ট্রাম্প প্রশাসনকে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের নাম–তথ্য দিচ্ছে, কারা এই বেতার
Published: 27th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের করে দিতে জোর দিচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। তাঁর এই পদক্ষেপের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে বেশ কয়েকটি ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী। এদের মধ্যে সবচেয়ে আলোচিত গোষ্ঠীটির নাম বেতার ইউএস। গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের নাম ও তথ্য সরবরাহ করছে তারা।
নিউইয়র্কের কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিন শিক্ষার্থী এবং বিক্ষোভকারী মাহমুদ খলিল ও জর্জটাউন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারতীয় পোস্ট ডক্টরাল স্কলার বদর খান সুরিকে আটক করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। তাঁদের দুজনকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর চেষ্টা চলছে।
যেসব শিক্ষার্থী গত বছর গাজায় ইসরায়েলি যুদ্ধের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রতি ইসরায়েলি কোম্পানি বর্জনের দাবি তুলেছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প।
বেতার ইউএস আসলে কী? কেন এটি ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীদের বহিষ্কারের জন্য চাপ দিচ্ছে? এটি কী ধরনের সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছে? আর কোন কোন গোষ্ঠী ক্যাম্পাসে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভকারীদের দমনে ট্রাম্পের পদক্ষেপকে সমর্থন করছে?
বেতার ইউএস কী
১৯২৩ সালে শুরু হয় জায়নবাদী যুব আন্দোলন বেতার। এটির প্রতিষ্ঠাতা জেইভ জাবোটিনস্কি। তিনি শক্তিশালী ইহুদি সামরিকবাদ এবং আঞ্চলিক সম্প্রসারণের ধারণা প্রচার করেছিলেন। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। গোষ্ঠীটির মার্কিন শাখার নাম বেতার ইউএস।
বেতার ইউএসের মুখপাত্র ড্যানিয়েল লেভি ই–মেইলের মাধ্যমে আল-জাজিরাকে বলেছেন, ‘আমাদের আন্দোলন ইহুদি বিশ্বের গতিপথ বদলে দিয়েছে। আমরা বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে দ্রুতবর্ধনশীল জায়নবাদী আন্দোলন। ইউরোপ, লাতিন আমেরিকা, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে আমাদের ৩৫টির বেশি শাখা রয়েছে।’
১৯২৩ সালে শুরু হয় জায়নবাদী যুব আন্দোলন বেতার। এটির প্রতিষ্ঠাতা জেইভ জাবোটিনস্কি। তিনি শক্তিশালী ইহুদি সামরিকবাদ এবং আঞ্চলিক সম্প্রসারণের ধারণা প্রচার করেছিলেন। এই গোষ্ঠীটি বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বজুড়ে তাদের শাখা রয়েছে। গোষ্ঠীটির মার্কিন শাখার নাম বেতার ইউএস।জায়নবাদ হলো একটি জাতীয়তাবাদী ও রাজনৈতিক মতাদর্শ। এটির উৎপত্তি ১৯ শতকের ইউরোপে। একটি ইহুদি রাষ্ট্র গঠনের আহ্বানে এই মতাদর্শের জন্ম হয়েছিল।
বেতার ইউএসের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, গোষ্ঠীটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে, শহরে, সংবাদমাধ্যমে, ব্যবসায়িক সম্প্রদায়ে এবং রাস্তাঘাটে কাজ করে।
তবে গোষ্ঠীটি নিজেদের দৃষ্টিভঙ্গির সাহসী প্রচার চালালেও এটির নেতা ও সদস্যদের তথ্য সীমিত রেখেছে। আর এই ব্যবধান নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সমালোচকেরা।
বেতার ইউএস কাদের নিশানা করছে
গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভ শুরু হওয়ার পর থেকে বেতার ইউএস মার্কিন প্রশাসনের কাছে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের নামসহ ব্যক্তিগত তথ্য সরবরাহ করছে। যুক্তরাষ্ট্রে আটক ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের কথা উল্লেখ করে গত জানুয়ারিতে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে বেতার লিখেছে, ‘আমরা তাঁর নাম সরকারকে জানিয়েছি এবং আরও অনেকের নাম।’
মাহমুদ খলিলকে গ্রেপ্তারের দুই দিন পর বেতার ইউএস এক্সে একটি বার্তা পোস্ট করে। সেখানে তারা প্রকাশ্যে ফিলিস্তিনপন্থী শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের প্রতি তাদের অভিপ্রায়ের কথা ঘোষণা করে।
আল–জাজিরাকে দেওয়া এক বিবৃতিতে বেতারের মুখপাত্র লেভি নিশ্চিত করে বলেছেন, ‘আমরা ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে শত শত ভিসাধারী এবং মার্কিন নাগরিকত্ব পাওয়া মধ্যপ্রাচ্যের নাগরিক ও বিদেশিদের নাম সরবরাহ করেছি।’ আর এসব মানুষ যুক্তরাষ্ট্রের চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোকে সমর্থন করে বলে দাবি করেছেন তিনি। তবে এ দাবির পক্ষে তিনি কোনো প্রমাণ দেননি।
লেভি বলেন, ‘যাঁরা ভিসায় অথবা নাগরিকত্ব পেয়ে হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছেন এবং ঘৃণা ও সহিংসতাকে উৎসাহিত করছেন, তাঁদের বহিষ্কার করা হবে।’
গোষ্ঠীটি যাদের নিশানা করছে, তাদের তালিকায় ইহুদিবিরোধীরাও রয়েছে বলে জোর দিয়েছে বেতার ইউএস। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অনেক নাগরিক অধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেছে, ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকেরা ইসরায়েল ও ইহুদিবাদের সমালোচনাকে ইহুদিবিরোধিতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে বাক্স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে।
গোষ্ঠীটি যাদের নিশানা করছে, তাদের তালিকায় ইহুদিবিরোধীরাও রয়েছে বলে জোর দিয়েছে বেতার ইউএস। তবে সাম্প্রতিক মাসগুলোয় অনেক নাগরিক অধিকার সংগঠন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে বলেছে, ইসরায়েলপন্থী গোষ্ঠী এবং তাদের সমর্থকেরা ইসরায়েল ও ইহুদিবাদের সমালোচনাকে ইহুদিবিরোধিতার সঙ্গে গুলিয়ে ফেলছে। এটি যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য দেশে বাক্স্বাধীনতাকে ব্যাহত করছে।আমেরিকান-আরব বৈষম্যবিরোধী কমিটির (এডিসি) নির্বাহী পরিচালক আবেদ আইয়ুব আল–জাজিরাকে বলেন, ‘বেতার ইউএস যুক্তরাষ্ট্রে একটি অলাভজনক সংস্থা হিসেবে কাজ করছে। কিন্তু তারা আক্রমণাত্মকভাবে হয়রানির সঙ্গে জড়িত, যা প্রথম সংশোধনীর অধিকার [বাক্স্বাধীনতা] লঙ্ঘন করছে।’
গাজা প্রসঙ্গে কী বলছে বেতার ইউএস
গোষ্ঠীটি অবরুদ্ধ ও ইসরায়েলি বোমায় বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় প্রকাশ্যে আরও রক্তপাতের আহ্বান জানিয়েছে। এরই মধ্যে ইসরায়েল সেখানে আবারও বিধ্বংসী যুদ্ধ শুরু করেছে। বেতার ইউএসের মুছে ফেলা একটি পোস্টে গাজায় নিহত হাজার হাজার ফিলিস্তিনি শিশুর নামের তালিকার প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, ‘এটি যথেষ্ট নয়। আমরা গাজায় রক্তপাতের দাবি জানাচ্ছি!’
বেতারের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের অ্যাকাউন্টগুলো থেকে বারবার পোস্ট দিয়ে সহিংসতা এবং নিজ ভূখণ্ড থেকে ফিলিস্তিনিদের বের করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। একটি পোস্টে গ্রুপটি বলেছে, তারা ‘গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদের অপসারণের পরিকল্পনাকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে।’
এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে ইহুদিবিদ্বেষের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিষ্ঠিত গোষ্ঠী অ্যান্টি-ডিফামেশন লিগ (এডিএল) বেতার ইউএসকে একটি ‘চরমপন্থী গোষ্ঠী’ হিসেবে চিহ্নিত করেছে।
তবে আল–জাজিরার কাছে দেওয়া বিবৃতিতে লেভি বলেছেন, এই গোষ্ঠীটি একটি ‘মূলধারার’ ইহুদিবাদী সংগঠন এবং ‘জায়নবাদী ও সংখ্যাগরিষ্ঠ ইসরায়েলি জনগণের’ প্রতিনিধিত্ব করে। বেতারকে এডিএলের ‘চরমপন্থী’ গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
কলাম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিলিস্তিনি শিক্ষার্থী মাহমুদ খলিলের গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিক্ষোভ.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ফ ল স ত নপন থ ব ত র ইউএস আল জ জ র ইসর য স গঠন
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫