থ্যালাসেমিয়া: মমতার জীবনের করুণ গল্প
Published: 28th, March 2025 GMT
রাজধানীর মালিবাগ রেলগেট থেকে রেললাইন ধরে কিছুটা এগিয়ে গেলেই মমতা বেগমের ঘর। সরেজমিনে দেখা যায়, ১০ ফুট বাই ৭ ফুটের একটা ছোট্ট জায়গা; যেখানে দুজন মানুষ ঢোকার পরে আর কারও পা ফেলারও জায়গা থাকে না। একটা ভাঙা খাট, যেটাতে দুই নাতি-নাতনিকে নিয়ে ঘুমান মমতা বেগমের বয়োবৃদ্ধ মা। আর মেঝেতে ত্রিপল বিছিয়ে ঘুমান মমতা বেগম নিজে।
কথায় কথায় জানা গেল, এমন মানবেতর ছিল না মমতা বেগমের জীবনের গল্প। বর্তমানে বস্তির ঝুপড়ি ঘরে থাকলেও একসময় তাঁদেরও ছিল সচ্ছল অবস্থা। ছিল নিজেদের চাষের জমি আর থাকার জন্য বড় ঘর! প্রথমে রক্তের জটিল ব্যাধি থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত স্বামীর চিকিৎসায় সর্বস্ব হারান। তবু তাঁর মনে সান্ত্বনা ছিল, স্বামী-সন্তান নিয়ে একসঙ্গে খেয়ে-পরে থাকতে পারছেন।
কিন্তু হঠাৎই তাঁর জীবনে নেমে আসে কঠিন অন্ধকার। থ্যালাসেমিয়ার থাবা কেড়ে নেয় তাঁর আদরের ছেলেটিকে। এর পর থেকেই শুরু হয় অন্য আরেক সংগ্রাম। কারণ, স্বামীর মতোই তাঁর ১২ বছর বয়সী মেয়ে মিশু আর ৭ বছর বয়সী ছেলে ইব্রাহীমও থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়।
‘সবচেয়ে বড় আফসোস লাগে কি জানেন? আমার পোলা-মাইয়াগুলা আমার থেইক্যাও এই রোগের জীবাণুটা পাইছে। আমার পোলাটা মইরা গেল এই থ্যালাসেমিয়ায়, আমার আরও দুইটা পোলা-মাইয়্যারও পিছে লাইগা আছে এই রোগটা।’
চোখের পানি মুছতে মুছতে মমতা বেগমের সরল উক্তি, বিয়ের আগে যেন সমাজের সবাই থ্যালাসেমিয়ার টেস্ট করান। থ্যালাসেমিয়ার কারণে সন্তান হারানোর বেদনা যেন আর কোনো মাকে সহ্য করতে না হয়—এটাই চাওয়া তাঁর।
থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত দুই সন্তানের চিকিৎসার জন্য প্রতি মাসে প্রায় ১৫ হাজার টাকা খরচ জোগাতে হয়, যার সাধ্য তাঁর নেই। বাধ্য হয়েই সন্তানদের জন্য ধারদেনার জন্য হাত পাতেন। প্রতিবেশী পুষ্পিতা খাতুন বলেন, ‘দুইটা পোলা-মাইয়্যা লইয়া খুব কষ্ট করতাছে মমতা বেগম। ওগো খাওন-পরন, ওষুধের খরচ সবকিছুর টেনশনে মাঝে মাঝে অসুস্থ হইয়া পইড়া থাকে ঘরের ভিতর।’
এমন পরিস্থিতিতে সন্তানদের চিকিৎসা কীভাবে চলছে? জানতে চাইলে উঠে আসে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের নাম।
রক্ত পরিসঞ্চালনের জন্য মিশু ও ইব্রাহীম প্রতি মাসে ফাউন্ডেশন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে আসে। এ প্রসঙ্গে হাসপাতালটির প্রশাসনিক কর্মকর্তা তানজিম মোহাম্মদ সিদ্দিকী জানান, ‘সঠিক চিকিৎসার অভাবে এক সন্তানকে হারিয়েছেন মমতা। অন্য দুই সন্তানের যেন এমন করুণ পরিণতি না হয়, সে জন্যই আমরা থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশনের জাকাত ফান্ড থেকে তাদের চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করছি।’ শুধু তা-ই নয়, রক্তও বিনা মূল্যে দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
হাসপাতালের চিফ মেডিকেল অফিসার ডা.
দরিদ্র এমন হাজারো শিশুর চিকিৎসায় সমাজের সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান এই চিকিৎসক।
জানা গেছে, মিশু-ইব্রাহীমের মতো এমন হাজারো দুস্থ শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন। হাসপাতালের জাকাত ফান্ডের আওতায় তাদের দেওয়া হচ্ছে বিনা মূল্যে চিকিৎসাসহ ওষুধ ও রক্ত। এমনকি দূর থেকে আসা রোগীদের বিনা মূল্যে থাকা-খাওয়ার জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে নিবাসের। অসহায় রোগীদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিতে সবাইকে জাকাত ফান্ডে জাকাত দান করার আহ্বান জানিয়েছে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
বর্তমানে বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রায় আট হাজার নিবন্ধিত রোগী আছে, যাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র রোগী জাকাত ফান্ড থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছে।
বাংলাদেশ থ্যালাসেমিয়া ফাউন্ডেশন হাসপাতালে প্রায় আট হাজার নিবন্ধিত রোগী আছে, যাদের মধ্যে প্রায় দুই হাজার দরিদ্র রোগী জাকাত ফান্ড থেকে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
৬০ হাজার ৮০২ টন গম নিয়ে দেশে এল যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় জাহাজ
যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত ৬০ হাজার ৮০২ মেট্রিক টন গম নিয়ে এমভি স্পার এরিস নামের জাহাজটি চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে পৌঁছেছে।
সোমবার (২ নভেম্বর) খাদ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়।
আরো পড়ুন:
আমি থাকাকালে তাইওয়ানে হামলার ‘পরিণতি কী হবে’ চীন জানে: ট্রাম্প
ভেনেজুয়েলার সঙ্গে যুদ্ধে জড়াবে না যুক্তরাষ্ট্র: ট্রাম্প
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, উভয় দেশের সরকারে মধ্যে স্বাক্ষরিত সমঝোতা স্মারকের আলোকে জি টু জি ভিত্তিতে এ আমদানি প্রক্রিয়া শুরু হয়। বাংলাদেশের খাদ্য অধিদপ্তর এবং যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব এগ্রিকালচার (ইউএসডিএ) চুক্তিটি সই করে। এর আওতায় মোট ৪ লাখ ৪০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানি করা হবে।
জাহাজে রক্ষিত গমের নমুনা পরীক্ষার কার্যক্রম ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে। পরীক্ষা শেষে দ্রুত গম খালাসের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
গত ২৫ অক্টোবর প্রথম চালান হিসেবে ৫৬ হাজার ৯৫৯ মেট্রিক টন গম বাংলাদেশে পৌঁছায়।
ঢাকা/আসাদ/সাইফ