ঈদের বাকি আর মাত্র দুইদিন। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন কর্মজীবীরা।
শনিবার (২৯ মার্চ) সকাল থেকেই ফাঁকা হতে শুরু করেছে নরসিংদীর শিল্প অধ্যুষিত এলাকাগুলো। বাড়ি যেতে বাসস্ট্যান্ড ও রেল স্টেশনে ভিড় করছেন মানুষরা।
সরেজমিনে নরসিংদীর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের জেলখানা মোড়, পাঁচদোনা, সাহে প্রতাপ এলাকার বাস কাউন্টারে মানুষের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মহাসড়কে মোটরসাইকেল চালিয়ে অসংখ্য মানুষকে বাড়ি যেতে দেখা গেছে।
আরো পড়ুন:
যমুনা সেতুতে ২৪ ঘণ্টায় ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকার টোল আদায়
রাতে থেমে থেমে যানজট, সকালে স্বস্তি মহাসড়কে
মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল্লাহ জানান, এবার ঈদে ৯ দিনের ছুটি উপভোগ করবেন। সড়কে যানজটের আশঙ্কা থাকায় এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে বাড়িতে পৌঁছাতে মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তানভীর আহমেদ সুমন মিয়া নামে এক যাত্রী বলেন, “অনেকদিন পর গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছি। পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে ঈদ করব। রাস্তায় যানজট রয়েছে। পুরো মাস রোজা রাখার পর পরিবারের সবার সঙ্গে ঈদ করার আনন্দ অন্য রকম। নির্বিঘ্নে যাতে বাড়ি পৌঁছাতে পারি সে আশা করছি।”
নরসিংদী রেলস্টেশনে যাত্রীদের ভিড় রয়েছে। টিকিট না মেলায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অনেককে জানালা বেয়ে ট্রেনের ছাদে উঠতে দেখা গেছে।
নরসিংদী জেলার পুলিশ সুপার আব্দুল হান্নান বলেন, “ঈদযাত্রা যাতে সুন্দরভাবে মানুষ যাতায়াত করতে পারে, সেই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
পুলিশ জানায়, সড়কের প্রত্যেকটি মোড়ে মোড়ে চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। পাশাপাশি রাস্তায় অতিরিক্ত ট্রাফিক পুলিশ মোতায়ন রয়েছে। যানজট সৃষ্টি যাতে না হয় সে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, গতকাল শুক্রবার রাতে নরসিংদীতে মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কগুলোতে টহল ও তল্লাশী কার্যক্রম জোরদার করেছে র্যাব-১১।
র্যাব-১১-এর নরসিংদী কোম্পানি কমান্ডার মেজর সাদমান ইবনে আলমের নেতৃত্বে রাতে শিল্প এলাকা মাধবদীসহ, পাইকারি কাপড়ের বাজার শেখেরচর-বাবুরহাট, বাগহাহাটা, বাসাইল ও রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালান র্যাব সদস্যরা।
মেজর সাদমান ইবনে আলম সাংবাদিকদের বলেন, “মহাসড়কগুলো সাধারণ মানুষদের চলাচলের জন্য নিরাপদ রাখতে র্যাব বছর জুড়েই চেকপোস্টে বসিয়ে তল্লাশি ও টহল কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে। এবারের ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দীর্ঘ সময়ের ছুটির কারণে এ কার্যক্রম আরো জোরদার করা হয়েছে।”
তিনি আরো বলেন, “মহাসড়কে কোনো যানবাহন ও যাত্রী যাতে ছিনতাই বা ডাকাতির কবলে না পড়েন সে বিষয়টি বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে র্যাব নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। চেকপোস্টে তল্লাশির পাশাপাশি র্যাবের গোয়েন্দা নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।”
ঢাকা/হৃদয়/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন য নজট
এছাড়াও পড়ুন:
৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।
রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।
বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।
বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।
বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।
বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।
এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’
বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।
অবরোধকারীদের দাবি
অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।
শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।
তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।