যেমন ছিল কসকো সাবানের গন্ধমাখা ঈদের দিনগুলো
Published: 30th, March 2025 GMT
আশির দশকে চট্টগ্রাম নিউমার্কেট নিয়ে রীতিমতো গর্ব করতাম আমরা। দেশে এত সুন্দর বিপণিবিতান আর কোথাও নেই। ঢাকা থেকেও যারা আসত, একবার কথাটা তাদের মুখ থেকেই বের করিয়ে নিতাম আমরা। সে সময় ঈদের কেনাকাটায় এত ভিড় ছিল না। আর দোকানে দোকানে ঘোরাফেরা করেও জামা-জুতা পছন্দের বালাই ছিল না তেমন। আমাদের ছয় ভাই-বোনের বিশাল টিম, আম্মা সামনে আর আমরা পেছনে। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে আমরা নিউমার্কেটে গিয়ে কেউ বড় ভাইয়ের সঙ্গে ঢুকেছি টেইলারের দোকানে আর কেউ জুতার দোকানে। আম্মা পাবনা এম্পোরিয়াম নামের একটা শাড়ির দোকানে বসে একে–ওকে এদোকানে–ওদোকানে পাঠাতেন। মাঝেমধ্যে আম্মাও থাকতেন সঙ্গে।
সুইস বয়েলের শার্ট, টেরিলিন, টুইড কিংবা কর্ডের প্যান্ট আর হাই হিল স্যান্ডেলের চল ছিল তখন। তখনো জিনস আসেনি। জুতা বলতে চামড়ার অক্সফোর্ড শু, হকি শু আর হিলওয়ালা স্যান্ডেল। অনেক পরে কোলাপুরি স্যান্ডেলের চল এল। কাপড় যেদিন সেলাই হয়ে আসত, সেদিন একটা বিশেষ দিন আমাদের। নতুন জামা খাটের জাজিম কিংবা বালিশের নিচে রেখে একটু পরপর না দেখলে যেন নির্ঘাত মারা যাব। ঈদের দিন নামাজের আগে সুগন্ধি সাবান ছিল আমাদের সবচেয়ে বড় আকর্ষণ। সাবান বলতে কসকোই ছিল সবচেয়ে ভালো। খুব যত্নে সেটা গায়ে মাখতে মাখতে মনে হতো, জীবন আসলেই সার্থক হয়ে যাচ্ছে। এমন গন্ধের জন্যই যেন বেঁচে আছি।
১৯৮০-৮১ সালে আমার বয়স সাত-আট হবে। পাহাড়তলীর রেলওয়ের কোয়ার্টারে থাকতাম আমরা। সে সময় পাহাড়তলী একটা বিরান-বিচ্ছিন্ন এলাকা। বিকেলেই শেয়াল বের হয়ে যেত রাস্তায়। বেবি ট্যাক্সি, মুড়ির টিন নামের কাঠের বডির বাস আর রিকশাই ছিল প্রধান যানবাহন। রিকশায় কিংবা ভটভট শব্দ করা অটোরিকশায় আমরা বেড়াতে যেতাম আত্মীয়ের বাড়ি। তার আগে ঈদের দিন সকালে বাসায় তৈরি নানা ধরনের সেমাই, চুটকি পিঠা খাওয়া হতো। আর খালা কিংবা ফুফুর বাড়িতে দুপুরে ঝাল মাংস আর পোলাও। এবাড়ি-ওবাড়ি ঘুরে ঘুরে সন্ধ্যা নামতেই আমরা টেলিভিশনের সামনে বসে পড়তাম। ঈদের সিনেমা, তারপর ‘আনন্দ মেলা’ দেখে শেষ হতো আমাদের ঈদ।
আশির দশকে মুক্তি পাওয়া ছুটির ঘণ্টা চলচ্চিত্রের পোস্টার.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
৮ বছরেও শুরু হয়নি কুবির ২ বিভাগের কার্যক্রম
কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুবি) দীর্ঘ ৮ বছর আগে অনুমোদন পাওয়া দুটি বিভাগ এখনো চালু হয়নি। অনুমোদন সত্ত্বেও প্রয়োজনীয় শিক্ষক নিয়োগ, অবকাঠামোগত প্রস্তুতি এবং প্রশাসনিক কার্যক্রমের ধীরগতির কারণে বিভাগ দুটি কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
জানা গেছে, ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর মাসে বিজ্ঞান অনুষদের অধীনে ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ এবং ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের অধীনে ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ থেকেই বিভাগ দুটি চালু হওয়ার কথা থাকলেও, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ে অবকাঠামোগত ও শ্রেণিকক্ষ সংকটের কারণে তা সম্ভব হয়নি। পরবর্তীতে নতুন অ্যাকাডেমিক ভবন নির্মাণের পরে বিভাগ দুটি চালুর পরিকল্পনা করা হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে নতুন ভবন নির্মাণ হয়নি।
আরো পড়ুন:
শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় কুবি প্রক্টরের জরুরি নির্দেশনা
সিএনজি চালকের বিরুদ্ধে কুবি শিক্ষার্থীকে মারধরের অভিযোগ
এছাড়া, তৎকালীন অর্গানোগ্রামে ৩১টি বিভাগের মধ্যে এই দুইটি বিভাগ অন্তর্ভুক্ত ছিল না, যা পরবর্তীতে চালু করা নিয়ে জটিলতা তৈরি করে।
সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন প্রশাসন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে পুনরায় আলোচনা করে। ইউজিসি নির্দেশনা অনুযায়ী, নতুন অর্গানোগ্রামে বিভাগের অন্তর্ভুক্তি ও নতুন বিভাগের প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
সে অনুযায়ি ১৫ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত কুবির ৮৯তম অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল মিটিংয়ে পূর্বের ‘মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগ’ এর পরিবর্তে ‘লজিস্টিক্স ও মার্চেন্ডাইজিং বিভাগ’ এবং ‘বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’-এর পরিবর্তে ‘পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগ’ নামে অন্তর্ভুক্তির সুপারিশ করা হয়। এছাড়াও অর্গানোগ্রামে নতুন আরও ১৮টি বিভাগের নাম অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব রাখা হয়েছে।
তৎকালীন বন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের প্রস্তাবক রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ সৈয়দুর রহমান বলেন, “২০১৭ সালে অনুমোদন থাকলেও জায়গা সংকটের কারণে বিভাগ চালু করা সম্ভব হয়নি। পরে প্রশাসন পাল্টালেও কেউ উদ্যোগ নেয়নি।”
এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (অতিরিক্ত) অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন বলেন, “অর্গানোগ্রামে অন্তর্ভুক্তি মানে এখনই চালু হবে না। অনুমোদন থাকলেও তৎকালীন সময়ে চালু করা সম্ভব হয়নি। এখন ইউজিসি নির্দেশনায় নতুন করে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “তৎকালীন প্রশাসন বলতে পারবে কেন বিভাগ চালু হয়নি। আমরা সবার সঙ্গে আলোচনা মাধ্যমে নতুন করে উদ্যোগ নিয়েছি। আগামী ২ বছরের মধ্যে আশা করি বিভাগ চালু করা সম্ভব হবে, তখন নতুন ক্যাম্পাসও প্রস্তুত থাকবে।”
ঢাকা/এমদাদুল/মেহেদী