যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে জোর দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত গোষ্ঠীটির নাম বেতার ইউএস। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের নাম ও তথ্য সরবরাহ করছে তারা।

নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিন শিক্ষার্থী এবং বিক্ষোভকারী মাহমুদ খলিল ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় পোস্ট ডক্টরাল স্কলার বদর খান সুরিকে আটক করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁদের দুজনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।

যেসব শিক্ষার্থী গত বছর গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি ইসরায়েলি কোম্পানি বর্জনের দাবি তুলেছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।

বেতার ইউএস আসলে কী? কেন এটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের বহিষ্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে? এটি কী ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে? আর কোন কোন গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমনে ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করছে?

বেতার ইউএস কী

১৯২৩ সালে শুরু হয় জায়নবাদী যুব আন্দোলন বেতার। এটির প্রতিষ্ঠাতা জেইভ জাবোটিনস্কি। তিনি শক্তিশালী ইহুদি সামরিকবাদ এবং আঞ্চলিক সম্প্রসারণের ধারণা প্রচার করেছিলেন। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। গোষ্ঠীটির মার্কিন শাখার নাম বেতার ইউএস।

বেতার ইউএসের মুখপাত্র ড্যানিয়েল লেভি ই–মেইলের মাধ্যমে আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন ইহুদি বিশ্বের গতিপথ বদলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল জায়নবাদী আন্দোলন। ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে আমাদের ৩৫টির বেশি শাখা রয়েছে।’

১৯২৩ সালে শুরু হয় জায়নবাদী যুব আন্দোলন বেতার। এটির প্রতিষ্ঠাতা জেইভ জাবোটিনস্কি। তিনি শক্তিশালী ইহুদি সামরিকবাদ এবং আঞ্চলিক সম্প্রসারণের ধারণা প্রচার করেছিলেন। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। গোষ্ঠীটির মার্কিন শাখার নাম বেতার ইউএস।

জায়নবাদ হলো একটি জাতীয়তাবাদী ও রাজনৈতিক মতাদর্শ। এটির উৎপত্তি ১৯ শতকের ইউরোপে। একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের আহ্বানে এই মতাদর্শের জন্ম হয়েছিল।

বেতার ইউএসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গোষ্ঠীটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, শহরে, সংবাদমাধ্যমে, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ে এবং রাস্তাঘাটে কাজ করে।

তবে গোষ্ঠীটি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির সাহসী প্রচার চালালেও এটির নেতা ও সদস্যদের তথ্য সীমিত রেখেছে। আর এই ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা।

বেতার ইউএস কাদের নিশানা করছে

গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে বেতার ইউএস মার্কিন প্রশাসনের কাছে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের নামসহ ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে আটক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের কথা উল্লেখ করে গত জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বেতার লিখেছে, ‘আমরা তাঁর নাম সরকারকে জানিয়েছি এবং আরও অনেকের নাম।’

মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর বেতার ইউএস এক্সে একটি বার্তা পোস্ট করে। সেখানে তারা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রতি তাদের অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা করে।

আল–জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বেতারের মুখপাত্র লেভি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে শত শত ভিসাধারী এবং মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক ও বিদেশিদের নাম সরবরাহ করেছি।’ আর এসব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন করে বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে এ দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি।

লেভি বলেন, ‘যাঁরা ভিসায় অথবা নাগরিকত্ব পেয়ে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং ঘৃণা ও সহিংসতাকে উৎসাহিত করছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।’

গোষ্ঠীটি যাদের নিশানা করছে, তাদের তালিকায় ইহুদিবিরোধীরাও রয়েছে বলে জোর দিয়েছে বেতার ইউএস। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অনেক নাগরিক অধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেছে, ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকেরা ইসরায়েল ও ইহুদিবাদের সমালোচনাকে ইহুদিবিরোধিতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে বাক্‌স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে।

গোষ্ঠীটি যাদের নিশানা করছে, তাদের তালিকায় ইহুদিবিরোধীরাও রয়েছে বলে জোর দিয়েছে বেতার ইউএস। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অনেক নাগরিক অধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেছে, ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকেরা ইসরায়েল ও ইহুদিবাদের সমালোচনাকে ইহুদিবিরোধিতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে বাক্‌স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে।

আমেরিকান-আরব বৈষম্যবিরোধী কমিটির (এডিসি) নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বেতার ইউএস যুক্তরাষ্ট্রে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু তারা আক্রমণাত্মকভাবে হয়রানির সঙ্গে জড়িত, যা প্রথম সংশোধনীর অধিকার [বাক্‌স্বাধীনতা] লঙ্ঘন করছে।’

গাজা প্রসঙ্গে কী বলছে বেতার ইউএস

গোষ্ঠীটি অবরুদ্ধ ও ইসরায়েলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় প্রকাশ্যে আরও রক্তপাতের আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল সেখানে আবারও বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু করেছে। বেতার ইউএসের মুছে ফেলা একটি পোস্টে গাজায় নিহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর নামের তালিকার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, ‘এটি যথেষ্ট নয়। আমরা গাজায় রক্তপাতের দাবি জানাচ্ছি!’

বেতারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো থেকে বারবার পোস্ট দিয়ে সহিংসতা এবং নিজ ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি পোস্টে গ্রুপটি বলেছে, তারা ‘গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অপসারণের পরিকল্পনাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’

এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠী অ্যান্টি-ডিফামেশন লিগ (এডিএল) বেতার ইউএসকে একটি ‘চরমপন্থী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

তবে আল–জাজিরার কাছে দেওয়া বিবৃতিতে লেভি বলেছেন, এই গোষ্ঠীটি একটি ‘মূলধারার’ ইহুদিবাদী সংগঠন এবং ‘জায়নবাদী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসরায়েলি জনগণের’ প্রতিনিধিত্ব করে। বেতারকে এডিএলের ‘চরমপন্থী’ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।

কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ফ ল স ত নপন থ ব ত র ইউএস আল জ জ র ইসর য স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ

দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে এডিবি। এ বিষয়ে সংস্থাটির ঢাকাস্থ এডিবির কান্ট্রি ডিরেক্টর হোয়ি ইউন জং বলেন, “বাংলাদেশ যখন তার অর্থনীতি বহুমুখীকরণ করছে, সংস্কার বাস্তবায়ন করছে এবং ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে অধিক দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।”

সোমবার (২৮ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর চীন-মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে এডিবি আয়োজিত বিজনেস অপরচুনিটিজ সেমিনার-২০২৫ এ অংশ নিয়ে এ কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, “আমরা অর্থনৈতিকভাবে দক্ষতা, ন্যায়সঙ্গতা, স্বচ্ছতা, গুণগতমান এবং অর্থের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে প্রকিউরমেন্ট সময় হ্রাস করার লক্ষ্যে অংশীদারদের সঙ্গে কাজ করছি।”

আরো পড়ুন:

এপ্রিলের ২৬ দিনে রেমিট্যান্স এলো ২২৭ কোটি ডলার

বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগের গুঞ্জনে সূচকের উত্থান

তিনি বলেন, “এডিবির বেসরকারি খাত সম্প্রসারণের কৌশলের আলোকে এই খাতে ব্যবসার সুযোগও প্রসারিত করছি।”

সেমিনারে ৫০০ এর অধিক পরামর্শক, ঠিকাদার, সরবরাহকারী, সিভিল সোসাইটি সংগঠন, সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী, কূটনৈতিক মিশনের কর্মী এবং বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানের ব্যক্তিরা অংশ নেন।

এডিবির প্রকিউরমেন্ট, পোর্টফোলিও ও ফিন্যান্সিয়াল ম্যানেজমেন্ট বিভাগের পরিচালক জেসপার পেডারসেন মূল বক্তব্য দেন। বক্তব্যে তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল সদস্য দেশগুলোর ক্রমবর্ধমান ও পরিবর্তনশীল চাহিদা মেটাতে এডিবি তার প্রক্রিয়াসমূহ আরো উন্নত করছে। এতে টেকসই, স্বচ্ছতা এবং গুণগতমান বজায় রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে।”

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. এহসানুল হক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনসালটিং ইঞ্জিনিয়ার্স অ্যান্ড আর্কিটেক্টস (বেসিয়া), বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব কনস্ট্রাকশন ইন্ডাস্ট্রি (বেসিআই) এবং বাংলাদেশ উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (বিডব্লিউসিসিআই) সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সেমিনারে এডিবি জানিয়েছে, বাংলাদেশের সঙ্গে ৫২ বছরের অংশীদারত্বে এডিবি ৬২ বিলিয়নেরও বেশি ইউএস ডলার ঋণ ও অনুদান (সহ-অর্থায়ন) দিয়েছে, যা দেশের অবকাঠামো, জনসেবা এবং সামাজিক উন্নয়নের মানোন্নয়নে ব্যয় হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে এডিবির প্রকল্প পোর্টফোলিওতে ৫১টি প্রকল্প ও কর্মসূচি রয়েছে, যার মূল্য ১২ (ইউএস ডলার) বিলিয়নেরও বেশি।

এডিবি জানিয়েছে, তারা স্থানীয় শিল্প খাতের বিকাশে তার প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখবে এবং বাংলাদেশি ঠিকাদার ও পরামর্শকরা দেশীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে ধারাবাহিকভাবে সফলভাবে চুক্তি অর্জন করে চলেছেন। ভবিষ্যতে এডিবির কার্যক্রম সম্প্রসারিত হওয়ায় এই সুযোগগুলো আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে প্রতিষ্ঠানটি।

ঢাকা/হাসনাত/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • দ্রুত প্রকল্প বাস্তবায়নে দক্ষতা ও কার্যকারিতার ওপর গুরুত্বারোপ