Prothomalo:
2025-04-30@20:46:37 GMT

পরিবারে নেই শুধু আবু সাঈদ

Published: 30th, March 2025 GMT

পূর্ব দিকে মাটির ঘর। বারান্দা ঝাড়ু দিচ্ছেন মনোয়ারা বেগম। কাছে গেলে চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বললেন। তাঁর চোখেমুখে বিষাদের ছায়া। সব থেকেও কী যেন নেই। বললেন, ‘এক দিন পর ঈদ। মনটা ভালো নাই। ধনসম্পদ এখন থাকি কী হবে। ছইল নাই, মনোত খুশি নাগে না।’ (ছেলে নেই, তাই মনে সুখ নেই)

মনোয়ারা বেগম শহীদ আবু সাঈদের মা। আবু সাঈদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত বছরের ১৬ জুলাই রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ১ নম্বর ফটকের সামনে পুলিশের গুলিতে নিহত হন। তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ছিলেন। বাড়ি রংপুরের পীরগঞ্জের বাবনপুর জাফরপাড়া গ্রামে।

গতকাল শনিবার সকালে আবু সাঈদের বাড়িতে গিয়ে মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা হয়। তখন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন ও বড় ভাই আবু হোসেন পাশের খালাশপীর বাজারে ঈদের কেনাকাটা করতে গেছেন। আবু সাঈদরা ১০ ভাই–বোন। অভাবের সংসারে আবু সাঈদই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পেয়েছেন বলে জানালেন মনোয়ারা বেগম। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন দেখছিলেন তাঁরা; কিন্তু আবু সাঈদ মারা যাওয়ায় তাঁদের স্বপ্ন ভেঙে গেছে। মনোয়ারা বেগম বলেন, ‘গত কোরবানির ঈদের আবু সাঈদ বাড়িতে ছিল। বাড়ি থেকে এক বন্ধুর বিয়েতে গিয়েছিল। তার এক দিন পর বিশ্ববিদ্যালয়ে চলে যায়। আর আসেনি। এরপর তার লাশ আসে।’

কথা বলতে বলতে মনোয়ারা বেগম আবু সাঈদের থাকার মাটির ঘর ও খাট দেখিয়ে দিলেন। মাটির ঘরের পশ্চিমে ইটের টিনশেড ভবন। ওই ঘরের পেছনে আবু সাঈদের কবর।

মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, আবু সাঈদ নতুন টিনশেড ঘরের নির্মাণকাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে তাঁর থাকার কথা ছিল। এর মধ্যে আবু সাঈদ মারা গেলেন। সরকারি-বেসরকারি অনুদানে তাঁরা অসমাপ্ত ঘরের কাজ শেষ করেছেন। নতুন টিনশেড ভবনের একটি কক্ষে তাঁর মা–বাবা থাকেন।

মনোয়ারা বেগমের সঙ্গে কথা বলার একপর্যায়ে খালিশপুর বাজার থেকে বাসায় ফিরেন আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেন। মকবুল হোসেন বলেন, ‘ছেলেটার কথা মনে হলে বাবা অন্তরে সয় না। ক্যাবা পড়বার দিলও। না পড়ি মূর্খ থাকিল হয় কিষান (দিনমজুর) দিয়া খাইত, তা–ও জীবত থাকিল হয়। এখন দেখতিছি তা নোয়ায়। উয়ার একটা উদ্দেশ্যে ছিল, দ্যাশকে পাল্টাবার। আমার ছেলে উপলক্ষ, আল্লার তরফ থাকি স্বৈরাচার বাধ্য হইছে পালাইতে।’

কথার এক পর্যায়ে আবু সাঈদের বাবা মকবুল হোসেনের চোখে পানি চলে আসে। তিনি বলেন, ‘ছেলেটার পড়ালেখার খরচ জোগাতে পারিনি। সে প্রাইভেট পড়িয়ে লেখাপড়ার খরচ চালাত। ঈদের সময় মা–বাবার জন্য অবশ্যই কিছু আনত। এগুলো ভাবলে কষ্ট লাগে। সবকিছু খালি খালি মনে হয়।’

শহীদ বীর আবু সাঈদের দুই হাত প্রসারিত বুক টান করে দাঁড়ানোর অকুতোভয় দৃশ্যটি বীরত্বের প্রতীক হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: মকব ল হ স ন স ঈদ র ব ব গম র মন য় র

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কার্যক্রমে ‘অনিয়ম ও হয়রানি’ বন্ধের দাবিতে স্মারকলিপি

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার ভবনের কার্যক্রমে ‘অনিয়ম ও হয়রানির’ বিরুদ্ধে আট দফা দাবি উত্থাপন করে স্মারকলিপি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী। বুধবার বিকেলে সহ-উপাচার্য (প্রশাসন) সায়মা হকের কাছে এই স্মারকলিপি দেওয়া হয়।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য বিভাগে সংস্কার কার্যক্রম চললেও রেজিস্ট্রার ভবন এখনো পুরোনো ত্রুটিপূর্ণ প্রশাসনিক ধাঁচে পরিচালিত হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিমা, সনদ উত্তোলন, ডিজিটাল কার্যক্রম, কর্মচারীদের ব্যবহারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের হয়রানি, বিলম্ব ও দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে।

শিক্ষার্থীরা যে আট দফা দাবি তুলে ধরেছেন, সেগুলো হলো স্বাস্থ্যবিমা–সংক্রান্ত হয়রানি বন্ধ করতে হবে এবং সময়মতো অর্থ দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে; মধ্যাহ্নভোজ ও বৈঠকের অজুহাতে সেবা বন্ধ না করে কার্যক্রম চালু রাখতে হবে; রেজিস্ট্রেশন ও অন্যান্য ফি পরিশোধসহ প্রশাসনিক কার্যক্রম ডিজিটাল করতে হবে; লালফিতার দৌরাত্ম৵ বন্ধ এবং অভিযোগ ব্যবস্থাপনা চালু  করতে হবে; অবৈধ নিয়োগ তদন্ত করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে; ওয়েবসাইট হালনাগাদ এবং কেন্দ্রীয় অনলাইন সেবা পোর্টাল চালু করতে হবে; কর্মচারীদের আচরণ উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নিতে হবে; সনদ ও মার্কশিট উত্তোলনের প্রক্রিয়া সহজ করতে হবে এবং অতিরিক্ত ফি বাতিল করতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষে স্মারকলিপি দেন মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ, আবদুর রহমান আল-ফাহাদ, আশিক খান, রিয়াদুল ইসলাম, শামসুদ্দোহা শাকিল, শাহেদ ইমনসহ ১০ জন। এ সময় সহ–উপাচার্য সায়মা হক শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো শোনেন এবং দ্রুত কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ