একটা সময় ছিল যখন ঘরে ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজার রাখাকে অনেকে বিলাসিতার প্রতীক মনে করত। তবে সেই চিত্রে এসেছে পরিবর্তন। ডিপ ফ্রিজ এখন বিলাসিতা নয়, প্রয়োজনীয় পণ্য। অনেকেই ভাবতে পারেন, যখন ঘরে রেফ্রিজারেটর রয়েছে, তখন আলাদা ডিপ ফ্রিজ কেন প্রয়োজন? এর মূল কারণ খাদ্য সংরক্ষণের সময়সীমা ও মান বজায় রাখা। সাধারণ ফ্রিজের সঙ্গে থাকা ফ্রিজারে জায়গার সীমাবদ্ধতা থাকে। তাই চাইলেই অনেক খাবার সংরক্ষণ করে রাখা যায় না। ডিপ ফ্রিজ বা ফ্রিজার থাকলে এ নিয়ে চিন্তা করা লাগে না। পাশাপাশি এটি দীর্ঘ সময় খাদ্যের পুষ্টিগুণ অক্ষুণ্ণ রেখে সংরক্ষণ করে, যা বিশেষত বড় পরিবার এবং ব্যবসায়ীদের জন্য খুবই উপযোগী।
ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকসের অ্যাসিস্ট্যান্ট ব্রাঞ্চ ম্যানেজার মেহেদি হাসান ডিপ ফ্রিজের যত্ন নিয়ে বলেন, রেফ্রিজারেটর যেমন সতর্কতার সঙ্গে যত্ন নিতে হয়, ডিপ ফ্রিজের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা এমন নয়; বরং এর যত্ন নেওয়া বেশ সহজ। সবার আগে গুরুত্ব দিতে হবে এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে। বিশেষ করে খেয়াল রাখতে হবে ডিপ ফ্রিজে যেন দীর্ঘ সময় ধরে অনেক বেশি বরফ জমে না থাকে। এতে দুর্গন্ধ হওয়া বা জীবাণুর সংক্রমণ যেমন হতে পারে, তেমনি ডিপ ফ্রিজের স্থায়িত্ব কমার ঝুঁকি বাড়ে।
ফ্রিজারের যত্ন কেন জরুরি
নিয়মিত পরিচর্যা ও সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ফ্রিজার দীর্ঘদিন ভালো থাকে। এর যন্ত্রাংশে ধুলাবালি জমলে বা অতিরিক্ত বরফ জমলে এটি ধীরে ধীরে অকার্যকর হয়ে যেতে পারে।
ধুলা ও বরফ জমে গেলে ফ্রিজার তার স্বাভাবিক শীতলীকরণ ক্ষমতা হারাতে পারে, ফলে এটি অধিক বিদ্যুৎ খরচ করে। নিয়মিত পরিষ্কার করলে এটি সহজেই তার স্বাভাবিক তাপমাত্রা বজায় রাখতে পারে এবং বিদ্যুৎ খরচ কম হয়।
অপরিচ্ছন্ন ফ্রিজারে ব্যাকটেরিয়া ও দুর্গন্ধ তৈরি হতে পারে, যা খাবারের মান নষ্ট করতে পারে। খাবার সতেজ রাখতে হলে ফ্রিজারের সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ করা জরুরি।
নিয়মিত যত্ন না নিলে ফ্রিজারের কুলিং সিস্টেম নষ্ট হয়ে যেতে পারে, যা ব্যয়বহুল মেরামতের প্রয়োজন তৈরি করতে পারে। তাই রক্ষণাবেক্ষণ করলে অপ্রয়োজনীয় খরচ এড়ানো যায়।
অনেক সময় ভোল্টেজ ওঠানামা করলে ফ্রিজারের কম্প্রেসর নষ্ট হতে পারে। এ জন্য ভালো মানের ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুনফ্রিজারের যত্ন নেওয়ার সঠিক উপায়
ফ্রিজারকে ভালোভাবে পরিষ্কার রাখা তার দীর্ঘস্থায়িত্ব নিশ্চিত করে। প্রতি দুই থেকে তিন মাস অন্তর ফ্রিজার বন্ধ করে পরিষ্কার করুন। ভেতরের অংশ মৃদু সাবান বা বেকিং সোডা ও পানির মিশ্রণ দিয়ে মুছে নিন। অনেক সময় ফ্রিজারে দুর্গন্ধ তৈরি হয়, যা খাবারের গুণমান নষ্ট করতে পারে। খাবারের পাত্র ঢেকে রাখুন বা এয়ারটাইট কনটেইনার ব্যবহার করুন। দুর্গন্ধ দূর করতে ফ্রিজারে এক টুকরা লেবু, বেকিং সোডা, অথবা কফি পাউডার রেখে দিন।
ফ্রিজারের ভেতরে বেশি বরফ জমলে তার শীতলীকরণ ক্ষমতা কমে যায় এবং খাবার সংরক্ষণে সমস্যা দেখা দেয়।
ফ্রিজারের দরজা অপ্রয়োজনে খোলা যাবে না, এতে ভেতরে আর্দ্রতা ঢুকে বরফ জমতে পারে।
যদি খুব বেশি বরফ জমে যায়, তবে ডিফ্রস্ট মোড চালু করে বরফ গলিয়ে ফেলুন। কিছু মডেলের ফ্রিজারে স্বয়ংক্রিয় ডিফ্রস্ট অপশন থাকে, সেটি ব্যবহার করুন।
ফ্রিজারের কার্যকারিতা ঠিক রাখতে এবং খাবার সতেজ রাখতে সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখা জরুরি। সাধারণত ফ্রিজারের আদর্শ তাপমাত্রা -১৮ সেলসিয়াস (মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস) বা তার কম হওয়া উচিত। তাপমাত্রা খুব বেশি বা কম হলে খাবারের গুণগত মান নষ্ট হতে পারে। চাইলে থার্মোমিটার ব্যবহার করে এর সেটিংস ঠিক আছে কি না, তা নিশ্চিত হতে পারেন।
ফ্রিজারে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি জিনিস রাখলে ঠান্ডা বাতাস চলাচলে বাধা সৃষ্টি হয়, ফলে খাবার সমানভাবে ঠান্ডা হয় না। এর ধারণক্ষমতা অনুযায়ী খাবার রাখুন। সাধারণত ফ্রিজারের ৭০-৮০ শতাংশ জায়গা পূর্ণ রাখার পরামর্শ দেওয়া হয়, যাতে বাতাস চলাচল ঠিকমতো হয়।
ফ্রিজারের দরজার রাবার সিল বা গ্যাসকেট যদি নষ্ট হয়ে যায়, তবে ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যেতে পারে, ফলে ফ্রিজার কার্যকারিতা হারায়। এটি নরম কাপড় দিয়ে পরিষ্কার করুন। যদি সিল ঢিলা হয় বা ছিঁড়ে যায়, তবে যত দ্রুত সম্ভব পরিবর্তন করুন।
ফ্রিজারের পেছনের অংশে থাকা কনডেনসার কয়েলে ধুলাবালি জমে গেলে এটি অতিরিক্ত গরম হয়ে যেতে পারে এবং কার্যকারিতা কমে যেতে পারে। প্রতি ছয় মাস পরপর দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ানের সহায়তা নিয়ে কনডেনসার কয়েল পরিষ্কার করুন।
অনেক সময় ভোল্টেজ ওঠানামা করলে ফ্রিজারের কম্প্রেসর নষ্ট হতে পারে। এ জন্য ভালো মানের ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন, যাতে হঠাৎ বিদ্যুৎ সমস্যা হলে ফ্রিজার ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এর প্লাগ ও তার ঠিক আছে কি না মাঝেমধ্যে পরীক্ষা করুন। ফ্রিজারের এসব যন্ত্রাংশ ঠিকমতো কাজ করছে কি না, তা মাঝে মাঝে পরীক্ষা করুন। যদি এটি খুব বেশি শব্দ করে, প্রয়োজনের তুলনায় কম ঠান্ডা হয়, বা হঠাৎ বেশি বিদ্যুৎ খরচ হয়, তবে একজন টেকনিশিয়ানের সহায়তা নিতে পারেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর ন র ব যবহ র কর যত ন ন র যত ন
এছাড়াও পড়ুন:
রুয়া নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ছাত্রশিবিরের বিক্ষোভ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশনের (রুয়া) কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাচন স্থগিতের প্রতিবাদে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করছেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে এ কর্মসূচি শুরু করেন তাঁরা। এর আগে তাঁরা একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক হয়ে উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, রুয়া অ্যাডহক কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৯ মে পুনর্মিলনী এবং ১০ মে রুয়ার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু গঠনতন্ত্র লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে নির্বাচন বর্জন করেন বিএনপিপন্থী সাবেক শিক্ষার্থীরা। পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে দুই পক্ষের নির্বাচন নিয়ে পাল্টাপাল্টি যুক্তি চলতে থাকে।
এদিকে গতকাল ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে রুয়া নির্বাচন কমিশনের প্রধান কমিশনার পদত্যাগ করেন। সেই সঙ্গে গতকাল বুধবার গভীর রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) অধ্যাপক ইফতিখারুল আলম মাসউদের বাসভবনে ককটেল হামলার ঘটনা ঘটে। এ পরিস্থিতিতে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন স্থগিতের সিদ্ধান্ত জানিয়ে নোটিশ জারি করেন রুয়ার অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ-উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান। এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ছাত্রশিবিরের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভ করছেন।
এ সময় বিক্ষোভকারীরা ‘সিলেকশন না ইলেকশন, ইলেকশন ইলেকশন’, ‘প্রশাসন জবাব দে, রুয়া কি তোর বাপের রে’, ‘রুয়া নিয়ে টালবাহানা, চলবে চলবে না’, ‘অ্যাডহক না নির্বাচন, নির্বাচন নির্বাচন’, ‘সিন্ডিকেট না রুয়া, রুয়া রুয়া’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
এ সময় ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা-কর্মীদেরও উপস্থিত থেকে বক্তব্য দিতে দেখা গেছে। পরে জামায়াত ইসলামীর কয়েকজন নেতাও কর্মসূচিতে যোগ দেন। একপর্যায়ে বিকেল পৌনে ছয়টার দিকে বিক্ষোভকারীদের একটি প্রতিনিধি দল উপাচার্যের সঙ্গে আলোচনার জন্য বাসভবনের ভেতরে প্রবেশ করে। বিকেল ছয়টায় শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত বিক্ষোভ চলছিল।
বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ইসলামী ছাত্রশিবিরের সভাপতি মোস্তাকুর রহমান জাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘১০ মে রুয়া নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ হঠাৎ সেই নির্বাচন স্থগিত ঘোষণা করেছে প্রশাসন। এই সিদ্ধান্তে ক্যাম্পাসের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা মনঃক্ষুণ্ন হয়েছে। যারা রুয়া নির্বাচন দিতে পারে না, তারা রাকসু নির্বাচন কীভাবে বাস্তবায়ন করবে? ১০ মের নির্বাচন সেই একই তারিখে হতে হবে। এই সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।’