এ ভূমিকম্পে বাংলাদেশের ঝুঁকি বেড়ে গেল, অভিমত বিশেষজ্ঞের
Published: 29th, March 2025 GMT
গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারে আসলে পরপর দুটি ভূমিকম্প হয়। প্রথমটির মাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৭। পরে ১২ মিনিটের ব্যবধানে আরেকটি ভূমিকম্প হয়, যার মাত্রা ছিল ৬ দশমিক ৪। শক্তিশালী ভূমিকম্পটির উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারে মান্দালয়ের সাগাইং শহরের কাছাকাছি। সাগাইং নামে একটি দীর্ঘ চ্যুতি আছে। এটি ভারতের অরুণাচল প্রদেশ থেকে আন্দামান সাগর পর্যন্ত ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। এ সাগাইং–চ্যুতির বিভিন্ন অংশে গত ১৮৫ বছরে ৭টির বেশি বড় ধরনের ভূমিকম্প হয়েছে। তার মধ্যে ১৮৩৯ সালে সবচেয়ে বড় ভূমিকম্প হয় ৮ দশমিক ৩ মাত্রার।
গতকাল যে ভূমিকম্প হলো তার উৎপত্তিস্থল থেকে এক হাজার কিলোমিটারের বেশি দূরে ব্যাংকক শহরের বহুতল ভবন এবং অনেক রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মিয়ানমারে তো অনেক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ভূকম্পন চীন এবং ভারতের বিহারের বিভিন্ন অংশে অনুভূত হয়েছে। এবার যে ভূমিকম্প হলো, সেটি হয়েছে ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ মধ্যে।
আরও পড়ুন৭০০ কোটি টাকার ৩৩তলা ভবন মুহূর্তে তিনতলার সমান ধ্বংসস্তূপ৯ ঘণ্টা আগেসাবডাকশন জোন হলো এমন একটি এলাকা, যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেটের সংঘর্ষ হয় এবং একটির নিচে অন্যটি তলিয়ে যায়। এই ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ বিস্তৃতি বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব এলাকা পর্যন্ত। এটি ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে পরিচিত।
এই ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের আবার কয়েকটি ভাগ আছে। এর একটি হলো লকড জোন, আরেকটি হলো স্লো-স্লিপ জোন। লকড জোনে ভয়াবহ ভূমিকম্প হয়ে থাকে। এটা বাংলাদেশের পূর্ব প্রান্তে বা সাবডাকশন জোনের পশ্চিমে অবস্থিত। এই দুই সাব–জোনের বাইরে ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের মধ্যেই আছে সাগাইং ফল্ট। এটি শান মালভূমি ও সেন্ট্রাল মিয়ানমার বেসিনের সংযোগ এলাকা। সেখানেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ। কিন্তু এর কিছু ভিন্ন ভূতাত্ত্বিক বৈশিষ্ট্য আছে। এখানে এর আগে ১৯৩০ সালে ৭ দশমিক ৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয় ব্যাগোতে। এলাকাটি সমুদ্রের কাছাকাছি। ওই সময় সুনামিরও সৃষ্টি হয়।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে ধসে পড়ল ঔপনিবেশিক আমলের সেতু১৯ ঘণ্টা আগেআমরা প্রথম থেকেই বলে আসছি, আমাদের ভূমিকম্পের উৎস দুটি। একটি হলো ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনে, যেটি বাংলাদেশের পূর্বে অবস্থিত। আরেকটি উত্তরে ডাউকি চ্যুতি এবং হিমালয়ের পাদদেশ এলাকায়। এর মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো সাবডাকশন জোন। এই সাবডাকশন জোনের লকড এরিয়া বলতে যে অঞ্চলকে বোঝায়, সেটি আমাদের সুনামগঞ্জ-কিশোরগঞ্জ-মেঘনা নদী থেকে পূর্বে ভারতের মণিপুর-মিজোরাম অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। এখানেই দুটি প্লেট একটি অন্যটির সঙ্গে আটকে আছে। নিচে ভারতীয় প্লেট আর ওপরে বার্মা প্লেট। এই আটকে থাকার কারণ হলো এখানে ফ্রিকশন এনার্জি বা ঘর্ষণশক্তি অনেক বেশি। বিষয়টি বিশদে যদি বলি, আপনি যদি হাতে তেলজাতীয় পদার্থ নিয়ে ঘষেন সেটি কিন্তু সহজেই স্থানচ্যুতি হবে; কিন্তু দুটি সিরিশ কাগজে ঘর্ষণ করলে তা সহজে সরে যাবে না, আটকে থাকবে। আমাদের এখানে যে লকড জোন, সেখানে এই ঘর্ষণশক্তির পরিমাণ অনেক বেশি। এ কারণে আমাদের এখানে ভূমিকম্প কম হয়; কিন্তু এটা আবার আমাদের জন্য বিপজ্জনক। কেন? কারণ হলো, এখানে ৮০০ থেকে ১০০০ বছর আগে বড় ভূমিকম্প হয়ে যে শক্তি ছেড়ে বের হয়ে গেছে, সেখানে নতুন করে শক্তি সঞ্চিত হচ্ছে। এখানে ৮ দশমিক ২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে। গতকাল যে ভূমিকম্প হলো, তার সঙ্গে এই শক্তির কোনো সম্পর্ক নেই। যদিও এটাও সাবডাকসন জোনের মধ্যে; কিন্তু সেই এলাকাটা আমাদের মধ্যে নয়। তবে এখন যদি এমন মনে করা হয় যে সাবডাকসন জোনে বড় ভূমিকম্প হয়ে গেল মানে আমরা বড় ঝুঁকি থেকে মুক্ত হলাম, ব্যাপারটা কিন্তু তা নয়; বরং এতে আরও ঝুঁকি বেড়ে গেল। কারণ, আমাদের ভূমিকম্পপ্রবণ অঞ্চল তাতে আরও শক্তি সঞ্চয় করতে পারল।
আরও পড়ুনমিয়ানমারে ভূমিকম্পে মসজিদের একাংশ ধসে তিনজনের মৃত্যু১৮ ঘণ্টা আগেএখন আমাদের তাই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। এর জন্য স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা দরকার। জনগণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করে তোলার বিকল্প নেই। মানুষকে প্রশিক্ষিত করতে হবে। আর দরকার নিয়মিত মহড়ার ব্যবস্থা করা।
হুমায়ুন আখতার, ভূমিকম্পবিশেষজ্ঞ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ভ ম কম প আম দ র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
পদ্মা নদীতে টর্নেডো, পানির স্তম্ভ উঠে গেল আকাশের দিকে
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরে পদ্মা নদীতে টর্নেডোর উৎপত্তি হয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার বেলা তিনটার দিকে উপজেলার মরিচা ইউনিয়নের হাটখোলা এলাকায় পদ্মা নদীতে পানির স্তম্ভ আকাশের দিকে উঠে যায়। কয়েক মিনিট পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে যায়। ওই ঘটনার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ বিষয়ে জানতে কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার ও ঈশ্বরদী আবহাওয়া কার্যালয়ে যোগাযোগ করা হলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, ফেসবুকের ভিডিও থেকে বিষয়টি জানতে পেরেছেন।
এ বিষয়ে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল হাই সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, পদ্মা নদীতে হাটখোলা এলাকা থেকে টর্নেডো ভেড়ামারার দিকে অগ্রসর হয়ে যায়। তবে এতে কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।
ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া ১ মিনিট ৫০ সেকেন্ডের ভিডিওতে দেখা যায়, পদ্মা নদীর মাঝ থেকে পানির স্তম্ভ আকাশের দিকে উঠে গেছে। অনেকটা ফানেলের আকার ধারণ করেছে। ওই দৃশ্য দেখে কয়েকজন দৌড়ে দূরে সরে যাচ্ছেন। ধীরে ধীরে পানির স্তম্ভ অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে।
কুমারখালী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের অপারেটর হারুন আর রশীদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমিও ফেসবুকে ভিডিওটি দেখেছি। তবে আবহাওয়া অফিসে এ ব্যাপারে কোনো তথ্য নেই।’ একইভাবে ঈশ্বরদী আবহাওয়া কার্যালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হেলাল উদ্দীন বলেন, ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছ থেকে টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে। ভিডিওতে দেখেছি। এ ছাড়া কোনো তথ্য নেই।’
আবহাওয়াবিদদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাধারণত কোনো স্থানে নিম্নচাপ বা লঘুচাপ সৃষ্টি হলে ওই স্থানের উষ্ণ বাতাস ওপরের দিকে উঠে যায় এবং তখন ওই শূন্য জায়গা পূরণের জন্য চারদিকের শীতল বাতাস দ্রুত বেগে ধাবিত হয়। এভাবেই টর্নেডোর উৎপত্তি হয়। অল্প সময়ের জন্য তৈরি হওয়া এই ঘূর্ণিঝড় গতিপথে যা পড়ে, সবকিছু নিজের ভেতর টেনে নিতে থাকে এবং ক্রমেই শক্তিশালী হয়ে উঠতে থাকে। স্থলে হলে বা পানি ও ভূমি মিলে টর্নেডো তৈরি হলে সেটা অনেক সময় শক্তিশালী হয়ে ওঠে। শুধু পানির ওপরে টর্নেডো তৈরি হলে সেটা ততটা শক্তিশালী হয় না।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টর্নেডো দেখতে সরু ফানেলের মতো হয়, যার চিকন অংশটি ভূমি স্পর্শ করে। যদিও টর্নেডো বিভিন্ন আকার কিংবা আকৃতির হতে পারে। টর্নেডো পানি টেনে নিয়ে ওপরে তুলে মেঘ তৈরি করে। পরে সেটাই আবার বৃষ্টি হয়ে নেমে আসে। অনেক সময় আকাশে পানি তুলে সেটা আবার ছেড়ে দেয়।