কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না সিলেটে টিলা কাটা। প্রতিনিয়ত পাহাড়-টিলা কেটে ক্ষতবিক্ষত করা হচ্ছে। কোথাও এক্সক্যাভেটর লাগিয়ে, আবার কোথাও শাবল দিয়ে কাটা হচ্ছে টিলা। বর্ষায় কাটলে সহজে ধসে পড়ে, এ কারণে টিলা কাটার পরিমাণও বেড়ে যায়। পরে এসব মাটি বিক্রি করে চলে ব্যবসা। 

এদিকে বন্ধ হচ্ছে না টিলার পাদদেশে বসবাস। প্রায় প্রতিটি টিলায় গড়ে উঠছে বসতি। এ অবস্থায় ভয়াবহ ঝুঁকি নিয়ে বাস করছে লোকজন। সিলেট জেলার পাহাড়-টিলা কাটা রোধে সার্বক্ষণিক তদারকির ব্যবস্থা নিতে হাইকোর্টের নির্দেশনা থাকলেও মানা হচ্ছে না।

গত কয়েক দিন সিলেটের মেজরটিলা, টিলাগাঁও, বালুচর, মলাইটিলা, ব্রাক্ষ্মণশাসন, হাওলাদারপাড়া, মজুমদারপাড়া, আখালিয়া, ডলিয়া, সাহেববাজারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে টিলা কেটে বসতি নির্মাণ করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ছাড়া খাদিম টি এস্টেট, বুরজান, তারাপুর, মালনীছড়া, লাক্কাতুরা, দলদলি, আলীবাহারসহ নগরীর আশপাশের সব চা বাগানেই নির্বিচারে পাহাড়-টিলা ধ্বংস করা হচ্ছে।

খাদিমনগর ও খাদিমপাড়া এলাকায় বেশি বিক্রি হচ্ছে খাস জমি। এ ছাড়া সরকারের কাছ থেকে লিজ নেওয়া চা বাগানের জমিও বিক্রি করা হচ্ছে। এসব কাজে নেতৃত্ব দিচ্ছেন বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশে টিলাগাঁও এলাকায় গত রোববার গিয়ে দেখা যায়, বিশাল টিলা সাবাড় করার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। আগে যেখানে টিলা ছিল, এখন সমতল ভূমি। খবর পেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তর টিলা পরিদর্শন করে টিলার মালিকসহ পাঁচজনকে শোকজ করে।

স্থানীয় বাসিন্দা মইনুল হোসেন জানান, ১৩ বছর ধরে তিনি এ এলাকায় বাস করছেন। টিলায় পাঁচ শতক জায়গা কিনে ঘর বানিয়েছেন কয়েক বছর আগে। কম দামে জমি পেয়ে কিনেছেন। টিলায় ঝুঁকি থাকলেও কিছু করার নেই বলে জানান তিনি। 

সিলেট সদরের টুকেরবাজার ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডে অবস্থিত লন্ডনি টিলা। সবাই এখন এটিকে চেনে জাহাঙ্গীরনগর আবাসিক এলাকা নামে। স্বল্প মূল্যে জায়গা কিনে সেখানে বাড়ি বানাচ্ছে নিম্নআয়ের লোকজন। সরেজমিন দেখা গেছে, এরই মধ্যে প্রায় ১৫ একর আয়তনের টিলার বেশির ভাগ স্থানে গড়ে উঠেছে ঝুঁকিপূর্ণ টিনশেডের ঘর। এগুলোতে বাস করছে শতাধিক পরিবার। কয়েকটি পাকা বাড়িও রয়েছে টিলার পাদদেশে। গত ছয়-সাত বছরে স্থানীয় ও বাইরে থেকে আসা মানুষ এসব বাড়ি গড়ে তুলেছেন। স্থানীয় প্রশাসনের কোনো নজরদারি নেই এসব ব্যাপারে।

শুধু ‘লন্ডনি টিলা’ নয়, আইন অমান্য করে গত দুই যুগে কেটে ফেলা হয়েছে সিলেটের অনেক টিলা। নগরীর আশপাশ এখন অনেকটা টিলাশূন্য। প্রভাবশালী একটি চক্র এসব টিলা কাটায় জড়িত। কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেওয়া হয়। 

কী পরিমাণ টিলা সিলেটে ছিল, এর সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান কোথাও নেই। তবে পরিবেশ অধিদপ্তর সিলেট বিভাগীয় কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় বর্তমানে ১ হাজার ৮৭৫টি টিলা রয়েছে। এসব টিলার আয়তন ৪ হাজার ৮১১ একর। এর বাইরে আড়াই দশকে ২০ থেকে ৩০ শতাংশ টিলা কেটে ফেলা হয়েছে।
টিলা কাটা বন্ধে তারা মাঠে রয়েছেন বলে জানান পরিবেশ অধিদপ্তরের সিলেট বিভাগীয় পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার। টিলা কাটা বন্ধ না হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা সাধ্যমতো কাজ করছি। আমরা সবসময়ই তদারকি করছি। রাতে গোপনে টিলা কেটে ফেলে অনেকেই। যখনই কোনো সংবাদ পাই, আমাদের লোকজন ছুটে যায়। জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। কিন্তু লোকজন সচেতন না হওয়ার কারণে টিলার পাদদেশে অনেকে বাস করছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব স করছ ব স কর ল কজন

এছাড়াও পড়ুন:

গাইবান্ধায় ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ

গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে চিনিকলের জায়গায় প্রস্তাবিত ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবিতে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালিত হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) দুপুরে উপজেলা পরিষদ চত্বরে এই কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে মহাসড়কের উভয় পাশে প্রায় দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ থাকে।

খবর পেয়ে গাইবান্ধা জেলা প্রশাসক চৌধুরী মোয়াজ্জম আহমদ দুপুর ঘটনাস্থলে পৌঁছে ইপিজেড বাস্তবায়নের আশ্বাস এবং বিষয়টি সরকারকে জানানোর প্রতিশ্রুতি দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।    

আরো পড়ুন:

কুড়িগ্রামে সেতুর পাটাতন দেবে আটকে গেল ট্রাক, যান চলাচল বন্ধ

যমুনা সেতুর পশ্চিম প্রান্তে যানজট কমছে

কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন গোবিন্দগঞ্জ নাগরিক কমিটির আহ্বায়ক এম এ মতিন মোল্লা, সংগঠক রফিকুল ইসলাম, মোকছেদ ইসলাম, ডেপুটি প্রধান আবু রায়হান, আব্দুর রাজ্জাক, আসলাম মিয়া, সাঁওতাল নেতা মেখায়েল বেসরা প্রমুখ।

বক্তারা চিনিকলের জমিতে ইপিজেড বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে বলেন, শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার মহিমাগঞ্জস্থ রংপুর চিনিকলের জমিতে ইপিজেড স্থাপনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। ইপিজেডের নাম দেওয়া হয় ‘রংপুর ইপিজেড’। বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (বেপজা) কর্তৃপক্ষকে ইপিজেড বাস্তবায়নের দায়িত্ব দেওয়া হয়। মোট জমির মধ্যে ৪৫০ একর জমি বেপজাকে বুঝিয়ে দেয় চিনিকল কর্তৃপক্ষ। ইপিজেড হলে দুই লক্ষাধিক মানুষের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু, একটি মহল এর বিরোধিতা করছে। তারা চিনিকলের জমি অবৈধভাবে দখল করে আছেন।

ঢাকা/মাসুম/রাজীব

সম্পর্কিত নিবন্ধ