছে। অন্যদিকে মহাসড়কের ধুলাবালির জন্য দোকানে কেউ বসতে চায় না এজন্য চা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।”

সড়কের বেহাল অবস্থার কথা স্বীকার করে সরাইল খাঁটিহাতা হাইওয়ে থানার ওসি মো. মামুন রহমান বলেন, “আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত ১০ কিলোমিটার সড়কে খানাখন্দ ও গর্তের ফলে এই স্থানে ১০০ কিলোমিটার গতিতে আসা গাড়িগুলো ১০ কিলোমিটার গতিতে চলাচল করতে হয়। তাই দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়।” 

তবে ফোরলেন ও ছয় লেনের ফলে কোনো জ্যাম হবে না বলেও জানান তিনি। 

তিনি আরও বলেন, “আসন্ন ঈদ উপলক্ষে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে যানজট নিরসনে, ডাকাতি ও ছিনতাই রোধে রাতে হাইওয়ে থানার তিনটি মোবাইল টিম কাজ করছে এবং বিশ্বরোডের জন্য ট্রাফিক পুলিশের একটি টিম কাজ করছে।”

মহাসড়কে অবৈধ স্থাপনার বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি বলেন, “বিশ্বরোডের পশ্চিম দিকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে তবে পূর্বদিকে অভিযান জরুরি।” 

সদর, সরাইল হাইওয়ে নির্বাহী কর্মকর্তা ও ওসিসহ পাঁচ সদস্যের সমন্বয়ের টিম একত্রিত হয়ে অভিযান পরিচালনা করার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, “সবার ব্যস্ততার ফলে অভিযান পরিচালনায় দেরি হচ্ছে। তবে আমরা আশা করছি, এবারে ঈদযাত্রায় ঘরমুখো মানুষ ও পরিবহন চালকদের ভোগান্তি হবে না।”

খানাখন্দের সংস্কার নিয়ে আশুগঞ্জ বিশ্বরোড আখাউড়া স্থলবন্দর পর্যন্ত চার লেন প্রকল্পের প্রকল্প ব্যবস্থাপক-২ মো. শামিম আহমেদ বলেন, “আমরা আশুগঞ্জ থেকে বিশ্বরোড পর্যন্ত খানাখন্দ ও গর্তের ভরাটে কাজ করেছি। বাকী কাজগুলো ঈদের আগে শেষ করে ফেলা হবে।”

ঢাকা/রুবেল/টিপু

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব র হ মণব ড় য় ১০ ক ল ম ট র সড়ক র ব য নজট র র জন য আরও ব হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

পাল্টাপাল্টি হামলার তীব্রতা বাড়ল

ইরান ও ইসরায়েলের পাল্টাপাল্টি হামলা ঘিরে আরও অশান্ত হয়ে উঠেছে মধ্যপ্রাচ্য। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে হামলার তীব্রতা বাড়াচ্ছে দুই দেশ। ইসরায়েলে গত শনিবার রাতভর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছেন। একই রাতে ইরানের গ্যাসক্ষেত্র ও তেল শোধনাগারে বোমা হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এ হামলায় ইরানের কতজন নিহত হয়েছে, তা সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।

গতকাল রোববার ছিল দুই দেশের পাল্টাপাল্টি হামলার তৃতীয় দিন। শনিবার রাতের পর রোববার দিনের বেলায়ও পাল্টাপাল্টি হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল ও ইরান। এদিন ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা জানিয়েছে ইয়েমেনের সশস্ত্র

গোষ্ঠী হুতি। চলমান সংঘাতে এই প্রথম ইরানপন্থী কোনো গোষ্ঠী যোগ দিল। এমন পরিস্থিতিতে দুই দেশকে শান্ত করার জন্য প্রচেষ্টা শুরু করেছে বিভিন্ন দেশ।

গতকাল রাত একটায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলা চলছিল। এ রাতেও তেহরানের নিয়াভারান, ভালিয়াসর ও হাফতে তির স্কয়ার এলাকায় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। ইরানের পূর্বাঞ্চলে মাশহাদ বিমানবন্দরে একটি ‘রিফুয়েলিং’ উড়োজাহাজে আঘাত হানার কথা জানায় ইসরায়েলি বাহিনী। এই উড়োজাহাজগুলো আকাশে থাকা অবস্থায় অন্য উড়োজাহাজে জ্বালানি সরবরাহ করতে সক্ষম। ইরান থেকেও ইসরায়েলে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার খবর পাওয়া গেছে।

ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের

ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকানোর কথা বলে গত বৃহস্পতিবার রাতে দেশটিতে প্রথমে হামলা চালায় ইসরায়েল। ওই রাতে ইসরায়েলের দুই শতাধিক যুদ্ধবিমান ইরানের ‘পরমাণু ও ক্ষেপণাস্ত্র’ স্থাপনায় আঘাত হানে। শুক্র ও শনিবারও ইরানে হামলা চলে। পাল্টা জবাব দিচ্ছে তেহরানও। তবে ইসরায়েলে শনিবার রাতভর ইরান যে হামলা চালিয়েছে, তা ছিল সবচেয়ে ব্যাপক।

ইসরায়েলে শনিবার প্রথম দফায় ইরানের হামলা শুরু হয় রাত ১১টার পরপর। এ সময় ইসরায়েলের জেরুজালেম ও হাইফা শহরে বেজে ওঠে সাইরেন। হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয় হাইফায় অবস্থিত তেল শোধনাগার। পরে রাত আড়াইটার দিকে দ্বিতীয় দফায় হামলা শুরু করে ইরান। তখন তেল আবিব ও জেরুজালেমে বিকট বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমগুলো জানিয়েছে, শনিবার রাতে দুই দফায় ৭৫টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে ইরান। প্রথম দফায় ছোড়া হয় ৪০টি। এতে ইসরায়েলের উত্তরাঞ্চলের তামরা শহরে চারজন নিহত হন। দ্বিতীয় দফায় ছোড়া হয় ৩৫টি ক্ষেপণাস্ত্র। এর একটি আঘাত হানে তেল আবিবের কাছে বাত ইয়াম এলাকায়। এতে অন্তত ছয়জন নিহত ও প্রায় ২০০ জন আহত হন। এ ছাড়া রেহভোত শহরে আহত হয়েছেন ৪০ জন।

ইসরায়েলি হামলায় জ্বলছে ইরানের শাহরান তেলের ডিপো। গতকাল দেশটির রাজধানী তেহরানের কাছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ