গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারে আসলে পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়। প্রথমটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। পরে ১২ মিনিটের ব্যবধানে আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪। শক্তিশালী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে মান্দালয়ের সাগাইং শহরের কাছাকাছি। সাগাইং নামে একটি দীর্ঘ চ্যুতি আছে। এটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ থেকে আন্দামান সাগর পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এ সাগাইং–চ‍্যুতির বিভিন্ন অংশে গত ১৮৫ বছরে ৭টির বেশি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। তার মধ্যে ১৮৩৯ সালে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয় ৮ দশমিক ৩ মাত্রার। 

গতকাল যে ভূমিকম্প হলো তার উৎপত্তিস্থল থেকে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে ব্যাংকক শহরের বহুতল ভবন এবং অনেক রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মিয়ানমারে তো অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূকম্পন চীন এবং ভারতের বিহারের বিভিন্ন অংশে অনুভূত হয়েছে। এবার যে ভূমিকম্প হলো, সেটি হয়েছে ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ মধ্যে। 

আরও পড়ুন৭০০ কোটি টাকার ৩৩তলা ভবন মুহূর্তে তিনতলার সমান ধ্বংসস্তূপ৯ ঘণ্টা আগে

সাবডাকশন জোন হলো এমন একটি এলাকা, যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ হয় এবং একটির নিচে অন্যটি তলিয়ে যায়। এই ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ বিস্তৃতি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা পর্যন্ত। এটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।

এই ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের আবার কয়েকটি ভাগ আছে। এর একটি হলো লকড জোন, আরেকটি হলো স্লো-স্লিপ জোন। লকড জোনে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এটা বাংলাদেশের পূর্ব প্রান্তে বা সাবডাকশন জোনের পশ্চিমে অবস্থিত। এই দুই সাব–জোনের বাইরে ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের মধ্যেই আছে সাগাইং ফল্ট। এটি শান মালভূমি ও সেন্ট্রাল মিয়ানমার বেসিনের সংযোগ এলাকা। সেখানেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ। কিন্তু এর কিছু ভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে এর আগে ১৯৩০ সালে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয় ব‍্যাগোতে। এলাকাটি সমুদ্রের কাছাকাছি। ওই সময় সুনামিরও সৃষ্টি হয়।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে ধসে পড়ল ঔপনিবেশিক আমলের সেতু১৯ ঘণ্টা আগে

আমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমাদের ভূমিকম্পের উৎস দুটি। একটি হলো ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনে, যেটি বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত। আরেকটি উত্তরে ডাউকি চ্যুতি এবং হিমালয়ের পাদদেশ এলাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো সাবডাকশন জোন। এই সাবডাকশন জোনের লকড এরিয়া বলতে যে অঞ্চলকে বোঝায়, সেটি আমাদের সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-মেঘনা নদী থেকে পূর্বে ভারতের মণিপুর-মিজোরাম অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানেই দুটি প্লেট একটি অন্যটির সঙ্গে আটকে আছে। নিচে ভারতীয় প্লেট আর ওপরে বার্মা প্লেট। এই আটকে থাকার কারণ হলো এখানে ফ্রিকশন এনার্জি বা ঘর্ষণশক্তি অনেক বেশি। বিষয়টি বিশদে যদি বলি, আপনি যদি হাতে তেলজাতীয় পদার্থ নিয়ে ঘষেন সেটি কিন্তু সহজেই স্থানচ‍্যুতি হবে; কিন্তু দুটি সিরিশ কাগজে ঘর্ষণ করলে তা সহজে সরে যাবে না, আটকে থাকবে। আমাদের এখানে যে লকড জোন, সেখানে এই ঘর্ষণশক্তির পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে আমাদের এখানে ভূমিকম্প কম হয়; কিন্তু এটা আবার আমাদের জন্য বিপজ্জনক। কেন? কারণ হলো, এখানে ৮০০ থেকে ১০০০ বছর আগে বড় ভূমিকম্প হয়ে যে শক্তি ছেড়ে বের হয়ে গেছে, সেখানে নতুন করে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এখানে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। গতকাল যে ভূমিকম্প হলো, তার সঙ্গে এই শক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও এটাও সাবডাকসন জোনের মধ্যে; কিন্তু সেই এলাকাটা আমাদের মধ্যে নয়। তবে এখন যদি এমন মনে করা হয় যে সাবডাকসন জোনে বড় ভূমিকম্প হয়ে গেল মানে আমরা বড় ঝুঁকি থেকে মুক্ত হলাম, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়; বরং এতে আরও ঝুঁকি বেড়ে গেল। কারণ, আমাদের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল তাতে আরও শক্তি সঞ্চয় করতে পারল।

আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে মসজিদের একাংশ ধসে তিনজনের মৃত্যু১৮ ঘণ্টা আগে

এখন আমাদের তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। জনগণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করে তোলার বিকল্প নেই। মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। আর দরকার নিয়মিত মহড়ার ব্যবস্থা করা।


হুমায়ুন আখতার, ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক 

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র ভ ম কম প আম দ র দশম ক

এছাড়াও পড়ুন:

ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে অংশ নেবেন খালেদা জিয়া: আবদুল আউয়াল মিন্টু

এ বছরের ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে তাতে অংশ নেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া। আজ বুধবার ফেনীতে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় এ কথা বলেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু।

আজ দুপুরে ফেনী শহরের একটি মিলনায়তনে ‘বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন’ শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথাগুলো বলেন মিন্টু। তিনি বলেন, ‘বিশ্বাস করতে চাই, ফেব্রুয়ারির প্রথম সপ্তাহে নির্বাচন হবে। দেশে এখন যে অবস্থা ফেব্রুয়ারি আগেই নির্বাচন হতে পারে। হয়তো জানুয়ারিতেও হয়ে যেতে পারে। কেয়ারটেকার সরকার নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে একটা ডেট পেন্ডিং আছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রবর্তন হলে তার অধীনে ৯০ দিনে নির্বাচন হবে। সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরে নির্বাচন হলে আমাদের নেত্রী খালেদা জিয়া নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন।’

আবদুল আউয়াল মিন্টু আরও বলেন, দেশে যদি এক যুগ, দুই যুগ ধরে নির্বাচিত সরকার না থাকে, তবে মানুষের অর্থনৈতিক উন্নয়ন, জানমালের উন্নয়ন হবে না। একটি দেশের সরকার যদি জনগণের কাছে দায়বদ্ধ না থাকে তাহলে তারা কখনো ভালো কাজ করবে না।

আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ‘২০০৬ সাল থেকে আমরা নির্বাচন চেয়ে আসছি। ১৯ বছর ধরে আমরা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য আন্দোলন–সংগ্রাম করে যাচ্ছি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন লন্ডনে যোগাযোগ করেছেন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যৌথ বিবৃতি দিয়েছিল। প্রধান উপদেষ্টা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আমরা সেটিতে আস্থা রাখতে চাই। আমরা চাচ্ছি, দ্রুত নির্বাচনটি হোক।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বলেন, ‘নির্বাচনে ফেনীর অতীত ইতিহাস সবাই জানে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে এখানে বিএনপি জয়লাভ করবে। আমাদের দলের নেত্রীও (খালেদা জিয়া) নির্বাচন করবেন। তিনি এখন সুস্থ আছেন।’

পরে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু ফেনীর মুহুরী-কহুয়া বন্যা নিয়ন্ত্রণ, নিষ্কাশন ও সেচ প্রকল্পের পুনর্বাসন (১ম পর্যায়) শীর্ষক প্রকল্পের অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন।

ফেনী জেলা প্রশাসক সাইফুল ইসলামের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা জয়নাল আবেদীন ওরফে ভিপি জয়নাল, সংরক্ষিত মহিলা আসনের সাবেক সংসদ রেহানা আক্তার, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম, পুলিশ সুপার হাবিবুর রহমান প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ