কোপা দেল রের শ্বাসরুদ্ধকর সেমিফাইনালে রিয়াল সোসিয়েদাদকে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে রিয়াল মাদ্রিদ। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-৪ গোলের উত্তেজনাপূর্ণ জয়ে শিরোপার আরও কাছাকাছি পৌঁছেছে লস ব্লাঙ্কোসরা। তবে ম্যাচ শেষে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ব্রাজিলিয়ান তরুণ তারকা এনড্রিক, যিনি নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছেন।

সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে অনুষ্ঠিত ফিরতি লেগে নির্ধারিত ৯০ মিনিট শেষে ম্যাচের ফলাফল ছিল ৪-৪। অতিরিক্ত সময়ে ম্যাচের ভাগ্য নির্ধারণ করেন আন্তোনিও রুডিগার। ১১৫ মিনিটে দুর্দান্ত এক হেডারে দলকে ফাইনালে পৌঁছে দেন তিনি। তবে ম্যাচে অন্যতম আলোচিত মুহূর্ত ছিল এনড্রিকের গোল। ৩০ মিনিটে দুর্দান্ত এক শটে সমতায় ফেরান এই ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। এই গোলেই ২০১৩ সালের পর থেকে টুর্নামেন্টটির এক আসরে পাঁচ গোল করা প্রথম খেলোয়াড় হলেন এনড্রিক। এটি শেষবার করেছিলেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো।

ম্যাচ শেষে নিজের ভবিষ্যৎ নিয়ে মুখ খুলেছেন এনড্রিক। যেকোনো ধোঁয়াশা দূর করে তিনি জানিয়ে দিয়েছেন, দীর্ঘদিন রিয়াল মাদ্রিদেই থাকতে চান। তিনি বলেন, ‘আমি রিয়াল মাদ্রিদকে ভালোবাসি! এখানে থাকতে ভালো লাগে, এই ক্লাব আমার স্বপ্ন। আমি এখানে শিখতে, উন্নতি করতে এবং সেরা পারফরম্যান্স দিতে এসেছি। প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করতে চাই এবং সারাজীবন এখানে থাকতে চাই।’

রিয়ালের মতো বিশ্বসেরা ক্লাবে খেলার চ্যালেঞ্জের বিষয়েও সচেতন এনড্রিক। দলে ভিনিসিয়ুস জুনিয়র, কিলিয়ান এমবাপ্পে, রদ্রিগো এবং জুড বেলিংহামের মতো তারকারা থাকায় প্রতিযোগিতা বেশ কঠিন হবে বলেই মনে করছেন তিনি।

এনড্রিক বলেন, ‘আমাকে প্রতিটি সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এখানে খেলা কঠিন, কারণ বিশ্বের সেরা খেলোয়াড়রা এখানে আছে। তবে সুযোগ পেলে গোল করেই নিজের মূল্য প্রমাণ করতে হবে। আজকের ম্যাচে নিজের ষষ্ঠ গোল করতে পেরে এবং দলকে সাহায্য করতে পেরে আমি আনন্দিত।’

এনড্রিক আরও যোগ করেন, ‘ভিনিসিয়ুস, এমবাপ্পে, রদ্রিগো, বেলিংহাম—চারজনই বিশ্বসেরা খেলোয়াড়। আমি তো কিছুই না। আমি এখানে কঠোর পরিশ্রম করতে এসেছি। কে শুরু করবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়, দল জিতলেই আমি খুশি।’

কোপা দেল রের ফাইনালে উঠায় রিয়াল মাদ্রিদের এখন নজর লা লিগা ও চ্যাম্পিয়ন্স লিগের লড়াইয়ে। আগামী ৫ এপ্রিল লা লিগায় ভ্যালেন্সিয়ার মুখোমুখি হবে কার্লো আনচেলত্তির দল। এরপর চ্যাম্পিয়ন্স লিগের কোয়ার্টার ফাইনালের প্রথম লেগে প্রতিপক্ষ আর্সেনাল। কঠিন প্রতিযোগিতার মাঝে ফর্ম ধরে রাখতে মরিয়া থাকবে রিয়াল মাদ্রিদ।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: এনড র ক এনড র ক ফ ইন ল

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন

দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।

নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।

মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।

ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।

শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।

চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।

পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।

ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।

এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ