Prothomalo:
2025-11-03@07:32:38 GMT

পরিবারে নেই শুধু আবু সাঈদ

Published: 30th, March 2025 GMT

পূর্ব দিকে মাটির ঘর। বারান্দা ঝাড়ু দিচ্ছেন মনোয়ারা বেগম। কাছে গেলে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বললেন। তাঁর চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। সব থেকেও কী যেন নেই। বললেন, ‘এক দিন পর ঈদ। মনটা ভালো নাই। ধনসম্পদ এখন থাকি কী হবে। ছইল নাই, মনোত খুশি নাগে না।’ (ছেলে নেই, তাই মনে সুখ নেই)

মনোয়ারা বেগম শহীদ আবু সাঈদের মা। আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে।

গতকাল শনিবার সকালে আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তখন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও বড় ভাই আবু হোসেন পাশের খালাশপীর বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে গেছেন। আবু সাঈদরা ১০ ভাই–বোন। অভাবের সংসারে আবু সাঈদই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানালেন মনোয়ারা বেগম। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিলেন তাঁরা; কিন্তু আবু সাঈদ মারা যাওয়ায় তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদের আবু সাঈদ বাড়িতে ছিল। বাড়ি থেকে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিল। তার এক দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। আর আসেনি। এরপর তার লাশ আসে।’

কথা বলতে বলতে মনোয়ারা বেগম আবু সাঈদের থাকার মাটির ঘর ও খাট দেখিয়ে দিলেন। মাটির ঘরের পশ্চিমে ইটের টিনশেড ভবন। ওই ঘরের পেছনে আবু সাঈদের কবর।

মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আবু সাঈদ নতুন টিনশেড ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে তাঁর থাকার কথা ছিল। এর মধ্যে আবু সাঈদ মারা গেলেন। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে তাঁরা অসমাপ্ত ঘরের কাজ শেষ করেছেন। নতুন টিনশেড ভবনের একটি কক্ষে তাঁর মা–বাবা থাকেন।

মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে খালিশপুর বাজার থেকে বাসায় ফিরেন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। মকবুল হোসেন বলেন, ‘ছেলেটার কথা মনে হলে বাবা অন্তরে সয় না। ক্যাবা পড়বার দিলও। না পড়ি মূর্খ থাকিল হয় কিষান (দিনমজুর) দিয়া খাইত, তা–ও জীবত থাকিল হয়। এখন দেখতিছি তা নোয়ায়। উয়ার একটা উদ্দেশ্যে ছিল, দ্যাশকে পাল্টাবার। আমার ছেলে উপলক্ষ, আল্লার তরফ থাকি স্বৈরাচার বাধ্য হইছে পালাইতে।’

কথার এক পর্যায়ে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের চোখে পানি চলে আসে। তিনি বলেন, ‘ছেলেটার পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারিনি। সে প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত। ঈদের সময় মা–বাবার জন্য অবশ্যই কিছু আনত। এগুলো ভাবলে কষ্ট লাগে। সবকিছু খালি খালি মনে হয়।’

শহীদ বীর আবু সাঈদের দুই হাত প্রসারিত বুক টান করে দাঁড়ানোর অকুতোভয় দৃশ্যটি বীরত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মকব ল হ স ন স ঈদ র ব ব গম র মন য় র

এছাড়াও পড়ুন:

স্বামী-সন্তানের সঙ্গে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন, মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে বাসের চাকায় মৃত্যু নারীর

চট্টগ্রামের পটিয়ায় মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়ার পর বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। আজ সোমবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিহত নারীর নাম ফজিলাতুন নেসা (২৮)। তিনি মাগুরা জেলার মহম্মদপুর থানার মহেশপুর গ্রামের আলিমুজ্জামান সুজনের স্ত্রী।

পুলিশ জানায়, স্বামীর সঙ্গে মোটরসাইকেলে গতকাল রোববার চট্টগ্রামে বেড়াতে আসেন ফজিলাতুন নেসা। তাঁদের ছয় বছর বয়সী সন্তানও সঙ্গে ছিল। গতকাল চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাটের একটি বাসায় তাঁরা রাত্রিযাপন করেন। সকালে সেখান থেকে মোটরসাইকেলে করে তাঁরা বান্দরবানের উদ্দেশে রওনা দেন। আলিমুজ্জামান মোটরসাইকেল চালাচ্ছিলেন এবং তাঁর পেছনে ছয় বছর বয়সী সন্তান হুমায়ের হাম্মাদ, এরপর ফজিলাতুন নেসা বসে ছিলেন।

সকাল ৮টা ৫০ মিনিটের দিকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের পটিয়ার নয়াহাট এলাকায় পৌঁছায় মোটরসাইকেলটি। সেখানে সামনে থাকা একটি লেগুনা হঠাৎ সড়কে থেমে গেলে তাৎক্ষণিক মোটরসাইকেলটির ব্রেক কষেন আলিমুজ্জামান। এ সময় ফজিলাতুননেসা মোটরসাইকেল থেকে ছিটকে পড়েন। এর পরপরই পেছন থেকে একটি যাত্রীবাহী বাস ফজিলাতুন নেসাকে পিষ্ট করে। তাঁকে উদ্ধার করে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

গতকাল রাতে চট্টগ্রাম নগরের যে বাসাটিতে ফজিলাতুন নেসা ছিলেন, সেটি তাঁর স্বামী আলিমুজ্জামানের বন্ধু রবিউল ইসলামের। দুর্ঘটনার খবর পেয়ে রবিউল ইসলামের বোন আশরিফা আহমদ ঘটনাস্থলে আসেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ফজিলাতুন নেসার স্বামী নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানির কনিষ্ঠ সহকারী ব্যবস্থাপক। পরিবার নিয়ে পাহাড় দেখতে বান্দরবানে বেড়াতে যাচ্ছিলেন তিনি। বেড়াতে যাওয়ার পথেই স্বামী-সন্তানের সামনে দুর্ঘটনায় তাঁর প্রাণহানি হয়েছে।

পটিয়া ক্রসিং হাইওয়ে থানার সার্জেন্ট ওয়াসিম আরাফাত দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, নিহত নারীর লাশ আইনি–প্রক্রিয়া শেষে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে। লেগুনা ও বাসের চালককে আটক করা সম্ভব হয়নি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ