গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলায় সাঁওতালদের জমির অধিকার কেড়ে নিতে নানা ধরনের অপকর্ম করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১৬ সালে পুলিশকে দিয়ে আগুন লাগানোসহ সংঘর্ষে তিনজন সাঁওতাল নিহতও হন। সেই ঘটনার জন্য তৎকালীন স্থানীয় সংসদ সদস্যসহ তখনকার ক্ষমতাসীন দলের অনেক নেতা–কর্মীকে অভিযুক্ত করে থাকেন সাঁওতালরা। অভিযুক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছে। কিন্তু আসামিরা এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হননি। সে ঘটনার বিচারের জন্য জোর দাবি জানিয়ে আসছেন সাঁওতালরা।
প্রথম আলোর প্রতিবেদন জানাচ্ছে, বিচারের দাবিতে গত রোববার গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা সদরে মিছিল ও সমাবেশ করেছেন সাঁওতাল সম্প্রদায়ের মানুষ। কর্মসূচি শেষে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে (ইউএনও) স্মারকলিপিও দিয়েছেন তাঁরা। উল্লেখ্য, আখ কাটাকে কেন্দ্র করে ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর পুলিশ ও চিনিকলের কর্মচারীদের সঙ্গে সাঁওতালদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে শ্যামল, মঙ্গল, রমেশ—৩ সাঁওতাল নিহত এবং ২০ জন আহত হন। এ ঘটনার পর থমাস হেমব্রম বাদী হয়ে গাইবান্ধা-৪ (গোবিন্দগঞ্জ) আসনের তৎকালীন আওয়ামী লীগ-দলীয় সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদসহ ৩৩ জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন।
জমির অধিকার নিয়ে গোবিন্দগঞ্জের সাঁওতালরা দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছেন। মূলত ১৯৬২ সালে ভোগদখলীয় বাগদা ফার্মের ১ হাজার ৮৪২ একর জমি আখ চাষের জন্য নেয় তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান সরকার। চুক্তি অনুসারে চিনিকল চালু না থাকলে জমির মালিক বিবেচনায় সাঁওতাল জনগোষ্ঠীকে সেই জমি খেসারতসহ ফিরিয়ে দেওয়া হবে। দুই দশক ধরে আখ চাষ না হওয়া ও চরম লোকসানের কারণে চিনিকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সাঁওতালরা চুক্তি অনুসারে তাঁদের জমি ফেরত চেয়েছিলেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে সংঘর্ষ ও হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। সাঁওতালপল্লিতে পুলিশের আগুন ধরিয়ে দেওয়ার একটি ভিডিও সে সময় তোলপাড় সৃষ্টি করেছিল।
রোববার মিছিল ও সমাবেশে তির-ধনুকসহ বিভিন্ন দাবিসংবলিত ফেস্টুন নিয়ে সাঁওতাল নারী-পুরুষেরা অংশ নেন। গোবিন্দগঞ্জ সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটি এ কর্মসূচির আয়োজন করে। সমাবেশে বক্তারা বলেন, হত্যা মামলার বিচার হওয়া তো দূরের কথা, মামলার মূল আসামিদের কেউই গ্রেপ্তার হননি। গত ৫ আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে আবুল কালাম আজাদসহ অনেকেই এখন পলাতক। বক্তারা অবিলম্বে আসামিদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানান।
আওয়ামী লীগ সরকার সাঁওতালদের এ ঘটনার বিচার করেনি। বরং আসামিদের আশ্রয়–প্রশ্রয় দিয়েছে। এখন সময় এসেছে প্রান্তিক ও সংখ্যালঘু মানুষদের ওপর এ জুলুমের বিচার করার। আশা করি, স্থানীয় প্রশাসনসহ অন্তর্বর্তী সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই নেবে এবং সদিচ্ছা দেখাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ ব ন দগঞ জ আওয় ম সরক র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
সোনার টয়লেট ‘আমেরিকা’ নিলামে উঠছে, সর্বনিম্ন দর কত জানেন
নিলামঘর সদবিস গতকাল শুক্রবার ইতালীয় শিল্পী মরিজিও ক্যাটেলানের তৈরি সম্পূর্ণ সোনার টয়লেটটি নিলামে তোলার কথা ঘোষণা করেছে। এ ভাস্কর্যটির নাম ‘আমেরিকা’।
সদবিস জানিয়েছে, এ শিল্পকর্ম এটাই দেখাতে চায়, কখনো কখনো শিল্পের ‘মূল্য’ আর তার বাজারে বিক্রির ‘মূল্য’ এক নয়। এটি শুধু শিল্পকর্মই নয়, একটি পুরোপুরি ব্যবহারযোগ্য টয়লেটও। এ টয়লেটেরই অনুরূপ একটি সংস্করণ ২০১৯ সালে ইংল্যান্ডের বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদ থেকে চুরি হয়ে বিশ্বজুড়ে আলোচনায় আসে।
১৮ নভেম্বর নিউইয়র্কে এ নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। টয়লেটটির সর্বনিম্ন দর ধরা হয়েছে এর সোনার বর্তমান বাজারমূল্য অনুযায়ী। এতে ব্যবহৃত হয়েছে প্রায় ১০১ দশমিক ২ কিলোগ্রাম (২২৩ পাউন্ড) খাঁটি সোনা, যার দাম এখন প্রায় ১০ মিলিয়ন (১ কোটি) মার্কিন ডলার (প্রায় ১২২ কোটি টাকা)।
সদবিসের নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধান ডেভিড গ্যালপারিন বলেন, ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।
ক্যাটেলান শুধু বিতর্ক সৃষ্টিকারীই নন; বরং অত্যন্ত সফল শিল্পী। তাঁর আরেকটি কাজ, ‘কমেডিয়ান’। অর্থাৎ দেয়ালে টেপ দিয়ে আটকানো একটি কলা। গত বছর নিউইয়র্কের এক নিলামে ৬২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়েছিল শিল্পকর্মটি।
‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।এর আগে ২০১৬ সালে ক্রিস্টিস নিলামে ক্যাটেলানের আরেকটি ভাস্কর্য ‘হিম’ ১ কোটি ৭২ লাখ ডলারে বিক্রি হয়। ভাস্কর্যটিতে নাৎসি নেতা অ্যাডলফ হিটলারকে হাঁটু গেড়ে প্রার্থনার ভঙ্গিতে দেখা যায়।
ক্যাটেলান নিজেই বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’
‘আমেরিকা’র দুটি সংস্করণ ২০১৬ সালে তৈরি করা হয়েছিল। যেটি এবার নিলামে উঠছে, সেটি ২০১৭ সাল থেকে এক অজ্ঞাত সংগ্রাহকের কাছে রয়েছে। অন্য সংস্করণটি ২০১৬ সালে নিউইয়র্কের গুগেনহাইম জাদুঘরের একটি বাথরুমে প্রদর্শনের জন্য স্থাপন করা হয়। সেখানে ১ লাখের বেশি দর্শক সার বেঁধে এসেছিলেন।
মরিজিও ক্যাটেলান হচ্ছেন এমন একজন শিল্পী, যিনি তাঁর কাজের মাধ্যমে সবাইকে ভাবাতে ও চমক দিতে পছন্দ করেন।ডেভিড গ্যালপারিন, সদবিস-এর নিউইয়র্ক শাখার সমসাময়িক শিল্প বিভাগের প্রধানওই সময় গুগেনহাইম ভাস্কর্যটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে তাঁর প্রথম দফায় ক্ষমতায় থাকাকালে ধার দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। কারণ তিনি জাদুঘর থেকে একটি ভ্যান গঘ চিত্রকর্ম ধার নিতে চেয়েছিলেন।
২০১৯ সালে ‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হয় উইনস্টন চার্চিলের জন্মস্থান হিসেবে বিখ্যাত ব্লেনহাইম প্রাসাদে। কিন্তু প্রদর্শনীর কয়েক দিনের মধ্যেই একদল চোর ভবনে ঢুকে সেটি পাইপলাইন থেকে খুলে নিয়ে পালিয়ে যায়।
চলতি বছরের শুরুতে দুই ব্যক্তিকে ওই চুরির দায়ে দোষী সাব্যস্ত করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবে সোনার টয়লেটটি আজও উদ্ধার করা যায়নি। তদন্তকারীরা ধারণা করছেন, এটি সম্ভবত ভেঙে গলিয়ে ফেলা হয়েছে।
গ্যালপারিন বলেন, তিনি অনুমান করতে চান না ‘আমেরিকা’ শেষ পর্যন্ত কত দামে বিক্রি হতে পারে। তবে তাঁর ভাষায়, ক্যাটেলানের ‘ডাকটেপে আটকানো কলা’ শিল্পকর্মটি যেমন ‘অমূল্য ধারণা থেকে মূল্য তৈরি করা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল, ‘আমেরিকা’ ঠিক তার উল্টো। এখানে মূল উপকরণটিই (সোনা) অত্যন্ত মূল্যবান, যা বেশির ভাগ শিল্পকর্মে থাকে না।
ক্যাটেলান বলেছেন, তাঁর ‘আমেরিকা’ ভাস্কর্যটি অতিরিক্ত সম্পদ ও বিলাসিতাকে ব্যঙ্গ করে তৈরি করা হয়েছে। তিনি একবার বলেছিলেন, ‘তুমি ২০০ ডলারের দুপুরের খাবার খাও বা ২ ডলারের হটডগ, শেষ ফলাফল টয়লেটে গিয়ে একই হয়।’‘আমেরিকা’ প্রদর্শিত হবে সদবিসের নতুন নিউইয়র্ক কার্যালয় ব্রয়্যার বিল্ডিংয়ে, ৮ নভেম্বর নিলাম শুরু হওয়ার আগপর্যন্ত। এটি একটি বাথরুমে স্থাপন করা হবে, যা দর্শকেরা কাছ থেকে দেখতে পাবেন।
তবে গুগেনহাইম ও ব্লেনহাইম প্রাসাদের মতো এবার দর্শকদের টয়লেটটি ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে না। তাঁরা শুধু দেখতে পারবেন, কিন্তু ফ্লাশ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুনসোনার আস্ত একটি কমোড চুরি করেছিলেন তিনি০৩ এপ্রিল ২০২৪