মেহেরপুরের কাজলা নদীটি নাব্য হারিয়েছে।
পানিপ্রবাহের বদলে নদীর বুকে ঢেউ খেলছে ফসলের। নদী দখল করে ধান চাষ করেছে ভূমিদস্যুরা। এতে ভারসাম্য হারাচ্ছে পরিবেশ।
মেহেরপুরবাসীর দাবি, নাব্য হারানোয় দখলদাররা নদীতে ধান চাষ করার সুযোগ পেয়েছে। নদীটি পুনর্খনন করে মৎস্যজীবীদের ইজারা দিলে সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব পেতে পারে। সেই সঙ্গে রক্ষা হবে পরিবেশের ভারসাম্য।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মেহেরপুরের তথ্যমতে, জেলায় কাজলা নদীর দৈর্ঘ্য ৫৪ কিলোমিটার। ছোট নদী-খাল পুনর্খনন প্রকল্পের অধীনে ২০১১ সালে কাজলার ১০ কিলোমিটার খনন করা হয়। এই ১০ কিলোমিটারের মধ্যে নদীর তিনটি জায়গায় খনন করা হলেও তা ভূমিদস্যুরা ভরাট করে ধান চাষ করছে। বাকি ৪৪ কিলোমিটার প্রকল্পের দ্বিতীয় মেয়াদে খনন করার কথা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। এলাকাবাসীর দাবি, নদীর পুরো অংশ খনন না করলে খননের সুফল পাওয়া যাবে না।
সদর উপজেলার আমঝুপি গ্রামের ব্যবসায়ী আকতারুজ্জামান বলেন, দখলদাররা নদী দখল করে ধান চাষ করছে। ফলে হারিয়ে গেছে দেশীয় মাছ। এই নদী থেকে যারা মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করত, তারা এখন পেশা বদল করে অন্য পেশা বেছে নিয়েছে।
মুজিবনগর সরকারি ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক জাহির হোসেন চঞ্চল বলেন, গবাদি পশুর গা ধোয়ানো থেকে ফসলের মাঠে সেচ দেওয়া– সবই কাজলার পানি দিয়েই হতো। নদীকে ঘিরে যেসব পাখির আনাগোনা ছিল, তারাও আর আসে না। ফলে নষ্ট হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য।
গাংনী উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের কৃষক একরামুল হক কাজলা নদীতে ধান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, নদীর ধারে তাদের জমি আছে। তাদের জমির স্থান বরাবর তারা ধান চাষ করেন। তাদের জমি তারা দখলে না রাখলে অন্য কেউ দখলে নিয়ে চাষ করবে। সরকার নদী খনন করলে আর তারা চাষ করবেন না বলে জানান তিনি।
আমঝুপি গ্রামের কৃষক ফকির মহাম্মদের ভাষ্য– কাজলা শুকিয়ে গেছে, ফাঁকা জমি পড়ে আছে। তাই তারা ধান চাষ করে খাদ্য উৎপাদন করছেন। কাজলা খনন করলে মাছ পাবেন, গবাদি পশুর গা ধোয়াতে পারবেন, ফসলের জমিতে সেচ দিতে পারবেন। তারাও চান কাজলায় খনন করা হোক।
ছহিউদ্দিন ডিগ্রি কলেজের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মাসুদ রেজা বলেন, কাজলার মতো একটি প্রবহমান নদী এখন দখলদারদের দখলে। এতে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। নদীটি দ্রুত খনন করার দাবি জানান তিনি।
মেহেরপুর সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল্লাহ আল আমিন বলেন, প্রমত্তা কাজলা ক্রমেই পরিণত হয়েছে মরা খালে। নদীর বুকজুড়ে চলছে চাষাবাদ। যে নদীর পানি দিয়ে ফসলের জমিতে সেচ দেওয়া হতো, সেই কাজলার বুকেই শ্যালো মেশিন বসিয়ে ধানে পানি দেওয়া হচ্ছে। প্রকৃতি ও পরিবেশ বাঁচাতে শিগগির কাজলা নদী খনন করে এর নাব্য ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মত দেন তিনি।
পানি উন্নয়ন বোর্ড মেহেরপুরের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল হান্নান প্রধান বলেন, কাজলার খনন করা ১০ কিলোমিটার বাদে বাকি ৪৪ কিলোমিটার খননের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো
হয়েছে। এখন পর্যন্ত ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে সভা হলে নদীটির পুরো খনন করার যৌক্তিকতা তুলে ধরা হবে। নির্দেশনা পেলে পুরোটাই খনন করার প্রস্তাব পাঠানো হবে। নদীটি খনন করা গেলে শুষ্ক মৌসুমেও পানি থাকবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ধ ন চ ষ কর ভ রস ম য পর ব শ র খনন সরক র ফসল র
এছাড়াও পড়ুন:
বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়: ডাকসু
সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগের সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে বিএনপি ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায় বলে দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)।
রবিবার (২ নভেম্বর) ডাকসুর ভিপি মো. আবু সাদিক, জিএস এসএম ফরহাদ ও এজিএস মুহা: মহিউদ্দিন খান স্বাক্ষরিত ‘রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কাৃরের বিরোধিতা এবং ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রকাঠামো অক্ষুণ্ন রাখার অপচেষ্টার বিরুদ্ধে ডাকসুর প্রতিবাদ' শীর্ষক এক প্রতিবাদলিপিতে এ কথা বলা হয়েছে।
আরো পড়ুন:
ঢাবি শিক্ষার্থীদের মানবিক মূল্যবোধে উদ্বুদ্ধ করতে ২ কমিটি
ঢাবিতে সপ্তাহব্যাপী শিল্পকর্ম প্রদর্শনী শুরু
প্রতিবাদলিপিতে বলা হয়েছে, জুলাই বিপ্লব ছিল বৈষম্য, অবিচার ও ফ্যাসিবাদী শাসনকাঠামোর বিরুদ্ধে এ দেশের সর্বস্তরের ছাত্র-জনতার এক সম্মিলিত বিপ্লব। কেবল সরকার পরিবর্তন নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার, ক্ষমতার অপব্যবহার রোধ, স্বাধীন ও শক্তিশালী সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান গঠন, প্রশাসনিক নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা এবং একটি বৈষম্যহীন-ন্যায়ভিত্তিক নতুন বাংলাদেশ গড়ার আকাঙ্ক্ষা ছিল এই বিপ্লবের মূল ভিত্তি। নতুন প্রজন্ম চেয়েছিল এমন একটি বাংলাদেশ, যেখানে কোন প্রকার বৈষম্য ও রাজনৈতিক একচেটিয়া কর্তৃত্বের জায়গা থাকবে না।
কিন্তু দুঃখজনকভাবে জুলাই সনদে স্বাক্ষর করলেও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) ধারাবাহিকভাবে সংস্কার কার্যকর করার বিরোধিতা করে তরুণ প্রজন্মের আকাঙ্ক্ষাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। বিশেষত বিএনপি এমন সব মৌলিক সংস্কারের বিরোধিতা করেছে যা সরাসরি ছাত্র–জনতার স্বপ্নের সঙ্গে জড়িত। পিএসসি, দুদক, ন্যায়পাল ও মহা-হিসাব নিরীক্ষকের মতো সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানে স্বচ্ছ ও দলীয় প্রভাবমুক্ত নিরপেক্ষ নিয়োগ নিশ্চিত করার সংস্কার প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে তারা ক্ষমতার একচ্ছত্র দখলদারি বহাল রাখতে চায়।
যে বৈষম্যমূলক চাকরি ব্যবস্থাকে কেন্দ্র করেই জুলাই বিপ্লবের সূচনা হয়েছিল সেই কাঠামো পরিবর্তনের বিরুদ্ধাচরণ করে বিএনপি নতুন প্রজন্মের ন্যায্য দাবি অস্বীকার করছে। পাশাপাশি জুডিশিয়াল অ্যাপয়েন্টমেন্ট কমিশনের বিরোধিতা, অনুচ্ছেদ–৭০ সংস্কারে আপত্তি, প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় প্রধান আলাদা দুজন ব্যক্তির মতো আধুনিক গণতান্ত্রিক প্রস্তাবে বিরোধিতা, আইন পেশায় রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা, স্বতন্ত্র ফৌজদারি তদন্ত সার্ভিস গঠনে তাদের আপত্তি রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং তরুণ প্রজন্মের ভবিষ্যৎ নির্মাণের পথে বড় বাঁধার সৃষ্টি করছে। এভাবে বিএনপি মূলত জুলাই বিপ্লবের চেতনাকে অস্বীকার করে নতুন বাংলাদেশ নির্মাণের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করছে।
প্রতিবাদলিপিতে নেতৃবৃন্দ বলেন, এই সংস্কারগুলো ব্যক্তি বা দলীয় স্বার্থ নয় বরং রাষ্ট্রের মৌলিক সংস্কার এবং আধুনিক, গণতান্ত্রিক ও শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান তৈরির লক্ষ্যেই প্রস্তাবিত হয়েছে। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী নতুন বাংলাদেশ গঠনের নৈতিক দায়িত্ব ছাত্র ও সর্বস্তরের জনগণের। তাই সংস্কারের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জনগণ থেকে নিতে হবে। আর গণভোটই জনগণের ম্যান্ডেট নিশ্চিতের উপযুক্ত মাধ্যম। গণভোটের মাধ্যমেই জনগণ ঠিক করবে দেশের স্বার্থে কোন কোন সংস্কার প্রস্তাবনাগুলোকে তারা সমর্থন দিবে।
কোনো রাজনৈতিক দলের বিরোধিতা বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রভাব যদি রাষ্ট্রগঠনমূলক সংস্কারের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে ছাত্র-জনতা সেই বাধা অতিক্রমে দৃঢ়ভাবে অবস্থান নেবে জানিয়ে প্রতিবাদলিপিতে আরো বলা হয়, জুলাই বিপ্লব শুধু শাসক বা সরকার পরিবর্তনের আন্দোলন নয় বরং জুলাই বিপ্লব হলো ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে ন্যায্যতা ও স্বচ্ছতার ভিত্তিতে নতুন রাষ্ট্র বিনির্মাণ।
ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী