রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে রেললাইন ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই মমতা বেগমের ঘর। সরেজমিনে দেখা যায়, ১০ ফুট বাই ৭ ফুটের একটা ছোট্ট জায়গা; যেখানে দুজন মানুষ ঢোকার পরে আর কারও পা ফেলারও জায়গা থাকে না। একটা ভাঙা খাট, যেটাতে দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে ঘুমান মমতা বেগমের বয়োবৃদ্ধ মা। আর মেঝেতে ত্রিপল বিছিয়ে ঘুমান মমতা বেগম নিজে।

কথায় কথায় জানা গেল, এমন মানবেতর ছিল না মমতা বেগমের জীবনের গল্প। বর্তমানে বস্তির ঝুপড়ি ঘরে থাকলেও একসময় তাঁদেরও ছিল সচ্ছল অবস্থা। ছিল নিজেদের চাষের জমি আর থাকার জন্য বড় ঘর! প্রথমে রক্তের জটিল ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসায় সর্বস্ব হারান। তবু তাঁর মনে সান্ত্বনা ছিল, স্বামী-সন্তান নিয়ে একসঙ্গে খেয়ে-পরে থাকতে পারছেন।

কিন্তু হঠাৎই তাঁর জীবনে নেমে আসে কঠিন অন্ধকার। থ্যালাসেমিয়ার থাবা কেড়ে নেয় তাঁর আদরের ছেলেটিকে। এর পর থেকেই শুরু হয় অন্য আরেক সংগ্রাম। কারণ, স্বামীর মতোই তাঁর ১২ বছর বয়সী মেয়ে মিশু আর ৭ বছর বয়সী ছেলে ইব্রাহীমও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়।

‘সবচেয়ে বড় আফসোস লাগে কি জানেন? আমার পোলা-মাইয়াগুলা আমার থেইক্যাও এই রোগের জীবাণুটা পাইছে। আমার পোলাটা মইরা গেল এই থ্যালাসেমিয়ায়, আমার আরও দুইটা পোলা-মাইয়্যারও পিছে লাইগা আছে এই রোগটা।’

চোখের পানি মুছতে মুছতে মমতা বেগমের সরল উক্তি, বিয়ের আগে যেন সমাজের সবাই থ্যালাসেমিয়ার টেস্ট করান। থ্যালাসেমিয়ার কারণে সন্তান হারানোর বেদনা যেন আর কোনো মাকে সহ্য করতে না হয়—এটাই চাওয়া তাঁর।

থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ জোগাতে হয়, যার সাধ্য তাঁর নেই। বাধ্য হয়েই সন্তানদের জন্য ধারদেনার জন্য হাত পাতেন। প্রতিবেশী পুষ্পিতা খাতুন বলেন, ‘দুইটা পোলা-মাইয়্যা লইয়া খুব কষ্ট করতাছে মমতা বেগম। ওগো খাওন-পরন, ওষুধের খরচ সবকিছুর টেনশনে মাঝে মাঝে অসুস্থ হইয়া পইড়া থাকে ঘরের ভিতর।’

এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের চিকিৎসা কীভাবে চলছে? জানতে চাইলে উঠে আসে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের নাম।

রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য মিশু ও ইব্রাহীম প্রতি মাসে ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানজিম মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান, ‘সঠিক চিকিৎসার অভাবে এক সন্তানকে হারিয়েছেন মমতা। অন্য দুই সন্তানের যেন এমন করুণ পরিণতি না হয়, সে জন্যই আমরা থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড থেকে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছি।’ শুধু তা-ই নয়, রক্তও বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।

হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা.

সাজিয়া ইসলাম বলেন, ‘মিশু-ইব্রাহীমের স্বাভাবিক জীবন নিশ্চিত করতে তাদের চিকিৎসা নিয়মিত চালিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসা না পেলে হয়তো তাদের পরিণতি তাদের ভাইয়ের মতো হতে পারে।’

দরিদ্র এমন হাজারো শিশুর চিকিৎসায় সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।

জানা গেছে, মিশু-ইব্রাহীমের মতো এমন হাজারো দুস্থ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। হাসপাতালের জাকাত ফান্ডের আওতায় তাদের দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসহ ওষুধ ও রক্ত। এমনকি দূর থেকে আসা রোগীদের বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে নিবাসের। অসহায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সবাইকে জাকাত ফান্ডে জাকাত দান করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।

বর্তমানে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রায় আট হাজার নিবন্ধিত রোগী আছে, যাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র রোগী জাকাত ফান্ড থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে।

বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রায় আট হাজার নিবন্ধিত রোগী আছে, যাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র রোগী জাকাত ফান্ড থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন য ব গম র

এছাড়াও পড়ুন:

দাবানলে পুড়ছে ইসরায়েল, ‘জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা

ইসরায়েলের জেরুজালেম শহরের কাছে ছড়িয়ে পড়েছে ভয়াবহ দাবানল। শুষ্ক আবহাওয়ায় তীব্র বাতাসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খাচ্ছেন অগ্নিনির্বাপণ কর্মীরা। এমন পরিস্থিতিকে ‘জাতীয় জরুরি অবস্থা’ ঘোষণা করেছেন ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজ। খবর সিএনএন, টাইমস অব ইসরায়েল, বিবিসি, আল জাজিরার

দাবানল নিয়ন্ত্রণে আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছে ইসরায়েল। দাবানলে এ পর্যন্ত অন্তত ১৩ জন আহত হয়েছেন। তবে কারও মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। 

দাবানলকবলিত কয়েকটি এলাকার মানুষজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গুরুত্বপূর্ণ বেশ কয়েকটি সড়ক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেছেন, এই ভয়াবহ পরিস্থিতি মোকাবিলায় তারা আন্তর্জাতিক সহায়তা চেয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি।’

জেরুজালেমের অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, ইসরায়েলের ইতিহাসে এটি সম্ভবত সবচেয়ে বড় দাবানল। সতর্ক করে তিনি বলেন, কিছু সময়ের মধ্যে ঘণ্টায় ৬০ মাইলের বেশি গতিতে বাতাস বইতে পারে, যা পরিস্থিতিকে আরও ভয়াবহ করে তুলতে পারে।

এই দাবানলের কারণে বুধবার ইসরায়েলের মেমোরিয়া ডেতে তেল আবিব ও জেরুজালেমের মধ্যে সংযোগকারী প্রধান সড়ক ‘রুট-১’ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিওতে দেখা গেছে, ঘন ধোঁয়ার মধ্যে মানুষ সড়কের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছে।

কয়েক ঘণ্টা পরে জরুরি সেবাকর্মীরা মহাসড়কে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা সারি সারি গাড়ি তল্লাশি করে দেখছিলেন, ওই সব গাড়ির মধ্যে কেউ আটকে আছেন কি না।

অগ্নিনির্বাপণ বিভাগের কমান্ডার শমুলিক ফ্রিডম্যান বলেন, আমরা এখনো জানি না, কী কারণে আগুন লেগেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কোনো সূত্রও খুঁজে পাইনি। এখনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি।

ইসরায়েলি পুলিশ বলেছে, তারা সন্দেহভাজন এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ওই ব্যক্তি একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন বলে পুলিশের দাবি।

এক বিবৃতিতে ইসরায়েলি পুলিশ দাবি করেছে, জেরুজালেমের পুলিশ কর্মকর্তারা পূর্ব জেরুজালেমের একজন বাসিন্দাকে হাতেনাতে ধরে ফেলেছে। ওই ব্যক্তি তখন শহরের দক্ষিণ প্রান্তের একটি খোলা মাঠে আগুন লাগানোর চেষ্টা করছিলেন। তার কাছ থেকে একটি লাইটার, তুলা ও অন্যান্য দাহ্য পদার্থ উদ্ধার করা হয়েছে।

ইসরায়েলি পুলিশের দাবি, ৫০ বছর বয়সী সন্দেহভাজন ওই ব্যক্তি পূর্ব জেরুজালেমের উম তুবা এলাকার বাসিন্দা। উম তুবা এলাকায় আরব ফিলিস্তিনিরা বসবাস করে থাকে।

ইসরায়েলের পররাষ্ট্রমন্ত্রী গিদন সার দাবানল মোকাবিলায় ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে, এমন ইউরোপীয় দেশগুলোর সঙ্গে কথা বলছেন। তিনি তাদের কাছ থেকে উড়োজাহাজের সহায়তা চেয়েছেন। ইতালি ও মেসিডোনিয়া থেকে তিনটি উড়োজাহাজ শিগগিরই ইসরায়েলে পৌঁছাবে বলে জাতীয় নিরাপত্তা কাউন্সিল জানিয়েছে। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দাবানল ছড়িয়ে পড়া এলাকা থেকে মানুষকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কার্তজ বলেন, ‘আমরা জাতীয় জরুরি অবস্থার মধ্যে আছি। জীবন বাঁচাতে এবং দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে সব বাহিনীকে সক্রিয় করতে হবে।’

ইসরায়েলের ফায়ার অ্যান্ড রেসকিউ সার্ভিস জানিয়েছে, প্রায় ১২০টি দল এবং ১২টি অগ্নিনির্বাপণ বিমান ও হেলিকপ্টার দাবানল মোকাবিলায় কাজ করছে।

শামির মেডিকেল সেন্টার ও কপলান মেডিকেল সেন্টারের তথ্যমতে, দাবানলের কারণে অন্তত ডজন খানেক মানুষকে এই দুটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

ইতিমধ্যে জেরুজালেমের উপকণ্ঠে অবস্থিত হাদাসা মেডিকেল সেন্টারের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতি অনুরোধ করা হয়েছে, ‘জরুরি প্রয়োজন ছাড়া’ কেউ যেন হাসপাতালে না আসেন। হাসপাতালে ভর্তি থাকলেও যাদের অবস্থা গুরুতর নয়, তাদের হাসপাতাল থেকে সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে দাবানলে আহত ব্যক্তিদের হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়ার প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।

গত সপ্তাহে যে এলাকায় দাবানল দেখা দিয়েছিল, এবারও দাবানল প্রায় একই জায়গায় ছড়িয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ